ওহমের সূত্র

ওহমের সূত্র

ভূমিকা ওহমের সূত্র বিদ্যুৎ এবং বৈদ্যুতিক বর্তনী-র একটি মৌলিক ধারণা। এটি ১৮২৭ সালে জার্মান পদার্থবিদ জর্জ সাইমন ওহম আবিষ্কার করেন। এই সূত্রটি বিদ্যুৎ প্রবাহ, ভোল্টেজ এবং রোধ-এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো জটিল বিষয়গুলি বোঝার জন্য যেমন অর্থনীতির মূল ধারণাগুলি জানা প্রয়োজন, তেমনি পদার্থবিদ্যার এই সূত্রটিও ভালোভাবে বোঝা দরকার। ওহমের সূত্র ব্যবহার করে বর্তনীর বিভিন্ন অংশের মান নির্ণয় করা যায় এবং বর্তনীর কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা যায়।

ওহমের সূত্রের সংজ্ঞা ওহমের সূত্র অনুযায়ী, কোনো পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুৎ প্রবাহ (I) ওই পরিবাহীর দুই প্রান্তের পটেনশিয়াল পার্থক্য বা ভোল্টেজ (V)-এর সাথে সরাসরি সমানুপাতিক এবং পরিবাহীর রোধ (R)-এর সাথে ব্যস্তানুপাতিক। গাণিতিকভাবে এই সূত্রটি এভাবে লেখা হয়:

V = IR

এখানে,

• V = ভোল্টেজ, ভোল্ট এককে পরিমাপ করা হয়।
• I = বিদ্যুৎ প্রবাহ, অ্যাম্পিয়ার এককে পরিমাপ করা হয়।
• R = রোধ, ওহম এককে পরিমাপ করা হয়।

সূত্রটির ব্যাখ্যা এই সূত্রটি বোঝার জন্য তিনটি বিষয় ভালোভাবে জানতে হবে: ভোল্টেজ, বিদ্যুৎ প্রবাহ এবং রোধ।

• ভোল্টেজ (V):* ভোল্টেজ হলো কোনো বর্তনীর দুই বিন্দুর মধ্যে বৈদ্যুতিক বিভবের পার্থক্য। এটি ইলেকট্রনগুলিকে বর্তনীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে। একে কখনও কখনও পটেনশিয়াল পার্থক্যও বলা হয়।

• বিদ্যুৎ প্রবাহ (I):* বিদ্যুৎ প্রবাহ হলো কোনো পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহের হার। এটি কুলম্ব প্রতি সেকেন্ডে পরিমাপ করা হয় এবং এর একক হলো অ্যাম্পিয়ার।

• রোধ (R):* রোধ হলো কোনো পরিবাহীর বিদ্যুৎ প্রবাহের পথে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা। এটি পরিবাহীর উপাদান, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে। এর একক হলো ওহম।

ওহমের সূত্রের প্রয়োগ ওহমের সূত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক বর্তনীর সমস্যা সমাধান করা যায়। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

১. কোনো বর্তনীতে ভোল্টেজ এবং রোধ জানা থাকলে বিদ্যুৎ প্রবাহ নির্ণয় করা: যদি V = ১২ ভোল্ট এবং R = ৬ ওহম হয়, তাহলে বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে: I = V/R = ১২/৬ = ২ অ্যাম্পিয়ার।

২. কোনো বর্তনীতে বিদ্যুৎ প্রবাহ এবং রোধ জানা থাকলে ভোল্টেজ নির্ণয় করা: যদি I = ৫ অ্যাম্পিয়ার এবং R = ১০ ওহম হয়, তাহলে ভোল্টেজ হবে: V = IR = ৫ × ১০ = ৫০ ভোল্ট।

৩. কোনো বর্তনীতে ভোল্টেজ এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ জানা থাকলে রোধ নির্ণয় করা: যদি V = ২০ ভোল্ট এবং I = ৪ অ্যাম্পিয়ার হয়, তাহলে রোধ হবে: R = V/I = ২০/৪ = ৫ ওহম।

রোধের ধারণা রোধ (R) একটি পরিবাহীর বৈশিষ্ট্য যা বিদ্যুৎ প্রবাহকে বাধা দেয়। রোধের মান পরিবাহীর উপাদান, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে। রোধকে নিম্নলিখিত সূত্র দিয়ে প্রকাশ করা হয়:

R = ρL/A

এখানে,

• ρ (রো) = উপাদানের রোধাঙ্ক (Resistivity)।
• L = পরিবাহীর দৈর্ঘ্য।
• A = পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল।

বিভিন্ন উপাদানের রোধাঙ্ক বিভিন্ন হয়। যেমন, তামার রোধাঙ্ক কম হওয়ায় এটি বিদ্যুৎ পরিবহনে ভালো পরিবাহী, অন্যদিকে লোহার রোধাঙ্ক বেশি হওয়ায় এটি তামার মতো ভালো পরিবাহী নয়।

বর্তনীতে ওহমের সূত্রের ব্যবহার সিরিজ বর্তনী এবং প্যারালাল বর্তনী-তে ওহমের সূত্র ভিন্নভাবে প্রয়োগ করা হয়।

• সিরিজ বর্তনী:* সিরিজ বর্তনীতে রোধগুলি একটির পর একটি যুক্ত থাকে। এই বর্তনীতে মোট রোধ (R_total) হলো প্রতিটি রোধের যোগফল।

R_total = R₁ + R₂ + R₃ + ...

• প্যারালাল বর্তনী:* প্যারালাল বর্তনীতে রোধগুলি সমান্তরালভাবে যুক্ত থাকে। এই বর্তনীতে মোট রোধ (R_total) হলো রোধগুলির ব্যস্তকের সমষ্টির ব্যস্তক।

1/R_total = 1/R₁ + 1/R₂ + 1/R₃ + ...

ওহমের সূত্রের সীমাবদ্ধতা ওহমের সূত্র সবসময় সব ধরনের বর্তনীর জন্য প্রযোজ্য নয়। এই সূত্রের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

১. এটি শুধুমাত্র ধাতব পরিবাহী-এর জন্য প্রযোজ্য, অর্ধপরিবাহী (Semiconductor) বা অন্যান্য জটিল উপাদানের জন্য নয়। ২. তাপমাত্রা স্থির থাকতে হবে, কারণ তাপমাত্রার পরিবর্তনে রোধের মান পরিবর্তিত হতে পারে। ৩. এটি শুধুমাত্র ডাইরেক্ট কারেন্ট (DC) বর্তনীর জন্য প্রযোজ্য, অল্টারনেটিং কারেন্ট (AC) বর্তনীর জন্য নয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সাথে সরাসরি ওহমের সূত্রের সম্পর্ক না থাকলেও, এই সূত্রটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সম্ভাব্যতা বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। যেমন, রোধের ধারণা ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি এবং লাভের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কোনো একটি নির্দিষ্ট ট্রেডে ঝুঁকির পরিমাণ (রোধ) বেশি হলে, সেই ট্রেডটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের গুরুত্ব অনেক। ওহমের সূত্রের মতো, এই বিশ্লেষণগুলিও বাজারের গতিবিধি বুঝতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:* টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ হলো অতীতের দাম এবং ভলিউমের ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের দামের পূর্বাভাস দেওয়া। এই বিশ্লেষণে বিভিন্ন চার্ট এবং ইনডিকেটর ব্যবহার করা হয়। যেমন, মুভিং এভারেজ, আরএসআই (Relative Strength Index), এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence) ইত্যাদি।

• ভলিউম বিশ্লেষণ:* ভলিউম বিশ্লেষণ হলো কোনো শেয়ার বা অপশনের লেনদেনের পরিমাণ বিশ্লেষণ করা। এটি বাজারের চাহিদা এবং যোগান সম্পর্কে ধারণা দেয়। ভলিউম বার, অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) ইত্যাদি ভলিউম বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ টুল।

ওহমের সূত্রের ব্যবহারিক প্রয়োগ দৈনন্দিন জীবনে ওহমের সূত্রের অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

• বৈদ্যুতিক বাতি:* বৈদ্যুতিক বাতির ফিলামেন্ট একটি রোধক উপাদান, যা বিদ্যুৎ প্রবাহকে বাধা দিয়ে তাপ উৎপন্ন করে এবং আলো দেয়।
• হিটার:* হিটার বা গরম করার যন্ত্রে ব্যবহৃত কয়েলগুলিও রোধক উপাদান, যা বিদ্যুৎ শক্তিকে তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
• কম্পিউটার:* কম্পিউটারের বিভিন্ন সার্কিটে রোধ ব্যবহার করা হয়, যা বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং যন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
• মোবাইল ফোন:* মোবাইল ফোনের চার্জিং সার্কিট এবং অন্যান্য অংশে রোধ ব্যবহার করা হয়।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

• বিদ্যুৎ ক্ষমতা (P):* বিদ্যুৎ ক্ষমতা হলো কোনো বর্তনীর বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার। এটি ভোল্টেজ এবং বিদ্যুৎ প্রবাহের গুণফল।

P = VI

• শক্তি (E):* শক্তি হলো কাজ করার ক্ষমতা। বৈদ্যুতিক শক্তি হলো বিদ্যুৎ এবং সময়ের গুণফল।

E = P × t

উপসংহার ওহমের সূত্র বৈদ্যুতিক প্রকৌশল এবং পদার্থবিদ্যা-র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এই সূত্রটি বিদ্যুৎ বর্তনীর বিশ্লেষণ এবং নকশার জন্য অপরিহার্য। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো জটিল বিষয়গুলি বোঝার জন্য যেমন গভীর জ্ঞান প্রয়োজন, তেমনি ওহমের সূত্রের মতো মৌলিক ধারণাগুলির স্পষ্ট জ্ঞানও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই সূত্রটি ব্যবহার করে আমরা বিদ্যুৎ বর্তনীর কার্যকারিতা বুঝতে পারি এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রের প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে পারি।

ভোল্টেজ (V)

ভোল্ট (V)

বিদ্যুৎ প্রবাহ (I)

অ্যাম্পিয়ার (A)

রোধ (R)

ওহম (Ω)

বিদ্যুৎ ক্ষমতা (P)

ওয়াট (W)

শক্তি (E)

জুল (J)

বৈদ্যুতিক বর্তনী বৈদ্যুতিক রোধ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ প্রবাহ পাওয়ার (বিদ্যুৎ) সিরিজ বর্তনী প্যারালাল বর্তনী ডাইরেক্ট কারেন্ট অল্টারনেটিং কারেন্ট টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ মুভিং এভারেজ আরএসআই এমএসিডি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্ভাব্যতা বৈদ্যুতিক প্রকৌশল পদার্থবিদ্যা রোধাঙ্ক কুলম্বের সূত্র ফারডের সূত্র লেন্সের সূত্র

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ