ওয়াশিংটন ডি.সি.

পরিচিতি

ওয়াশিংটন, ডি.সি. (District of Columbia) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী এবং একটি ফেডারেল জেলা। এটি মেরিল্যান্ড এবং ভার্জিনিয়া রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত। কোনো রাজ্যের অংশ না হয়ে এটি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অধীনে পরিচালিত হয়। দেশটির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে এই শহরের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের বসবাস এই শহরে।

ইতিহাস

ওয়াশিংটন ডি.সি.-র ইতিহাস ১৭৯০ সালের ফেডারেল সিটি অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে শুরু হয়। জর্জ ওয়াশিংটন এবং থমাস জেফারসন সহ প্রভাবশালী নেতারা একটি নতুন রাজধানী নির্মাণের পরিকল্পনা করেন যা কোনো নির্দিষ্ট রাজ্যের প্রভাবের বাইরে থাকবে। এরপর পোটোম্যাক নদীর তীরে জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং পিয়ের চার্লস ল’এনফ্যান্ট নামক ফরাসি-আমেরিকান স্থপতিকে শহরটির নকশা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শহরটির নামকরণ করা হয়েছে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন-এর নামানুসারে। ১৮০০ সালে জন অ্যাডামস প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে এখানে বসবাস শুরু করেন। তবে, ১৮১৪ সালে ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সৈন্যরা শহরটি দখল করে এবং অনেক সরকারি ভবন পুড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে শহরটি পুনর্গঠন করা হয়।

ভূগোল ও জলবায়ু

ওয়াশিংটন ডি.সি. পোটোম্যাক নদীর তীরে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৬১ বর্গ মাইল (১৫৯ বর্গ কিলোমিটার)। এখানকার ভূখণ্ড মূলত ঢেউ খেলানো টিলা এবং সমতল ভূমি নিয়ে গঠিত।

এই অঞ্চলের জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয়। এখানে চারটি স্বতন্ত্র ঋতু রয়েছে: উষ্ণ এবং আর্দ্র গ্রীষ্মকাল, হালকা শীতকাল, বসন্তে মনোরম তাপমাত্রা এবং কমলা-লাল রঙের শরৎকাল। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা প্রায় ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, তবে শীতকালে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়।

জনসংখ্যা

২০২০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডি.সি.-র জনসংখ্যা প্রায় ৬,৮৯,৫4৫ জন। এই শহরের জনসংখ্যার মধ্যে আফ্রিকান আমেরিকান, ককেশীয়, হিস্পানিক এবং এশীয়দের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণে শহরটি একটি বহুজাতিক শহরে পরিণত হয়েছে।

সরকার ও রাজনীতি

ওয়াশিংটন ডি.সি. একটি স্ব-শাসিত জেলা, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এখানকার স্থানীয় সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র এবং ১৩ জন কাউন্সিল সদস্য নিয়ে গঠিত। মেয়র শহরের নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, এবং কাউন্সিল আইন প্রণয়ন করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান শাখা – নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ – এর সদর দপ্তর এখানে অবস্থিত। হোয়াইট হাউস প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও কর্মস্থল, ক্যাপিটল হিল কংগ্রেসের ভবন এবং সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালত এখানে অবস্থিত।

অর্থনীতি

ওয়াশিংটন ডি.সি.-র অর্থনীতি মূলত সরকারি চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। ফেডারেল সরকার এখানকার বৃহত্তম নিয়োগকর্তা। এছাড়াও, এখানে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, লবিং ফার্ম, এবং পরামর্শক সংস্থার সদর দপ্তর রয়েছে।

শহরটির অর্থনীতিতে প্রযুক্তিখাত দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে, বিশেষ করে সিলিকন ভ্যালির কাছাকাছি হওয়ায় অনেক প্রযুক্তি কোম্পানি এখানে তাদের শাখা স্থাপন করছে। পর্যটনও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, যা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটককে আকর্ষণ করে।

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

ওয়াশিংটন ডি.সি. একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। এখানে অসংখ্য স্মৃতিসৌধ, সংগ্রহশালা, এবং থিয়েটার রয়েছে।

স্মিথসোয়ানিয়ান ইনস্টিটিউশন: এটি বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর এবং গবেষণা কমপ্লেক্স, যেখানে ১৯টি জাদুঘর, একটি চিড়িয়াখানা এবং গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।
ন্যাশনাল মল: এটি একটি বিশাল পার্কওয়ে, যা লিংকন মেমোরিয়াল, ওয়াশিংটন মনুমেন্ট এবং ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের মধ্যে বিস্তৃত।
কেন Kennedy সেন্টার: এটি একটি বিখ্যাতPerforming Arts কেন্দ্র, যেখানে অপেরা, ব্যালে, থিয়েটার এবং কনসার্টের আয়োজন করা হয়।
জর্জটাউন: এটি একটি ঐতিহাসিক এলাকা, যেখানে সুন্দর বাড়িঘর, বুটিক শপ এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে।

এছাড়াও, ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উৎসব ও অনুষ্ঠান সারা বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষা

ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়: এটি একটি বেসরকারি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়, যা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
জিওটাউন বিশ্ববিদ্যালয়: এটি একটি প্রাচীনতম ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৮৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়: এটি একটি লিবারেল আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়, যা নর্থওয়েস্ট ওয়াশিংটনে অবস্থিত।
হোয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়: এটি একটি ঐতিহাসিক কৃষ্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৮৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়াও, এখানে অনেক সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ এবং ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে।

পরিবহন

ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে।

মেট্রো: ওয়াশিংটন মেট্রো একটি দ্রুতগামী রেল ব্যবস্থা, যা শহর এবং এর আশেপাশে চলাচল করে।
বাস: ডিসট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া সারফেস ট্রান্সপোর্টেশন (DCST) শহরের মধ্যে বাস পরিষেবা প্রদান করে।
ট্যাক্সি ও রাইডশেয়ার: ট্যাক্সি এবং উবার, লিফটের মতো রাইডশেয়ার পরিষেবা এখানে সহজলভ্য।
বিমানবন্দর: ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে তিনটি প্রধান বিমানবন্দর রয়েছে: রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, ওয়াশিংটন ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাল্টিমোর/ওয়াশিংটন আন্তর্জাতিক থারগুড মার্শাল বিমানবন্দর।

খেলাধুলা

ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা জনপ্রিয়।

ওয়াশিংটন ন্যাশনলস: এটি মেজর লিগ বেসবলের একটি দল।
ওয়াশিংটন উইজার্ডস: এটি ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের একটি দল।
ওয়াশিংটন ক্যাপিটলস: এটি ন্যাশনাল হকি লিগের একটি দল।
ডিসি ইউনাইটেড: এটি মেজর লিগ সকারের একটি দল।

এছাড়াও, এখানে গলফ, টেনিস, এবং দৌড়ানোর মতো খেলাধুলাও বেশ জনপ্রিয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং ওয়াশিংটন ডি.সি.

ওয়াশিংটন ডি.সি.-র অর্থনীতি এবং আর্থিক বাজারের সাথে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে, এই শহরে বসবাস করে বা ব্যবসা করার সময় বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পর্কে কিছু বিষয় জানা দরকার।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। এখানে, বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন: স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করে। যদি অনুমান সঠিক হয়, তবে বিনিয়োগকারী লাভ পান, অন্যথায় তিনি তার বিনিয়োগের পরিমাণ হারান।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর কিছু মৌলিক ধারণা:

কল অপশন: দাম বাড়বে এমন অনুমান করা হলে এই অপশন কেনা হয়।
পুট অপশন: দাম কমবে এমন অনুমান করা হলে এই অপশন কেনা হয়।
পেমআউট: এটি লাভের শতকরা হার, যা সাধারণত ৭০-৯০% এর মধ্যে থাকে।
মেয়াদকাল: এটি অপশনের সময়সীমা, যা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত হতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ঝুঁকি কমাতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: চার্ট এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা।
ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ: অর্থনৈতিক সূচক এবং অন্যান্য মৌলিক বিষয় বিবেচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: প্রতিটি ট্রেডে বিনিয়োগের পরিমাণ সীমিত রাখা এবং স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা।
ভলিউম বিশ্লেষণ: বাজারের লেনদেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা। (ভলিউম এবং মূল্য)
ট্রেন্ড লাইন: বাজারের ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী প্রবণতা চিহ্নিত করা। (আপট্রেন্ড এবং ডাউনট্রেন্ড)
সমর্থন এবং প্রতিরোধ: সেই স্তরগুলো চিহ্নিত করা যেখানে দাম বাড়তে বা কমতে বাধা পেতে পারে। (সাপোর্ট এবং রেজিস্টেন্স)
মুভিং এভারেজ: দামের গড় গতিবিধি ট্র্যাক করা। (SMA এবং EMA)
আরএসআই: দামের গতিবিধি অতিরিক্ত কিনা তা নির্ধারণ করা। (RSI)
MACD: দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা। (MACD)
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট: সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর চিহ্নিত করা। (ফিবোনাচি)
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বাজারের সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট বিশ্লেষণ করা। (ডোজ়ি এবং বুলিশ এনগালফিং)
ব্রেকআউট : গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট বা রেজিস্টেন্স লেভেল ভেদ করে দামের দ্রুত মুভমেন্ট।
রিভার্সাল প্যাটার্ন: দামের দিক পরিবর্তনের সংকেত। (হেড অ্যান্ড শোল্ডারস)
কনফার্মেশন: ট্রেডিং সংকেত নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত সূচক বা প্যাটার্ন ব্যবহার করা।
ডাইভারজেন্স: দাম এবং সূচকের মধ্যে ভিন্নতা দেখা গেলে সম্ভাব্য পরিবর্তন চিহ্নিত করা।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর জন্য অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, তবে এদের মধ্যে কিছু প্ল্যাটফর্ম নির্ভরযোগ্য নয়। তাই, বিনিয়োগ করার আগে প্ল্যাটফর্মের লাইসেন্স এবং সুনাম যাচাই করা উচিত।

উপসংহার

ওয়াশিংটন ডি.সি. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী। এই শহরের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি এটিকে অন্যান্য শহর থেকে আলাদা করে তুলেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, এখানকার বাসিন্দাদের সচেতনতা এবং সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ