ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স

ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স (Walt Disney Pictures) হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থা। এটি ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির একটি অংশ। এই সংস্থাটি ১৯২৩ সালে ওয়াল্ট ডিজনি এবং রয় ও. ডিজনি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু থেকেই, ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স উদ্ভাবনী অ্যানিমেশন এবং পরিবার-বান্ধব বিনোদনের জন্য পরিচিত। সময়ের সাথে সাথে, এই সংস্থাটি চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক বছর (১৯২৩-১৯৩০)

ওয়াল্ট ডিজনি এবং তাঁর ভাই রয় ও. ডিজনি ১৯২৩ সালে "ডিজনি ব্রাদার্স কার্টুন স্টুডিও" নামে একটি ছোট অ্যানিমেশন স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে তারা স্বল্পদৈর্ঘ্যের কার্টুন তৈরি করতেন। ওয়াল্ট ডিজনি-র সৃজনশীলতা এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ, স্টুডিওটি দ্রুত পরিচিতি লাভ করে। ১৯২৭ সালে "অসওয়াল্ড দ্য লাকি র‍্যাবিট" (Oswald the Lucky Rabbit) নামক একটি কার্টুন সিরিজ তৈরি করার পর ডিজনি ব্রাদার্স সাফল্য অর্জন করেন। তবে, বিতর্কের কারণে অসওয়াল্ডের স্বত্ব তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।

মাইকি মাউস ও সোনালী যুগ (১৯৩০-১৯৪০)

অসওয়াল্ডকে হারানোর পর ওয়াল্ট ডিজনি একটি নতুন চরিত্র তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ১৯২৮ সালে তিনি মাইকি মাউস (Mickey Mouse) তৈরি করেন। "স্টিমবোট উইলি" (Steamboat Willie) নামক একটি অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্মের মাধ্যমে মাইকি মাউস প্রথম আত্মপ্রকাশ করে এবং রাতারাতি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এটি ছিল প্রথম সাউন্ড কার্টুনগুলির মধ্যে অন্যতম।

১৯৩০-এর দশকে ডিজনি স্টুডিও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন করে। এর মধ্যে অন্যতম হল "ফ্লোরাইড সিনক্রোনাইজড সাউন্ড" (Floride Synchronized Sound) প্রযুক্তি, যা অ্যানিমেশনের সাথে শব্দ সমন্বয় করতে সাহায্য করে। ১৯৩২ সালে ডিজনি প্রথম রঙিন অ্যানিমেশন শর্ট ফিল্ম "ফ্লাওয়ার্স অ্যান্ড ট্রিজ" (Flowers and Trees) মুক্তি দেন, যা অস্কার জিতে নেয়।

১৯৩৭ সালে ওয়াল্ট ডিজনি "স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডুয়ার্ফস" (Snow White and the Seven Dwarfs) চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেন। এটি ছিল প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের সেল-অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম। চলচ্চিত্রটি ব্যাপক বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করে এবং অ্যানিমেশন শিল্পের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। এরপর "পিনোকিও" (Pinocchio) (১৯৪০) এবং "ফ্যান্টাসিয়া" (Fantasia) (১৯৪০) এর মতো ক্লাসিক চলচ্চিত্রগুলি মুক্তি পায়।

যুদ্ধকালীন বছর ও নতুন দিগন্ত (১৯৪০-১৯৫০)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডিজনি স্টুডিও সরকারের জন্য প্রশিক্ষণমূলক এবং প্রচারমূলক চলচ্চিত্র তৈরি করে। যুদ্ধের পরে, ডিজনি লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করে। "ট্রেজার আইল্যান্ড" (Treasure Island) (১৯৫০) ছিল তাদের প্রথম লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র। এই সময়ে ডিজনি টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করে এবং "দ্য ডিজনিল্যান্ড" (The Disneyland) নামক একটি জনপ্রিয় টিভি সিরিজ শুরু করে।

পুনর্জাগরণ ও আধুনিক ডিজনি (১৯৫০-বর্তমান)

১৯৫০-এর দশকে ডিজনি "সিন্ডারেলা" (Cinderella) (১৯৫০), "স্লিপিং বিউটি" (Sleeping Beauty) (১৯৫৯) এবং "১০০১ ডালমেশিয়ানস" (101 Dalmatians) (১৯৬১)-এর মতো ক্লাসিক অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়। ১৯৬৬ সালে ওয়াল্ট ডিজনি মারা যান, কিন্তু তাঁর স্টুডিও তাঁর ঐতিহ্য ধরে রাখে।

১৯৮০-এর দশকে ডিজনি আবার একটি পুনর্জাগরণ অনুভব করে। "দ্য লিটল মারমেইড" (The Little Mermaid) (১৯৮৯), "বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট" (Beauty and the Beast) (১৯৯১) এবং "দ্য লায়ন কিং" (The Lion King) (১৯৯৪)-এর মতো চলচ্চিত্রগুলি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। এই চলচ্চিত্রগুলি ডিজনিকে আবার অ্যানিমেশন শিল্পের শীর্ষে নিয়ে আসে।

১৯৯০-এর দশকে ডিজনি লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র প্রযোজনা বাড়াতে থাকে এবং "দ্য রক" (The Rock) (১৯৯৬) এবং "আর্মageddon" (Armageddon) (১৯৯৮)-এর মতো চলচ্চিত্র তৈরি করে।

২০০০-এর দশকে ডিজনি পিক্সার (Pixar) এবং মার্ভেল স্টুডিওস (Marvel Studios) অধিগ্রহণ করে। পিক্সারের "টয় স্টোরি" (Toy Story) (১৯৯৫) এবং মার্ভেলের "আয়রন ম্যান" (Iron Man) (২০০৮) ডিজনিকে নতুন দর্শক এবং আয়ের উৎস এনে দেয়।

বর্তমানে, ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম। তারা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র, লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন প্রোগ্রাম এবং থিম পার্ক সহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদন সামগ্রী তৈরি করে। ডিজনি+ (Disney+) নামক একটি স্ট্রিমিং পরিষেবাও তাদের রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ

ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্র তৈরি করেছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের তালিকা দেওয়া হলো:

স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডুয়ার্ফস (Snow White and the Seven Dwarfs) (১৯৩৭)
পিনোকিও (Pinocchio) (১৯৪০)
ফ্যান্টাসিয়া (Fantasia) (১৯৪০)
সিন্ডারেলা (Cinderella) (১৯৫০)
পিটার প্যান (Peter Pan) (১৯৫৩)
লেডি অ্যান্ড দ্য ট্রাম্প (Lady and the Tramp) (১৯৫5)
স্লিপিং বিউটি (Sleeping Beauty) (১৯৫৯)
১০০১ ডালমেশিয়ানস (101 Dalmatians) (১৯৬১)
দ্য জঙ্গল বুক (The Jungle Book) (১৯৬৭)
দ্য লিটল মারমেইড (The Little Mermaid) (১৯৮৯)
বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট (Beauty and the Beast) (১৯৯১)
আলাদিন (Aladdin) (১৯৯২)
দ্য লায়ন কিং (The Lion King) (১৯৯৪)
মulan (Mulan) (১৯৯৮)
ফ্রোজেন (Frozen) (২০১৩)
মোয়ানা (Moana) (২০১৬)
এনকান্টো (Encanto) (২০২১)

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন

ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স চলচ্চিত্র নির্মাণে বিভিন্ন সময়ে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

মাল্টিপ্লেন ক্যামেরা: এই ক্যামেরা ব্যবহার করে অ্যানিমেশনকে ত্রিমাত্রিক রূপ দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।
টেকনিকালার: রঙিন চলচ্চিত্র তৈরির জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল।
কম্পিউটার অ্যানিমেশন: "ট্রন" (Tron) (১৯৮২) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ডিজনি প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেশন ব্যবহার করে।
ডিজিটাল অ্যানিমেশন: "ডাইনোসর" (Dinosaur) (২০০০) চলচ্চিত্রটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল অ্যানিমেশনে তৈরি করা হয়েছিল।
স্টেরিওস্কোপিক থ্রিডি: "দ্য লায়ন কিং ৩ডি" (The Lion King 3D) (২০১১) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ডিজনি স্টেরিওস্কোপিক থ্রিডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্সের প্রভাব

ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স চলচ্চিত্র শিল্প এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ডিজনি চলচ্চিত্রগুলি বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের শৈশবকে প্রভাবিত করেছে। ডিজনি চরিত্রগুলি বিশ্বব্যাপী পরিচিত এবং প্রিয়। ডিজনি থিম পার্কগুলি বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

ডিজনি চলচ্চিত্রগুলি প্রায়শই নৈতিকতা, বন্ধুত্ব, সাহস এবং ভালোবাসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। এই চলচ্চিত্রগুলি দর্শকদের মধ্যে ইতিবাচক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে সাহায্য করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স ভবিষ্যতে আরও নতুন এবং উদ্ভাবনী চলচ্চিত্র তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। তারা মার্ভেল এবং স্টার ওয়ার্স (Star Wars) ফ্র্যাঞ্চাইজির চলচ্চিত্রগুলি তৈরি করা চালিয়ে যাবে। এছাড়াও, তারা ডিজনি+ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জন্য আরও নতুন কনটেন্ট তৈরি করবে।

ডিজনি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও কাজ করছে, যা দর্শকদের জন্য নতুন ধরনের বিনোদনের অভিজ্ঞতা তৈরি করবে।

আরও দেখুন

ডিজনি চলচ্চিত্রসমূহের বক্স অফিস আয় (প্রথম ১০টি)
চলচ্চিত্র \| মুক্তি বছর \| বিশ্বব্যাপী আয় (USD)
অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম \| ২০১৯ \| ২,৭৯৭,৫০০,১২৮
অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার \| ২০১৮ \| ২,০৪৮,৩০০,০০০
দ্য লায়ন কিং \| ২০১৯ \| ১,৬৬৩,০৭৫,৪০০
দ্য ফ্রোজেন ২ \| ২০১৯ \| ১,৪৫০,০২৬,০০০
অ্যাভেঞ্জার্স \| ২০১২ \| ১,৫১৮,৮১৫,৫১৩
ব্ল্যাক প্যান্থার \| ২০১৮ \| ১,৩৪৮,৬৯০,০০০
ফ্রোজেন \| ২০১৩ \| ১,২৮০,৮০২,২৮২
ইনক্রেডিবলস ২ \| ২০১৮ \| ১,২৬১,৪৬০,০০০
ক্যাপ্টেন মার্ভেল \| ২০১৯ \| ১,১৩১,০০০,০০০
টয় স্টোরি ৪ \| ২০১৯ \| ১,০৭৩,৩৭৮,০০০

তথ্যসূত্র

ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: [1](https://www.disney.com/)
আইএমডিবি (IMDb): [2](https://www.imdb.com/)
উইকিপিডিয়া: [3](https://en.wikipedia.org/wiki/Walt_Disney_Pictures)

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ