এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড

এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড (Environmental Defense Fund বা EDF) একটি অলাভজনক পরিবেশবাদী সংস্থা। এটি পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং আইনের সমন্বিত ব্যবহার করে কাজ করে। ১৯৭৮ সালে ফ্রেডরিক ই. কাপলো, ডেভিড Brower এবং অন্যান্য পরিবেশবিদদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং টেকসই উন্নয়ন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে কাজ করে।

প্রতিষ্ঠা ও পটভূমি

এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ডের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেডরিক ই. কাপলো এবং ডেভিড ব্রোয়ার পরিবেশ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি সংস্থা তৈরি করা যা পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং বাস্তবসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ করবে। প্রথাগত পরিবেশবাদী আন্দোলনের পাশাপাশি, EDF অর্থনীতি ও আইনের ব্যবহার করে পরিবেশ সুরক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ডের প্রধান লক্ষ্যগুলো হলো:

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করা: কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ: বায়ু, পানি ও মাটির দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
জীববৈচিত্র্য রক্ষা: বিপন্ন প্রজাতি এবং তাদের আবাসস্থল রক্ষা করা।
টেকসই উন্নয়ন: পরিবেশের ক্ষতি না করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ তৈরি করা।
পরিবেশগত ন্যায়বিচার: পরিবেশগত ঝুঁকির ক্ষেত্রে দুর্বল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

কার্যক্রম ও কৌশল

EDF বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

আইন ও নীতি প্রণয়ন: EDF আইন ও নীতি প্রণয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন পরিবেশ আইন এবং নীতি তৈরিতে সহায়তা করে, যা পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা: সংস্থাটি পরিবেশগত সমস্যাগুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা করে। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো নীতি নির্ধারণ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হয়।
বাজারভিত্তিক সমাধান: EDF বিশ্বাস করে যে বাজারের শক্তিকে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা কার্বন ট্রেডিং, দূষণ ছাড়পত্র এবং অন্যান্য বাজারভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায় উৎসাহিত করে।
অ্যাডভোকেসি ও সচেতনতা বৃদ্ধি: সংস্থাটি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রচার কার্যক্রম চালায় এবং পরিবেশগত সমস্যাগুলো সম্পর্কে মানুষকে অবগত করে।
আইনগত পদক্ষেপ: EDF পরিবেশগত ক্ষতি করে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়।

গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহ

জলবায়ু পরিবর্তন: প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে EDF গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বিভিন্ন শিল্প এবং সরকারের সাথে কাজ করে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন কৌশল তৈরি করে।
সমুদ্র ও মৎস্য সম্পদ: EDF সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং টেকসই মৎস্য শিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে। তারা অতিরিক্ত মৎস্য শিকার বন্ধ করতে এবং সামুদ্রিক দূষণ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
বন্যপ্রাণী ও আবাসস্থল: বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণে EDF কাজ করে। তারা বনভূমি সংরক্ষণ এবং বন্যপ্রাণী পাচার রোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ: EDF পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে কাজ করে। তারা বায়ু দূষণ এবং পানি দূষণ কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়, যা জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক।
কৃষি ও খাদ্য: সংস্থাটি টেকসই কৃষি পদ্ধতির প্রচলন এবং খাদ্য ব্যবস্থার উন্নতিতে কাজ করে। তারা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকর ব্যবহার কমাতে এবং জৈব চাষ উৎসাহিত করে।

সাফল্য ও প্রভাব

এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড বিগত কয়েক দশকে পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তাদের কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য হলো:

অ্যাসিড বৃষ্টির সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন।
ওজোন স্তর রক্ষায় মন্ট্রিয়ল প্রোটোকল বাস্তবায়নে অবদান রাখা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট শক্তিশালী করতে সহায়তা করা।
টেক্সাসে দূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে সহায়তা করা।

সমালোচনা

কিছু সমালোচক মনে করেন যে EDF কর্পোরেট সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা করে পরিবেশ সুরক্ষার আদর্শ থেকে সরে আসছে। তাদের মতে, EDF-এর কিছু পদক্ষেপ পরিবেশের জন্য যথেষ্ট নয় এবং এটি শুধুমাত্র বড় কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে। তবে, EDF দাবি করে যে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য একটি বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর উপায়।

অর্থায়ন

এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থায়ন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

ব্যক্তিগত অনুদান: সাধারণ জনগণ এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান।
প্রতিষ্ঠানের অনুদান: বিভিন্ন ফাউন্ডেশন এবং কর্পোরেট সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অনুদান।
সরকারি অনুদান: বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অনুদান।
বিনিয়োগ আয়: সংস্থার নিজস্ব বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়।

EDF এর আর্থিক বিবরণী (USD)
বছর	মোট আয়	মোট ব্যয়
2022	$350 মিলিয়ন	$320 মিলিয়ন
2021	$320 মিলিয়ন	$290 মিলিয়ন
2020	$280 মিলিয়ন	$250 মিলিয়ন

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড ভবিষ্যতে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আরও বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তার ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
দূষণ কমাতে আরও কঠোর নীতি প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য নতুন সংরক্ষণ এলাকা তৈরি করা এবং বিদ্যমান এলাকাগুলোর সুরক্ষা বাড়ানো।
পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য দুর্বল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করা।
টেকসই উন্নয়নের জন্য নতুন মডেল তৈরি করা এবং তার প্রচলন করা।

সংস্থা কাঠামো

EDF একটি বোর্ড অফ ডিরেক্টরস দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে পরিবেশ, বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং আইনের বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত থাকেন। সংস্থাটির একটি শক্তিশালী পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে, যারা কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে। EDF-এর বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত, যা নির্দিষ্ট পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে কাজ করে।

যোগাযোগের তথ্য

এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ডের প্রধান কার্যালয় নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত।

ঠিকানা: 1875 Connecticut Ave NW, Suite 1000, Washington, DC 20009
ওয়েবসাইট: [1](https://www.edf.org/)
ইমেইল: [email protected]
ফোন: +1 202-387-3500

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ