এজাইল ডেভেলপমেন্ট

এজাইল ডেভেলপমেন্ট: একটি বিস্তারিত আলোচনা

ভূমিকা

এজাইল ডেভেলপমেন্ট হল একটি পুনরাবৃত্তিমূলক (iterative) এবং ক্রমবর্ধমান (incremental) সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতি। গত দুই দশকে এটি সফটওয়্যার শিল্পে একটি প্রভাবশালী পদ্ধতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ঐতিহ্যবাহী ওয়াটারফল মডেলের বিপরীতে, এজাইল ডেভেলপমেন্ট পরিবর্তনশীল প্রয়োজনীয়তা (changing requirements) এবং দ্রুত ডেলিভারির উপর জোর দেয়। এই নিবন্ধে, এজাইল ডেভেলপমেন্টের মূল ধারণা, নীতি, পদ্ধতি এবং বাস্তবায়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

এজাইল ম্যানিফেস্টো

এজাইল ডেভেলপমেন্টের ভিত্তি হল এজাইল ম্যানিফেস্টো, যা ২০০১ সালে ১৭ জন সফটওয়্যার ডেভেলপার দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। এই ম্যানিফেস্টো চারটি মূল মূল্যবোধ এবং ১২টি নীতি নির্ধারণ করে, যা এজাইল পদ্ধতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।

মূল্যবোধসমূহ:

   *   প্রক্রিয়া ও সরঞ্জাম এর চেয়ে ব্যক্তি ও মিথস্ক্রিয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
   *   বিস্তৃত ডকুমেন্টেশন এর চেয়ে কার্যকরী সফটওয়্যার বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
   *   চুক্তি ভিত্তিক আলোচনা এর চেয়ে গ্রাহকের সাথে সহযোগিতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
   *   পরিকল্পনা অনুসরণ এর চেয়ে পরিবর্তনের জন্য সাড়া দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নীতিসমূহ:

   *   গ্রাহকের সন্তুষ্টির জন্য দ্রুত এবং ক্রমাগত ডেলিভারি নিশ্চিত করা।
   *   প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে পরিবর্তনকে স্বাগত জানানো।
   *   সফটওয়্যার নিয়মিতভাবে ডেলিভারি করা (কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস)।
   *   বিজনেস এবং ডেভেলপারদের প্রতিদিন একসাথে কাজ করা।
   *   প্রোজেক্ট তৈরি করার সময় অনুপ্রাণিত ব্যক্তিদের উপর ভরসা করা।
   *   সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করা।
   *   কার্যকরী সফটওয়্যারকে অগ্রগতির প্রধান মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা।
   *   টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
   *   গুণগত মানের উপর ক্রমাগত মনোযোগ দেওয়া।
   *   সরলতা (simplicity) - অপ্রয়োজনীয় কাজ পরিহার করা।
   *   স্ব-সংগঠিত (self-organizing) দল তৈরি করা।
   *   নিয়মিতভাবে দলের কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা এবং উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া।

এজাইল পদ্ধতির প্রকারভেদ

এজাইল ডেভেলপমেন্টের অধীনে বিভিন্ন প্রকার পদ্ধতি রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল:

স্ক্রাম (Scrum): সবচেয়ে জনপ্রিয় এজাইল পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি। স্ক্রাম একটি পুনরাবৃত্তিমূলক এবং ক্রমবর্ধমান কাঠামো প্রদান করে, যেখানে ছোট ছোট দলে কাজ করা হয় (স্প্রিন্ট).
কানবান (Kanban): এটি একটি ভিজ্যুয়াল ওয়ার্কফ্লো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। কানবান কাজের চাপ কমিয়ে এবং ক্রমাগত ডেলিভারি নিশ্চিত করে।
এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং (XP): এটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের একটি ডিসিপ্লিনড অ্যাপ্রোচ, যা কোয়ালিটি এবং গ্রাহকের সন্তুষ্টির উপর জোর দেয়। পেয়ার প্রোগ্রামিং এবং টেস্ট-ড্রাইভেন ডেভেলপমেন্ট এর মতো অনুশীলনগুলি এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ডায়নামিক সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট মেথড (DSDM): এটি একটি দ্রুত অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতি, যা সময় এবং বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করে।
লিন ডেভেলপমেন্ট (Lean Development): এটি টয়োটা প্রোডাকশন সিস্টেম থেকে অনুপ্রাণিত, যার মূল লক্ষ্য হল অপচয় হ্রাস করা এবং গ্রাহকের জন্য ভ্যালু তৈরি করা।

স্ক্রাম (Scrum) - বিস্তারিত আলোচনা

স্ক্রাম একটি বহুল ব্যবহৃত এজাইল ফ্রেমওয়ার্ক। এর মূল উপাদানগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

স্ক্রামের মূল উপাদান
উপাদান	বর্ণনা
স্প্রিন্ট (Sprint)	২-৪ সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা, যার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
স্প্রিন্ট প্ল্যানিং (Sprint Planning)	স্প্রিন্টের শুরুতে, দল নির্ধারণ করে কোন কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে।
ডেইলি স্ক্রাম (Daily Scrum)	প্রতিদিন ১৫ মিনিটের একটি মিটিং, যেখানে দলের সদস্যরা তাদের কাজের অগ্রগতি এবং সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে।
স্প্রিন্ট রিভিউ (Sprint Review)	স্প্রিন্টের শেষে, দল স্টেকহোল্ডারদের কাছে তাদের কাজের ফলাফল প্রদর্শন করে।
স্প্রিন্ট রেট্রোস্পেক্টিভ (Sprint Retrospective)	স্প্রিন্টের শেষে, দল তাদের কাজের প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে এবং উন্নতির জন্য পরিকল্পনা করে।
প্রোডাক্ট ব্যাকলগ (Product Backlog)	গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা কাজের একটি তালিকা।
স্প্রিন্ট ব্যাকলগ (Sprint Backlog)	একটি স্প্রিন্টে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচিত কাজের তালিকা।
প্রোডাক্ট ওনার (Product Owner)	গ্রাহকের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তি, যিনি প্রোডাক্ট ব্যাকলগের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেন।
স্ক্রাম মাস্টার (Scrum Master)	দলের facilitator, যিনি স্ক্রাম প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে সাহায্য করেন এবং দলের বাধা দূর করেন।
ডেভেলপমেন্ট টিম (Development Team)	যারা সফটওয়্যার তৈরি করেন।

কানবান (Kanban) - বিস্তারিত আলোচনা

কানবান একটি ভিজ্যুয়াল সিস্টেম যা কাজের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হয়। এর মূল ধারণাগুলো হল:

ভিজ্যুয়ালাইজেশন (Visualization): কানবান বোর্ড ব্যবহার করে কাজের ধাপগুলো দৃশ্যমান করা হয়।
ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস (WIP) লিমিট (Limit WIP): একসাথে কতগুলো কাজ করা হবে, তার একটি সীমা নির্ধারণ করা হয়।
ফ্লো (Flow): কাজের মসৃণ প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়।
এক্সপ্লিসিট পলিসি (Explicit Policies): কাজের নিয়ম এবং প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
ফিডব্যাক লুপ (Feedback Loops): নিয়মিতভাবে কাজের প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা হয় এবং উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এজাইল এবং ওয়াটারফল মডেলের মধ্যে পার্থক্য

এজাইল এবং ওয়াটারফল মডেলের মধ্যে পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য	ওয়াটারফল মডেল	এজাইল মডেল
প্রয়োজনীয়তা	পূর্বে সংজ্ঞায়িত এবং অপরিবর্তনীয়	পরিবর্তনশীল এবং গ্রাহকের চাহিদার উপর ভিত্তি করে
পরিকল্পনা	বিস্তারিত এবং দীর্ঘমেয়াদী	পুনরাবৃত্তিমূলক এবং স্বল্পমেয়াদী
পরিবর্তন	পরিবর্তন গ্রহণ করা কঠিন	পরিবর্তনকে স্বাগত জানানো হয়
গ্রাহকের সম্পৃক্ততা	প্রকল্পের শুরুতে এবং শেষে	পুরো প্রকল্পের সময় জুড়ে
ডেলিভারি	প্রকল্পের শেষে একটি বৃহৎ ডেলিভারি	নিয়মিতভাবে ছোট ছোট ডেলিভারি
ঝুঁকি	উচ্চ ঝুঁকি, কারণ ত্রুটিগুলি দেরিতে ধরা পড়ে	কম ঝুঁকি, কারণ ত্রুটিগুলি দ্রুত ধরা পড়ে

এজাইল বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ

এজাইল ডেভেলপমেন্ট বাস্তবায়ন করা কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কিছু সাধারণ চ্যালেঞ্জ হল:

সাংস্কৃতিক পরিবর্তন: এজাইল একটি ভিন্ন সংস্কৃতি এবং কাজের পদ্ধতি অনুসরণ করে, যা দলের সদস্যদের জন্য অভ্যস্ত হতে সময় নিতে পারে।
প্রশিক্ষণের অভাব: এজাইল পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের অভাব থাকতে পারে।
গ্রাহকের সহযোগিতা: গ্রাহকের সক্রিয় সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে।
পুরোনো সিস্টেমের সাথে সংহতকরণ: এজাইল পদ্ধতিকে পুরোনো সিস্টেমের সাথে সংহত করা জটিল হতে পারে।
স্কেলিং: বড় আকারের প্রকল্পে এজাইল পদ্ধতি প্রয়োগ করা কঠিন হতে পারে।

এজাইল ব্যবহারের সুবিধা

এজাইল ডেভেলপমেন্ট ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

দ্রুত ডেলিভারি: নিয়মিতভাবে কার্যকরী সফটওয়্যার ডেলিভারি করা সম্ভব।
উচ্চ গ্রাহক সন্তুষ্টি: গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরি করা হয়, যা তাদের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করে।
পরিবর্তনশীলতার সাথে খাপ খাওয়ানো: প্রকল্পের যেকোনো পর্যায়ে পরিবর্তন গ্রহণ করা সহজ।
উন্নত গুণমান: নিয়মিত টেস্টিং এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে সফটওয়্যারের গুণমান বৃদ্ধি পায়।
দলের মনোবল বৃদ্ধি: স্ব-সংগঠিত দল তৈরি করার সুযোগ থাকায় দলের সদস্যরা উৎসাহিত বোধ করে।
ঝুঁকি হ্রাস: দ্রুত ডেলিভারি এবং নিয়মিত পর্যালোচনার মাধ্যমে ঝুঁকির পরিমাণ কমানো যায়।

এজাইল এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর মধ্যে সম্পর্ক

যদিও আপাতদৃষ্টিতে এজাইল ডেভেলপমেন্ট এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে কিছু মৌলিক ধারণা উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: উভয় ক্ষেত্রেই ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং তা কমানোর কৌশল অবলম্বন করা হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, ঝুঁকির পরিমাণ নির্ধারণ করে ট্রেড করা হয়। এজাইল ডেভেলপমেন্টে, স্প্রিন্ট এবং নিয়মিত পর্যালোচনার মাধ্যমে ঝুঁকির পরিমাণ কমানো হয়।
অভিযোজন ক্ষমতা: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ বাজারের পরিবর্তনের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এজাইল ডেভেলপমেন্টেও পরিবর্তনশীল প্রয়োজনীয়তার সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা প্রয়োজন।
পুনরাবৃত্তি (Iteration): বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ বিভিন্ন ট্রেড করা হয়, যা পুনরাবৃত্তিমূলক প্রক্রিয়া। এজাইল ডেভেলপমেন্টে স্প্রিন্টগুলি পুনরাবৃত্তিমূলক হয়।
ডেটা বিশ্লেষণ: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে ডেটা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজাইল ডেভেলপমেন্টে, স্প্রিন্ট রেট্রোস্পেক্টিভের মাধ্যমে ডেটা বিশ্লেষণ করে কাজের প্রক্রিয়া উন্নত করা হয়।

উপসংহার

এজাইল ডেভেলপমেন্ট একটি শক্তিশালী এবং নমনীয় পদ্ধতি, যা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং গ্রাহকের সহযোগিতার মাধ্যমে এজাইল বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এই পদ্ধতি শুধুমাত্র সফটওয়্যার শিল্পেই নয়, অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেও সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং টিম ওয়ার্ক এর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ