উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়া
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
উত্তর কোরিয়া, আনুষ্ঠানিকভাবে গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (Democratic People's Republic of Korea), পূর্ব এশিয়ার কোরীয় উপদ্বীপের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। কোরীয় যুদ্ধ (Korean War) বিরতির পর ১৯৪৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশটির রাজধানী পিয়ং ইয়ং (Pyongyang)। উত্তর কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন এবং সামরিকীকৃত দেশ হিসেবে পরিচিত।
রাজনৈতিক ব্যবস্থা
উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা মূলত একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা (One-party system), যেখানে কোরীয় ওয়ার্কার্স পার্টি (Workers' Party of Korea) ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। কিম জং-উন (Kim Jong-un) হলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা। দেশটির সংবিধানে জনগণের কিছু অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত। এখানে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ (State control) অত্যন্ত কঠোর এবং সরকারের সমালোচনার সুযোগ নেই।
ইতিহাস
উত্তর কোরিয়ার ইতিহাস বেশ জটিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরীয় উপদ্বীপ দুটি অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে যায় - উত্তর এবং দক্ষিণ। উত্তর কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় কমিউনিস্ট সরকার, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট সরকার গঠিত হয়। ১৯৫০-১৯৫৩ সাল পর্যন্ত কোরীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা উপদ্বীপটিকে আরও বিভক্ত করে তোলে। এরপর থেকে উত্তর কোরিয়া নিজেদের পথে অগ্রসর হতে থাকে এবং কিম পরিবার দেশটির নেতৃত্ব ধরে রাখে। কিম ইল-সুং (Kim Il-sung) ছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রথম নেতা, এরপর তার ছেলে কিম জং-ইল (Kim Jong-il) এবং বর্তমানে তার ছেলে কিম জং-উন দেশ পরিচালনা করছেন। এই বংশানুক্রমিক নেতৃত্বকে নায়কতন্ত্র (Dynasty) হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
অর্থনীতি
উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি মূলত কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত (Centrally planned economy)। এখানে রাষ্ট্রীয় খাতের প্রাধান্য রয়েছে। দেশটির অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন। দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা (United Nations sanctions) দেশটির অর্থনীতিকে দুর্বল করে রেখেছে। উত্তর কোরিয়ার প্রধান শিল্পগুলির মধ্যে রয়েছে কয়লা, লোহা, রাসায়নিক দ্রব্য এবং বস্ত্র। কৃষি খাতও গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রায়শই খাদ্যসংকট দেখা যায়। বর্তমানে, দেশটির অর্থনীতিতে অবকাঠামো উন্নয়ন (Infrastructure development) এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (Special Economic Zones) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।
সামরিক শক্তি
উত্তর কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তিধর দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটির সামরিক বাজেট জিডিপির একটি বড় অংশ। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র (Nuclear weapons) এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর জোর দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ। দেশটির সেনাবাহিনী বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে অন্যতম। উত্তর কোরিয়া নিজেদের সামরিক শক্তিকে আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বলে দাবি করে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
| শ্রেণী | সংখ্যা | |
| মোট সামরিক কর্মী | প্রায় ৫২ লক্ষ | |
| সক্রিয় সামরিক কর্মী | প্রায় ১.২ লক্ষ | |
| রিজার্ভ কর্মী | প্রায় ৫ লক্ষ | |
| ট্যাঙ্ক | প্রায় ৪,৪০০ | |
| আর্টিলারি | প্রায় ৮,৩০০ | |
| যুদ্ধবিমান | প্রায় ৯৪৫ | |
| হেলিকপ্টার | প্রায় ৩৩০ | |
| নৌযান | প্রায় ৬৭০ | |
| পারমাণবিক অস্ত্র | অনিশ্চিত, তবে ধারণা করা হয় ১২-৩০টি পর্যন্ত আছে |
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
উত্তর কোরিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বেশ জটিল। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে উত্তেজনাকর সম্পর্ক বজায় রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States) এবং দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea) এর সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক বিশেষভাবে খারাপ। উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে। তবে, চীন (China) এবং রাশিয়া (Russia) এর সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে ভালো। উত্তর কোরিয়া আঞ্চলিক ক্ষমতা (Regional power) হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
মানবাধিকার পরিস্থিতি
উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। দেশটির সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার, যেমন - বাকস্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করে। এখানে রাজনৈতিক বন্দীদের (Political prisoners) ওপর নির্যাতন এবং শ্রম শিবিরে কাজ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং দেশটির সরকারের কাছে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সংস্কৃতি
উত্তর কোরিয়ার সংস্কৃতি দেশটির রাজনৈতিক আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত। এখানে কিম পরিবারের প্রতি আনুগত্য এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারণার ওপর জোর দেওয়া হয়। উত্তর কোরীয় সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যবাহী কোরীয় সংস্কৃতির উপাদান বিদ্যমান, তবে তা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। কোরীয় ভাষা (Korean language) দেশটির সরকারি ভাষা। এখানকার শিল্পকলা, সঙ্গীত এবং সাহিত্য মূলত রাজনৈতিক বার্তা বহন করে।
পর্যটন
উত্তর কোরিয়ায় পর্যটন সীমিত এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ ট্যুর প্রোগ্রামের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে তাদের ওপর কড়া নজরদারি করা হয়। পর্যটকদের স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরার অনুমতি নেই এবং তাদের সরকারের সঙ্গে আসা গাইডদের সঙ্গে থাকতে হয়। পর্যটন শিল্প (Tourism industry) দেশটির অর্থনীতির একটি ছোট অংশ, তবে এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক।
প্রযুক্তি ও যোগাযোগ
উত্তর কোরিয়ায় প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সাধারণ মানুষের জন্য প্রায় নেই বললেই চলে। সরকার তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিদেশি গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে, সম্প্রতি দেশটি মোবাইল ফোন (Mobile phone) এবং সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে।
খাদ্য ও কৃষি
উত্তর কোরিয়ার খাদ্য নিরাপত্তা একটি বড় সমস্যা। দেশটির কৃষি উৎপাদন প্রায়শই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাদ্যঘাটতি (Food shortage) মোকাবিলায় দেশটি আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। সরকার খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে তা এখনো পর্যন্ত যথেষ্ট নয়।
স্বাস্থ্যসেবা
উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা দুর্বল এবং সীমিত। দেশটির স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম (Medical equipment) এবং ওষুধের অভাব দেখা যায়। তবে, সরকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শিক্ষা
উত্তর কোরিয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এখানে বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদান করা হয়, তবে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাজনৈতিক আদর্শ (Political ideology) শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক - সবকিছুই পরিবর্তনশীল। পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকলে দেশটির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে পারলে উত্তর কোরিয়ার উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
অতিরিক্ত তথ্য
- কোরীয় উপদ্বীপ
- ডিমিলিটারাইজড জোন (Demilitarized Zone)
- কিম ইল-সুং
- কিম জং-ইল
- কিম জং-উন
- পিয়ং ইয়ং মেট্রো (Pyongyang Metro)
- মাসংডন (Masongdon)
- কোরীয় সংস্কৃতি
- উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি
- উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী
- কোরীয় ওয়ার্কার্স পার্টি
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (United Nations Security Council)
- ছয়-পক্ষীয় আলোচনা (Six-party talks)
- উত্তর কোরিয়া-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক
- উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক
- ভূ-রাজনৈতিক কৌশল (Geopolitical strategy)
- আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা
- রাজনৈতিক বিশ্লেষণ (Political analysis)
- অর্থনৈতিক পূর্বাভাস (Economic forecasting)
- সামরিক কৌশল (Military strategy)
- ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume analysis)
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical analysis)
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
