ইন্টারনেট লেয়ার
ইন্টারনেট লেয়ার
ইন্টারনেট লেয়ার হল ওএসআই মডেল-এর তৃতীয় স্তর। এটি নেটওয়ার্ক লেয়ার নামেও পরিচিত। এই লেয়ারের প্রধান কাজ হল ডেটা প্যাকেটসমূহকে উৎস থেকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। এই কাজটি করার জন্য ইন্টারনেট লেয়ার আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে এবং রাউটিং প্রোটোকলের মাধ্যমে ডেটা প্যাকেটগুলির জন্য সর্বোত্তম পথ খুঁজে বের করে।
ইন্টারনেট লেয়ারের কার্যাবলী
ইন্টারনেট লেয়ারের প্রধান কার্যাবলীগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- লজিক্যাল অ্যাড্রেসিং: ইন্টারনেট লেয়ার প্রতিটি ডিভাইসের জন্য একটি অনন্য লজিক্যাল অ্যাড্রেস প্রদান করে, যা আইপি অ্যাড্রেস নামে পরিচিত। এই অ্যাড্রেসগুলি ডেটা প্যাকেটগুলিকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ব্যবহৃত হয়। সাবনেটিং এবং সিআইডিআর এর মাধ্যমে আইপি অ্যাড্রেস ব্যবস্থাপনার কাজ করা হয়।
- রাউটিং: রাউটিং হল ডেটা প্যাকেটগুলিকে উৎস থেকে গন্তব্যে পাঠানোর জন্য সর্বোত্তম পথ নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া। ইন্টারনেট লেয়ার রাউটিং প্রোটোকল ব্যবহার করে এই কাজটি করে। বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি রাউটিং প্রোটোকল হল RIP, OSPF, এবং BGP।
- প্যাকেট ফরওয়ার্ডিং: প্যাকেট ফরওয়ার্ডিং হল রাউটার বা সুইচের মাধ্যমে ডেটা প্যাকেটগুলিকে তাদের গন্তব্যের দিকে পাঠানো প্রক্রিয়া। রাউটাররা রাউটিং টেবিল ব্যবহার করে প্রতিটি প্যাকেটের জন্য পরবর্তী হপ নির্ধারণ করে।
- ফ্র্যাগমেন্টেশন এবং রিয়াসেম্বলি: ইন্টারনেট লেয়ার ডেটা প্যাকেটগুলিকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করতে পারে, যাতে সেগুলি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহজে প্রেরণ করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে ফ্র্যাগমেন্টেশন বলা হয়। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর প্যাকেটগুলিকে আবার একত্রিত করা হয়, যা রিয়াসেম্বলি নামে পরিচিত।
- ফ্লো কন্ট্রোল: ইন্টারনেট লেয়ার ডেটা প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, যাতে নেটওয়ার্কের উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
- এরর কন্ট্রোল: এই লেয়ার ডেটা ট্রান্সমিশনের সময় কোনো ত্রুটি দেখা গেলে তা সনাক্ত করে এবং সংশোধনের চেষ্টা করে।
ইন্টারনেট লেয়ারের প্রোটোকল
ইন্টারনেট লেয়ারে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ প্রোটোকলগুলো হলো:
- ইন্টারনেট প্রোটোকল (IP): এটি ইন্টারনেট লেয়ারের প্রধান প্রোটোকল। আইপি অ্যাড্রেসিং, রাউটিং এবং প্যাকেট ফরওয়ার্ডিংয়ের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। IPv4 এবং IPv6 হলো বহুল ব্যবহৃত আইপি প্রোটোকলের দুটি সংস্করণ।
- ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল (TCP): যদিও টিসিপি ট্রান্সপোর্ট লেয়ার-এর প্রোটোকল, এটি ইন্টারনেট লেয়ারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। টিসিপি নির্ভরযোগ্য ডেটা ট্রান্সমিশন নিশ্চিত করে। টিসিপি হ্যান্ডশেক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।
- ইউজার ডেটাগ্রাম প্রোটোকল (UDP): এটিও ট্রান্সপোর্ট লেয়ারের প্রোটোকল, তবে এটি টিসিপি-র চেয়ে দ্রুত এবং কম নির্ভরযোগ্য। ভিডিও স্ট্রিমিং এবং অনলাইন গেমিং-এর মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য ইউডিপি উপযুক্ত।
- ইন্টারনেট কন্ট্রোল মেসেজ প্রোটোকল (ICMP): এটি নেটওয়ার্ক ডায়াগনস্টিক এবং ত্রুটি রিপোর্টিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। পিং একটি বহুল ব্যবহৃত আইসিএমপি অ্যাপ্লিকেশন।
- অ্যাড্রেস রেজোলিউশন প্রোটোকল (ARP): এটি আইপি অ্যাড্রেসকে ম্যাক অ্যাড্রেস-এ অনুবাদ করে।
| প্রোটোকল | কাজ | ||||||||
| IP | লজিক্যাল অ্যাড্রেসিং, রাউটিং, প্যাকেট ফরওয়ার্ডিং | TCP | নির্ভরযোগ্য ডেটা ট্রান্সমিশন | UDP | দ্রুত ডেটা ট্রান্সমিশন (কম নির্ভরযোগ্য) | ICMP | নেটওয়ার্ক ডায়াগনস্টিক ও ত্রুটি রিপোর্টিং | ARP | আইপি অ্যাড্রেস থেকে ম্যাক অ্যাড্রেসে অনুবাদ |
রাউটিং অ্যালগরিদম
ইন্টারনেট লেয়ারে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাউটিং অ্যালগরিদম নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ডিসটেন্স ভেক্টর রাউটিং: এই অ্যালগরিদমে, প্রতিটি রাউটার তার প্রতিবেশী রাউটারদের সম্পর্কে দূরত্ব এবং দিকনির্দেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। RIP এই ধরনের রাউটিং অ্যালগরিদমের একটি উদাহরণ।
- লিঙ্ক স্টেট রাউটিং: এই অ্যালগরিদমে, প্রতিটি রাউটার নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ টপোলজি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং তারপর সংক্ষিপ্ততম পথ খুঁজে বের করে। OSPF এই ধরনের রাউটিং অ্যালগরিদমের একটি উদাহরণ।
- পাথ ভেক্টর রাউটিং: এটি ডিসটেন্স ভেক্টর রাউটিংয়ের উন্নত সংস্করণ, যেখানে রাউটারগুলি শুধুমাত্র তাদের প্রতিবেশী রাউটারদের সম্পর্কে তথ্য আদান প্রদান করে না, বরং সম্পূর্ণ পথের তথ্যও আদান প্রদান করে। BGP এই ধরনের রাউটিং অ্যালগরিদমের একটি উদাহরণ।
ইন্টারনেট লেয়ার এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং
যদিও ইন্টারনেট লেয়ার সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে জড়িত নয়, তবে এটি এই ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা ট্রান্সমিশন ছাড়া, রিয়েল-টাইম মূল্য ডেটা এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের মধ্যে যোগাযোগ সম্ভব নয়। ইন্টারনেট লেয়ারের ত্রুটিপূর্ণ কার্যক্রম ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
- লেটেন্সি (Latency): ইন্টারনেট লেয়ারের কারণে নেটওয়ার্ক লেটেন্সি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের গতি এবং নির্ভুলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। উচ্চ লেটেন্সি ট্রেড এক্সিকিউশনে বিলম্ব ঘটাতে পারে, যার ফলে অপ্রত্যাশিত ফলাফল হতে পারে।
- প্যাকেট লস (Packet Loss): ইন্টারনেট লেয়ারে প্যাকেট লস হলে ট্রেডিং ডেটা সঠিকভাবে পৌঁছাতে ব্যর্থ হতে পারে, যা ভুল ট্রেড সিদ্ধান্তের কারণ হতে পারে।
- নিরাপত্তা (Security): ইন্টারনেট লেয়ারের নিরাপত্তা দুর্বলতাগুলি হ্যাকিং এবং ডিডস আক্রমণ-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যা ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এবং ব্যবহারকারীর ডেটার জন্য হুমকি স্বরূপ। ফায়ারওয়াল এবং ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম ব্যবহার করে এই ঝুঁকি কমানো যায়।
ভবিষ্যৎ প্রবণতা
ইন্টারনেট লেয়ারের ভবিষ্যৎ বিকাশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে:
- IPv6-এর ব্যাপক ব্যবহার: IPv4 অ্যাড্রেস স্পেস সীমিত হওয়ায় IPv6 এর ব্যবহার বাড়ছে, যা আরও বেশি সংখ্যক ডিভাইসকে ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা দেবে।
- সফটওয়্যার-ডিফাইন্ড নেটওয়ার্কিং (SDN): এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ এবং স্বয়ংক্রিয় করা যায়।
- নেটওয়ার্ক ফাংশন ভার্চুয়ালাইজেশন (NFV): এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ফাংশনগুলিকে হার্ডওয়্যার থেকে ভার্চুয়ালাইজ করা যায়, যা খরচ কমায় এবং নমনীয়তা বাড়ায়।
- এজ কম্পিউটিং: এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেটা প্রক্রিয়াকরণকে নেটওয়ার্কের প্রান্তে নিয়ে আসা যায়, যা লেটেন্সি কমায় এবং ব্যান্ডউইথ সাশ্রয় করে।
আরও জানতে
- ওএসআই মডেল
- টিসিপি/আইপি
- সাবনেটিং
- রাউটিং প্রোটোকল
- আইপি অ্যাড্রেস
- নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা
- ডিএনএস (ডোমেইন নেম সিস্টেম)
- ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক)
- ফায়ারওয়াল
- নেটওয়ার্ক টপোলজি
- ব্যান্ডউইথ
- ল্যাটেন্সি
- প্যাকেট ট্র্যাসার
- ওয়্যারশার্ক
- সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
- নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং
- ক্লাউড কম্পিউটিং
- ডাটা সেন্টার
- সার্ভার
- রাউটার
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
