আয়কর মূল্যায়ন
আয়কর মূল্যায়ন
আয়কর মূল্যায়ন হল একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি আয়কর নির্ধারণ এবং আদায় করার জন্য সরকার কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয় এবং এর উপর প্রযোজ্য কর গণনা করা হয়। এই নিবন্ধে, আয়কর মূল্যায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
মূল্যায়ন কী?
আয়কর মূল্যায়ন হলো কর কর্তৃপক্ষের (যেমন আয়কর বিভাগ) দ্বারা একজন করদাতার আয়ের পরিমাণ এবং সেই আয়ের উপর প্রদেয় করের পরিমাণ নির্ধারণের প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট করবর্ষের জন্য করা হয়। মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হলো কর ফাঁকি রোধ করা এবং সরকারের রাজস্ব নিশ্চিত করা।
মূল্যায়নের প্রকারভেদ
আয়কর মূল্যায়ন মূলত তিন প্রকার:
১. নিয়মিত মূল্যায়ন (Regular Assessment): এটি হলো সাধারণ প্রক্রিয়া, যেখানে করদাতা তার আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন এবং কর কর্তৃপক্ষ সেই রিটার্ন যাচাই করে মূল্যায়ন সম্পন্ন করেন।
২. সেরা মূল্যায়ন (Best Judgement Assessment): যদি করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন বা দাখিল করা রিটার্ন ত্রুটিপূর্ণ হয়, সেক্ষেত্রে কর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে মূল্যায়ন করে। এটিকে সেরা মূল্যায়ন বলা হয়।
৩. পুনর্বিবেচনা মূল্যায়ন (Reassessment/Revisionary Assessment): কোনো কারণে যদি পূর্বে করা মূল্যায়ন ভুল প্রমাণিত হয় বা নতুন তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে কর কর্তৃপক্ষ পূর্বের মূল্যায়ন পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
মূল্যায়ন প্রক্রিয়া
আয়কর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে সম্পন্ন করা হয়:
১. রিটার্ন দাখিল: করদাতাকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এই রিটার্নে করদাতার আয়, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য উল্লেখ করতে হয়।
২. রিটার্ন যাচাই: আয়কর বিভাগ দাখিল করা রিটার্ন যাচাই করে। যদি কোনো অসঙ্গতি বা ত্রুটি ধরা পড়ে, তবে করদাতাকে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়।
৩. তথ্য প্রমাণ চাওয়া: যাচাইয়ের সময়, কর কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত তথ্য বা প্রমাণ চাইতে পারে। করদাতাকে যথাযথ প্রমাণ সরবরাহ করতে হয়।
৪. মূল্যায়ন আদেশ: সমস্ত তথ্য যাচাই করার পর, কর কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন আদেশ জারি করে। এই আদেশে করদাতার মোট আয়, প্রদেয় করের পরিমাণ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় উল্লেখ করা হয়।
৫. আপিল: যদি করদাতা মূল্যায়ন আদেশের সাথে সন্তুষ্ট না হন, তবে তিনি আপিল করতে পারেন। আপিলের সুযোগ এবং প্রক্রিয়া আয়কর আইনে বর্ণিত আছে।
মূল্যায়নের ভিত্তি
আয়কর মূল্যায়ন নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে করা হয়:
- আয়ের উৎস: আয়ের উৎসগুলো সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়, যেমন বেতন, ব্যবসা, বিনিয়োগ ইত্যাদি।
- ছাড় এবং কর্তন: করযোগ্য আয় থেকে বিভিন্ন ধরনের ছাড় (যেমন: 80C, 80D) এবং কর্তন (যেমন: পেশাগত খরচ) বাদ দেওয়া হয়।
- করের হার: করযোগ্য আয়ের উপর প্রযোজ্য করের হার অনুযায়ী কর গণনা করা হয়।
- বিধি ও প্রবিধান: আয়কর আইন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিধি ও প্রবিধান অনুসরণ করা হয়।
বিভিন্ন প্রকার আয় এবং মূল্যায়ন
বিভিন্ন প্রকার আয়ের মূল্যায়ন বিভিন্নভাবে করা হয়। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আয়ের উদাহরণ দেওয়া হলো:
১. বেতনভুক্ত আয়: বেতন, ভাতা, পেনশন ইত্যাদি বেতনভুক্ত আয়ের অন্তর্ভুক্ত। এই আয়ের ক্ষেত্রে, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন এবং অন্যান্য প্রযোজ্য ছাড় পাওয়া যায়।
২. ব্যবসা বা পেশা থেকে আয়: ব্যবসা বা পেশা থেকে অর্জিত আয় মূল্যায়ন করার সময়, ব্যবসার খরচ, অবচয় এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করা হয়।
৩. মূলধন লাভ: মূলধন লাভ (Capital Gain) হলো সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত আয়। এটি স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং এর উপর করের হার ভিন্ন হয়।
৪. বাড়ি ভাড়া থেকে আয়: যদি কোনো ব্যক্তি বাড়ি ভাড়া দিয়ে আয় করেন, তবে সেই আয়ের উপর কর প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে, বাড়িটির মেরামত খরচ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খরচ বাদ দেওয়া যায়।
৫. অন্যান্য উৎস থেকে আয়: লটারি, ঘোড়দৌড় বা অন্য কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় অন্যান্য আয়ের অন্তর্ভুক্ত।
কর পরিকল্পনা এবং মূল্যায়ন
কর পরিকল্পনা (Tax Planning) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে করদাতারা বৈধভাবে তাদের করের বোঝা কমাতে পারে। কর পরিকল্পনার মাধ্যমে, করদাতারা বিভিন্ন বিনিয়োগ এবং ছাড়ের সুযোগ গ্রহণ করে তাদের আয়কর সাশ্রয় করতে পারে।
মূল্যায়নের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত:
- বিনিয়োগ: বিভিন্ন বিনিয়োগ যেমন পিপিএফ, এনএসিসি, এলআইসি ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে কর সাশ্রয় করা যায়।
- ছাড়: আয়কর আইনের বিভিন্ন ধারার অধীনে উপলব্ধ ছাড়গুলো গ্রহণ করতে হবে।
- সঠিক রিটার্ন দাখিল: সময়মতো এবং সঠিকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
- হিসাব রাখা: সমস্ত আয় এবং খরচের হিসাব সঠিকভাবে রাখতে হবে, যাতে মূল্যায়নের সময় কোনো সমস্যা না হয়।
ডিজিটাল মূল্যায়ন
বর্তমানে, আয়কর বিভাগ ডিজিটাল মূল্যায়ন (Digital Assessment) প্রক্রিয়া চালু করেছে। এর মাধ্যমে, করদাতারা অনলাইনে তাদের রিটার্ন দাখিল করতে এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হতে পারে। ডিজিটাল মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং স্বচ্ছ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
- আয়কর রিটার্ন
- আয়কর আইন
- প্যান কার্ড
- আধার কার্ড
- ফর্ম 16
- ফর্ম 26AS
- টিডিএস (TDS)
- জিএসটি (GST)
- পয়েন্টারস
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI)
- MACD
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
- বলিঙ্গার ব্যান্ডস
- স্টোকাস্টিক অসিলেটর
- ডাবল টপ এবং ডাবল বটম
- হেড অ্যান্ড শোল্ডারস প্যাটার্ন
- ট্রেন্ড লাইন
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স
উপসংহার
আয়কর মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা করদাতাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। সঠিক কর পরিকল্পনা এবং সময়মতো রিটার্ন দাখিল করে করদাতারা তাদের করের বোঝা কমাতে পারে এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। এই বিষয়ে আরো জানতে আয়কর বিভাগের ওয়েবসাইট ভিজিট করা যেতে পারে।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
