আনইউজড রিসোর্স

আনইউজড রিসোর্স

ভূমিকা

আনইউজড রিসোর্স বা অব্যবহৃত সম্পদ বলতে সেই সমস্ত সম্পদকে বোঝায়, যা কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশের কাছে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করা হয় না। এই সম্পদগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও আনইউজড রিসোর্স চিহ্নিত করে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে, আনইউজড রিসোর্সের ধারণা, প্রকারভেদ, কারণ, প্রভাব এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আনইউজড রিসোর্সের ধারণা

আনইউজড রিসোর্স হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে কোনো সম্পদের সম্পূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও সেটি অব্যবহৃত থাকে। এই সম্পদগুলো প্রাকৃতিক, মানবসৃষ্ট বা আর্থিক যেকোনো কিছুই হতে পারে। একটি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন - খনিজ তেল, গ্যাস, বনভূমি, পানি ইত্যাদি যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হয়, তবে তা আনইউজড রিসোর্সের অন্তর্ভুক্ত হবে। একইভাবে, কোনো ব্যক্তির দক্ষতা, জ্ঞান, বা আর্থিক সঞ্চয় যদি বিনিয়োগের অভাবে অব্যবহৃত থাকে, তবে সেটিও আনইউজড রিসোর্স হিসেবে গণ্য হবে। অর্থনীতি এবং উন্নয়ন অধ্যয়নে এই ধারণাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আনইউজড রিসোর্সের প্রকারভেদ

আনইউজড রিসোর্স বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:

১. প্রাকৃতিক সম্পদ: কোনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন - খনিজ সম্পদ, বনভূমি, জলবিদ্যুৎ, সৌরশক্তি ইত্যাদি যদি প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, বিনিয়োগের অভাব বা অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যবহার করা না হয়, তবে তা আনইউজড রিসোর্স হিসেবে বিবেচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সুন্দরবনের বিশাল বনভূমি যদি পরিবেশবান্ধব উপায়ে ব্যবহার করা না যায়, তবে তা একটি আনইউজড রিসোর্স হিসেবে থেকে যাবে।

২. মানব সম্পদ: মানব সম্পদ হলো একটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। কিন্তু শিক্ষার অভাব, প্রশিক্ষণের সুযোগের অভাব, কর্মসংস্থানের অভাব বা ভুল নীতি গ্রহণের কারণে যদি মানব সম্পদের সম্পূর্ণ ব্যবহার সম্ভব না হয়, তবে তা আনইউজড রিসোর্স হিসেবে গণ্য হবে। শিক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থান এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩. আর্থিক সম্পদ: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে অলসভাবে পড়ে থাকা অর্থ, বিনিয়োগের সুযোগের অভাব বা ভুল বিনিয়োগের কারণে যদি লাভজনকভাবে ব্যবহার করা না যায়, তবে তা আনইউজড রিসোর্স হিসেবে বিবেচিত হয়। বিনিয়োগ এবং আর্থিক পরিকল্পনা এক্ষেত্রে জরুরি।

৪. প্রযুক্তিগত সম্পদ: উন্নত প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও যদি তা ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, পরিকাঠামো বা জ্ঞানের অভাব থাকে, তবে সেই প্রযুক্তি আনইউজড রিসোর্স হিসেবে থেকে যায়। প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

আনইউজড রিসোর্সের কারণ

আনইউজড রিসোর্স সৃষ্টির পেছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:

১. প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর অভাবে সম্পদ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সমস্যা প্রকট।

২. বিনিয়োগের অভাব: সম্পদের ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব একটি বড় বাধা। অনেক সময় সরকারি বা বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে দ্বিধা বোধ করে।

৩. অব্যবস্থাপনা: সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবে অনেক সময় সম্পদ অব্যবহৃত থেকে যায়।

৪. রাজনৈতিক অস্থিরতা: রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতি বিনিয়োগের পরিবেশকে নষ্ট করে দেয়, যার ফলে সম্পদের ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়।

৫. শিক্ষার অভাব: মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্য শিক্ষার অভাব একটি বড় অন্তরায়। দক্ষ জনশক্তির অভাবে প্রযুক্তি ও অন্যান্য সম্পদের ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়ে।

৬. বাজারের অভাব: উৎপাদিত পণ্যের জন্য পর্যাপ্ত বাজারের অভাব থাকলে উৎপাদনে আগ্রহ কমে যায়, যার ফলে সম্পদ অব্যবহৃত থাকে।

আনইউজড রিসোর্সের প্রভাব

আনইউজড রিসোর্সের কারণে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রভাব আলোচনা করা হলো:

১. অর্থনৈতিক ক্ষতি: আনইউজড রিসোর্সের কারণে উৎপাদনশীলতা কমে যায়, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।

২. দারিদ্র্য বৃদ্ধি: সম্পদের সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যায়, যা দারিদ্র্য বৃদ্ধি করে।

৩. সামাজিক অস্থিরতা: অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

৪. পরিবেশগত ক্ষতি: অনেক সময় অব্যবহৃত সম্পদ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন - খনিজ সম্পদ অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে পরিবেশ দূষিত হতে পারে।

৫. সুযোগ ব্যয়: আনইউজড রিসোর্স অন্য কোনো লাভজনক খাতে ব্যবহারের সুযোগ নষ্ট করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে আনইউজড রিসোর্সের ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে আনইউজড রিসোর্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এখানে, আনইউজড রিসোর্স বলতে সেইসব সুযোগগুলোকে বোঝায়, যা একজন ট্রেডার সাধারণত এড়িয়ে যায় বা ব্যবহার করতে পারে না। এই সুযোগগুলো চিহ্নিত করে সঠিক কৌশল অবলম্বন করলে ট্রেডিংয়ে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:

১. মার্কেট বিশ্লেষণ: অনেক ট্রেডার শুধুমাত্র জনপ্রিয় কারেন্সি পেয়ার বা স্টক নিয়ে ট্রেড করে। কিন্তু কম পরিচিত বা আনএক্সপ্লোরড মার্কেটগুলোতেও লাভের সুযোগ থাকে। এই মার্কেটগুলো বিশ্লেষণ করে আনইউজড রিসোর্স খুঁজে বের করা যেতে পারে। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ফা fundamental বিশ্লেষণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

২. টাইম ফ্রেম: ট্রেডাররা সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু টাইম ফ্রেমে (যেমন - ৫ মিনিট, ১৫ মিনিট, ১ ঘণ্টা) ট্রেড করে। কিন্তু অন্যান্য টাইম ফ্রেমেও ট্রেডিংয়ের সুযোগ থাকতে পারে। বিভিন্ন টাইম ফ্রেমে মার্কেট বিশ্লেষণ করে আনইউজড রিসোর্স চিহ্নিত করা যায়।

৩. ইন্ডিকেটর: অনেক ট্রেডার নির্দিষ্ট কিছু ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ট্রেড করে। কিন্তু অন্যান্য ইন্ডিকেটর বা ইন্ডিকেটরের সমন্বয়েও ট্রেডিংয়ের সুযোগ থাকে। নতুন ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে আনইউজড রিসোর্স খুঁজে বের করা সম্ভব। যেমন - মুভিং এভারেজ , আরএসআই , MACD ইত্যাদি।

৪. রিস্ক ম্যানেজমেন্ট: ট্রেডাররা সাধারণত স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট অর্ডার ব্যবহার করে রিস্ক ম্যানেজ করে। কিন্তু অন্যান্য রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কৌশলও (যেমন - পজিশন সাইজিং, মার্টিংগেল) ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. ব্রোকার এবং প্ল্যাটফর্ম: কিছু ট্রেডার নির্দিষ্ট ব্রোকারের প্ল্যাটফর্মে ট্রেড করতে পছন্দ করে। কিন্তু অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোতেও উন্নত ফিচার, কম স্প্রেড এবং বেশি লাভের সুযোগ থাকতে পারে। বিভিন্ন ব্রোকার ও প্ল্যাটফর্ম যাচাই করে আনইউজড রিসোর্স খুঁজে বের করা যায়। ব্রোকার নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

৬. ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি অ্যাসেটের কতগুলো ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে তার পরিমাণ। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে মার্কেটের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ভলিউম এবং প্রাইস অ্যাকশন এর মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।

৭. সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ: সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ হলো মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের মানসিক অবস্থা মূল্যায়ন করা। এটি নিউজ, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করে করা হয়। সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণের মাধ্যমে মার্কেটের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

৮. নিউজ এবং ইভেন্ট: বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিউজ এবং ইভেন্ট মার্কেটের ওপর প্রভাব ফেলে। এই নিউজ এবং ইভেন্টগুলো আগে থেকে চিহ্নিত করে ট্রেডিংয়ের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার এক্ষেত্রে খুব উপযোগী।

৯. কোরrelation ট্রেডিং: দুটি ভিন্ন অ্যাসেটের মধ্যে কোরrelation (সম্পর্ক) থাকলে একটির মুভমেন্ট অন্যটিকে প্রভাবিত করতে পারে। এই কোরrelation ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ তৈরি করা যায়।

১০. আর্বিট্রেজ: বিভিন্ন মার্কেটে একই অ্যাসেটের দামের পার্থক্য থাকলে আর্বিট্রেজের মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব।

১১. অপশন চেইন বিশ্লেষণ: অপশন চেইন বিশ্লেষণ করে মার্কেটের ভবিষ্যৎ মুভমেন্ট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।

১২. পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন: পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন হলো বিভিন্ন অ্যাসেটে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো।

১৩. অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং: অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং হলো কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড করা।

১৪. সোশ্যাল ট্রেডিং: সোশ্যাল ট্রেডিং হলো অন্যান্য সফল ট্রেডারদের ট্রেড কপি করে ট্রেড করা।

১৫. ফান্ডামেন্টাল ডেটা বিশ্লেষণ: কোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, ম্যানেজমেন্ট এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া।

আনইউজড রিসোর্স চিহ্নিত করার কৌশল

১. মার্কেট স্ক্যানিং: নিয়মিত মার্কেট স্ক্যান করে কম পরিচিত এবং সম্ভাবনাময় সম্পদগুলো খুঁজে বের করা।

২. ডেটা বিশ্লেষণ: বিভিন্ন অর্থনৈতিক ডেটা, নিউজ এবং ইভেন্ট বিশ্লেষণ করে ট্রেডিংয়ের সুযোগগুলো চিহ্নিত করা।

৩. টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর: বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে মার্কেটের ট্রেন্ড এবং প্যাটার্নগুলো শনাক্ত করা।

৪. রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট: ট্রেডিংয়ের আগে ঝুঁকির মূল্যায়ন করা এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

৫. পোর্টফোলিও রিভিউ: নিয়মিত পোর্টফোলিও রিভিউ করে আনইউজড রিসোর্সগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করা।

উপসংহার

আনইউজড রিসোর্স একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ধারণা, যা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে আনইউজড রিসোর্স চিহ্নিত করে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করলে ট্রেডিংয়ে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। তাই, ট্রেডারদের উচিত মার্কেট বিশ্লেষণ, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এবং নতুন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে আনইউজড রিসোর্সগুলো খুঁজে বের করা এবং সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করা।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ট্রেডিং কৌশল সম্পর্কে আরও জানতে অন্যান্য নিবন্ধগুলো দেখুন।

বিষয়শ্রেণী:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ