অ্যাডিডাস

অ্যাডিডাস: ইতিহাস, অগ্রগতি এবং ব্যবসায়িক কৌশল

ভূমিকা অ্যাডিডাস (Adidas) বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি। এটি শুধু একটি ব্র্যান্ড নয়, বরং ক্রীড়া ও ফ্যাশন সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই নিবন্ধে অ্যাডিডাসের ইতিহাস, অগ্রগতি এবং ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক পর্যায় অ্যাডিডাসের যাত্রা শুরু হয় জার্মানির হার্জোগেনরাখ শহরে। অ্যাডলফ ডাসলার (Adolf Dassler) এবং তার ভাই রুডলফ ডাসলার (Rudolf Dassler) ১৯২৪ সালে ‘ডাসলার ব্রাদার্স শু ফ্যাক্টরি’ (Dassler Brothers Shoe Factory) নামে একটি জুতা তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে তারা মূলত অ্যাথলেটিক জুতা তৈরি করত। ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিক-এ ஜெসি Owens-এর পায়ের জুতা সরবরাহ করার মাধ্যমে ডাসলার ব্রাদার্স খ্যাতি অর্জন করে।

ভাইদের মধ্যে বিভেদ ও অ্যাডিডাসের জন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অ্যাডলফ ও রুডলফের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, যার ফলে ১৯৪৭ সালে তারা আলাদা হয়ে যান। অ্যাডলফ ডাসলার ‘অ্যাডিডাস’ (Adidas) নামে নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। নামের উৎপত্তি অ্যাডলফের নামের প্রথম অংশ ‘অ্যাড’ (Ad) এবং তার উপাধি ‘ডাসলার’ (Dassler) থেকে। রুডলফ ডাসলার ‘পুমা’ (Puma) নামে আরেকটি জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৫০-এর দশক: সাফল্যের শুরু অ্যাডিডাস ১৯৫০-এর দশকে ফুটবলের জগতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। তারা বিভিন্ন ফুটবল দল এবং খেলোয়াড়দের জন্য জুতা তৈরি করে। ১৯৫৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ-এ পশ্চিম জার্মানির ফুটবল দল অ্যাডিডাসের জুতা পরে জয়ী হয়, যা কোম্পানির পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা অনেক বাড়িয়ে দেয়।

১৯৬০-১৯৮০-এর দশক: বৈশ্বিক বিস্তার ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে অ্যাডিডাস তাদের ব্যবসার পরিধি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়। তারা হকি, বাস্কেটবল, টেনিস এবং অন্যান্য খেলার সরঞ্জাম তৈরি শুরু করে। ১৯৭০-এর দশকে অ্যাডিডাসের ‘ট্রাইফোলিও’ (Trefoil) লোগো চালু হয়, যা পরবর্তীতে কোম্পানির অন্যতম পরিচিত அடையாள হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

১৯৮০-এর দশক ছিল অ্যাডিডাসের জন্য বেশ কঠিন। নাইকি-র মতো নতুন প্রতিযোগীদের উত্থান এবং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে কোম্পানিটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

১৯৯০-এর দশক: পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণ ১৯৯০-এর দশকে রবার্ট লুইস-ড্রেফাস (Robert Louis-Dreyfus) অ্যাডিডাসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি কোম্পানিটিকে পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই সময়ে অ্যাডিডাস ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইল পণ্যের দিকে মনোযোগ দেয় এবং ‘অ্যাডিডাস অরিজিনালস’ (Adidas Originals) নামে একটি নতুন বিভাগ চালু করে।

২০০০-এর দশক: নতুন উদ্ভাবন ও প্রবৃদ্ধি ২০০০-এর দশকে অ্যাডিডাস নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করে। তারা ‘অ্যাডিডাস টেক’ (Adidas Tech) নামে উন্নতমানের জুতা তৈরি করে, যা খেলোয়াড়দের আরও ভালো পারফর্ম করতে সাহায্য করে। এই সময়ে অ্যাডিডাস রিebok-কে কিনে নেয়, যা তাদের ব্যবসার পরিধি আরও বাড়াতে সাহায্য করে।

বর্তমান অবস্থা বর্তমানে অ্যাডিডাস বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি। তারা জুতা, পোশাক, অ্যাক্সেসরিজ এবং অন্যান্য ক্রীড়া সরঞ্জাম তৈরি করে। অ্যাডিডাস ফুটবল, বাস্কেটবল, টেনিস, গলফ, দৌড় এবং অন্যান্য খেলার সাথে জড়িত। কোম্পানিটি স্থায়িত্ব এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ওপর জোর দিচ্ছে এবং পরিবেশ-বান্ধব পণ্য তৈরি করার চেষ্টা করছে।

অ্যাডিডাসের ব্যবসায়িক কৌশল অ্যাডিডাসের সাফল্যের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কৌশল রয়েছে। নিচে কয়েকটি কৌশল আলোচনা করা হলো:

১. ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং অ্যাডিডাস তাদের ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিংয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তারা বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ এবং সেলিব্রিটিদের সাথে চুক্তি করে তাদের পণ্যের প্রচার চালায়। অ্যাডিডাসের ‘ইম্পসিবল ইজ নাথিং’ (Impossible is Nothing) এবং ‘ক্রিয়েট দ্য নিউ’ (Create the New) এর মতো স্লোগানগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়।

২. পণ্য বৈচিত্র্যকরণ অ্যাডিডাস বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া সরঞ্জাম এবং ফ্যাশন পণ্য তৈরি করে, যা বিভিন্ন গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করে। তারা উচ্চ কার্যকারিতা সম্পন্ন জুতা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহারের পোশাক পর্যন্ত সবকিছু সরবরাহ করে।

৩. প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন অ্যাডিডাস সবসময় নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর জোর দেয়। তারা বুস্ট (Boost) এবং প্রাইমনিট (Primeknit) এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতমানের জুতা তৈরি করে, যা খেলোয়াড়দের আরও ভালো পারফর্ম করতে সাহায্য করে।

৪. সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা অ্যাডিডাসের একটি শক্তিশালী সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা রয়েছে, যা তাদের পণ্য দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে বিশ্বব্যাপী বিতরণ করতে সাহায্য করে।

৫. অংশীদারিত্ব এবং অধিগ্রহণ অ্যাডিডাস বিভিন্ন কোম্পানির সাথে অংশীদারিত্ব এবং অধিগ্রহণের মাধ্যমে তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছে। রিebok-কে কিনে নেওয়া এর একটি উদাহরণ।

অ্যাডিডাসের প্রধান পণ্যসমূহ অ্যাডিডাস বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করে। এর মধ্যে কিছু প্রধান পণ্য নিচে উল্লেখ করা হলো:

• জুতা: অ্যাডিডাসের জুতা তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। তারা ফুটবল জুতা, বাস্কেটবল জুতা, দৌড়ের জুতা, টেনিস জুতা এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জুতা তৈরি করে।
• পোশাক: অ্যাডিডাস ক্রীড়া পোশাক, ফ্যাশন পোশাক এবং আন্ডারগার্মেন্টস তৈরি করে।
• অ্যাক্সেসরিজ: অ্যাডিডাস টুপি, মোজা, গ্লাভস, ব্যাগ এবং অন্যান্য অ্যাক্সেসরিজ তৈরি করে।
• সরঞ্জাম: অ্যাডিডাস ফুটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল এবং অন্যান্য খেলার জন্য সরঞ্জাম তৈরি করে।

অ্যাডিডাসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অ্যাডিডাস ভবিষ্যতে তাদের ব্যবসার পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে এবং ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে। এছাড়াও, তারা স্থায়িত্ব এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ওপর আরও বেশি জোর দিচ্ছে এবং পরিবেশ-বান্ধব পণ্য তৈরি করার চেষ্টা করছে।

টেবিল: অ্যাডিডাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক

অ্যাডিডাসের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক

বছর	ঘটনা	১৯২৪	ডাসলার ব্রাদার্স শু ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা	১৯৩৭	অ্যাডলফ ডাসলারের প্রথম স্পাইকড জুতা তৈরি	১৯৪9	অ্যাডিডাস কোম্পানির প্রতিষ্ঠা	১৯৫৪	পশ্চিম জার্মানির ফুটবল দল অ্যাডিডাসের জুতা পরে বিশ্বকাপ জয়ী	১৯৭০	ট্রাইফোলিও লোগো চালু	১৯৯০	রবার্ট লুইস-ড্রেফাসের সিইও হিসেবে যোগদান	২০০০	রিebok অধিগ্রহণ	২০০৮	বুস্ট প্রযুক্তি চালু	২০১৬	প্রাইমনিট প্রযুক্তি চালু

উপসংহার অ্যাডিডাস একটি সফল ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি, যা তার ইতিহাস, উদ্ভাবন, এবং ব্যবসায়িক কৌশল দিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। তারা সবসময় গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। ভবিষ্যতে অ্যাডিডাস আরও নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবে বলে আশা করা যায়।

আরও জানতে:

• ক্রীড়া সরঞ্জাম শিল্প
• ফুটবল সরঞ্জাম
• জুতা ডিজাইন
• ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপনা
• মার্কেটিং কৌশল
• যোগাযোগ ব্যবস্থা
• পশ্চিম জার্মানি
• বার্লিন অলিম্পিক
• ফিফা বিশ্বকাপ
• রিebok
• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
• ভলিউম বিশ্লেষণ
• আর্থিক প্রতিবেদন
• শেয়ার বাজার
• বিনিয়োগ
• অর্থনীতি
• আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
• supply chain management
• ডিজিটাল মার্কেটিং
• ই-কমার্স
• স্থায়িত্ব

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ