অভিসৃতি
অভিসৃতি
অভিসৃতি (Rhetoric) হলো убеждения এবং শ্রোতাদের প্রভাবিত করার শিল্প। এটি যোগাযোগ এবং যুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয় - রাজনৈতিক বক্তৃতা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কথোপকথন পর্যন্ত। অভিসৃতি কেবল সুন্দরভাবে কথা বলা নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ভাষার কার্যকরী ব্যবহার।
অভিসৃতির ইতিহাস
অভিসৃতির চর্চা প্রাচীন গ্রিসে শুরু হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিস-এর দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদরা, যেমন প্লেটো এবং অ্যারিস্টটল, এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অ্যারিস্টটল তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রিটোরিক’-এ অভিসৃতির তিনটি প্রধান উপাদান উল্লেখ করেছেন:
- ইথোস (Ethos): বক্তার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং চরিত্র।
- প্যাথোস (Pathos): শ্রোতাদের আবেগ এবং অনুভূতিকে প্রভাবিত করা।
- লোগোস (Logos): যুক্তি এবং প্রমাণের মাধ্যমে শ্রোতাদের বোঝানো।
রোমান সাম্রাজ্যে সিকেরো এবং কুইন্টিলিয়ান-এর মতো বাগ্মিতার বিশেষজ্ঞরা অভিসৃতির চর্চাকে আরও উন্নত করেন। মধ্যযুগে, চার্চের বক্তৃতা এবং ধর্মীয় বিতর্কে অভিসৃতির ব্যবহার দেখা যায়। 文艺复兴-এর সময়, মানবতাবাদীরা (Humanists) প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান অভিসৃতির আদর্শগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করেন। আধুনিক যুগে, অভিসৃতি যোগাযোগ এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
অভিসৃতির উপাদান
অভিসৃতির মূল উপাদানগুলো হলো:
| উপাদান | বিবরণ | উদাহরণ | ||||||||||||
| ইথোস (Ethos) | বক্তার চরিত্র, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং দক্ষতা। শ্রোতারা বক্তাকে কতটা বিশ্বাস করে তার উপর নির্ভর করে। | একজন ডাক্তারের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ। | পাথোস (Pathos) | শ্রোতাদের আবেগ, অনুভূতি এবং মূল্যবোধকে প্রভাবিত করা। | কোনো হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা। | লোগোস (Logos) | যুক্তি, প্রমাণ এবং তথ্য ব্যবহার করে শ্রোতাদের বোঝানো। | পরিসংখ্যান এবং ডেটা দিয়ে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন। | কাইরোস (Kairos) | সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলা। সুযোগ এবং পরিস্থিতির বিবেচনা করা। | প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ কার্যক্রমের আবেদন। | স্টাইλος (Stylos) | ভাষার ধরণ এবং উপস্থাপনার ভঙ্গি। | কাব্যিক ভাষা অথবা সরল ও স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার। |
অভিসৃতির প্রকারভেদ
অভিসৃতি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার আলোচনা করা হলো:
- আলোচনামূলক অভিসৃতি (Deliberative Rhetoric): এটি রাজনৈতিক বক্তৃতা এবং নীতি নির্ধারণের সাথে সম্পর্কিত। এখানে বক্তা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করেন এবং শ্রোতাদের কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করেন। রাজনৈতিক বিজ্ঞান এই ধরণের অভিসৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
- বিচারিক অভিসৃতি (Judicial Rhetoric): এটি সাধারণত আদালত বা আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। বক্তা কোনো ঘটনা বা ব্যক্তির দোষ-গুণ বিচার করার জন্য যুক্তি উপস্থাপন করেন। আইন এবং ন্যায়বিচার এর সাথে এটি জড়িত।
- প্রশংসামূলক অভিসৃতি (Epideictic Rhetoric): এটি কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রশংসা বা নিন্দা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত এটি উৎসব, স্মৃতিসৌধ বা বিদায় অনুষ্ঠানে দেখা যায়। উৎসব এবং স্মৃতিচারণ এর অংশ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
- বৈজ্ঞানিক অভিসৃতি (Scientific Rhetoric): এই প্রকার অভিসৃতি গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞান এবং গবেষণা এই ধরণের অভিসৃতির মূল ভিত্তি।
অভিসৃতির কৌশল
অভিসৃতিতে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো:
- রূপক (Metaphor): একটি বস্তুর বৈশিষ্ট্য অন্য বস্তুর উপর আরোপ করা।
- উপমা (Simile): দুটি বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য তুলনা করা।
- অতিরঞ্জন (Hyperbole): কোনো বিষয়কে বাড়িয়ে বলা।
- বিপরীতকরণ (Antithesis): বিপরীত ধারণা ব্যবহার করে বক্তব্যকে জোরালো করা।
- পুনরাবৃত্তি (Repetition): কোনো শব্দ বা বাক্য বারবার ব্যবহার করা।
- প্রশ্নবোধক বাক্য (Rhetorical Question): শ্রোতাদের চিন্তা করতে উৎসাহিত করার জন্য প্রশ্ন করা, যার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
- অ্যানাপোরা (Anaphora): পরপর কয়েকটি বাক্যে একই শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা।
- এপিফোর (Epiphora): বাক্যের শেষে একই শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা।
এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে বক্তা তাঁর বক্তব্যকে আরও আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী করে তুলতে পারেন।
অভিসৃতি এবং যোগাযোগ
অভিসৃতি যোগাযোগের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কার্যকর যোগাযোগের জন্য অভিসৃতির জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। যোগাযোগের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য অভিসৃতির চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিসৃতি আমাদের শেখায় কিভাবে:
- শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।
- যুক্তিপূর্ণভাবে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করা যায়।
- শ্রোতাদের আবেগ এবং অনুভূতিকে প্রভাবিত করা যায়।
- বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উপযুক্ত ভাষা এবং ভঙ্গি ব্যবহার করা যায়।
- বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।
আধুনিক অভিসৃতি
আধুনিক যুগে অভিসৃতির চর্চা গণমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, রাজনীতি, এবং শিক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত। টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমগুলির মাধ্যমে অভিসৃতি নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
- রাজনৈতিক অভিসৃতি: নির্বাচনী প্রচার এবং জনসমাবেশনে রাজনৈতিক নেতারা ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য অভিসৃতির কৌশল ব্যবহার করেন।
- বিজ্ঞাপন: বিজ্ঞাপন নির্মাতারা পণ্য বা পরিষেবার চাহিদা তৈরি করার জন্য আকর্ষণীয় এবং убежденияমূলক বার্তা তৈরি করেন। বিপণন কৌশল এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- গণমাধ্যম: সাংবাদিক এবং সংবাদ উপস্থাপকরা তথ্য উপস্থাপন এবং জনমত গঠনে অভিসৃতির নীতি অনুসরণ করেন। সাংবাদিকতা এবং গণযোগাযোগ এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
- শিক্ষা: শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত করার জন্য অভিসৃতির কৌশল ব্যবহার করেন। শিক্ষণ পদ্ধতি এবং শিক্ষাক্রম এর সাথে এটি সম্পর্কিত।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে অভিসৃতি কৌশলগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে, বাজারের প্রবণতা এবং বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা বোঝা অত্যাবশ্যক। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) এবং ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: এই পদ্ধতিতে ঐতিহাসিক মূল্য এবং ভলিউম ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন (Chart Patterns), যেমন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস (Head and Shoulders), ডাবল টপ (Double Top), এবং ডাবল বটম (Double Bottom) ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি অনুমান করা যায়। মুভিং এভারেজ (Moving Average), আরএসআই (RSI - Relative Strength Index), এবং এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence) এর মতো সূচক (Indicators) ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।
ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায় একটি নির্দিষ্ট মূল্যে কত সংখ্যক শেয়ার কেনা বা বেচা হয়েছে। উচ্চ ভলিউম সাধারণত শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে। ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) এবং অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এর মতো সূচকগুলি ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই উভয় বিশ্লেষণই বিনিয়োগকারীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে এবং ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা প্রতিটি ট্রেডারের অবশ্যই জানতে হবে।
অভিসৃতির সীমাবদ্ধতা
অভিসৃতি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:
- মানবিক দুর্বলতা: মানুষের আবেগ এবং পক্ষপাতিত্ব অভিসৃতির কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে।
- নৈতিক বিবেচনা: অভিসৃতিকে ভুল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলে তা বিভ্রান্তি এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে।
- প্রাসঙ্গিকতা: সময়ের সাথে সাথে অভিসৃতির কৌশল এবং প্রভাব পরিবর্তিত হতে পারে।
- সাংস্কৃতিক পার্থক্য: বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অভিসৃতির নিয়ম এবং প্রত্যাশা ভিন্ন হতে পারে।
উপসংহার
অভিসৃতি হলো убеждения এবং যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এর ইতিহাস, উপাদান, প্রকারভেদ এবং কৌশলগুলি অধ্যয়ন করে আমরা আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারি এবং অন্যদের প্রভাবিত করতে শিখতে পারি। আধুনিক যুগে, অভিসৃতির চর্চা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত, এবং এর গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। টেকনিক্যাল এবং ভলিউম বিশ্লেষণের মতো আধুনিক সরঞ্জামগুলির সাথে অভিসৃতির সমন্বয় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে। তবে, অভিসৃতির সীমাবদ্ধতাগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নৈতিকভাবে এটি ব্যবহার করা জরুরি।
আরও দেখুন
- যোগাযোগ
- বাগ্মিতা
- যুক্তিবিদ্যা
- মনোবিজ্ঞান
- গণমাধ্যম
- রাজনৈতিক যোগাযোগ
- বিপণন
- বিজ্ঞাপন
- শিক্ষণ পদ্ধতি
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- চার্ট প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই
- এমএসিডি
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- প্লেটো
- অ্যারিস্টটল
- সিকেরো
- কুইন্টিলিয়ান
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
