অপারেশনাল সিস্টেম

অপারেশনাল সিস্টেম

অপারেশনাল সিস্টেম (Operating System বা OS) হলো একটি কম্পিউটার সিস্টেম-এর মূল সফটওয়্যার। এটি হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার-এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে, এবং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ প্রদান করে। একটি অপারেশনাল সিস্টেম ছাড়া, কম্পিউটার ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব।

অপারেশনাল সিস্টেমের কার্যাবলী

অপারেশনাল সিস্টেমের প্রধান কাজগুলি হলো:

• রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Resource Management): কম্পিউটার সিস্টেমের সমস্ত রিসোর্স, যেমন - সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU), মেমরি, ডিস্ক ড্রাইভ, এবং ইনপুট/আউটপুট ডিভাইস ইত্যাদি পরিচালনা করা।
• প্রসেস ম্যানেজমেন্ট (Process Management): চলমান অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলির (প্রসেস) সৃষ্টি, সময়সূচী এবং সমাপ্তি নিয়ন্ত্রণ করা।
• মেমরি ম্যানেজমেন্ট (Memory Management): মেমরির ব্যবহার ট্র্যাক করা এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য মেমরি বরাদ্দ ও মুক্ত করা।
• ফাইল সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট (File System Management): ফাইল এবং ডিরেক্টরি তৈরি, সংরক্ষণ, এবং ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কাঠামো প্রদান করা।
• ইনপুট/আউটপুট ম্যানেজমেন্ট (Input/Output Management): ইনপুট ডিভাইস থেকে ডেটা গ্রহণ এবং আউটপুট ডিভাইস-এ ডেটা পাঠানো নিয়ন্ত্রণ করা।
• ইউজার ইন্টারফেস (User Interface): ব্যবহারকারীর সাথে কম্পিউটারের মিথস্ক্রিয়া সহজ করার জন্য একটি মাধ্যম তৈরি করা। এটি গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) অথবা কমান্ড লাইন ইন্টারফেস (CLI) হতে পারে।
• সিকিউরিটি (Security): সিস্টেমকে অননুমোদিত অ্যাক্সেস এবং ক্ষতিকারক সফটওয়্যার থেকে রক্ষা করা।

অপারেশনাল সিস্টেমের প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের অপারেশনাল সিস্টেম রয়েছে, প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারের ক্ষেত্র রয়েছে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার উল্লেখ করা হলো:

• ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম (Batch Operating System): এই সিস্টেমে, একই ধরনের কাজগুলি ব্যাচে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এটি ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য উপযুক্ত, যেখানে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না।
• টাইম-শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম (Time-Sharing Operating System): এই সিস্টেমে, একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। CPU-এর সময় প্রতিটি ব্যবহারকারীর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়, যা দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদান করে। মাল্টিটাস্কিং এর একটি উদাহরণ।
• রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Real-Time Operating System): এই সিস্টেমে, অ্যাপ্লিকেশনগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়। এটি রোবোটিক্স, এম্বেডেড সিস্টেম, এবং শিল্প নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
• ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম (Distributed Operating System): এই সিস্টেমে, একাধিক কম্পিউটার একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে এবং একটি একক সিস্টেম হিসাবে কাজ করে।
• নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম (Network Operating System): এটি নেটওয়ার্কের রিসোর্সগুলি পরিচালনা করে এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশন শেয়ার করার সুবিধা দেয়।
• মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম (Mobile Operating System): স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট কম্পিউটারের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। যেমন - অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস।
• পার্সোনাল কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম (Personal Computer Operating System): ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা, যেমন - উইন্ডোজ, লিনাক্স, এবং ম্যাকওএস।

জনপ্রিয় অপারেশনাল সিস্টেম

• উইন্ডোজ (Windows): মাইক্রোসফট দ্বারা তৈরি, এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম। এটি ব্যবহার করা সহজ এবং বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উইন্ডোজের ইতিহাস
• লিনাক্স (Linux): একটি ওপেন-সোর্স অপারেটিং সিস্টেম, যা স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং নমনীয়তার জন্য পরিচিত। এটি সার্ভার, ডেস্কটপ এবং এম্বেডেড সিস্টেমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত হয়। লিনাক্স কার্নেল
• ম্যাকওএস (macOS): অ্যাপল দ্বারা তৈরি, এটি ম্যাক কম্পিউটারগুলির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি তার ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস এবং শক্তিশালী বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য পরিচিত। অ্যাপল কম্পিউটার
• অ্যান্ড্রয়েড (Android): গুগল দ্বারা তৈরি, এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। এটি স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট
• আইওএস (iOS): অ্যাপল দ্বারা তৈরি, এটি আইফোন, আইপ্যাড এবং আইপড টাচের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি তার নিরাপত্তা, সরলতা এবং কর্মক্ষমতার জন্য পরিচিত। আইফোন অ্যাপ্লিকেশন

অপারেশনাল সিস্টেমের মূল উপাদান

একটি অপারেশনাল সিস্টেম বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এদের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিচে উল্লেখ করা হলো:

• কার্নেল (Kernel): এটি অপারেশনাল সিস্টেমের মূল অংশ, যা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
• শেল (Shell): এটি ব্যবহারকারীকে কমান্ড প্রবেশ করানোর এবং অপারেশনাল সিস্টেমের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার একটি ইন্টারফেস প্রদান করে।
• ফাইল সিস্টেম (File System): এটি ফাইল এবং ডিরেক্টরি সংরক্ষণের জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে। যেমন - এনএফএস, ফ্যাট, এনটিএফএস।
• ডিভাইস ড্রাইভার (Device Driver): এটি অপারেশনাল সিস্টেমকে হার্ডওয়্যার ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে।
• সিস্টেম কল (System Call): এটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলিকে অপারেশনাল সিস্টেমের পরিষেবাগুলি ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

ভার্চুয়ালাইজেশন এবং অপারেশনাল সিস্টেম

ভার্চুয়ালাইজেশন হলো একটি প্রযুক্তি যা একটি ফিজিক্যাল হার্ডওয়্যারে একাধিক ভার্চুয়াল মেশিন (VM) চালানোর অনুমতি দেয়। প্রতিটি VM-এ একটি সম্পূর্ণ অপারেশনাল সিস্টেম চলতে পারে। ভার্চুয়ালাইজেশন সিস্টেম রিসোর্সগুলির আরও ভাল ব্যবহার, খরচ কমানো এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলির বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করে। ভিএমওয়্যার, ভার্চুয়ালবক্স এবং হাইপার-ভি হলো জনপ্রিয় ভার্চুয়ালাইজেশন প্ল্যাটফর্ম।

অপারেশনাল সিস্টেমের নিরাপত্তা

অপারেশনাল সিস্টেমের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুরক্ষিত অপারেশনাল সিস্টেম ব্যবহারকারীর ডেটা এবং সিস্টেমকে ক্ষতিকারক সফটওয়্যার, হ্যাকিং এবং অন্যান্য নিরাপত্তা হুমকি থেকে রক্ষা করে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়, যেমন - ফায়ারওয়াল, অ্যান্টিভাইরাস, অ্যাক্সেস কন্ট্রোল, এবং এনক্রিপশন।

ভবিষ্যৎ প্রবণতা

অপারেশনাল সিস্টেমের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। ক্লাউড কম্পিউটিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)-এর মতো প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অপারেশনাল সিস্টেমগুলি আরও বুদ্ধিমান, স্বয়ংক্রিয় এবং সংযুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক

যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য অপারেশনাল সিস্টেম বাইনারি অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের জন্য অত্যাবশ্যক। ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলি সাধারণত উইন্ডোজ বা লিনাক্স সার্ভারে হোস্ট করা হয় এবং একটি ত্রুটিপূর্ণ অপারেশনাল সিস্টেম ট্রেডিং প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যার ফলে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি অপ্টিমাইজড অপারেশনাল সিস্টেম প্রয়োজন। এছাড়াও, উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলি ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

অপারেশনাল সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য

Header 2|Header 3|
ব্যাখ্যা|উদাহরণ|	সিস্টেমের সমস্ত রিসোর্স পরিচালনা করে।|CPU, মেমরি, ডিস্ক স্পেস|	অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।|মাল্টিটাস্কিং, প্রসেস প্রায়োরিটি|	ফাইল এবং ডিরেক্টরি সংরক্ষণ করে।|এনটিএফএস, ফ্যাট, এক্সএফএস|	ব্যবহারকারীর সাথে মিথস্ক্রিয়া করার মাধ্যম।|GUI, CLI|	সিস্টেমকে সুরক্ষা প্রদান করে।|ফায়ারওয়াল, অ্যান্টিভাইরাস|

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক | ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম | প্রোগ্রামিং ভাষা | সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং | কম্পিউটার আর্কিটেকচার | নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা | ক্লাউড কম্পিউটিং | ডেটা স্ট্রাকচার | অ্যালগরিদম | সাইবার নিরাপত্তা | তথ্য প্রযুক্তি | সিস্টেম প্রোগ্রামিং | ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেম | এম্বেডেড সিস্টেম | রিয়েল-টাইম সিস্টেম | মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম | হিউম্যান-কম্পিউটার ইন্টার‍্যাকশন | গ্রাফিক্স প্রোগ্রামিং | অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন | কম্পিউটার বিজ্ঞান

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ