অনুমানিত অস্থিরতা
অনুমানিত অস্থিরতা
ভূমিকা
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, ঝুঁকি এবং পুরস্কার উভয়ই বাজারের অস্থিরতার উপর নির্ভরশীল। এই অস্থিরতাকে সঠিকভাবে অনুমান করতে পারলে ট্রেডাররা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। অনুমানিত অস্থিরতা (Implied Volatility) হলো বাজারের ভবিষ্যৎ অস্থিরতা সম্পর্কে একটি ধারণা, যা অপশন চুক্তির মূল্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি বাজারের প্রত্যাশা এবং অনিশ্চয়তা পরিমাপ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এই নিবন্ধে, আমরা অনুমানিত অস্থিরতার ধারণা, এর তাৎপর্য, গণনা পদ্ধতি, এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অনুমানিত অস্থিরতা কী?
অনুমানিত অস্থিরতা হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি আর্থিক সম্পদের দামের সম্ভাব্য পরিবর্তনশীলতার বাজারের প্রত্যাশা। এটি ঐতিহাসিক অস্থিরতা (Historical Volatility) থেকে ভিন্ন, যা অতীতের দামের ওঠানামার উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। অন্যদিকে, অনুমানিত অস্থিরতা ভবিষ্যৎমুখী এবং এটি অপশন চুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
ঐতিহাসিক অস্থিরতা এবং অনুমানিত অস্থিরতার মধ্যে পার্থক্য
ঐতিহাসিক অস্থিরতা অতীতের ডেটার বিশ্লেষণ করে বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে, যেখানে অনুমানিত অস্থিরতা ভবিষ্যতের অস্থিরতা সম্পর্কে বাজারের মতামত প্রতিফলিত করে। ঐতিহাসিক অস্থিরতা একটি পশ্চাৎমুখী ধারণা, অন্যদিকে অনুমানিত অস্থিরতা একটি ভবিষ্যৎমুখী ধারণা।
অনুমানিত অস্থিরতার তাৎপর্য
- ঝুঁকি মূল্যায়ন: অনুমানিত অস্থিরতা ট্রেডারদের সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। উচ্চ অনুমানিত অস্থিরতা মানে দামের বড় ধরনের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা বেশি ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
- অপশন মূল্য নির্ধারণ: অপশন চুক্তির মূল্য নির্ধারণে অনুমানিত অস্থিরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অস্থিরতা বাড়লে অপশনের দাম বাড়ে, কারণ দামের বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- ট্রেডিং কৌশল নির্ধারণ: অনুমানিত অস্থিরতা ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিং কৌশল নির্ধারণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ট্রেডার মনে করে যে বাজারের অনুমানিত অস্থিরতা বেশি, তবে তারা স্ট্র্যাডল (Straddle) বা স্ট্র্যাঙ্গল (Strangle) এর মতো কৌশল ব্যবহার করতে পারে।
- বাজারের sentiment বোঝা: অনুমানিত অস্থিরতা বাজারের সামগ্রিক sentiment বা মনোভাব সম্পর্কে ধারণা দেয়। উচ্চ অস্থিরতা সাধারণত অনিশ্চয়তা এবং ভয়ের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে নিম্ন অস্থিরতা স্থিতিশীলতা এবং আত্মবিশ্বাসের ইঙ্গিত দেয়।
অনুমানিত অস্থিরতা কিভাবে গণনা করা হয়?
অনুমানিত অস্থিরতা সরাসরি গণনা করা হয় না, বরং এটি ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল (Black-Scholes Model) বা অন্যান্য অপশন মূল্য নির্ধারণ মডেল ব্যবহার করে অপশন চুক্তির মূল্য থেকে বিপরীতভাবে (inversely) নির্ণয় করা হয়। এই মডেলগুলো বিভিন্ন ইনপুট ব্যবহার করে, যেমন:
- বর্তমান স্টক মূল্য
- স্ট্রাইক মূল্য
- সময়কাল (expiry date)
- ঝুঁকি-মুক্ত সুদের হার
- লভ্যাংশ (যদি থাকে)
এই ইনপুটগুলো ব্যবহার করে, মডেল অপশনের তাত্ত্বিক মূল্য (theoretical price) গণনা করে। এরপর, বাজারের প্রকৃত মূল্যের সাথে তাত্ত্বিক মূল্যের পার্থক্য বিশ্লেষণ করে অনুমানিত অস্থিরতা নির্ণয় করা হয়।
বিভিন্ন প্রকার অস্থিরতা সূচক
বিভিন্ন ধরনের অস্থিরতা সূচক রয়েছে, যা ট্রেডারদের বাজারে অস্থিরতা পরিমাপ করতে সাহায্য করে:
- ভিআইএক্স (VIX): এটি শিকাগো বোর্ড অপশন এক্সচেঞ্জ (CBOE) দ্বারা গণনা করা হয় এবং এটি এস&পি ৫০০ (S&P 500) সূচকের অনুমানিত অস্থিরতা পরিমাপ করে। ভিআইএক্সকে প্রায়ই "ভয়ের সূচক" (fear gauge) বলা হয়। ভিআইএক্স
- আরভিআই (RVIX): এটি রুসেলের ২০০০ (Russell 2000) সূচকের অনুমানিত অস্থিরতা পরিমাপ করে।
- ওএক্সভি (OVX): এটি নাসডাক ১০০ (Nasdaq 100) সূচকের অনুমানিত অস্থিরতা পরিমাপ করে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অনুমানিত অস্থিরতার ব্যবহার
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অনুমানিত অস্থিরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে এর কয়েকটি ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
- ট্রেডিংয়ের সুযোগ চিহ্নিত করা: উচ্চ অনুমানিত অস্থিরতা বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা মনে করে যে বাজার অতিরিক্তভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: অনুমানিত অস্থিরতা ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে। যদি অস্থিরতা বেশি থাকে, তবে তারা ছোট আকারের ট্রেড করতে পারে বা ট্রেড করা থেকে বিরত থাকতে পারে।
- অপশন নির্বাচন: বিভিন্ন স্ট্রাইক মূল্য এবং মেয়াদপূর্তির তারিখের অপশনগুলোর মধ্যে তুলনা করে ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিং কৌশলের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত অপশন নির্বাচন করতে পারে।
- সম্ভাব্য রিটার্ন মূল্যায়ন: অনুমানিত অস্থিরতা ট্রেডারদের সম্ভাব্য রিটার্ন মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। উচ্চ অস্থিরতা মানে বেশি লাভের সম্ভাবনা, তবে একই সাথে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিও থাকে।
অনুমানিত অস্থিরতা এবং বাজারের সম্পর্ক
অনুমানিত অস্থিরতা বাজারের পরিস্থিতির সাথে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, নিম্নলিখিত ঘটনাগুলোর সময় অনুমানিত অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়:
- অর্থনৈতিক ঘোষণা: গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ডেটা প্রকাশের সময়, যেমন জিডিপি (GDP), মুদ্রাস্ফীতি (Inflation), এবং বেকারত্বের হার (Unemployment Rate)।
- রাজনৈতিক ঘটনা: রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোর পরিবর্তন।
- কোম্পানির আয় ঘোষণা: কোম্পানির ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক আয় ঘোষণার সময়।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
উচ্চ এবং নিম্ন অস্থিরতার কৌশল
উচ্চ অস্থিরতা
যখন বাজারে উচ্চ অস্থিরতা থাকে, তখন নিম্নলিখিত কৌশলগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে:
- স্ট্র্যাডল (Straddle): এই কৌশলটি একই স্ট্রাইক মূল্যের কল এবং পুট অপশন একসাথে কেনা জড়িত। এটি বাজারের যেকোনো দিকে বড় ধরনের মুভমেন্ট থেকে লাভবান হতে সাহায্য করে। স্ট্র্যাডল কৌশল
- স্ট্র্যাঙ্গল (Strangle): এই কৌশলটি ভিন্ন স্ট্রাইক মূল্যের কল এবং পুট অপশন একসাথে কেনা জড়িত। এটি স্ট্র্যাডলের চেয়ে কম ব্যয়বহুল, তবে লাভের সম্ভাবনাও কম। স্ট্র্যাঙ্গল কৌশল
- ছোট আকারের ট্রেড: অস্থিরতা বেশি থাকলে ছোট আকারের ট্রেড করা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
নিম্ন অস্থিরতা
যখন বাজারে নিম্ন অস্থিরতা থাকে, তখন নিম্নলিখিত কৌশলগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে:
- আয়রন কন্ডর (Iron Condor): এই কৌশলটি চারটি অপশন ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এবং এটি বাজারের একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে স্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হতে সাহায্য করে। আয়রন কন্ডর কৌশল
- বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): এই কৌশলটি তিনটি অপশন ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এবং এটি বাজারের একটি নির্দিষ্ট মূল্যের কাছাকাছি স্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হতে সাহায্য করে। বাটারফ্লাই স্প্রেড কৌশল
- বড় আকারের ট্রেড: অস্থিরতা কম থাকলে বড় আকারের ট্রেড করা লাভজনক হতে পারে, তবে ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
অনুমানিত অস্থিরতার সাথে সাথে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) এবং ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) ব্যবহার করে আরও ভালো ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: চার্ট প্যাটার্ন, ট্রেন্ড লাইন, এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ভবিষ্যতের দামের গতিবিধি অনুমান করা যায়। চার্ট প্যাটার্ন
- ভলিউম বিশ্লেষণ: ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ভলিউম ইন্ডিকেটর
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- অনুমানিত অস্থিরতা একটি নিখুঁত সূচক নয়। এটি বাজারের প্রত্যাশা প্রতিফলিত করে, কিন্তু সবসময় সঠিক নাও হতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের অপশন চুক্তির জন্য অনুমানিত অস্থিরতা ভিন্ন হতে পারে।
- ট্রেডিংয়ের আগে বাজারের পরিস্থিতি এবং নিজের ঝুঁকির সহনশীলতা বিবেচনা করা উচিত।
- মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ট্রেডারদের তাদের মূলধন রক্ষা করতে সাহায্য করে।
উপসংহার
অনুমানিত অস্থিরতা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি অপরিহার্য অংশ। এটি ট্রেডারদের ঝুঁকি মূল্যায়ন, অপশন মূল্য নির্ধারণ, এবং ট্রেডিং কৌশল নির্ধারণে সাহায্য করে। বাজারের অস্থিরতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে পারলে ট্রেডাররা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে অনুমানিত অস্থিরতা একটি নিখুঁত সূচক নয় এবং ট্রেডিংয়ের আগে অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।
আরও জানতে:
| অস্থিরতার মাত্রা | ট্রেডিং কৌশল | ঝুঁকির মাত্রা | |
| উচ্চ অস্থিরতা | স্ট্র্যাডল, স্ট্র্যাঙ্গল, ছোট আকারের ট্রেড | বেশি | |
| নিম্ন অস্থিরতা | আয়রন কন্ডর, বাটারফ্লাই স্প্রেড, বড় আকারের ট্রেড | কম |
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
