রাষ্ট্রবিজ্ঞান

রাষ্ট্রবিজ্ঞান : একটি বিস্তারিত আলোচনা

ভূমিকা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা ও অধ্যয়নের একটি সামাজিক বিজ্ঞান। এটি ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, আইন, সংবিধান, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের রাজনৈতিক আচরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব ও ধারণা নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান শুধু রাজনৈতিক কাঠামো নিয়েই আলোচনা করে না, বরং সমাজ, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল এবং অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানগুলির সাথে এর সম্পর্কও বিশ্লেষণ করে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা

বিভিন্ন চিন্তাবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো:

• গার্নার (Garner): "রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিকাশ, সংগঠন এবং কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা।"
• ব্লাউন্টশ্লি (Bluntschli): "রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সেই বিজ্ঞান যা রাষ্ট্রকে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলোচনা করে।"
• হ্যারিসন (Harrison): "রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাজনৈতিক জীবনের বিজ্ঞান।"
• লাস্কি (Laski): "রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাজনৈতিক চিন্তা ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।"

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি

রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য এর কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। যেমন:

• এটি একটি বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞান।
• এর নিজস্ব অধ্যয়নের পদ্ধতি আছে।
• এটি কিছু নির্দিষ্ট তত্ত্ব ও ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত।
• এটি ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম।

তবে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সম্পূর্ণরূপে একটি বিজ্ঞান বলা যায় না, কারণ রাজনৈতিক ঘটনাগুলি মানুষের আচরণ এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল, যা পরিবর্তনশীল।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শাখা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত, যা একে বিশেষভাবে অধ্যয়ন করতে সাহায্য করে। এর প্রধান শাখাগুলো হলো:

• রাজনৈতিক তত্ত্ব: এই শাখায় রাষ্ট্র, সরকার, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদি রাজনৈতিক ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
• তুলনামূলক রাজনীতি: বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে তুলনা করা হয়।
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, যুদ্ধ, শান্তি এবং বৈদেশিক নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
• জনপ্রশাসন: সরকারি নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়।
• স্থানীয় সরকার: স্থানীয় পর্যায়ে সরকার এবং স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
• রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান: রাজনীতি এবং সমাজের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়।
• নির্বাচনী রাজনীতি: নির্বাচন প্রক্রিয়া, ভোটার আচরণ এবং রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

রাষ্ট্রের উপাদান

একটি রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার জন্য চারটি মৌলিক উপাদান প্রয়োজন:

1. জনসংখ্যা: একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী মানুষের সমষ্টি। 2. ভূখণ্ড: একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা, যেখানে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত। 3. সরকার: রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য গঠিত সংস্থা। 4. সার্বভৌমত্ব: রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা, যা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত।

রাষ্ট্রের উপাদান

উপাদান	বৈশিষ্ট্য
জনসংখ্যা	স্থায়ী বাসিন্দা, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলে অন্তর্ভুক্ত
ভূখণ্ড	নির্দিষ্ট সীমানা, নদী, পর্বত, বনভূমি ইত্যাদি
সরকার	আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব
সার্বভৌমত্ব	চূড়ান্ত ক্ষমতা, অন্য কোনো রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অভাব

সরকারের প্রকারভেদ

সরকার বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যা রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং ক্ষমতার বণ্টনের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। প্রধান প্রকারগুলো হলো:

• রাজতন্ত্র: যেখানে রাজা বা রানী বংশানুক্রমে শাসন করেন।
• গণতন্ত্র: যেখানে জনগণ সরাসরি বা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসন করে।
• একনায়কতন্ত্র: যেখানে একজন ব্যক্তি বা দলের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে।
• অলিগার্কি: যেখানে মুষ্টিমেয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা থাকে।
• সংবিধানিক সরকার: যেখানে একটি সংবিধানের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করা হয়।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি

রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো একটি সমাজের মানুষের রাজনৈতিক বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং আচরণ। এটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদানগুলো হলো:

• রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ: কীভাবে মানুষ রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জন করে।
• রাজনৈতিক বিশ্বাস: রাষ্ট্র এবং সরকার সম্পর্কে মানুষের ধারণা।
• রাজনৈতিক মূল্যবোধ: রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নীতি এবং আদর্শ।
• রাজনৈতিক আচরণ: মানুষ কীভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান

রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হলো সেই সংস্থা, যা রাজনৈতিক নিয়মকানুন তৈরি করে এবং প্রয়োগ করে। এর মধ্যে রয়েছে:

• আইনসভা: আইন প্রণয়নকারী সংস্থা।
• নির্বাহী বিভাগ: আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
• বিচার বিভাগ: আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগকারী সংস্থা।
• রাজনৈতিক দল: রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য গঠিত সংস্থা।
• গণমাধ্যম: জনমত গঠনে সহায়ক সংস্থা।

রাজনৈতিক প্রক্রিয়া

রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হলো সেই পদ্ধতি, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

• নির্বাচন: জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া।
• আইন প্রণয়ন: আইন তৈরির প্রক্রিয়া।
• নীতি প্রণয়ন: সরকারি নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়া।
• জনমত গঠন: জনগণের ধারণা ও বিশ্বাস তৈরি প্রক্রিয়া।
• রাজনৈতিক সংঘাত: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ ও সংঘর্ষ।

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ধারা

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন নতুন ধারায় বিকশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

• আচরণবাদ: রাজনৈতিক আচরণ অধ্যয়নের উপর জোর দেওয়া।
• কাঠামোগতবাদ: সামাজিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর গুরুত্ব আরোপ করা।
• নব্য উদারতাবাদ: মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর জোর দেওয়া।
• মার্কসবাদ: শ্রেণীসংগ্রাম এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করা।
• উত্তর আধুনিকতাবাদ: প্রচলিত রাজনৈতিক ধারণা এবং তত্ত্বের সমালোচনা করা।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং রাজনৈতিক ঝুঁকি

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আর্থিক বিনিয়োগ কৌশল, যেখানে বিনিয়োগকারীরা কোনো সম্পদের (যেমন: স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়বে বা কমবে কিনা, তা অনুমান করে। রাজনৈতিক ঘটনাগুলি প্রায়শই আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে সুযোগ এবং ঝুঁকি উভয়ই নিয়ে আসে।

রাজনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে:

• নির্বাচনের ফলাফল: অপ্রত্যাশিত নির্বাচনের ফলাফল বাজারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
• নীতি পরিবর্তন: সরকারের নীতি পরিবর্তন বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলে।
• ভূ-রাজনৈতিক সংকট: যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক খারাপ হলে বাজারের অস্থিরতা বাড়ে।
• অর্থনৈতিক সংকট: রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে।

বিনিয়োগকারীদের উচিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ও ভলিউম বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে ঝুঁকি মূল্যায়ন করে বাইনারি অপশন ট্রেডিং করা।

কৌশল এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে সফল হওয়ার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:

• ট্রেন্ড অনুসরণ করা: বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ট্রেড করা।
• সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেল: গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্তর চিহ্নিত করে ট্রেড করা।
• মুভিং এভারেজ: বাজারের গড় মূল্য নির্ণয় করে ট্রেড করা।
• রিஸ்க ম্যানেজমেন্ট: প্রতিটি ট্রেডে ঝুঁকির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা।
• নিউজ ট্রেডিং: রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খবরের উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা।

এই কৌশলগুলির সাথে ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট, আরএসআই (Relative Strength Index) এবং এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence) এর মতো টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনা বাড়ানো যেতে পারে।

ভলিউম বিশ্লেষণ

ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো সম্পদের কতগুলি ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে তার পরিমাণ। ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

• উচ্চ ভলিউম: সাধারণত বাজারের শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে।
• নিম্ন ভলিউম: বাজারের দুর্বল প্রবণতা বা একত্রতা নির্দেশ করে।
• ভলিউম স্পাইক: আকস্মিক ভলিউম বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ইঙ্গিত দেয়।

ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাইনারি অপশন ট্রেডাররা বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে পারে এবং সঠিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।

উপসংহার

রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক বিজ্ঞান। এটি আমাদের সমাজ, সরকার এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে, কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুশাসন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো আর্থিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ