UNFCCC

জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (UNFCCC)

ভূমিকা

জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (UNFCCC) হলো জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। এটি ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলন-এ গৃহীত হয়েছিল এবং ১৯৯৩ সালে কার্যকর হয়। এই কনভেনশনের মূল লক্ষ্য হলো বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্বকে স্থিতিশীল করা, যাতে জলবায়ু ব্যবস্থার উপর মানুষের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো যায়। UNFCCC জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং কিয়োটো প্রোটোকল, প্যারিস চুক্তি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলোর ভিত্তি স্থাপন করেছে।

UNFCCC-এর প্রেক্ষাপট

উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে বিজ্ঞানীরা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ দ্রুত বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে একটি কাঠামো তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে UNFCCC গৃহীত হয়, যেখানে বিশ্বজুড়ে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো চিহ্নিত করতে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কমাতে একমত হয়।

UNFCCC-এর মূল নীতিসমূহ

UNFCCC কয়েকটি মূল নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। এই নীতিগুলো হলো:

সাধারণ তবে ভিন্ন দায়িত্ব (Common but Differentiated Responsibilities): এই নীতি অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সকল দেশই দায়ী, তবে তাদের দায়িত্ব ভিন্ন। উন্নত দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করেছে, তাই তাদের নির্গমন কমাতে বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য কার্বন নির্গমনের সুযোগ সীমিত থাকতে পারে।
সতর্কতামূলক পদক্ষেপ (Precautionary Principle): এই নীতি অনুসারে, যদি কোনো কার্যক্রমের ফলে পরিবেশের গুরুতর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে সেই কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত নয়, এমনকি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সম্পূর্ণ না থাকলেও।
স্থিতিশীলতার নীতি (Stabilization): UNFCCC-এর প্রধান লক্ষ্য হলো বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্বকে এমন একটি স্তরে স্থিতিশীল করা, যা জলবায়ু ব্যবস্থার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না।

UNFCCC-এর কাঠামো

UNFCCC-এর কাঠামোতে বিভিন্ন ধরনের সংস্থা এবং প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

সম্মেলন পক্ষ (Conference of the Parties - COP): এটি UNFCCC-এর সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। প্রতি বছর COP-এর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সদস্য দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়।
সচিবালয় (Secretariat): UNFCCC-এর Secretariat কনভেনশনের প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কার্যাবলী পরিচালনা করে। এটি COP এবং অন্যান্য সহায়ক সংস্থাগুলোর সভা আয়োজন করে এবং বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণ পরিচালনা করে।
সহায়ক সংস্থা (Subsidiary Bodies): COP-কে সহায়তা করার জন্য দুটি প্রধান সহায়ক সংস্থা রয়েছে: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহায়ক সংস্থা (SBSTA) এবং বাস্তবায়ন বিষয়ক সহায়ক সংস্থা (SBI)।

কিয়োটো প্রোটোকল

কিয়োটো প্রোটোকল (Kyoto Protocol) UNFCCC-এর অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, যা ১৯৯৭ সালে গৃহীত হয়েছিল। এই প্রোটোকলের লক্ষ্য ছিল উন্নত দেশগুলোর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নামিয়ে আনা। কিয়োটো প্রোটোকলে নির্গমন হ্রাস করার জন্য তিনটি প্রধান কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল:

অভ্যন্তরীণ নির্গমন হ্রাস (Domestic Emission Reductions): দেশগুলো তাদের নিজস্ব সীমানার মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে।
Emission Trading (কার্বন ট্রেডিং): দেশগুলো তাদের নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলে অন্য দেশের কাছ থেকে নির্গমনের অনুমতিপত্র কিনতে পারবে।
যৌথ বাস্তবায়ন (Joint Implementation): উন্নত দেশগুলো অন্য উন্নত দেশে নির্গমন হ্রাস প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারবে এবং এর মাধ্যমে তাদের নিজস্ব নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে।

কিয়োটো প্রোটোকল প্রথম প্রতিশ্রুতি মেয়াদে (২০০৮-২০১২) কিছু সাফল্য অর্জন করলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর অনুমোদন করেনি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ সীমিত ছিল।

প্যারিস চুক্তি

প্যারিস চুক্তি (Paris Agreement) UNFCCC-এর অধীনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা ২০১৫ সালে গৃহীত হয়েছিল। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা। প্যারিস চুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (Nationally Determined Contributions - NDCs): প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্গমন হ্রাস করার জন্য একটি পরিকল্পনা জমা দেবে।
স্বচ্ছতা কাঠামো (Transparency Framework): দেশগুলো তাদের নির্গমন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করবে।
আর্থিক সহায়তা (Financial Support): উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।
গ্লোবাল স্টকটেক (Global Stocktake): প্রতি পাঁচ বছর পর পর প্যারিস চুক্তির অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হবে এবং প্রয়োজনে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।

প্যারিস চুক্তি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলেও, এর বাস্তবায়ন এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

UNFCCC-এর বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

UNFCCC বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। তবে, এই ক্ষেত্রে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি (Political Commitment): সকল দেশের সরকারগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
আর্থিক সংস্থান (Financial Resources): উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
প্রযুক্তি হস্তান্তর (Technology Transfer): গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তর করা প্রয়োজন।
বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ (Implementation and Monitoring): প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবায়ন করা এবং নিয়মিতভাবে অগ্রগতি পরিবীক্ষণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো মোকাবিলা করার জন্য UNFCCC-এর কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং জলবায়ু পরিবর্তন

যদিও সরাসরি সম্পর্ক নেই, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নীতি এবং UNFCCC-এর সিদ্ধান্তগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো আর্থিক বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কার্বন নির্গমন হ্রাস করার জন্য নতুন নীতি গ্রহণ করা হলে, জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমতে পারে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়তে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ, এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা-এর মতো কৌশলগুলো ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন এবং সমর্থন ও প্রতিরোধের স্তর চিহ্নিত করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

UNFCCC-এর গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন
বছর	স্থান	মূল বিষয়
১৯৯২	রিও ডি জেনিরো, ব্রাজিল	UNFCCC গ্রহণ
১৯৯৭	কিয়োটো, জাপান	কিয়োটো প্রোটোকল গ্রহণ
২০০৯	কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক	কোপেনহেগেন চুক্তি
২০১৫	প্যারিস, ফ্রান্স	প্যারিস চুক্তি গ্রহণ
২০২২	শার্ম এল-শেখ, মিশর	COP27

উপসংহার

UNFCCC জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই কনভেনশন এবং এর অধীনে গৃহীত চুক্তিগুলো বিশ্বকে একটি স্থিতিশীল জলবায়ু ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে সহায়ক। তবে, এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সকল দেশগুলোকে আরও বেশি সহযোগিতা করতে হবে এবং সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক উষ্ণতা গ্রিনহাউস গ্যাস প্যারিস চুক্তি কিয়োটো প্রোটোকল জাতিসংঘ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন সমর্থন ও প্রতিরোধের স্তর কার্বন ট্রেডিং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি রিও ডি জেনিরো জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলন COP27 কোপেনহেগেন চুক্তি জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDCs) স্বচ্ছতা কাঠামো আর্থিক সহায়তা গ্লোবাল স্টকটেক অভ্যন্তরীণ নির্গমন হ্রাস যৌথ বাস্তবায়ন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ