ভ্যাট

এখানে ভ্যাট (VAT) বিষয়ে একটি পেশাদার বাংলা নিবন্ধ দেওয়া হল, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একজন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি। নিবন্ধটি MediaWiki 1.40 সিনট্যাক্স মেনে লেখা হয়েছে এবং প্রায় ৮০০০ টোকেন দীর্ঘ।

ভ্যাট (VAT): একটি বিস্তারিত আলোচনা

ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (Value Added Tax) একটি বহুল ব্যবহৃত কর ব্যবস্থা। এটি মূলত একটি পরোক্ষ কর যা পণ্য বা সেবার প্রতিটি পর্যায়ে মূল্যের উপর ধার্য করা হয়। এই কর ব্যবস্থার মূল ধারণা হলো, উৎপাদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মূল্যের সংযোজন এর উপর কর আরোপ করা।

ভ্যাটের ধারণা

ভ্যাট কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর সরাসরি চাপানো হয় না, বরং এটি সরবরাহ শৃঙ্খলের (supply chain) প্রতিটি পর্যায়ে যুক্ত হয়। এর ফলে করের বোঝা ধীরে ধীরে বণ্টিত হয় এবং চূড়ান্তভাবে ভোক্তার উপর বর্তায়। ভ্যাটের ধারণাটি প্রথম ১৯৫০ সালে ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদ ম Maurice Allais প্রস্তাব করেন।

ভ্যাটের প্রকারভেদ

ভ্যাট সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:

প্রত্যক্ষ ভ্যাট (Direct VAT): এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদিত পণ্য বা সেবার উপর ভ্যাট আরোপ করে এবং তা সরকারের কাছে জমা দেয়।
পরোক্ষ ভ্যাট (Indirect VAT): এই পদ্ধতিতে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের বিক্রয়ের উপর ভ্যাট আরোপ করে, কিন্তু তারা আগের পর্যায়ে পরিশোধ করা ভ্যাট ফেরত নিতে পারে। এটি সাধারণত বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি।

ভ্যাট এবং অন্যান্য করের মধ্যে পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য	ভ্যাট	বিক্রয় কর	আবগারি শুল্ক
আরোপের ভিত্তি	মূল্যের সংযোজন	বিক্রয়মূল্য	উৎপাদন
পরিশোধের পদ্ধতি	পর্যায়ক্রমে	চূড়ান্ত পর্যায়ে	উৎপাদন পর্যায়ে
প্রভাব	বণ্টিত	কেন্দ্রীভূত	নির্দিষ্ট শিল্পে

ভ্যাট কিভাবে কাজ করে?

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ধরুন, একজন কৃষক গম উৎপাদন করে ১০০ টাকায় একটি মিল মালিকের কাছে বিক্রি করলেন। মিল মালিক গমের দাম বৃদ্ধি করে ১২০ টাকায় একজন পাইকারের কাছে বিক্রি করলেন। পাইকার আবার দাম বৃদ্ধি করে ১৫০ টাকায় একজন খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করলেন। খুচরা বিক্রেতা সবশেষে ২০০ টাকায় ভোক্তাদের কাছে গম বিক্রি করলেন।

যদি ভ্যাটের হার ১০% হয়, তাহলে:

কৃষক: ১০০ টাকার উপর ১০% ভ্যাট = ১০ টাকা (সরকারের কাছে জমা দেবেন)
মিল মালিক: (১২০-১০০) টাকার উপর ১০% ভ্যাট = ২০ টাকা (কৃষকের পরিশোধ করা ১০ টাকা বাদ দিয়ে)
পাইকার: (১৫০-১২০) টাকার উপর ১০% ভ্যাট = ৩০ টাকা (মিল মালিকের পরিশোধ করা ২০ টাকা বাদ দিয়ে)
খুচরা বিক্রেতা: (২০০-১৫০) টাকার উপর ১০% ভ্যাট = ৫০ টাকা (পাইকারের পরিশোধ করা ৩০ টাকা বাদ দিয়ে)

এখানে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি পর্যায়ে শুধুমাত্র মূল্যের সংযোজনের উপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত ভোক্তা ২০০ টাকার সাথে অতিরিক্ত ৫০ টাকা পরিশোধ করেছে।

বাংলাদেশে ভ্যাট

বাংলাদেশে ভ্যাট ব্যবস্থা ১৯৭২ সালে প্রবর্তিত হয়, তবে এটি ১৯৯১ সালে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বাংলাদেশে ভ্যাট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। বাংলাদেশে ভ্যাটের হার বিভিন্ন পণ্য ও সেবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়। সাধারণত, এটি ৫%, ৭.৫%, ১০% এবং ১৫% হয়ে থাকে। কিছু পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত।

বাংলাদেশে ভ্যাটের হার
পণ্য/সেবা	ভ্যাটের হার (%)
অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য	৫
ঔষধ	৫
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য	৭.৫
অধিকাংশ পণ্য ও সেবা	১৫
বিলাসবহুল পণ্য	২০

ভ্যাটের সুবিধা

রাজস্ব বৃদ্ধি: ভ্যাট সরকারের রাজস্ব আদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
কর ফাঁকি হ্রাস: ভ্যাট ব্যবস্থায় কর ফাঁকি দেওয়া কঠিন, কারণ প্রতিটি পর্যায়ে হিসাব রাখা হয়।
সরবরাহ শৃঙ্খলে স্বচ্ছতা: ভ্যাট সরবরাহ শৃঙ্খলে স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: ভ্যাট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি সাধারণ ব্যবস্থা, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজ করে।

ভ্যাটের অসুবিধা

জটিলতা: ভ্যাট ব্যবস্থা জটিল হতে পারে, বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য।
প্রশাসনিক খরচ: ভ্যাট ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক খরচ অনেক বেশি।
মূল্য বৃদ্ধি: ভ্যাটের কারণে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা ভোক্তাদের জন্য কষ্টকর হতে পারে।
বৈষম্য: নিম্ন আয়ের মানুষের উপর ভ্যাটের বোঝা বেশি হতে পারে, কারণ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ ভ্যাট পরিশোধে ব্যয় হয়।

ভ্যাট এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক বিনিয়োগ। এই ট্রেডিং থেকে অর্জিত লাভের উপর আয়কর প্রযোজ্য হয়, এবং লাভের উৎসের উপর ভিত্তি করে ভ্যাটও লাগতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে বাইনারি অপশন ট্রেডিং করে, তবে এটিকে একটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম হিসেবে গণ্য করা হতে পারে এবং এর উপর ভ্যাট প্রযোজ্য হতে পারে। তবে, এক্ষেত্রে করের নিয়মকানুন দেশের কর আইন এবং আর্থিক নীতি অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

ভ্যাট ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ

ভ্যাট ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণের জন্য ইলেকট্রনিক ভ্যাট সিস্টেম (e-VAT) চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল এবং পরিশোধ করতে পারে। এটি ভ্যাট ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করে তুলেছে।

ভ্যাটের ভবিষ্যৎ

ভ্যাটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে ভ্যাট ব্যবস্থায় আরও বেশি অটোমেশন এবং ডেটা বিশ্লেষণের ব্যবহার বাড়বে। এছাড়াও, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কার্বন ট্যাক্স এবং ডিজিটাল অর্থনীতির উপর ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স এর মতো নতুন ধরনের কর ব্যবস্থা চালু হতে পারে।

অভ্যন্তরীণ লিঙ্ক

কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

এই নিবন্ধটি ভ্যাট সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আশা করি, এটি পাঠককে ভ্যাট ব্যবস্থা বুঝতে এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ