Serverless architecture

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচার

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচার একটি ক্লাউড কম্পিউটিং মডেল। এই মডেলে অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য সার্ভার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ডেভেলপারদের নিতে হয় না। অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ক্লাউড প্রদানকারী দ্বারা পরিচালিত হয়। এই আর্কিটেকচার ডেভেলপারদের কোড লেখা এবং ব্যবসায়িক যুক্তির ওপর মনোযোগ দিতে সাহায্য করে, সার্ভার রক্ষণাবেক্ষণের জটিলতা থেকে মুক্তি দেয়।

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচারের মূল ধারণা

সার্ভারবিহীন (Serverless) মানে এই নয় যে এখানে কোনো সার্ভার নেই। এর মানে হল ডেভেলপারদের সার্ভার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। ক্লাউড প্রদানকারী সার্ভারের ব্যবস্থাপনা, স্কেলিং এবং প্যাচিংয়ের মতো কাজগুলো করে থাকে।

ফাংশন অ্যাজ এ সার্ভিস (FaaS): এটি সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচারের সবচেয়ে পরিচিত রূপ। এখানে কোড ছোট ছোট ফাংশন হিসেবে লেখা হয়, যা কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে (Event-driven) ট্রিগার হয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কেল করে। উদাহরণ: AWS Lambda, Azure Functions, Google Cloud Functions।
ব্যাকএন্ড অ্যাজ এ সার্ভিস (BaaS): এটি তৃতীয় পক্ষের পরিষেবা যা অ্যাপ্লিকেশন ব্যাকএন্ডের প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে, যেমন ডাটাবেস, প্রমাণীকরণ এবং স্টোরেজ। উদাহরণ: Firebase, AWS Amplify।
ইভেন্ট-ড্রিভেন আর্কিটেকচার: সার্ভারবিহীন অ্যাপ্লিকেশন প্রায়শই ইভেন্ট-ড্রিভেন হয়ে থাকে। কোনো ঘটনা ঘটলে, যেমন - কোনো ফাইল আপলোড করা হলে অথবা কোনো ডাটাবেস এন্ট্রি পরিবর্তন হলে, ফাংশন ট্রিগার হয় এবং নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে।

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচারের সুবিধা

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচারের অনেক সুবিধা রয়েছে, যা এটিকে আধুনিক অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে:

খরচ সাশ্রয়: শুধুমাত্র ব্যবহৃত কম্পিউটিং রিসোর্সের জন্য অর্থ প্রদান করতে হয়। যখন কোড চলছে না, তখন কোনো খরচ হয় না।
স্কেলেবিলিটি: অ্যাপ্লিকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাহিদা অনুযায়ী স্কেল করে। ট্র্যাফিকের ওপর ভিত্তি করে রিসোর্স বাড়ানো বা কমানো যায়।
উন্নয়ন দ্রুততা: সার্ভার ব্যবস্থাপনার ঝামেলা না থাকায় ডেভেলপাররা দ্রুত কোড লিখতে এবং অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারে।
কম রক্ষণাবেক্ষণ: সার্ভার এবং অবকাঠামো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ক্লাউড প্রদানকারীর, তাই রক্ষণাবেক্ষণের খরচ এবং জটিলতা কমে যায়।
ভূ-বিতরণ (Geo-distribution): অ্যাপ্লিকেশন বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে সহজে স্থাপন করা যায়, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করে।

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচারের অসুবিধা

কিছু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও, সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচার জনপ্রিয়তা লাভ করছে। নিচে কয়েকটি অসুবিধা উল্লেখ করা হলো:

কোল্ড স্টার্ট: ফাংশন প্রথমবার চালু হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে, যাকে "কোল্ড স্টার্ট" বলা হয়।
সময়সীমা: ফাংশন চালানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে चलने वाले কাজের জন্য এটি উপযুক্ত নাও হতে পারে।
ডিবাগিং এবং পর্যবেক্ষণ: স্থানীয়ভাবে ডিবাগিং করা কঠিন হতে পারে। ক্লাউড প্রদানকারীর সরঞ্জাম ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ এবং ত্রুটি নির্ণয় করতে হয়।
vendor lock-in : একটি নির্দিষ্ট ক্লাউড প্রদানকারীর ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হতে পারে।
জটিলতা: জটিল অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচার ডিজাইন এবং পরিচালনা করা কঠিন হতে পারে।

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচারের ব্যবহারক্ষেত্র

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচার বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের জন্য উপযুক্ত:

ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন: স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট, ডায়নামিক এপিআই এবং ব্যাকএন্ড পরিষেবা তৈরি করা যায়।
মোবাইল ব্যাকএন্ড: মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের জন্য শক্তিশালী এবং স্কেলেবল ব্যাকএন্ড তৈরি করা যায়।
ডাটা প্রসেসিং: বড় ডেটা সেট প্রক্রিয়াকরণ, রিয়েল-টাইম ডেটা বিশ্লেষণ এবং ইটিএল (Extract, Transform, Load) কাজের জন্য ব্যবহার করা যায়।
আইওটি (IoT): ইন্টারনেট অফ থিংস ডিভাইস থেকে ডেটা সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য উপযুক্ত।
চ্যাটবট এবং ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট: কথোপকথনমূলক অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং পরিচালনা করা যায়।
ইভেন্ট-ড্রিভেন অটোমেশন: বিভিন্ন সিস্টেমের মধ্যে অটোমেশন এবং ইন্টিগ্রেশন তৈরি করা যায়।

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচারের উপাদানসমূহ

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচারে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহৃত হয়, যা একটি সম্পূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে সহায়তা করে:

ফাংশন (Functions): কোডের মূল একক, যা কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রিগার হয়।
ট্রিগার (Triggers): ফাংশন শুরু করার জন্য ব্যবহৃত ঘটনা, যেমন - HTTP অনুরোধ, ডাটাবেস পরিবর্তন, অথবা সময়সূচী।
এপিআই গেটওয়ে (API Gateway): অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (API) তৈরি এবং পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: Amazon API Gateway, Azure API Management।
ডাটাবেস (Databases): সার্ভারবিহীন ডাটাবেস পরিষেবা, যেমন - Amazon DynamoDB, Azure Cosmos DB, Google Cloud Datastore।
স্টোরেজ (Storage): ফাইল এবং অন্যান্য ডেটা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: Amazon S3, Azure Blob Storage, Google Cloud Storage।
মেসেজিং পরিষেবা (Messaging Services): বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: Amazon SQS, Azure Service Bus, Google Cloud Pub/Sub।
মনিটরিং এবং লগিং (Monitoring and Logging): অ্যাপ্লিকেশনের কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ এবং ত্রুটি নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: Amazon CloudWatch, Azure Monitor, Google Cloud Logging।

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচার ডিজাইন প্যাটার্ন

সার্ভারবিহীন অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইন করার জন্য কিছু সাধারণ প্যাটার্ন অনুসরণ করা যেতে পারে:

মাইক্রোসার্ভিসেস (Microservices): অ্যাপ্লিকেশনকে ছোট ছোট, স্বতন্ত্র পরিষেবাতে ভাগ করা। প্রতিটি পরিষেবা একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে।
ইভেন্ট সোসিং (Event Sourcing): অ্যাপ্লিকেশনের সমস্ত পরিবর্তনকে একটি ঘটনার ক্রম হিসেবে সংরক্ষণ করা।
CQRS (Command Query Responsibility Segregation): কমান্ড এবং কোয়েরি অপারেশনকে আলাদা করা।
ফ্যান-আউট (Fan-out): একটি ঘটনা ঘটলে একাধিক ফাংশনকে ট্রিগার করা।
ফ্যান-ইন (Fan-in): একাধিক ফাংশনের ফলাফল একত্রিত করা।

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচারের ভবিষ্যৎ

সার্ভারবিহীন কম্পিউটিং দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর আরও উন্নতি এবং নতুন ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আশা করা যায়। কিছু সম্ভাব্য প্রবণতা হলো:

আরও উন্নত রানটাইম পরিবেশ: বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার জন্য আরও ভালো সমর্থন এবং উন্নত কর্মক্ষমতা।
এজ কম্পিউটিং (Edge Computing): ডেটা প্রক্রিয়াকরণকে ব্যবহারকারীর কাছাকাছি নিয়ে আসা, যা লেটেন্সি কমাবে এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদান করবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) এর সাথে ইন্টিগ্রেশন: সার্ভারবিহীন প্ল্যাটফর্মে এআই এবং এমএল মডেল স্থাপন এবং পরিচালনা করা সহজ হবে।
আরও শক্তিশালী ডিবাগিং এবং পর্যবেক্ষণ সরঞ্জাম: ডেভেলপারদের জন্য আরও উন্নত ডিবাগিং এবং পর্যবেক্ষণ সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।
ওপেন সোর্স সার্ভারবিহীন ফ্রেমওয়ার্ক: ওপেন সোর্স সরঞ্জাম এবং ফ্রেমওয়ার্কের ব্যবহার বাড়বে, যা vendor lock-in কমাবে।

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচার এবং অন্যান্য কম্পিউটিং মডেলের মধ্যে তুলনা

কম্পিউটিং মডেলের তুলনা
! সার্ভার ব্যবস্থাপনা \|! স্কেলেবিলিটি \|! খরচ \|! জটিলতা \|	-	! ডেভেলপার দ্বারা পরিচালিত \|! ম্যানুয়ালি স্কেল করতে হয় \|! স্থির খরচ \|! বেশি \|	! ডেভেলপার দ্বারা পরিচালিত \|! স্বয়ংক্রিয় স্কেলিং সম্ভব \|! ব্যবহার-ভিত্তিক খরচ \|! মাঝারি \|	! ডেভেলপার দ্বারা পরিচালিত \|! স্বয়ংক্রিয় স্কেলিং সম্ভব \|! ব্যবহার-ভিত্তিক খরচ \|! মাঝারি \|	! ক্লাউড প্রদানকারী দ্বারা পরিচালিত \|! স্বয়ংক্রিয় স্কেলিং \|! শুধুমাত্র ব্যবহারের জন্য খরচ \|! কম \|

উপসংহার

সার্ভারবিহীন আর্কিটেকচার অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের একটি শক্তিশালী এবং আধুনিক পদ্ধতি। এটি ডেভেলপারদের সার্ভার ব্যবস্থাপনার ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়ে কোড লেখার ওপর মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। খরচ সাশ্রয়, স্কেলেবিলিটি এবং দ্রুত উন্নয়নের সুবিধা এটিকে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের জন্য একটি আকর্ষণীয় পছন্দ করে তুলেছে।

আরও জানতে

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ