Relational database

রিলেশনাল ডেটাবেস

রিলেশনাল ডেটাবেস হলো ডেটাবেস ব্যবস্থাপনার একটি প্রভাবশালী মডেল। এটি ডেটাকে টেবিলের মধ্যে সারি এবং কলাম আকারে সাজিয়ে রাখে, যেখানে প্রতিটি সারি একটি স্বতন্ত্র রেকর্ড এবং প্রতিটি কলাম একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে উপস্থাপন করে। এই মডেলটি ই.এফ. কড ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে প্রস্তাব করেন এবং এরপর থেকে এটি ডেটাবেস ব্যবস্থাপনার জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

মূল ধারণা

রিলেশনাল ডেটাবেসের মূল ভিত্তি হলো রিলেশন বা টেবিল। একটি টেবিল হলো ডেটার একটি সংগ্রহ যা একই ধরনের তথ্য ধারণ করে। টেবিলের প্রতিটি কলাম একটি ডেটা টাইপ নির্দিষ্ট করে, যেমন - সংখ্যা, টেক্সট, তারিখ ইত্যাদি। রিলেশনাল ডেটাবেসের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

ডেটা স্ট্রাকচার: ডেটা টেবিলের মধ্যে সুসংগঠিতভাবে সাজানো থাকে।
সম্পর্ক (রিলেশনশিপ): টেবিলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়, যা ডেটার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। এই সম্পর্কগুলো ফরেন কী এর মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
ডেটা ইন্টিগ্রিটি: ডেটার সঠিকতা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন নিয়ম ব্যবহার করা হয়।
এসকিউএল (SQL): রিলেশনাল ডেটাবেসকে পরিচালনা এবং ডেটা পুনরুদ্ধার করার জন্য স্ট্রাকচার্ড কোয়েরি ল্যাঙ্গুয়েজ (SQL) ব্যবহার করা হয়।

টেবিল, সারি এবং কলাম

একটি রিলেশনাল ডেটাবেসের মৌলিক উপাদানগুলো হলো টেবিল, সারি এবং কলাম।

টেবিল: এটি ডেটা ধারণ করার প্রধান কাঠামো। উদাহরণস্বরূপ, একটি "গ্রাহক" টেবিল গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে।
সারি (Record/Tuple): টেবিলের প্রতিটি সারি একটি স্বতন্ত্র ডেটা রেকর্ড উপস্থাপন করে। "গ্রাহক" টেবিলে প্রতিটি সারি একজন গ্রাহকের তথ্য ধারণ করবে।
কলাম (Attribute/Field): টেবিলের প্রতিটি কলাম একটি নির্দিষ্ট ডেটা বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করে। "গ্রাহক" টেবিলে কলামগুলো হতে পারে - গ্রাহকের আইডি, নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি।

টেবিলের উদাহরণ: গ্রাহক
গ্রাহক আইডি	নাম	ঠিকানা	ফোন নম্বর
1	জন ড Doe	১২৩ মেইন স্ট্রিট	৫55-১২৩৪
2	জেন স্মিথ	৪56 ওক এভিনিউ	৫55-৫৬৭৮

রিলেশনশিপ

রিলেশনাল ডেটাবেসে টেবিলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা ডেটা ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনটি প্রধান ধরনের সম্পর্ক হলো:

এক-থেকে-এক (One-to-One): একটি টেবিলের প্রতিটি সারির সাথে অন্য টেবিলের শুধুমাত্র একটি সারির সম্পর্ক থাকে।
এক-থেকে-বহু (One-to-Many): একটি টেবিলের একটি সারির সাথে অন্য টেবিলের একাধিক সারির সম্পর্ক থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন গ্রাহকের একাধিক অর্ডার থাকতে পারে।
বহু-থেকে-বহু (Many-to-Many): একটি টেবিলের একাধিক সারির সাথে অন্য টেবিলের একাধিক সারির সম্পর্ক থাকতে পারে। এই ধরনের সম্পর্ক সাধারণত একটি তৃতীয় টেবিলের মাধ্যমে সমাধান করা হয়, যাকে জাংশন টেবিল বলা হয়।

ডেটা ইন্টিগ্রিটি

ডেটা ইন্টিগ্রিটি হলো ডেটার সঠিকতা এবং নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখার প্রক্রিয়া। রিলেশনাল ডেটাবেসে ডেটা ইন্টিগ্রিটি নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন নিয়ম ব্যবহার করা হয়:

প্রাইমারি কী (Primary Key): একটি টেবিলের প্রতিটি সারিকে অনন্যভাবে সনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ফরেন কী (Foreign Key): দুটি টেবিলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং ডেটার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
নাল ভ্যালু (Null Value): কোনো কলামে যদি কোনো ডেটা না থাকে, তবে সেটি নাল ভ্যালু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ডেটা টাইপ (Data Type): প্রতিটি কলামের জন্য একটি নির্দিষ্ট ডেটা টাইপ নির্ধারণ করা হয়, যা ডেটার ধরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
চেক কনস্ট্রেইন্ট (Check Constraint): কলামে প্রবেশ করা ডেটার মান একটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়।

এসকিউএল (SQL)

স্ট্রাকচার্ড কোয়েরি ল্যাঙ্গুয়েজ (SQL) হলো রিলেশনাল ডেটাবেসকে পরিচালনা করার জন্য ব্যবহৃত একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রোগ্রামিং ভাষা। SQL এর মাধ্যমে ডেটাবেস তৈরি করা, ডেটা যোগ করা, পরিবর্তন করা, মোছা এবং পুনরুদ্ধার করা যায়। কিছু সাধারণ SQL কমান্ড হলো:

SELECT: ডেটাবেস থেকে ডেটা নির্বাচন করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
INSERT: ডেটাবেসে নতুন ডেটা যোগ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
UPDATE: ডেটাবেসে বিদ্যমান ডেটা পরিবর্তন করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
DELETE: ডেটাবেস থেকে ডেটা মোছার জন্য ব্যবহৃত হয়।
CREATE TABLE: নতুন টেবিল তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ALTER TABLE: টেবিলের গঠন পরিবর্তন করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

রিলেশনাল ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (RDBMS)

রিলেশনাল ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (RDBMS) হলো এমন একটি সফটওয়্যার যা রিলেশনাল ডেটাবেস তৈরি, পরিচালনা এবং অ্যাক্সেস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিছু জনপ্রিয় RDBMS হলো:

মাইএসকিউএল (MySQL): একটি ওপেন সোর্স RDBMS, যা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের জন্য বহুল ব্যবহৃত।
পোস্টগ্রেএসকিউএল (PostgreSQL): একটি শক্তিশালী এবং উন্নত RDBMS, যা ডেটা ইন্টিগ্রিটি এবং স্ট্যান্ডার্ড কমপ্লায়েন্সের জন্য পরিচিত।
অরাকল (Oracle): একটি বাণিজ্যিক RDBMS, যা বৃহৎ আকারের এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এসকিউএল সার্ভার (SQL Server): মাইক্রোসফটের তৈরি একটি বাণিজ্যিক RDBMS।
সাইবেস (Sybase): আরেকটি বাণিজ্যিক RDBMS, যা বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ম্যাരിയDB (MariaDB): মাইএসকিউএল-এর একটি ফর্ক, যা ওপেন সোর্স এবং কর্মক্ষমতা এবং ব্যবহারযোগ্যতার জন্য পরিচিত।

রিলেশনাল ডেটাবেসের সুবিধা

ডেটা ধারাবাহিকতা: টেবিলগুলোর মধ্যে সম্পর্কের কারণে ডেটার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
ডেটা অখণ্ডতা: ডেটা ইন্টিগ্রিটি নিয়মগুলি ডেটার সঠিকতা নিশ্চিত করে।
নমনীয়তা: SQL ব্যবহারের মাধ্যমে ডেটা সহজেই পুনরুদ্ধার এবং পরিচালনা করা যায়।
স্কেলেবিলিটি: রিলেশনাল ডেটাবেসগুলি বৃহৎ আকারের ডেটা পরিচালনা করতে সক্ষম।
সুরক্ষা: ডেটা সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

রিলেশনাল ডেটাবেসের অসুবিধা

জটিলতা: রিলেশনাল ডেটাবেস ডিজাইন এবং পরিচালনা করা জটিল হতে পারে।
কর্মক্ষমতা: বৃহৎ ডেটাবেসের জন্য কর্মক্ষমতা একটি সমস্যা হতে পারে।
খরচ: বাণিজ্যিক RDBMS ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স ফি প্রয়োজন হতে পারে।
বস্তু-ভিত্তিক প্রোগ্রামিং এর সাথে অসামঞ্জস্যতা: রিলেশনাল মডেলটি অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং (OOP) এর ধারণার সাথে সরাসরি মেলে না।

আধুনিক প্রবণতা

বর্তমানে, রিলেশনাল ডেটাবেস প্রযুক্তিতে কিছু নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে:

ইন-মেমোরি ডেটাবেস (In-Memory Database): এই ডেটাবেসগুলি র‍্যামে ডেটা সংরক্ষণ করে, যা দ্রুত ডেটা অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে।
ক্লাউড ডেটাবেস (Cloud Database): ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে ডেটাবেস স্থাপন এবং পরিচালনা করা, যা স্কেলেবিলিটি এবং খরচ সাশ্রয় করে।
নোএসকিউএল ডেটাবেস (NoSQL Database): রিলেশনাল মডেলের বিকল্প হিসেবে নোএসকিউএল ডেটাবেসগুলি জনপ্রিয়তা লাভ করছে, বিশেষ করে বৃহৎ আকারের এবং অসংগঠিত ডেটা পরিচালনার জন্য।

অন্যান্য ডেটাবেস মডেলের সাথে তুলনা

রিলেশনাল ডেটাবেস মডেলের পাশাপাশি অন্যান্য ডেটাবেস মডেলও রয়েছে, যেমন:

হাইরার্কিক্যাল ডেটাবেস (Hierarchical Database): এই মডেলে ডেটা একটি গাছের মতো কাঠামোতে সাজানো থাকে।
নেটওয়ার্ক ডেটাবেস (Network Database): এটি হাইরার্কিক্যাল মডেলের একটি উন্নত সংস্করণ, যেখানে একাধিক parent থাকতে পারে।
অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড ডেটাবেস (Object-Oriented Database): এই মডেলে ডেটাকে অবজেক্ট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

উপসংহার

রিলেশনাল ডেটাবেস ডেটা ব্যবস্থাপনার একটি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য মডেল। এর সরলতা, ডেটা ধারাবাহিকতা এবং SQL এর মাধ্যমে ডেটা পরিচালনার সুবিধা এটিকে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য একটি জনপ্রিয় পছন্দ করে তুলেছে। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে রিলেশনাল ডেটাবেসগুলি ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে এবং ডেটা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

ডেটা মডেলিং ডেটাবেস ডিজাইন ইআর ডায়াগ্রাম নর্মালাইজেশন এসকিউএল অপটিমাইজেশন ডেটা warehouse ডেটা মাইনিং বিগ ডেটা ক্লাউড কম্পিউটিং সাইবার নিরাপত্তা ডেটা ব্যাকআপ ডেটা পুনরুদ্ধার ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্ট কনকারেন্সি কন্ট্রোল ইনডেক্সিং ডেটা ডিকশনারি মেটাডাটা ডেটা গভর্নেন্স ডেটা ক్వালিটি

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ