Price-to-Book Ratio

Price-to-Book Ratio (P/B Ratio) একটি বহুল ব্যবহৃত ফিনান্সিয়াল রেশিও যা কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম এবং তার বুক ভ্যালু-এর মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক, যা কোনো স্টক আন্ডারভ্যালুড (undervalued) নাকি ওভারভ্যালুড (overvalued) তা বুঝতে সাহায্য করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও এই রেশিও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি অন্তর্নিহিত অ্যাসেটের (underlying asset) সম্ভাব্য মুভমেন্ট সম্পর্কে ধারণা দেয়।

Price-to-Book Ratio কী?

Price-to-Book Ratio হলো একটি কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনকে (market capitalization) তার মোট শেয়ারহোল্ডার ইকুইটি দিয়ে ভাগ করা। শেয়ারহোল্ডার ইকুইটি হলো কোম্পানির সম্পদ থেকে দায়ের পরিমাণ বাদ দিলে যা থাকে। সহজ ভাষায়, P/B Ratio নির্দেশ করে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির নেট সম্পদের প্রতিটি টাকার জন্য কত টাকা দিতে ইচ্ছুক।

P/B Ratio = মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন / শেয়ারহোল্ডার ইকুইটি অথবা, P/B Ratio = শেয়ারের দাম / বুক ভ্যালু পার শেয়ার

এখানে,

মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন = শেয়ারের দাম × মোট শেয়ার সংখ্যা
শেয়ারহোল্ডার ইকুইটি = মোট সম্পদ - মোট দায়
বুক ভ্যালু পার শেয়ার = শেয়ারহোল্ডার ইকুইটি / মোট শেয়ার সংখ্যা

Price-to-Book Ratio কিভাবে গণনা করা হয়?

P/B Ratio গণনা করার জন্য প্রথমে কোম্পানির আয় বিবরণী (income statement) এবং ব্যালেন্স শীট (balance sheet) থেকে প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করতে হয়।

ধরা যাক, একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ৳১০০ এবং তার শেয়ারহোল্ডার ইকুইটি ৳৫০০ কোটি। তাহলে,

P/B Ratio = ৳১০০ / (৳৫০০ কোটি / মোট শেয়ার সংখ্যা)

যদি কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি হয়, তবে:

P/B Ratio = ৳১০০ / (৳৫০০ কোটি / ১০ কোটি) = ৳১০০ / ৳৫০ = ২

এর মানে হলো, বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির প্রতিটি ৳১ বুক ভ্যালুর জন্য ৳২ দিতে ইচ্ছুক।

Price-to-Book Ratio এর ব্যাখ্যা

P/B Ratio এর মান ১-এর কম হলে সাধারণত স্টকটিকে আন্ডারভ্যালুড বলে মনে করা হয়, কারণ এর মানে হলো বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির নেট সম্পদের চেয়ে কম দামে শেয়ার কিনছে। অন্যদিকে, P/B Ratio এর মান ১-এর বেশি হলে স্টকটিকে ওভারভ্যালুড বলে মনে করা হয়, কারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির নেট সম্পদের চেয়ে বেশি দামে শেয়ার কিনছে।

তবে, P/B Ratio-এর ব্যাখ্যা শিল্প (industry) এবং কোম্পানির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। কিছু শিল্পে, যেমন প্রযুক্তি শিল্পে, P/B Ratio সাধারণত বেশি থাকে, কারণ এই কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে, কিছু শিল্পে, যেমন ইউটিলিটি শিল্পে, P/B Ratio সাধারণত কম থাকে, কারণ এই কোম্পানিগুলোর বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম।

Price-to-Book Ratio এর শ্রেণীবিভাগ
P/B Ratio	ব্যাখ্যা	বিনিয়োগের পরামর্শ	1-এর কম	আন্ডারভ্যালুড	কেনার সুযোগ	1-3	ন্যায্য মূল্যায়ন	নিরপেক্ষ	3-এর বেশি	ওভারভ্যালুড	বিক্রির সুযোগ

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ Price-to-Book Ratio এর ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে P/B Ratio একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

আন্ডারভ্যালুড স্টক চিহ্নিত করা: P/B Ratio কম থাকলে, স্টকটি কেনার জন্য একটি ভালো সুযোগ হতে পারে। সেক্ষেত্রে, বাইনারি অপশন ট্রেডাররা ‘কল অপশন’ (call option) কিনতে পারে, এই প্রত্যাশায় যে স্টকের দাম বাড়বে।
ওভারভ্যালুড স্টক চিহ্নিত করা: P/B Ratio বেশি থাকলে, স্টকটি বিক্রির জন্য একটি ভালো সুযোগ হতে পারে। সেক্ষেত্রে, বাইনারি অপশন ট্রেডাররা ‘পুট অপশন’ (put option) কিনতে পারে, এই প্রত্যাশায় যে স্টকের দাম কমবে।
শিল্পের সাথে তুলনা: কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির P/B Ratio তার শিল্পের অন্যান্য কোম্পানির P/B Ratio-এর সাথে তুলনা করে, সেই কোম্পানির মূল্যায়ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত: P/B Ratio দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।

Price-to-Book Ratio ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা

P/B Ratio একটি उपयोगी টুল হওয়া সত্ত্বেও, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

হিসাবের ভুল: কোম্পানির হিসাব বিবরণীতে ভুল থাকলে P/B Ratio ভুল হতে পারে।
অস্পর্শনীয় সম্পদ (intangible assets): P/B Ratio শুধুমাত্র কোম্পানির দৃশ্যমান সম্পদ (tangible assets) বিবেচনা করে, অস্পর্শনীয় সম্পদ যেমন ব্র্যান্ড ভ্যালু (brand value) বা পেটেন্ট (patent) বিবেচনা করে না।
শিল্পের ভিন্নতা: বিভিন্ন শিল্পের কোম্পানির P/B Ratio তুলনা করা কঠিন, কারণ তাদের ব্যবসার মডেল এবং সম্পদের প্রকৃতি ভিন্ন।
বাজারের অনুভূতি: P/B Ratio বাজারের সামগ্রিক অনুভূতি (market sentiment) দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রেশিও

P/B Ratio-এর সাথে অন্যান্য ফিনান্সিয়াল রেশিও ব্যবহার করে একটি কোম্পানির সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রেশিও উল্লেখ করা হলো:

Price-to-Earnings Ratio (P/E Ratio): শেয়ারের দাম এবং আয়ের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে।
Debt-to-Equity Ratio: কোম্পানির ঋণ এবং শেয়ারহোল্ডার ইকুইটির মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে।
Return on Equity (ROE): শেয়ারহোল্ডার ইকুইটির উপর কোম্পানির লাভের হার নির্ণয় করে।
Dividend Yield: শেয়ারের দামের তুলনায় ডিভিডেন্ডের পরিমাণ নির্ণয় করে।
Current Ratio: স্বল্পমেয়াদী সম্পদ এবং দায়ের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে।

Price-to-Book Ratio এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস

ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস (fundamental analysis)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো P/B Ratio বিশ্লেষণ করা। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা একটি কোম্পানির অন্তর্নিহিত মূল্য (intrinsic value) নির্ধারণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

P/B Ratio ব্যবহার করে আন্ডারভ্যালুড স্টক খুঁজে বের করা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য পোর্টফোলিও তৈরি করা যেতে পারে।

Price-to-Book Ratio এবং টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস (technical analysis)-এর সাথে P/B Ratio ব্যবহার করে আরও নিশ্চিতভাবে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি P/B Ratio কম থাকে এবং একই সাথে স্টকের দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেল (support level) থেকে বাউন্স ব্যাক করে, তবে এটি একটি শক্তিশালী কেনার সংকেত হতে পারে।

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং Price-to-Book Ratio

ভলিউম বিশ্লেষণ (volume analysis) P/B Ratio-এর কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদি P/B Ratio কম থাকে এবং স্টকের ভলিউম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি ইতিবাচক সংকেত হতে পারে, যা নির্দেশ করে যে বিনিয়োগকারীরা স্টকটি কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে।

Price-to-Book Ratio: কিছু উদাহরণ

বিভিন্ন কোম্পানির P/B Ratio বিশ্লেষণ করে তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

বিভিন্ন কোম্পানির Price-to-Book Ratio (উদাহরণ)
কোম্পানি	শেয়ারের দাম (৳)	শেয়ারহোল্ডার ইকুইটি (কোটি ৳)	P/B Ratio		A	200	800	0.25		B	150	600	0.25		C	500	1000	0.50		D	1000	1500	0.67

এই উদাহরণে, কোম্পানি A এবং B-এর P/B Ratio 0.25, যা নির্দেশ করে যে এই স্টকগুলো আন্ডারভ্যালুড হতে পারে। অন্যদিকে, কোম্পানি C এবং D-এর P/B Ratio যথাক্রমে 0.50 এবং 0.67, যা নির্দেশ করে যে এই স্টকগুলোর মূল্যায়ন ন্যায্য।

উপসংহার

Price-to-Book Ratio একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ সরঞ্জাম (investment tool)], যা বিনিয়োগকারীদের কোনো কোম্পানির মূল্যায়ন সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, এই রেশিও অন্তর্নিহিত অ্যাসেটের সম্ভাব্য মুভমেন্ট সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে। তবে, P/B Ratio ব্যবহারের সময় এর সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনা করা উচিত এবং অন্যান্য ফিনান্সিয়াল রেশিও ও বিশ্লেষণের সাথে মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

শেয়ার বাজার (Share Market), বিনিয়োগ (Investment), ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management), পোর্টফোলিও (Portfolio), অ্যাসেট অ্যালোকেশন (Asset Allocation), মার্কেট ক্যাপ (Market Cap), ডিভিডেন্ড (Dividend), মুনাফা (Profit), আয় (Income), ব্যয় (Expense), ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং (Financial Planning), স্টক বিশ্লেষণ (Stock Analysis), ট্রেডিং কৌশল (Trading Strategy), বাজারের পূর্বাভাস (Market Forecast), অর্থনৈতিক সূচক (Economic Indicator)।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ