Organizational behavior

সংগঠন আচরণ

সংগঠন আচরণ (Organizational behavior) একটি বহুমাত্রিক ক্ষেত্র যা একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে ব্যক্তি এবং দলের আচরণ অধ্যয়ন করে। এই আচরণ প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা এবং সাফল্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহ বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞান থেকে ধারণা গ্রহণ করে। এই নিবন্ধে, আমরা সংগঠন আচরণের মূল ধারণা, তত্ত্ব এবং প্রায়োগিক দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করব।

সংগঠন আচরণের সংজ্ঞা

সংগঠন আচরণ হলো এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যক্তি, দল এবং কাঠামোর আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়। এই বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য হলো কর্মপরিবেশ উন্নত করা, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করা। সংগঠন আচরণ শুধুমাত্র কর্মীদের আচরণ নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি, নেতৃত্ব এবং যোগাযোগের ধরণও বিবেচনা করে।

সংগঠন আচরণের গুরুত্ব

সংগঠন আচরণ নিম্নলিখিত কারণে গুরুত্বপূর্ণ:

কর্মীদের বোঝাপড়া: কর্মীদের চাহিদা, প্রেরণা এবং আচরণ বুঝতে সাহায্য করে।
কার্যকর যোগাযোগ: প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে সহায়তা করে।
দলবদ্ধভাবে কাজ করা: দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং দলের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ায়।
নেতৃত্বের উন্নয়ন: কার্যকর নেতৃত্ব বিকাশে সহায়তা করে।
পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা: প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনগুলি সফলভাবে বাস্তবায়নে সাহায্য করে।
কর্মচারী সন্তুষ্টি: কর্মীদের সন্তুষ্টি এবং ধরে রাখার হার বাড়ায়।
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা এবং লাভজনকতা বৃদ্ধি করে।

সংগঠন আচরণের মূল উপাদানসমূহ

সংগঠন আচরণের তিনটি প্রধান উপাদান রয়েছে:

সংগঠন আচরণের মূল উপাদানসমূহ
উপাদান	বর্ণনা		ব্যক্তি আচরণ	একজন ব্যক্তি কিভাবে অনুভব করে, চিন্তা করে এবং কর্মক্ষেত্রে আচরণ করে তা আলোচনা করে।		দলগত আচরণ	দলের মধ্যে সদস্যদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া, সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করে।		সাংগঠনিক প্রক্রিয়া	প্রতিষ্ঠানের কাঠামো, সংস্কৃতি, এবং নীতিগুলি কিভাবে আচরণকে প্রভাবিত করে তা আলোচনা করে।

ব্যক্তিগত আচরণ

ব্যক্তিগত আচরণ একটি প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন করে। কর্মীদের ব্যক্তিত্ব, উপলব্ধি, প্রেরণা, এবং মনোভাব তাদের কর্মক্ষমতা এবং সন্তুষ্টির উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

ব্যক্তিত্ব (Personality): ব্যক্তিত্ব হলো মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলির সমষ্টি যা তার আচরণকে প্রভাবিত করে। বিগ ফাইভ মডেল ব্যক্তিত্বের পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে: বহির্মুখিতা,agreeableness, conscientiousness, emotional stability, এবং openness to experience।
উপলব্ধি (Perception): উপলব্ধি হলো তথ্যের ব্যাখ্যা এবং অর্থ তৈরি করার প্রক্রিয়া। কর্মীরা তাদের চারপাশের পরিবেশকে কিভাবে উপলব্ধি করে, তার উপর ভিত্তি করে তাদের আচরণ পরিবর্তিত হয়।
প্রেরণা (Motivation): প্রেরণা হলো কর্মীদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য উৎসাহিত করার অভ্যন্তরীণ শক্তি। মাসলোর চাহিদার স্তরবিন্যাস এবং হার্জবার্গের দ্বি-ফ্যাক্টর তত্ত্ব প্রেরণা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করে।
মনোভাব (Attitude): মনোভাব হলো কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি ইতিবাচক বা নেতিবাচক মূল্যায়ন। কর্মীদের মনোভাব তাদের কর্মক্ষমতা এবং সন্তুষ্টির উপর প্রভাব ফেলে।

দলগত আচরণ

দলের আচরণ সংগঠন আচরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দলবদ্ধভাবে কাজ করার সময় সদস্যদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া, সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্ব দেখা যায়।

দলের গঠন (Team Formation): দল সাধারণত পাঁচটি পর্যায়ে গঠিত হয়: গঠন, ঝগড়া, মান standardization, কর্ম সম্পাদন এবং বিচ্ছেদ।
দলের নেতৃত্ব (Team Leadership): কার্যকর নেতৃত্ব দলের সাফল্য নিশ্চিত করে। পরিবর্তনমূলক নেতৃত্ব, লেনদেনমূলক নেতৃত্ব, এবং সেবামূলক নেতৃত্ব বিভিন্ন ধরণের নেতৃত্ব শৈলী।
দলগত দ্বন্দ্ব (Team Conflict): দ্বন্দ্ব দলের মধ্যে স্বাভাবিক, তবে এটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা উচিত। দ্বন্দ্ব নিরসন কৌশল ব্যবহার করে দ্বন্দ্ব সমাধান করা যেতে পারে।
যোগাযোগ (Communication): কার্যকর যোগাযোগ দলের সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ায় এবং ভুল বোঝাবুঝি কমায়।

সাংগঠনিক প্রক্রিয়া

সাংগঠনিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানের কাঠামো, সংস্কৃতি এবং নীতিগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। এই প্রক্রিয়াগুলি কর্মীদের আচরণকে প্রভাবিত করে।

সাংগঠনিক সংস্কৃতি (Organizational Culture): সংস্কৃতি হলো প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং রীতিনীতিগুলির সমষ্টি। একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি কর্মীদের মধ্যে আনুগত্য এবং সহযোগিতা বাড়ায়।
ক্ষমতা এবং রাজনীতি (Power and Politics): ক্ষমতা হলো অন্যদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা। সাংগঠনিক রাজনীতি প্রায়শই ক্ষমতার ব্যবহারের সাথে জড়িত।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decision Making): সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ মডেল এবং স্বজ্ঞাত সিদ্ধান্ত গ্রহণ মডেল দুটি ভিন্ন পদ্ধতি।
পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা (Change Management): পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা হলো প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনগুলি সফলভাবে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। লিউইন এর পরিবর্তন মডেল এই ক্ষেত্রে একটি জনপ্রিয় কাঠামো।
মানবাধিকার ও কর্মপরিবেশ: একটি সুস্থ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানো এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা অত্যাবশ্যক।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং আচরণগত অর্থনীতি

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, সংগঠন আচরণের ধারণাগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীদের আবেগ, ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ট্রেডিংয়ের ফলাফলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

আবেগ (Emotion): ভয় এবং লোভের মতো আবেগ বিনিয়োগকারীদের যুক্তিবুদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
ঝুঁকি গ্রহণ (Risk Taking): বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা তাদের ট্রেডিং কৌশলকে প্রভাবিত করে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decision Making): বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, এবং এই সিদ্ধান্তগুলি প্রায়শই আবেগ এবং heuristic দ্বারা প্রভাবিত হয়।
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস : চার্ট এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ মূল্য সম্পর্কে ধারণা করা।
ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস : অর্থনৈতিক সূচক এবং কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা।
ভলিউম অ্যানালাইসিস : ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা : সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে স্টপ-লস অর্ডার এবং অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করা।
মানি ম্যানেজমেন্ট : ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের সঠিক পরিচালনা করা।
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন : ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা সনাক্ত করা।
মুভিং এভারেজ : নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য নির্ণয় করে বাজারের দিকনির্দেশনা বোঝা।
আরএসআই (RSI) : Relative Strength Index ব্যবহার করে বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রির অবস্থা নির্ণয় করা।
এমএসিডি (MACD) : Moving Average Convergence Divergence ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগ সনাক্ত করা।
বলিঙ্গার ব্যান্ড : Bollinger Bands ব্যবহার করে বাজারের অস্থিরতা এবং সম্ভাব্য ব্রেকআউট পয়েন্ট সনাক্ত করা।
ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট : Fibonacci Retracement ব্যবহার করে সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেল চিহ্নিত করা।
Elliott Wave Theory : বাজারের দীর্ঘমেয়াদী গতিবিধি বোঝার জন্য Elliott Wave Theory ব্যবহার করা।

বর্তমান প্রবণতা

সংগঠন আচরণে সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো হলো:

কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি (Diversity and Inclusion): বিভিন্ন পটভূমির কর্মীদের সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ তৈরি করা।
দূরবর্তী কাজ (Remote Work): দূরবর্তী কাজের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এর ফলে কর্মীদের উপর প্রভাব বিশ্লেষণ করা।
প্রযুক্তি এবং অটোমেশন (Technology and Automation): প্রযুক্তি এবং অটোমেশনের কারণে কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন এবং কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা (Mental Health and Well-being): কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর গুরুত্ব দেওয়া।
নৈতিক নেতৃত্ব : প্রতিষ্ঠানের নীতি-নৈতিকতা বজায় রাখা এবং নৈতিক আচরণ উৎসাহিত করা।
কাজের পরিবেশ : একটি ইতিবাচক এবং সহায়ক কাজের পরিবেশ তৈরি করা।

উপসংহার

সংগঠন আচরণ একটি জটিল এবং গতিশীল ক্ষেত্র। প্রতিষ্ঠানের সাফল্য এবং কর্মীদের সন্তুষ্টির জন্য এই ক্ষেত্রের জ্ঞান এবং প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি, দল এবং সাংগঠনিক প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি কার্যকর এবং উৎপাদনশীল কর্মপরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতেও আচরণগত অর্থনীতির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ