Operation Litani

Operation Litani (হিব্রু ভাষায়: מבצע ליטני‎, Mivtza Litani) ছিল ১৯৭৮ সালের মার্চ মাসে ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননের দক্ষিণ লেবাননে চালানো একটি সামরিক অভিযান। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO)-এর সামরিক ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা এবং লেবাননে তাদের কার্যকলাপ সীমিত করা, যারা ইসরায়েলের উত্তরে গ্যালিলি অঞ্চলে প্রায়শই হামলা চালাতো। এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত সামরিক পদক্ষেপ ছিল।

পটভূমি

১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে, লেবানন ফিলিস্তিনি গেরিলাদের একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। পিএলও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য লেবাননের ভূখণ্ড ব্যবহার করত। এর প্রতিক্রিয়ায়, ইসরায়েল লেবাননের অভ্যন্তরে প্রায়শই প্রতিরোধমূলক হামলা চালাতো। ১৯৭৮ সালের ১১ই মার্চ, পিএলও-এর গেরিলারা ইসরায়েলের উত্তর কিবুৎজ মেটসুভা-তে হামলা চালায়, যেখানে ১৮ জন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হন। এই ঘটনার পর ইসরায়েল সরকার লেবাননে একটি বড় আকারের সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

অভিযানের পরিকল্পনা ও পর্যায়

Operation Litani-র পরিকল্পনাটি ছিল বেশ বিস্তৃত। এর তিনটি প্রধান পর্যায় ছিল:

প্রথম পর্যায়: লেবাননের দক্ষিণ অংশে আর্মির দ্রুত প্রবেশ এবং পিএলও-র ঘাঁটিগুলো দখল করা।
দ্বিতীয় পর্যায়: পিএলও গেরিলাদের হটিয়ে দেওয়া এবং একটি বাফার জোন তৈরি করা, যেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী টহল দেবে।
তৃতীয় পর্যায়: লেবাননের সরকারের সাথে একটি নতুন নিরাপত্তা চুক্তি স্থাপন করা, যাতে ভবিষ্যতে পিএলও-র হামলা বন্ধ করা যায়।

অভিযানের শুরুতে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী লেবাননের আকাশপথে ব্যাপক বোমা হামলা চালায়। একই সময়ে, স্থলবাহিনী এবং ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট লেবাননের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং পিএলও-র ঘাঁটিগুলোর দিকে অগ্রসর হয়।

অভিযানের অগ্রগতি

অভিযানের প্রথম কয়েক দিনে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দ্রুত লেবাননের দক্ষিণ অংশে প্রবেশ করে এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও গ্রাম দখল করে নেয়। পিএলও গেরিলারা প্রতিরোধের চেষ্টা করে, কিন্তু ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তুলনায় তারা দুর্বল ছিল। ইসরায়েলি সেনারা তির শহরটি দখল করে নেয়, যা ছিল পিএলও-র একটি প্রধান ঘাঁটি।

তবে, অভিযানটি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি জটিল হয়ে পড়ে। পিএলও গেরিলারা গেরিলা যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে ইসরায়েলি সেনাদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে। স্থানীয় শিয়া মুসলিম জনগণও ইসরায়েলি সেনাদের বিরোধিতা করতে শুরু করে।

অভিযানের সময়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী বাহিনীর (UNIFIL) সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। UNIFIL-এর সৈন্যরা ইসরায়েলি সেনাদের অগ্রসর হওয়া আটকাতে চেষ্টা করে, কিন্তু তারা সফল হয়নি।

অভিযানের ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া

Operation Litani অভিযানটি ইসরায়েলের জন্য একটি মিশ্র ফলাফল নিয়ে আসে। একদিকে, ইসরায়েল পিএলও-র অনেক ঘাঁটি ধ্বংস করতে এবং গেরিলাদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। অন্যদিকে, অভিযানটি ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে এবং লেবাননে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তোলে।

অভিযানের পর, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রেজোলিউশন ৪২৫ পাস করে, যেখানে ইসরায়েলকে লেবানন থেকে নিঃশর্তভাবে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। ইসরায়েল ২০০০ সাল পর্যন্ত লেবাননের দক্ষিণ অংশে তাদের সেনা উপস্থিতি বজায় রাখে।

Operation Litani ইসরায়েল-লেবানন সংঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। এই অভিযানটি ইসরায়েলের সামরিক কৌশল এবং বৈদেশিক নীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

সামরিক কৌশল এবং প্রযুক্তি

Operation Litani-তে ইসরায়েল অত্যাধুনিক সামরিক কৌশল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

বায়ু শ্রেষ্ঠত্ব: ইসরায়েলি বিমান বাহিনী লেবাননের আকাশপথে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, যা তাদের বোমা হামলা এবং সেনাদের সমর্থন করার জন্য সহায়ক ছিল।
সাঁজোয়া যুদ্ধ: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যান ব্যবহার করে পিএলও-র ঘাঁটিগুলো দখল করে নেয়।
গেরিলা যুদ্ধ মোকাবিলা: ইসরায়েলি সেনারা পিএলও গেরিলাদের গেরিলা যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
যোগাযোগ ও গোয়েন্দা: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে পিএলও-র কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারে এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হয়।

ভলিউম বিশ্লেষণ

Operation Litani-র সময়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভলিউম বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভলিউম বিশ্লেষণ বলতে বোঝায়, একটি নির্দিষ্ট এলাকায় শত্রুদের সংখ্যা, তাদের সরঞ্জাম এবং তাদের সম্ভাব্য হামলার ক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা বিশ্লেষণ করা। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছিল।

ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করত, যেমন:

গোয়েন্দা তথ্য: ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং আমান লেবানন থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করত।
বিমান reconnaissance: ইসরায়েলি বিমান বাহিনী নিয়মিতভাবে লেবাননের উপর দিয়ে উড়ে যেত এবং ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করত।
স্থল reconnaissance: ইসরায়েলি সেনারা লেবাননের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করত।
স্থানীয় সূত্র: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্থানীয় জনগণের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করত।

এই সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পিএলও গেরিলাদের সংখ্যা, তাদের অবস্থান এবং তাদের সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারত। এর ফলে, তারা তাদের সেনাদের সঠিক স্থানে মোতায়েন করতে এবং শত্রুদের হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিল।

রাজনৈতিক প্রভাব

Operation Litani লেবাননের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই অভিযানের ফলে, লেবাননের অভ্যন্তরীণ সংঘাত আরও তীব্র হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

অভিযানের পর, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সেলিম হোসেন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নতুন সরকার গঠনে দীর্ঘ সময় লাগে এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

Operation Litani লেবাননের জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন আরও স্পষ্ট করে তোলে। শিয়া মুসলিমরা ইসরায়েলি সেনাদের বিরোধিতা করে এবং ইরান ও সিরিয়ার সমর্থন লাভ করে। অন্যদিকে, খ্রিস্টান মারোনাইটরা ইসরায়েলের সাথে সহযোগিতা করে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

Operation Litani-র প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া মিশ্র ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, তবে লেবাননের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রেজোলিউশন ৪২৫ পাস করে, যেখানে ইসরায়েলকে লেবানন থেকে নিঃশর্তভাবে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। তবে, ইসরায়েল এই রেজোলিউশন মানতে অস্বীকার করে।

Operation Litani ইসরায়েল-লেবানন সংঘাতের একটি নতুন পর্যায় শুরু করে। এই অভিযানের ফলে, লেবানন একটি অস্থির দেশে পরিণত হয় এবং সন্ত্রাসবাদ ও রাজনৈতিক সহিংসতার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

কৌশলগত বিশ্লেষণ

Operation Litani ছিল ইসরায়েলের জন্য একটি কৌশলগত ভুল ছিল কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, এই অভিযানটি ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায়নি, বরং আরও খারাপ করেছে। তাদের মতে, ইসরায়েল পিএলও-র ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করলেও, গেরিলারা অন্য এলাকায় ফিরে আসে এবং নতুন করে হামলা চালাতে শুরু করে।

অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, Operation Litani ইসরায়েলের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল। তাদের মতে, এই অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল পিএলও-র হামলা বন্ধ করতে এবং গ্যালিলি অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছিল।

যাইহোক, অধিকাংশ বিশ্লেষক একমত যে, Operation Litani ইসরায়েল-লেবানন সংঘাতের একটি জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি ডেকে এনেছে।

আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা

Operation Litani-র ঘটনাটি আজও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক। এই অভিযানের ফলে, লেবাননে হিজবুল্লাহর উত্থান হয়, যা বর্তমানে ভূ-রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।

হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের জন্য একটি প্রধান হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সংগঠনটি ইসরায়েলের উপর নিয়মিতভাবে রকেট হামলা চালায় এবং সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।

Operation Litani-র অভিজ্ঞতা থেকে, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতগুলোতে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে আরও সতর্ক হয়েছে। তবে, ইসরায়েল এখনও তার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজন মনে করলে সামরিক পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করে না।

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ