OTM

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ OTM (আউট অফ দ্য মানি)

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল বিষয়, যেখানে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের মূল্য বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করে ট্রেড করে থাকেন। এই ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, OTM বা আউট অফ দ্য মানি অপশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এই নিবন্ধে, আমরা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ OTM অপশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

OTM অপশন কী?

OTM বা আউট অফ দ্য মানি অপশন হলো সেই অপশন, যার স্ট্রাইক মূল্য (Strike Price) বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে আলাদা থাকে। কল অপশনের ক্ষেত্রে, স্ট্রাইক মূল্য যদি বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি হয়, তবে সেটি OTM কল অপশন। অন্যদিকে, পুট অপশনের ক্ষেত্রে, স্ট্রাইক মূল্য যদি বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কম হয়, তবে সেটি OTM পুট অপশন।

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্য ১০০ টাকা হয়, এবং আপনি ১০৫ টাকার স্ট্রাইক মূল্যের একটি কল অপশন কেনেন, তবে সেটি একটি OTM কল অপশন হবে। কারণ, স্ট্রাইক মূল্য (১০৫ টাকা) বর্তমান বাজার মূল্যের (১০০ টাকা) চেয়ে বেশি।

OTM অপশনের বৈশিষ্ট্য

• কম প্রিমিয়াম: OTM অপশনের প্রিমিয়াম সাধারণত কম হয়, কারণ এই অপশনগুলোর লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
• উচ্চ ঝুঁকি: যেহেতু OTM অপশনগুলো বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে দূরে থাকে, তাই এগুলো লাভজনক হতে বেশি দামের পরিবর্তন প্রয়োজন হয়। ফলে, এই অপশনগুলোতে ঝুঁকি বেশি থাকে।
• সম্ভাব্য উচ্চ রিটার্ন: যদি বাজার আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী যায় এবং দাম উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়, তবে OTM অপশন থেকে উচ্চ রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে।
• সময়কাল: OTM অপশনের মেয়াদকাল (Expiry Date) যত বেশি হবে, লাভের সম্ভাবনাও তত বাড়বে। কারণ, দাম পরিবর্তনের জন্য বেশি সময় পাওয়া যায়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ OTM অপশনের ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ OTM অপশনগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়:

• মার্কেট গতিবিধি অনুমান: যখন বিনিয়োগকারীরা মনে করেন যে বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তখন তারা OTM অপশন ব্যবহার করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন।
• কম প্রিমিয়ামে ট্রেড: OTM অপশনের প্রিমিয়াম কম হওয়ায়, বিনিয়োগকারীরা কম মূল্যে ট্রেড করতে পারেন।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: OTM অপশন ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা তাদের ঝুঁকি কমাতে পারেন, কারণ প্রিমিয়াম কম होनेর কারণে ক্ষতির পরিমাণ সীমিত থাকে।
• দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ: দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য OTM অপশন একটি ভাল বিকল্প হতে পারে, কারণ দাম পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।

OTM অপশন ট্রেডিংয়ের কৌশল

OTM অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

• স্ট্র্যাডল (Straddle): এই কৌশলে, একই স্ট্রাইক মূল্যের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়। এটি সাধারণত বাজারের বড় ধরনের পরিবর্তনের পূর্বে ব্যবহার করা হয়। স্ট্র্যাডল কৌশল
• স্ট্র্যাঙ্গল (Strangle): এই কৌশলে, বিভিন্ন স্ট্রাইক মূল্যের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়। এটি স্ট্র্যাডলের চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু লাভের সম্ভাবনাও কম। স্ট্র্যাঙ্গল কৌশল
• বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): এই কৌশলে, তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক মূল্যের অপশন ব্যবহার করা হয়। এটি একটি নির্দিষ্ট দামের মধ্যে বাজারের স্থিতিশীলতা অনুমান করার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাটারফ্লাই স্প্রেড
• কন্ডর স্প্রেড (Condor Spread): এটি বাটারফ্লাই স্প্রেডের মতো, তবে এখানে চারটি ভিন্ন স্ট্রাইক মূল্যের অপশন ব্যবহার করা হয়। কন্ডর স্প্রেড
• ভার্টিকাল স্প্রেড (Vertical Spread): এই কৌশলে, একই ধরনের দুটি অপশন কেনা এবং বিক্রি করা হয়, কিন্তু তাদের স্ট্রাইক মূল্যের মধ্যে পার্থক্য থাকে। ভার্টিকাল স্প্রেড

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং OTM অপশন

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ OTM অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (Technical Indicator) নিচে উল্লেখ করা হলো:

• মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি বাজারের প্রবণতা (Trend) নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। মুভিং এভারেজ
• রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI): এটি বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রির অবস্থা নির্দেশ করে। রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স
• MACD (Moving Average Convergence Divergence): এটি বাজারের গতি এবং দিক পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেয়। MACD
• বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এটি বাজারের অস্থিরতা (Volatility) পরিমাপ করতে সাহায্য করে। বলিঙ্গার ব্যান্ড
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটি সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর (Support and Resistance Level) সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং OTM অপশন

ভলিউম বিশ্লেষণ OTM অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের চাহিদা এবং যোগান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

• ভলিউম স্পাইক (Volume Spike): যখন কোনো শেয়ারের ভলিউম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়, তখন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হতে পারে।
• অন ভলিউম ব্রেকআউট (On Volume Breakout): যখন কোনো শেয়ার একটি প্রতিরোধের স্তর ভেদ করে উপরে যায় এবং একই সাথে ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তখন এটি একটি শক্তিশালী বুলিশ সংকেত।
• অন ভলিউম ব্রেকডাউন (On Volume Breakdown): যখন কোনো শেয়ার একটি সমর্থন স্তর ভেদ করে নিচে নামে এবং একই সাথে ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তখন এটি একটি শক্তিশালী বিয়ারিশ সংকেত।
• ভলিউম কনফার্মেশন (Volume Confirmation): কোনো টেকনিক্যাল প্যাটার্ন (Technical Pattern) সফল হওয়ার জন্য ভলিউম কনফার্মেশন প্রয়োজন।

OTM অপশন ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি

OTM অপশন ট্রেডিংয়ের কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত:

• সময় ক্ষয় (Time Decay): অপশনের মেয়াদকাল যত কমতে থাকে, এর মূল্য তত কমতে থাকে।
• অপরিবর্তিত বাজার: যদি বাজার আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী না যায় এবং দাম তেমন পরিবর্তিত না হয়, তবে আপনার বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
• অতিরিক্ত ঝুঁকি: OTM অপশনগুলোতে ঝুঁকি বেশি থাকে, কারণ লাভের জন্য বড় ধরনের দামের পরিবর্তন প্রয়োজন হয়।
• তারল্য ঝুঁকি (Liquidity Risk): কিছু OTM অপশনে তারল্য কম থাকতে পারে, যার ফলে দ্রুত কেনা বা বিক্রি করা কঠিন হতে পারে।

OTM অপশন ট্রেডিংয়ের সুবিধা

OTM অপশন ট্রেডিংয়ের কিছু সুবিধা রয়েছে:

• কম প্রিমিয়াম: OTM অপশনের প্রিমিয়াম কম হওয়ায়, কম মূল্যে ট্রেড করা যায়।
• উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: যদি বাজার আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী যায়, তবে উচ্চ রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: OTM অপশন ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
• নমনীয়তা: OTM অপশন ট্রেডিংয়ে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

উপসংহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ OTM অপশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এই অপশনগুলো কম প্রিমিয়ামে ট্রেড করার সুযোগ দেয়, তবে এগুলোতে ঝুঁকিও বেশি থাকে। OTM অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ এবং সঠিক কৌশল নির্বাচন করা খুবই জরুরি। বিনিয়োগকারীদের উচিত, এই অপশনগুলো ব্যবহারের পূর্বে ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা।

অপশন ট্রেডিং বাইনারি অপশন স্ট্রাইক মূল্য প্রিমিয়াম টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ মার্কেট প্রবণতা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ফিনান্সিয়াল মার্কেট বিনিয়োগ কৌশল ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম অপশন চেইন কন্ডর স্প্রেড বাটারফ্লাই স্প্রেড ভার্টিকাল স্প্রেড স্ট্র্যাডল কৌশল স্ট্র্যাঙ্গল কৌশল মুভিং এভারেজ রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স MACD বলিঙ্গার ব্যান্ড ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট

OTM অপশন ট্রেডিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধা	অসুবিধা
কম প্রিমিয়াম	উচ্চ ঝুঁকি
উচ্চ লাভের সম্ভাবনা	সময় ক্ষয়
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা	অপরিবর্তিত বাজার
নমনীয়তা	তারল্য ঝুঁকি

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ