OSI মডেল
OSI মডেল
ওপেন সিস্টেমস ইন্টারকানেকশন (OSI) মডেল হল কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর একটি ধারণাগত কাঠামো যা নেটওয়ার্ক প্রোটোকল এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলোকে স্তরে স্তরে ভাগ করে। এটি নেটওয়ার্কের কার্যাবলী কীভাবে সম্পন্ন হয় তা বোঝার জন্য একটি সাধারণ ভাষা সরবরাহ করে। ১৯৭০-এর দশকে আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (ISO) এটি তৈরি করে। এই মডেল নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এবং সমস্যা সমাধানে সহায়ক।
OSI মডেলের স্তরসমূহ
OSI মডেল সাতটি স্তরে বিভক্ত, যেখানে প্রতিটি স্তরের নির্দিষ্ট কাজ এবং দায়িত্ব রয়েছে। নিচে এই স্তরগুলো আলোচনা করা হলো:
| স্তর নম্বর | স্তরের নাম | মূল কাজ | ডেটা ইউনিট | প্রোটোকল উদাহরণ | 1 | ফিজিক্যাল স্তর (Physical Layer) | ডেটা বিট আকারে প্রেরণ করা, ভোল্টেজ, ডেটা রেট ইত্যাদি নির্ধারণ করা। | বিট (Bit) | ইথারনেট (Ethernet), ওয়াইফাই (Wi-Fi) | 2 | ডেটা লিঙ্ক স্তর (Data Link Layer) | ফিজিক্যাল স্তরের বিটগুলোকে ফ্রেমে সাজানো, ত্রুটি সনাক্তকরণ ও সংশোধন করা। | ফ্রেম (Frame) | ম্যাক অ্যাড্রেস (MAC address), পিপিওই (PPPoE) | 3 | নেটওয়ার্ক স্তর (Network Layer) | ডেটা প্যাকেটগুলোকে উৎস থেকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া, আইপি অ্যাড্রেসিং এবং রাউটিং করা। | প্যাকেট (Packet) | আইপি (IP), আইসিএমপি (ICMP) | 4 | ট্রান্সপোর্ট স্তর (Transport Layer) | নির্ভরযোগ্য ডেটা ট্রান্সফার নিশ্চিত করা, ডেটাকে সেগমেন্টে ভাগ করা এবং পুনরায় একত্রিত করা। | সেগমেন্ট (Segment) | টিসিপি (TCP), ইউডিপি (UDP) | 5 | সেশন স্তর (Session Layer) | দুটি অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, পরিচালনা এবং সমাপ্ত করা। | ডেটা (Data) | এনইটিবিআইওএস (NetBIOS), সকেট (Sockets) | 6 | প্রেজেন্টেশন স্তর (Presentation Layer) | ডেটা এনক্রিপশন, ডিক্রিপশন এবং ফরম্যাটিং করা। | ডেটা (Data) | এসএসএল/টিএলএস (SSL/TLS), এএসকিআই (ASCII) | 7 | অ্যাপ্লিকেশন স্তর (Application Layer) | ব্যবহারকারীর অ্যাপ্লিকেশনগুলোর সাথে ইন্টারফেস করা, যেমন ওয়েব ব্রাউজার বা ইমেল ক্লায়েন্ট। | ডেটা (Data) | এইচটিটিপি (HTTP), এফটিপি (FTP), এসএমটিপি (SMTP) |
১. ফিজিক্যাল স্তর
ফিজিক্যাল স্তর হলো OSI মডেলের সবচেয়ে নিচের স্তর। এই স্তরটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত মাধ্যম এবং সিগন্যাল নিয়ে কাজ করে। এর কাজগুলো হলো:
- বিট ট্রান্সমিশন: ফিজিক্যাল স্তর বিটগুলোকে বৈদ্যুতিক বা অপটিক্যাল সিগন্যালে রূপান্তরিত করে প্রেরণ করে।
- ডেটা রেট: ডেটা ট্রান্সমিশনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে।
- ভোল্টেজ এবং কারেন্ট: সিগন্যালের ভোল্টেজ এবং কারেন্ট লেভেল নির্ধারণ করে।
- মাধ্যম: তার, ফাইবার অপটিক ক্যাবল বা বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণ করে।
- ইথারনেট ক্যাবল এবং ওয়াইফাই এর মতো প্রযুক্তি এই স্তরে কাজ করে।
২. ডেটা লিঙ্ক স্তর
ডেটা লিঙ্ক স্তর ফিজিক্যাল স্তরের বিটগুলোকে ফ্রেমে সাজিয়ে ত্রুটিমুক্ত ডেটা ট্রান্সফার নিশ্চিত করে। এর প্রধান কাজগুলো হলো:
- ফ্রেম তৈরি: বিটগুলোকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোতে সাজানো হয়, যাকে ফ্রেম বলা হয়।
- ম্যাক অ্যাড্রেসিং: প্রতিটি নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ডের (NIC) একটি অনন্য ম্যাক অ্যাড্রেস থাকে, যা ডেটা প্রেরণে ব্যবহৃত হয়। ম্যাক অ্যাড্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন।
- ত্রুটি নিয়ন্ত্রণ: ডেটা ট্রান্সমিশনের সময় কোনো ত্রুটি হলে তা সনাক্তকরণ এবং সংশোধনের ব্যবস্থা করা হয়।
- পিপিওই (PPPoE) এই স্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটোকল।
৩. নেটওয়ার্ক স্তর
নেটওয়ার্ক স্তর ডেটা প্যাকেটগুলোকে উৎস থেকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পথ খুঁজে বের করে। এর মূল কাজগুলো হলো:
- আইপি অ্যাড্রেসিং: প্রতিটি ডিভাইসের একটি অনন্য আইপি অ্যাড্রেস থাকে, যা নেটওয়ার্কে তাদের সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। আইপি অ্যাড্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন।
- রাউটিং: ডেটা প্যাকেটগুলো কোন পথে গন্তব্যে পৌঁছাবে তা নির্ধারণ করা হয়।
- প্যাকেট ফরওয়ার্ডিং: প্যাকেটগুলোকে সঠিক পথে পাঠানো হয়।
- আইপি (IP) এবং আইসিএমপি (ICMP) এই স্তরের প্রধান প্রোটোকল।
৪. ট্রান্সপোর্ট স্তর
ট্রান্সপোর্ট স্তর ডেটা ট্রান্সফারের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে এবং ডেটাকে ছোট ছোট সেগমেন্টে ভাগ করে। এর প্রধান কাজগুলো হলো:
- সেগমেন্টেশন: বড় ডেটাগুলোকে ছোট ছোট সেগমেন্টে ভাগ করা হয়, যাতে সহজে প্রেরণ করা যায়।
- ত্রুটি নিয়ন্ত্রণ: ডেটা সঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত করা হয়।
- ফ্লো কন্ট্রোল: ডেটা প্রেরণের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যাতে নেটওয়ার্কের উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
- টিসিপি (TCP) এবং ইউডিপি (UDP) এই স্তরের প্রধান প্রোটোকল। টিসিপি নির্ভরযোগ্য ডেটা ট্রান্সফার প্রদান করে, যেখানে ইউডিপি দ্রুত ডেটা ট্রান্সফারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৫. সেশন স্তর
সেশন স্তর দুটি অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, পরিচালনা এবং সমাপ্ত করার কাজ করে। এর কাজগুলো হলো:
- সেশন স্থাপন: দুটি ডিভাইসের মধ্যে একটি যোগাযোগ সেশন তৈরি করা।
- সেশন পরিচালনা: সেশনের সময় ডেটা আদান-প্রদান নিয়ন্ত্রণ করা।
- সেশন সমাপ্তি: সেশন শেষ করার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
- এনইটিবিআইওএস (NetBIOS) এবং সকেট (Sockets) এই স্তরের উদাহরণ।
৬. প্রেজেন্টেশন স্তর
প্রেজেন্টেশন স্তর ডেটা এনক্রিপশন, ডিক্রিপশন এবং ফরম্যাটিংয়ের মাধ্যমে ডেটাকে অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য উপযুক্ত করে তোলে। এর কাজগুলো হলো:
- ডেটা এনক্রিপশন: ডেটার গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এনক্রিপ্ট করা।
- ডেটা ডিক্রিপশন: এনক্রিপ্ট করা ডেটাকে পুনরুদ্ধার করা।
- ডেটা কম্প্রেশন: ডেটার আকার ছোট করা, যাতে দ্রুত ট্রান্সফার করা যায়।
- এসএসএল/টিএলএস (SSL/TLS) এবং এএসকিআই (ASCII) এই স্তরের উদাহরণ।
৭. অ্যাপ্লিকেশন স্তর
অ্যাপ্লিকেশন স্তর ব্যবহারকারীর অ্যাপ্লিকেশনগুলোর সাথে সরাসরি ইন্টারফেস করে এবং নেটওয়ার্ক পরিষেবাগুলো ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। এর কাজগুলো হলো:
- নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশন: ওয়েব ব্রাউজার, ইমেল ক্লায়েন্ট, ফাইল ট্রান্সফার প্রোগ্রাম ইত্যাদি।
- প্রোটোকল সমর্থন: এইচটিটিপি (HTTP), এফটিপি (FTP), এসএমটিপি (SMTP) এর মতো প্রোটোকল সমর্থন করা।
- ব্যবহারকারী ইন্টারফেস: ব্যবহারকারীকে নেটওয়ার্ক পরিষেবাগুলো ব্যবহারের জন্য একটি ইন্টারফেস প্রদান করা।
OSI মডেলের গুরুত্ব
OSI মডেল নেটওয়ার্কিংয়ের বিভিন্ন দিকগুলো বুঝতে এবং সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কিছু গুরুত্ব নিচে উল্লেখ করা হলো:
- স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন: এটি নেটওয়ার্কিং স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে আন্তঃকার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
- সমস্যা সমাধান: নেটওয়ার্কের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং সমাধান করতে সহায়ক।
- শিক্ষা: নেটওয়ার্কিংয়ের ধারণাগুলো সহজে বোঝার জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে।
- নেটওয়ার্ক ডিজাইন: নেটওয়ার্ক ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টের কাজে লাগে।
- ট্রাবলশুটিং : নেটওয়ার্কের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
OSI মডেল এবং টিসিপি/আইপি মডেলের মধ্যে পার্থক্য
OSI মডেল একটি তাত্ত্বিক কাঠামো, যেখানে টিসিপি/আইপি মডেল একটি বাস্তবায়নযোগ্য কাঠামো। নিচে এই দুটি মডেলের মধ্যে কিছু পার্থক্য উল্লেখ করা হলো:
| বৈশিষ্ট্য | OSI মডেল | টিসিপি/আইপি মডেল | স্তর সংখ্যা | ৭ | ৪ | ফিজিক্যাল ও ডেটা লিঙ্ক স্তর | আলাদা | নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস স্তর (Data Link + Physical) | নেটওয়ার্ক, ট্রান্সপোর্ট ও সেশন স্তর | আলাদা | ইন্টারনেট স্তর (Network) ও ট্রান্সপোর্ট স্তর (Transport) | প্রেজেন্টেশন ও অ্যাপ্লিকেশন স্তর | আলাদা | অ্যাপ্লিকেশন স্তর (Application) | জটিলতা | বেশি | কম | বাস্তবায়ন | কঠিন | সহজ |
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং নেটওয়ার্কিং
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক সংযোগ অত্যাবশ্যক। একটি স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করে যে ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে দ্রুত অর্ডার পাঠানো এবং গ্রহণ করা যায়। নেটওয়ার্কের লেটেন্সি (Latency) বা বিলম্ব ট্রেডিং ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে, তাই কম লেটেন্সি সম্পন্ন সংযোগ ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও, ডেটা সুরক্ষা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করা যেতে পারে।
নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাকাররা ব্যক্তিগত তথ্য এবং আর্থিক লেনদেন চুরি করতে পারে। তাই, শক্তিশালী ফায়ারওয়াল, অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার এবং নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেট ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও, নিরাপদ ওয়েবসাইট (HTTPS) ব্যবহার করা এবং সন্দেহজনক লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
উপসংহার
OSI মডেল কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি নেটওয়ার্কের কার্যাবলী বোঝার জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো প্রদান করে। নেটওয়ার্কিংয়ের ধারণাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারলে, বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো নিরাপদে এবং দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা সম্ভব।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নেটওয়ার্ক প্রোটোকল আইপি ঠিকানা সাবনেট মাস্ক ডিএনএস রাউটার সুইচ ফায়ারওয়াল ভিপিএন ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক নেটওয়ার্ক টপোলজি ক্লাউড কম্পিউটিং সাইবার নিরাপত্তা ডেটা এনক্রিপশন নেটওয়ার্ক ট্রাবলশুটিং ইথারনেট ওয়াইফাই টিসিপি ইউডিপি এইচটিটিপি এসএমটিপি
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
