Nasdaq Composite

নাসডাক কম্পোজিট : একটি বিস্তারিত আলোচনা

নাসডাক কম্পোজিট (Nasdaq Composite) হল নাসডাক স্টক মার্কেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার সূচক। এটি নাসডাকে তালিকাভুক্ত সমস্ত স্টকগুলির কর্মক্ষমতা ট্র্যাক করে, যা এটিকে প্রযুক্তি শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যারোমিটার করে তোলে। এই নিবন্ধে, নাসডাক কম্পোজিটের ইতিহাস, গঠন, কর্মক্ষমতা এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে এর সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ইতিহাস

নাসডাক (National Association of Securities Dealers Automated Quotations) ১৯৭২ সালে একটি কম্পিউটারাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল স্টক ট্রেডিংকে আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ করা। নাসডাক কম্পোজিট সূচকটি ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে শুরু হয়েছিল, যার ভিত্তি মান ছিল ১০০। সূচকটি প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির উপর বেশি নির্ভরশীল ছিল এবং সময়ের সাথে সাথে এটি পরিবর্তিত হয়েছে।

নাসডাক কম্পোজিটের গঠন

নাসডাক কম্পোজিটে ৩,৩০০-এর বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এই সূচকটিতে বিভিন্ন সেক্টরের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তবে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির প্রাধান্য রয়েছে। এখানে কিছু প্রধান সেক্টর উল্লেখ করা হলো:

• প্রযুক্তি (Technology): এই সেক্টরটি নাসডাক কম্পোজিটের একটি বড় অংশ। অ্যাপল, মাইক্রোসফট, গুগল (Alphabet Inc.) এবং অ্যামাজন এর মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি এই সূচকের গতিবিধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
• স্বাস্থ্যসেবা (Healthcare): অ্যামজেন, গিলাড সায়েন্সেস-এর মতো স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানিগুলিও এই সূচকে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
• আর্থিক পরিষেবা (Financial Services): এই সেক্টরের কোম্পানিগুলো, যেমন পেপ্যাল এবং ব্লক সূচকের অংশ।
• ভোগ্যপণ্য (Consumer Discretionary): নেটফ্লিক্স এবং স্টারবাক্স-এর মতো কোম্পানিগুলো এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত।

নাসডাক কম্পোজিটের গঠন এসঅ্যান্ডপি ৫০০ (S&P 500) থেকে ভিন্ন, কারণ এটি অনেক বেশি সংখ্যক কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করে।

কর্মক্ষমতা

নাসডাক কম্পোজিটের কর্মক্ষমতা সময়ের সাথে সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। সূচকটি বিভিন্ন অর্থনৈতিক চক্র এবং বাজারের প্রবণতা দ্বারা প্রভাবিত হয়।

• ডট-কম বুদ্বুদ (Dot-com Bubble): ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে, ইন্টারনেটের প্রসারের সাথে সাথে নাসডাক কম্পোজিট দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২০০০ সালের মার্চ মাসে সূচকটি ৫,১৩২.৫০-এ পৌঁছেছিল, যা ছিল তার সর্বোচ্চ বিন্দু। কিন্তু ডট-কম বুদ্বুদ ফেটে যাওয়ায় সূচকটি দ্রুত পতন করে।
• আর্থিক সংকট (Financial Crisis): ২০০৮ সালের আর্থিক সংকট নাসডাক কম্পোজিটকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছিল। সূচকটি প্রায় ৫৪% হ্রাস পেয়েছিল।
• পুনরুদ্ধার (Recovery): ২০১০ থেকে শুরু করে, নাসডাক কম্পোজিট ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হতে শুরু করে এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির কারণে নতুন উচ্চতা অর্জন করে।
• কোভিড-১৯ মহামারী (COVID-19 Pandemic): ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পরে, নাসডাক কম্পোজিট প্রথমে পতন করলেও পরবর্তীতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দ্রুত পুনরুদ্ধার করে।

নাসডাক কম্পোজিটের ঐতিহাসিক কর্মক্ষমতা

সূচকের মান (প্রায়) | পরিবর্তন (%) |

2,179 | +17.5% |

4,500 | +13.8% |

11,827 | +43.6% |

16,755 | +21.4% |

10,977 | -33.1% |

14,505 | +18.8% |

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক

বাইনারি অপশন হলো একটি আর্থিক উপকরণ, যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি সম্পদের (যেমন স্টক, সূচক, মুদ্রা) দাম বাড়বে নাকি কমবে সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। নাসডাক কম্পোজিট সূচকের উপর ভিত্তি করে বাইনারি অপশন ট্রেড করা জনপ্রিয়, কারণ এটি প্রযুক্তি শিল্পের একটি ভাল প্রতিফলন।

• কিভাবে কাজ করে: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, বিনিয়োগকারীরা একটি "কল" (Call) বা "পুট" (Put) অপশন নির্বাচন করেন। কল অপশনটি নির্বাচন করা মানে হলো বিনিয়োগকারী মনে করেন যে সূচকের দাম বাড়বে, অন্যদিকে পুট অপশনটি নির্বাচন করা মানে হলো বিনিয়োগকারী মনে করেন যে সূচকের দাম কমবে।
• মেয়াদ (Expiry): বাইনারি অপশনের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে, যেমন ৫ মিনিট, ১ ঘণ্টা বা ১ দিন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, বিনিয়োগকারীর ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হলে তিনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ পান, অন্যথায় তিনি তার বিনিয়োগ হারান।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): বাইনারি অপশন ট্রেডিং উচ্চ ঝুঁকির সাথে জড়িত। বিনিয়োগকারীদের উচিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করা এবং শুধুমাত্র সেই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা যা তারা হারাতে রাজি।

নাসডাক কম্পোজিট ট্রেডিং কৌশল

নাসডাক কম্পোজিট ট্রেড করার জন্য বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

• ট্রেন্ড অনুসরণ (Trend Following): এই কৌশলটিতে, বিনিয়োগকারীরা সূচকের দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা অনুসরণ করেন। যদি সূচকটি বাড়তে থাকে, তবে তারা কল অপশন কেনেন, এবং যদি সূচকটি কমতে থাকে, তবে তারা পুট অপশন কেনেন।
• ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): এই কৌশলটিতে, বিনিয়োগকারীরা সূচকের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধের স্তর (Resistance Level) বা সমর্থন স্তর (Support Level) ভেদ করার সময় ট্রেড করেন।
• রেঞ্জ ট্রেডিং (Range Trading): এই কৌশলটিতে, বিনিয়োগকারীরা সূচকের একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে ওঠানামা করে ট্রেড করেন।
• নিউজ ট্রেডিং (News Trading): এই কৌশলটিতে, বিনিয়োগকারীরা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খবর বা কোম্পানির ঘোষণার উপর ভিত্তি করে ট্রেড করেন।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ হলো চার্ট এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য গতিবিধি অনুমান করার একটি পদ্ধতি। নাসডাক কম্পোজিট ট্রেড করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল সূচক (Technical Indicator) হলো:

• মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সূচকের গড় মূল্য দেখায় এবং প্রবণতা সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
• রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (Relative Strength Index - RSI): এটি সূচকের অতিরিক্ত ক্রয় (Overbought) বা অতিরিক্ত বিক্রয় (Oversold) অবস্থা নির্দেশ করে।
• মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স (Moving Average Convergence Divergence - MACD): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সংকেত প্রদান করে।
• বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): এটি সূচকের দামের অস্থিরতা পরিমাপ করে।

ভলিউম বিশ্লেষণ

ভলিউম বিশ্লেষণ হলো ট্রেডিং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে বাজারের গতিবিধি বোঝার একটি পদ্ধতি। উচ্চ ভলিউম সাধারণত শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে, যেখানে কম ভলিউম দুর্বল প্রবণতা নির্দেশ করে।

• অন ব্যালেন্স ভলিউম (On Balance Volume - OBV): এটি ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং বাজারের প্রবণতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
• ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (Volume Weighted Average Price - VWAP): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেডিং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে গড় মূল্য দেখায়।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

• বাজার গভীরতা (Market Depth): নাসডাকের বাজার গভীরতা বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে, যা তাদের অর্ডার কার্যকর করার সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
• তারল্য (Liquidity): নাসডাক কম্পোজিটে সাধারণত উচ্চ তারল্য থাকে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা সহজেই স্টক কিনতে এবং বিক্রি করতে পারেন।
• নিয়ন্ত্রক পরিবেশ (Regulatory Environment): নাসডাক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

উপসংহার

নাসডাক কম্পোজিট একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার সূচক যা প্রযুক্তি শিল্পের কর্মক্ষমতা প্রতিফলিত করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর জন্য এটি একটি জনপ্রিয় ভিত্তি, তবে এর সাথে জড়িত ঝুঁকিগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, বিনিয়োগকারীরা নাসডাক কম্পোজিটে সফলভাবে ট্রেড করতে পারেন।

স্টক মার্কেট বিনিয়োগ অর্থনীতি ফিনান্সিয়াল মার্কেট টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ঝুঁকি বিশ্লেষণ পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট বাজারের পূর্বাভাস ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম নাসডাক ১০০ ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ এসঅ্যান্ডপি ৫০০ মিউচুয়াল ফান্ড ইটিএফ (ETF) শেয়ার বাজার মার্কেট সেন্টিমেন্ট বৈশ্বিক অর্থনীতি সুদের হার মুদ্রাস্ফীতি অর্থনৈতিক সূচক

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ