Internal Combustion Engine

অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন

অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন (Internal Combustion Engine বা ICE) হল এমন একটি ইঞ্জিন যা জ্বালানি এবং জারক (সাধারণত বাতাস) এর মিশ্রণকে ইঞ্জিনের ভেতরেই পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে। এই শক্তি পরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মাধ্যমে কাজে রূপান্তরিত হয়, যা পরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ইঞ্জিনগুলি আধুনিক বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

ইতিহাস

অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের ধারণাটি নতুন নয়। এর প্রাথমিক ধারণা উনিশ শতকে শুরু হয়েছিল। ১৮০৭ সালে ফ্রান্সিস নাইস প্রথম অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন তৈরি করেন, যা নাইস ইঞ্জিন নামে পরিচিত। এটি হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে চালিত হত। এরপর ১৮২৪ সালে সাদী কার্নো তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র (Second law of thermodynamics) প্রকাশ করেন, যা ইঞ্জিনের দক্ষতা (Efficiency) উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৮৫৯ সালে এতিয়েন লেনoir প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন তৈরি করেন। এটি গ্যাসোলিন (Gasoline) দ্বারা চালিত হত। তবে এই ইঞ্জিনের দক্ষতা ছিল খুবই কম। ১৮৭৬ সালে নিকোলাস অটো অটো চক্র (Otto cycle) আবিষ্কার করেন, যা আধুনিক চার-স্ট্রোক ইঞ্জিনের ভিত্তি স্থাপন করে। অটো চক্রের ইঞ্জিনগুলি লেনoir ইঞ্জিনের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ ছিল।

এরপর রুডলফ ডিজেল ১৮৯২ সালে ডিজেল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন, যা ভারী তেল (Heavy oil) ব্যবহার করে উচ্চ দক্ষতা প্রদান করে। বিংশ শতাব্দীতে ইঞ্জিনের নকশা এবং প্রযুক্তিতে আরও অনেক উন্নতি হয়েছে, যার ফলে আধুনিক অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনগুলি আরও শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব হয়েছে। ইঞ্জিনের ইতিহাস

প্রকারভেদ

অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন প্রধানত দুই প্রকার:

স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিন (Spark Ignition Engine):* এই ইঞ্জিনগুলি গ্যাসোলিন বা পেট্রোল ব্যবহার করে এবং একটি স্পার্ক প্লাগের মাধ্যমে জ্বালানি-বাতাসের মিশ্রণকে প্রজ্বলিত করে। গ্যাসোলিন ইঞ্জিন
কম্প্রেশন ইগনিশন ইঞ্জিন (Compression Ignition Engine):* এই ইঞ্জিনগুলি ডিজেল বা ভারী তেল ব্যবহার করে এবং বাতাসের উচ্চ চাপের মাধ্যমে জ্বালানিকে প্রজ্বলিত করে। ডিজেল ইঞ্জিন

এছাড়াও, ইঞ্জিনের গঠন এবং কার্যপ্রणाली অনুসারে আরও বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে:

চার-স্ট্রোক ইঞ্জিন (Four-stroke Engine):* এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রকারের ইঞ্জিন, যা চারটি ধাপে কাজ করে: গ্রহণ (Intake), সংকোচন (Compression), দহন (Combustion) এবং নিষ্কাশন (Exhaust)। চার স্ট্রোক ইঞ্জিন
দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিন (Two-stroke Engine):* এই ইঞ্জিন দুটি ধাপে কাজ করে এবং এটি সাধারণত ছোট এবং হালকা ওজনের হয়। দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন
রোটারি ইঞ্জিন (Rotary Engine):* এই ইঞ্জিনগুলি একটি ঘূর্ণায়মান রোটারের মাধ্যমে কাজ করে এবং এদের নকশা অন্যান্য ইঞ্জিনের তুলনায় ভিন্ন। রোটারি ইঞ্জিন

অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের প্রকারভেদ
ইঞ্জিন প্রকার	জ্বালানি	প্রজ্বলন পদ্ধতি	ব্যবহার
স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিন	গ্যাসোলিন/পেট্রোল	স্পার্ক প্লাগ	গাড়ি, মোটরসাইকেল
কম্প্রেশন ইগনিশন ইঞ্জিন	ডিজেল/ভারী তেল	উচ্চ চাপ	ট্রাক, বাস, জাহাজ
চার-স্ট্রোক ইঞ্জিন	গ্যাসোলিন/ডিজেল	স্পার্ক প্লাগ/উচ্চ চাপ	অধিকাংশ যানবাহন
দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিন	গ্যাসোলিন	স্পার্ক প্লাগ	ছোট ইঞ্জিন, যেমন - লন mower
রোটারি ইঞ্জিন	গ্যাসোলিন	স্পার্ক প্লাগ	বিশেষায়িত অ্যাপ্লিকেশন

কার্যপ্রণালী

চার-স্ট্রোক ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী:

১. গ্রহণ (Intake): পিস্টন নিচে নামার সময় intake ভালভ খোলে এবং জ্বালানি-বাতাসের মিশ্রণ সিলিন্ডারের ভেতরে প্রবেশ করে। ২. সংকোচন (Compression): intake ভালভ বন্ধ হয়ে যায় এবং পিস্টন উপরে উঠে জ্বালানি-বাতাসের মিশ্রণকে সংকুচিত করে। ৩. দহন (Combustion): স্পার্ক প্লাগ (গ্যাসোলিন ইঞ্জিনে) অথবা উচ্চ চাপ (ডিজেল ইঞ্জিনে) জ্বালানি-বাতাসের মিশ্রণকে প্রজ্বলিত করে, যা একটি বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পিস্টনকে নিচে ঠেলে দেয়। ৪. নিষ্কাশন (Exhaust): পিস্টন উপরে উঠে exhaust ভালভ খোলে এবং দহনকৃত গ্যাস সিলিন্ডার থেকে வெளியே যায়।

এই চারটি ধাপ একটি চক্রের মতো পুনরাবৃত্তি হতে থাকে, যা ইঞ্জিনের শক্তি উৎপাদন করে। অটো চক্র

ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ

একটি অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের প্রধান যন্ত্রাংশগুলি হল:

সিলিন্ডার (Cylinder):* এটি ইঞ্জিনের মূল অংশ, যেখানে পিস্টন চলাচল করে।
পিস্টন (Piston):* এটি সিলিন্ডারের ভেতরে উপরে-নিচে চলাচল করে এবং দহন প্রক্রিয়ার শক্তিকে কাজে রূপান্তরিত করে।
কConnecting রড (Connecting Rod):* এটি পিস্টনকে ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের সাথে যুক্ত করে।
ক্র্যাঙ্কশ্যাফট (Crankshaft):* এটি পিস্টনের রৈখিক গতিকে ঘূর্ণন গতিতে রূপান্তরিত করে।
ভালভ (Valve):* এগুলো সিলিন্ডারে জ্বালানি-বাতাসের মিশ্রণ প্রবেশ এবং দহনকৃত গ্যাস নির্গমনে সাহায্য করে।
স্পার্ক প্লাগ (Spark Plug):* গ্যাসোলিন ইঞ্জিনে জ্বালানি-বাতাসের মিশ্রণকে প্রজ্বলিত করে।
ইঞ্জেক্টর (Injector):* ডিজেল ইঞ্জিনে জ্বালানিকে সিলিন্ডারে স্প্রে করে।
ক্যামশ্যাফট (Camshaft):* এটি ভালভগুলির খোলা ও বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
কুলিং সিস্টেম (Cooling System):* ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
লুব্রিকেশন সিস্টেম (Lubrication System):* ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশগুলির ঘর্ষণ কমাতে সাহায্য করে। ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ

দক্ষতা এবং পরিবেশগত প্রভাব

অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের দক্ষতা বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, যেমন ইঞ্জিনের নকশা, জ্বালানির গুণমান এবং অপারেটিং শর্তাবলী। আধুনিক ইঞ্জিনগুলির দক্ষতা প্রায় ২৫% থেকে ৪০% পর্যন্ত হতে পারে। তবে, ইঞ্জিনের দক্ষতা বাড়ানো একটি চলমান প্রক্রিয়া।

অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনগুলি পরিবেশের উপর কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এগুলো হল:

বায়ু দূষণ (Air pollution):* ইঞ্জিন থেকে নির্গত ধোঁয়াতে ক্ষতিকারক গ্যাস, যেমন - কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বন থাকে, যা বায়ু দূষণ করে।
গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ (Greenhouse gas emission):* ইঞ্জিন থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রিনহাউস গ্যাস হিসাবে পরিচিত, যা বিশ্ব উষ্ণায়নে অবদান রাখে।
শব্দ দূষণ (Noise pollution):* ইঞ্জিন চলার সময় শব্দ উৎপন্ন হয়, যা শব্দ দূষণ করে।

এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যেমন - বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার, ইঞ্জিনের নকশা উন্নত করা এবং নির্গমন নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি (Emission control technology) ব্যবহার করা। পরিবেশ দূষণ

ভবিষ্যৎ প্রবণতা

অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের ভবিষ্যৎ বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পরিবেশগত বিধি-নিষেধ কঠোর হচ্ছে এবং বিকল্প জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। এই কারণে, বিজ্ঞানীরা এবং প্রকৌশলীরা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করছেন:

হাইব্রিড ইঞ্জিন (Hybrid engine):* এটি একটি অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন এবং একটি বৈদ্যুতিক মোটরের সমন্বয়ে গঠিত, যা দক্ষতা বাড়াতে এবং নির্গমন কমাতে সাহায্য করে। হাইব্রিড ইঞ্জিন
বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন (Electric engine):* এটি সম্পূর্ণরূপে বিদ্যুতের মাধ্যমে চালিত এবং কোনো নির্গমন তৈরি করে না। বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন
বিকল্প জ্বালানি (Alternative fuel):* যেমন - বায়োফুয়েল, হাইড্রোজেন এবং সিন্থেটিক ফুয়েল ব্যবহার করে ইঞ্জিনের পরিবেশগত প্রভাব কমানো যায়। বিকল্প জ্বালানি
ইঞ্জিনের দক্ষতা বৃদ্ধি (Increase engine efficiency):* নতুন প্রযুক্তি এবং নকশা ব্যবহার করে ইঞ্জিনের দক্ষতা বাড়ানো।

অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনগুলি এখনও আমাদের পরিবহন এবং শক্তি উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব এবং আরও দক্ষ বিকল্পগুলির দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন টেকনিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

ডায়াগনস্টিক কোড (Diagnostic code):* ইঞ্জিনের ত্রুটি নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কম্প্রেশন টেস্ট (Compression test):* সিলিন্ডারের কম্প্রেশন ক্ষমতা পরীক্ষা করে।
ফুয়েল ইনজেকশন বিশ্লেষণ (Fuel injection analysis):* ফুয়েল ইনজেক্টরের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে।
ইগনিশন সিস্টেম বিশ্লেষণ (Ignition system analysis):* স্পার্ক প্লাগ এবং ইগনিশন কয়েলের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে।

ভলিউম বিশ্লেষণ

ইঞ্জিনের ভলিউম বিশ্লেষণ করে এর ক্ষমতা এবং কর্মক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই বিশ্লেষণে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে:

সিলিন্ডার ভলিউম (Cylinder volume):* সিলিন্ডারের আয়তন, যা ইঞ্জিনের ক্ষমতা নির্ধারণ করে।
ডিসপ্লেসমেন্ট (Displacement):* পিস্টন দ্বারা এক চক্রে স্থানান্তরিত আয়তন।
কম্প্রেশন রেশিও (Compression ratio):* সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন আয়তনের অনুপাত।

এই বিশ্লেষণগুলি ইঞ্জিন ডিজাইনের উন্নতি এবং কর্মক্ষমতা অপ্টিমাইজ করতে সহায়ক।

এই নিবন্ধটি অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা প্রদান করে। এই ইঞ্জিনগুলি কিভাবে কাজ করে, এদের প্রকারভেদ, যন্ত্রাংশ, দক্ষতা, পরিবেশগত প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ প্রবণতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

তাপগতিবিদ্যা যন্ত্র প্রকৌশল গাড়ি পরিবহন শক্তি উৎপাদন বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ জ্বালানি দক্ষতা ইঞ্জিন অয়েল কুল্যান্ট ফিল্টার (ইঞ্জিন) টার্বোচার্জার সুপারচার্জার ইজিএফ (ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইনজেকশন) এবিএস (অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম) ইএসপি (ইলেকট্রনিক স্ট্যাবিলিটি প্রোগ্রাম) গিয়ারবক্স ক্ল্যাচ ডিফারেনশিয়াল সাসপেনশন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ