HEVC
HEVC (হাই এফিসিয়েন্সি ভিডিও কোডিং)
HEVC বা হাই এফিসিয়েন্সি ভিডিও কোডিং হলো ভিডিও কম্প্রেশনের জন্য ব্যবহৃত একটি আধুনিক ভিডিও কোডেক স্ট্যান্ডার্ড। এটি H.264/AVC-এর উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত এবং এর প্রধান লক্ষ্য হলো একই মানের ভিডিওর জন্য ফাইলের আকার প্রায় অর্ধেক করা। এর ফলে ডেটা সাশ্রয় হয় এবং ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কে ভিডিও স্ট্রিমিং সহজ হয়। HEVC-কে H.265 নামেও ডাকা হয়।
HEVC-এর প্রেক্ষাপট
ডিজিটাল ভিডিওর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ এবং স্মার্ট টিভি-র মতো ডিভাইসগুলিতে উচ্চ রেজোলিউশনের ভিডিও (যেমন 4K এবং 8K) এখন খুব সাধারণ। এই উচ্চ রেজোলিউশনের ভিডিওগুলির জন্য অনেক বেশি ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। H.264/AVC কোডেক দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে এলেও, এটি উচ্চ রেজোলিউশনের ভিডিওগুলির জন্য যথেষ্ট কার্যকর ছিল না। তাই, একটি নতুন এবং আরও দক্ষ ভিডিও কোডেক তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে HEVC তৈরি করা হয়।
HEVC-এর বৈশিষ্ট্য
HEVC-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
- উচ্চ কম্প্রেশন দক্ষতা: HEVC, H.264/AVC-এর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ কম্প্রেশন দক্ষতা প্রদান করে। এর মানে হলো, একই মানের ভিডিওর জন্য HEVC ফাইলের আকার H.264/AVC ফাইলের চেয়ে অর্ধেক হবে।
- উন্নত প্যারালাল প্রক্রিয়াকরণ: HEVC প্যারালাল প্রক্রিয়াকরণের জন্য অপ্টিমাইজ করা হয়েছে, যা এটিকে দ্রুত এনকোড এবং ডিকোড করতে সাহায্য করে।
- নমনীয়তা: HEVC বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন এবং ডিভাইসের জন্য নমনীয়ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- উচ্চ রেজোলিউশন সমর্থন: HEVC 8K এবং তার চেয়েও বেশি রেজোলিউশনের ভিডিও সমর্থন করে।
- উন্নত ব্লক পার্টিশন: HEVC-তে কোডিং ট্রি ইউনিট (CTU) নামে একটি নতুন ব্লক পার্টিশন কাঠামো ব্যবহার করা হয়, যা 64x64 পিক্সেল পর্যন্ত হতে পারে। এটি বৃহত্তর আকারের ব্লকগুলি ব্যবহার করে ভিডিওর মধ্যে থাকা রিডানডেন্সি কমাতে সাহায্য করে।
- ইন-লুপ ফিল্টার: HEVC-তে উন্নত ইন-লুপ ফিল্টার ব্যবহার করা হয়, যা ভিডিওর গুণমান উন্নত করে এবং ব্লকিং আর্টিফ্যাক্ট হ্রাস করে।
- অ্যামি (AMMI): অ্যাডাপ্টিভ মুভমেন্ট মডেলিং এবং মোশন ভেক্টর প্রেডিকশন এর জন্য উন্নত অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়েছে।
HEVC-এর কারিগরি দিক
HEVC-এর কার্যকারিতা এর জটিল অ্যালগরিদম এবং উন্নত কারিগরি বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল। নিচে কয়েকটি মূল কারিগরি দিক আলোচনা করা হলো:
- কোডিং ট্রি ইউনিট (CTU): HEVC-এর সবচেয়ে বড় ব্লক হলো CTU, যার আকার ৬৪x৬৪ পিক্সেল পর্যন্ত হতে পারে। এই বড় ব্লকগুলি ভিডিওর মধ্যে থাকা রিপিটেটিভ প্যাটার্নগুলি আরও ভালোভাবে ক্যাপচার করতে পারে, যার ফলে কম্প্রেশন দক্ষতা বাড়ে।
- প্রPrediction ইউনিট (PU): CTU-কে ছোট ছোট PU-তে ভাগ করা হয়। PU-গুলি স্বতন্ত্রভাবে প্রেডিকশন এবং ট্রান্সফর্মের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ট্রান্সফর্ম ইউনিট (TU): PU-গুলিকে আরও ছোট TU-তে ভাগ করা হয়। TU-গুলি ডিসক্রিট কোসাইন ট্রান্সফর্ম (DCT) এবং অন্যান্য ট্রান্সফর্ম কৌশল ব্যবহার করে কম্প্রেস করা হয়।
- ইনட்ரா প্রেডিকশন: HEVC ইন্ট্রা প্রেডিকশনের জন্য ৩২টি ভিন্ন মোড ব্যবহার করে, যা H.264/AVC-এর চেয়ে অনেক বেশি। এটি ভিডিওর প্রতিটি ব্লকের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রেডিকশন মোড নির্বাচন করতে সাহায্য করে।
- ইন্টার প্রেডিকশন: HEVC ইন্টার প্রেডিকশনের জন্য উন্নত মোশন এস্টিমেশন এবং মোশন কম্পেনসেশন কৌশল ব্যবহার করে। এটি বিভিন্ন ফ্রেমের মধ্যে মিল খুঁজে বের করে এবং রিডানডেন্সি হ্রাস করে।
- এন্ট্রপি কোডিং: HEVC CABAC (Context-Adaptive Binary Arithmetic Coding) এবং CAVLC (Context-Adaptive Variable-Length Coding) এর মতো উন্নত এন্ট্রপি কোডিং কৌশল ব্যবহার করে, যা ডেটা কম্প্রেশনকে আরও উন্নত করে।
HEVC-এর ব্যবহার
HEVC বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- 4K এবং 8K ভিডিও স্ট্রিমিং: HEVC 4K এবং 8K ভিডিও স্ট্রিমিং-এর জন্য আদর্শ কোডেক। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও এবং ইউটিউব-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলি HEVC ব্যবহার করে উচ্চ রেজোলিউশনের ভিডিও সরবরাহ করে।
- ব্লু-রে ডিস্ক: HEVC ব্লু-রে ডিস্কের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড কোডেক।
- ভিডিও কনফারেন্সিং: HEVC ভিডিও কনফারেন্সিং-এর গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করে।
- সার্ভিল্যান্স সিস্টেম: HEVC সার্ভিল্যান্স সিস্টেমের জন্য ভিডিও স্টোরেজ এবং ব্যান্ডউইথ প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে।
- ড্রোন এবং অ্যাকশন ক্যামেরা: HEVC ড্রোন এবং অ্যাকশন ক্যামেরার মাধ্যমে রেকর্ড করা উচ্চ রেজোলিউশনের ভিডিও সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
HEVC-এর সুবিধা এবং অসুবিধা
HEVC ব্যবহারের কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে:
| অসুবিধা | জটিল অ্যালগরিদম, যার ফলে এনকোডিং এবং ডিকোডিং-এর জন্য বেশি কম্পিউটিং পাওয়ার প্রয়োজন। | H.264/AVC-এর তুলনায় বেশি প্যাテント জটিলতা। | লাইসেন্সিং খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। | কিছু পুরাতন ডিভাইসে HEVC ডিকোডার নাও থাকতে পারে। |
HEVC-এর লাইসেন্সিং
HEVC-এর লাইসেন্সিং একটি জটিল বিষয়। HEVC পেটেন্ট পুলের অধীনে রয়েছে, যার মানে হলো HEVC ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন পেটেন্ট ধারকদের কাছে লাইসেন্স ফি দিতে হয়। এই লাইসেন্সিং জটিলতার কারণে অনেক কোম্পানি HEVC ব্যবহারের পরিবর্তে AV1-এর মতো বিকল্প কোডেক ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
HEVC এবং অন্যান্য ভিডিও কোডেক-এর মধ্যে তুলনা
বিভিন্ন ভিডিও কোডেক-এর মধ্যে HEVC-এর অবস্থান নিচে উল্লেখ করা হলো:
- H.264/AVC: HEVC, H.264/AVC-এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ কম্প্রেশন দক্ষতা প্রদান করে। তবে, H.264/AVC-এর তুলনায় HEVC-এর কম্পিউটিং জটিলতা বেশি।
- VP9: VP9 একটি ওপেন-সোর্স কোডেক, যা HEVC-এর সাথে তুলনীয় কম্প্রেশন দক্ষতা প্রদান করে। VP9-এর লাইসেন্সিং ঝামেলা নেই।
- AV1: AV1 একটি নতুন ওপেন-সোর্স কোডেক, যা HEVC এবং VP9 উভয়ের চেয়েও বেশি কম্প্রেশন দক্ষতা প্রদান করে। AV1 বর্তমানে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
HEVC-এর ভবিষ্যৎ
HEVC বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কোডেক, তবে এর ভবিষ্যৎ AV1 এবং অন্যান্য নতুন কোডেক দ্বারা চ্যালেঞ্জের মুখে। AV1-এর মতো ওপেন-সোর্স কোডেকগুলি লাইসেন্সিং জটিলতা এবং উচ্চ খরচের কারণে HEVC-এর জনপ্রিয়তা হ্রাস করতে পারে। তা সত্ত্বেও, HEVC এখনও অনেক ডিভাইস এবং প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং আগামী কয়েক বছরে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
HEVC সম্পর্কিত অতিরিক্ত তথ্য
- ফ্রেম রেট (Frame Rate): ভিডিওর মসৃণতা নির্ধারণ করে।
- বিট রেট (Bit Rate): ভিডিওর গুণমান এবং ফাইলের আকারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।
- রেজোলিউশন (Resolution): ভিডিওর বিস্তারিত মাত্রা নির্দেশ করে।
- কোডেক (Codec): ভিডিও এবং অডিও ডেটা কম্প্রেস এবং ডিকম্প্রেস করার জন্য ব্যবহৃত অ্যালগরিদম।
- এনকোডার (Encoder): ভিডিও ফাইলকে কম্প্রেস করে।
- ডিকোডার (Decoder): কম্প্রেসড ভিডিও ফাইলকে প্লে করার জন্য ডিকম্প্রেস করে।
- ভিডিও স্ট্রিমিং (Video Streaming): ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও ডেটা প্রেরণ এবং গ্রহণ করার প্রক্রিয়া।
- কম্পিউটার ভিশন (Computer Vision): ছবি এবং ভিডিও থেকে তথ্য বের করার জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি।
- ডিজিটাল ইমেজ প্রসেসিং (Digital Image Processing): ডিজিটাল ছবি এবং ভিডিওর গুণমান উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত কৌশল।
- মোশন এস্টিমেশন (Motion Estimation): ভিডিওর ফ্রেমগুলির মধ্যে গতিবিধি সনাক্ত করার প্রক্রিয়া।
- মোশন কম্পেনসেশন (Motion Compensation): ভিডিওর ফ্রেমগুলির মধ্যে গতিবিধি বিবেচনা করে কম্প্রেশন দক্ষতা বাড়ানোর কৌশল।
- এন্ট্রপি এনকোডিং (Entropy Encoding): ডেটা কম্প্রেশনের জন্য ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি।
- পিক্সেল ফরম্যাট (Pixel Format): ভিডিওর প্রতিটি পিক্সেলের রঙ এবং উজ্জ্বলতা নির্দেশ করে।
- কালার স্পেস (Color Space): রঙের পরিসীমা নির্ধারণ করে।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
