Engine oil

ইঞ্জিন অয়েল

ইঞ্জিন অয়েল বা ইঞ্জিন তেল একটি গুরুত্বপূর্ণ লুব্রিকেন্ট, যা অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে মসৃণভাবে চলতে সাহায্য করে। এটি ইঞ্জিনের জীবনকাল বৃদ্ধি করে এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করে। ইঞ্জিন অয়েল শুধু লুব্রিকেন্ট নয়, এটি ইঞ্জিনকে পরিষ্কার রাখা, ঠান্ডা করা, এবং ক্ষয় থেকে বাঁচানো সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এই নিবন্ধে ইঞ্জিন অয়েলের প্রকারভেদ, ব্যবহার, পরিবর্তন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ইঞ্জিন অয়েলের কাজ

ইঞ্জিন অয়েলের প্রধান কাজগুলো হলো:

লুব্রিকেশন: ইঞ্জিনের চলমান যন্ত্রাংশগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ কমিয়ে দেয়, যা যন্ত্রাংশের ক্ষয় রোধ করে।
শীতলীকরণ: ইঞ্জিন থেকে তাপ শোষণ করে এবং ইঞ্জিনকে অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে বাঁচায়।
পরিষ্কার রাখা: ইঞ্জিনের ভেতরে জমা হওয়া কণা, যেমন - কার্বন, ধাতব কণা এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ পরিষ্কার করে।
ক্ষয় প্রতিরোধ: ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশকে মরিচা ও ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।
সিলিং: পিস্টন এবং সিলিন্ডারের মধ্যে সঠিক সিল তৈরি করে, যা ইঞ্জিনের দক্ষতা বাড়ায়।
শক্তি স্থানান্তর: কিছু ক্ষেত্রে, ইঞ্জিন অয়েল হাইড্রোলিক সিস্টেমের মাধ্যমে শক্তি স্থানান্তরে সাহায্য করে।

ইঞ্জিন অয়েলের প্রকারভেদ

ইঞ্জিন অয়েল সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত:

মিনারেল অয়েল: এটি অপরিশোধিত তেল থেকে তৈরি করা হয়। এই তেল প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ এবং তুলনামূলকভাবে সস্তা। তবে, মিনারেল অয়েলের কর্মক্ষমতা সিনথেটিক অয়েলের চেয়ে কম। পেট্রোলিয়াম পরিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়।
সিনথেটিক অয়েল: এটি রাসায়নিকভাবে তৈরি করা হয় এবং মিনারেল অয়েলের চেয়ে উন্নত কর্মক্ষমতা প্রদান করে। সিনথেটিক অয়েল উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপ সহ্য করতে পারে এবং ইঞ্জিনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এটি সাধারণত ব্যয়বহুল হয়।
সেমি-সিনথেটিক অয়েল: এটি মিনারেল অয়েল এবং সিনথেটিক অয়েলের মিশ্রণে তৈরি করা হয়। এটি মিনারেল অয়েলের চেয়ে ভালো এবং সিনথেটিক অয়েলের চেয়ে সস্তা।

এছাড়াও, ইঞ্জিন অয়েল তার ভিসকোসিটি বা সান্দ্রতা অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রেডে পাওয়া যায়। যেমন - 0W-20, 5W-30, 10W-40 ইত্যাদি। এই নম্বরগুলো ইঞ্জিনের তাপমাত্রা অনুযায়ী অয়েলের ঘনত্ব নির্দেশ করে।

ভিসকোসিটি গ্রেড

ইঞ্জিন অয়েলের ভিসকোসিটি গ্রেড SAE (Society of Automotive Engineers) দ্বারা নির্ধারিত হয়। এই গ্রেড দুটি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, যেমন 10W-30। এখানে,

প্রথম সংখ্যাটি (10W) কম তাপমাত্রায় অয়েলের প্রবাহ ক্ষমতা নির্দেশ করে। 'W' মানে Winter। সংখ্যাটি যত কম, শীতকালে ইঞ্জিন চালু করা তত সহজ হয়।
দ্বিতীয় সংখ্যাটি (30) উচ্চ তাপমাত্রায় অয়েলের সান্দ্রতা নির্দেশ করে। সংখ্যাটি যত বেশি, উচ্চ তাপমাত্রায় তেল তত ঘন হবে।

আপনার গাড়ির জন্য সঠিক ভিসকোসিটি গ্রেড গাড়ির প্রস্তুতকারকের ম্যানুয়ালে উল্লেখ করা থাকে। ভুল গ্রেডের তেল ব্যবহার করলে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং ক্ষতি হতে পারে।

ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন

ইঞ্জিন অয়েল একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিবর্তন করা উচিত। এটি ইঞ্জিনের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের সময়কাল গাড়ির মডেল, অয়েলের ধরন এবং ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত,

মিনারেল অয়েল: প্রতি 3,000 - 5,000 কিলোমিটার বা 3-6 মাসে পরিবর্তন করা উচিত।
সিনথেটিক অয়েল: প্রতি 8,000 - 12,000 কিলোমিটার বা 6-12 মাসে পরিবর্তন করা উচিত।
সেমি-সিনথেটিক অয়েল: প্রতি 5,000 - 8,000 কিলোমিটার বা 4-8 মাসে পরিবর্তন করা উচিত।

ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের সময় অয়েল ফিল্টারও পরিবর্তন করা উচিত। অয়েল ফিল্টার ইঞ্জিনের তেলকে পরিষ্কার রাখে এবং দূষিত পদার্থ সরিয়ে দেয়।

ইঞ্জিন অয়েল কেনার সময় বিবেচ্য বিষয়

ইঞ্জিন অয়েল কেনার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত:

গাড়ির মডেল: আপনার গাড়ির মডেলের জন্য উপযুক্ত ইঞ্জিন অয়েল নির্বাচন করুন।
ভিসকোসিটি গ্রেড: প্রস্তুতকারকের ম্যানুয়াল অনুযায়ী সঠিক ভিসকোসিটি গ্রেড নির্বাচন করুন।
অয়েলের ধরন: মিনারেল, সিনথেটিক বা সেমি-সিনথেটিক - আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন করুন।
API এবং ACEA স্পেসিফিকেশন: API (American Petroleum Institute) এবং ACEA (Association des Constructeurs Européens d'Automobiles) স্পেসিফিকেশন নিশ্চিত করুন। এই স্পেসিফিকেশনগুলো ইঞ্জিনের সুরক্ষার মান নির্ধারণ করে।
ব্র্যান্ড: নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল নির্বাচন করুন।

ইঞ্জিন অয়েলের ব্র্যান্ড

বাজারে বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন অয়েল ব্র্যান্ড পাওয়া যায়। কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হলো:

Mobil
Shell
Castrol
Total
Valvoline
Gulf

ব্র্যান্ড পরিচিতি এবং তাদের পণ্যের গুণগত মান বিবেচনা করে আপনার জন্য সেরা ইঞ্জিন অয়েল নির্বাচন করতে পারেন।

ইঞ্জিন অয়েলের ভবিষ্যৎ প্রবণতা

ইঞ্জিন অয়েলের প্রযুক্তিতে ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। ভবিষ্যতের ইঞ্জিন অয়েলগুলো আরও উন্নত কর্মক্ষমতা, পরিবেশ বান্ধবতা এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব প্রদান করবে বলে আশা করা যায়। কিছু ভবিষ্যৎ প্রবণতা হলো:

বায়ো-ডিজেল এবং সিনথেটিক ফুয়েলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইঞ্জিন অয়েল।
ন্যানো-টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি ইঞ্জিন অয়েল, যা আরও ভালো লুব্রিকেশন এবং সুরক্ষা প্রদান করবে।
ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য বিশেষ লুব্রিকেন্ট।

ইঞ্জিন অয়েল এবং পরিবেশ

ইঞ্জিন অয়েল পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। পুরনো ইঞ্জিন অয়েল সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না করলে মাটি ও পানি দূষিত হতে পারে। তাই, ব্যবহৃত ইঞ্জিন অয়েল রিসাইকেল করা উচিত। অনেক কোম্পানি ব্যবহৃত ইঞ্জিন অয়েল সংগ্রহ করে এবং তা পরিশোধন করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। পরিবেশ দূষণ কমাতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ইঞ্জিন অয়েলের সাধারণ সমস্যা ও সমাধান

ইঞ্জিন অয়েলের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা যায়, যেমন:

তেল লিক হওয়া: ইঞ্জিনের কোনো অংশে লিক থাকলে তেল কম হতে পারে। এটি মেরামত করা উচিত।
তেলের চাপ কমে যাওয়া: তেলের পাম্পে সমস্যা হলে বা তেল খুব বেশি পুরনো হয়ে গেলে এমন হতে পারে।
তেলের রং পরিবর্তন হওয়া: তেল দূষিত হলে বা অতিরিক্ত গরম হলে এর রং পরিবর্তন হতে পারে।
ইঞ্জিনের শব্দ বৃদ্ধি: পর্যাপ্ত লুব্রিকেশন না হলে ইঞ্জিনে শব্দ হতে পারে।

এসব সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত একজন মেকানিকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়

ইঞ্জিন অয়েলের লেভেল পরীক্ষা করা: নিয়মিতভাবে ইঞ্জিনের অয়েলের লেভেল পরীক্ষা করা উচিত।
অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন: ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের সাথে সাথে অয়েল ফিল্টারও পরিবর্তন করা উচিত।
সঠিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার: গাড়ির প্রস্তুতকারকের নির্দেশ অনুযায়ী সঠিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা উচিত।
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ: ইঞ্জিনের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উপসংহার

ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। সঠিক ইঞ্জিন অয়েল নির্বাচন এবং নিয়মিত পরিবর্তন ইঞ্জিনের জীবনকাল বাড়াতে এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক। তাই, ইঞ্জিন অয়েলের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং সঠিক জ্ঞান রাখা জরুরি।

ইঞ্জিন অয়েলের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য
প্রকারভেদ	বৈশিষ্ট্য	সুবিধা	অসুবিধা
মিনারেল অয়েল	প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি, কম সান্দ্রতা	সস্তা, সহজলভ্য	দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, কম সুরক্ষা প্রদান করে
সিনথেটিক অয়েল	রাসায়নিকভাবে তৈরি, উচ্চ সান্দ্রতা	উন্নত সুরক্ষা, দীর্ঘস্থায়ী	ব্যয়বহুল
সেমি-সিনথেটিক অয়েল	মিনারেল ও সিনথেটিকের মিশ্রণ	ভালো সুরক্ষা, মাঝারি দাম	সিনথেটিক অয়েলের মতো উন্নত নয়

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ