ESG রেটিং

ESG রেটিং

বিনিয়োগ জগতে বর্তমানে ESG রেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ESG মানে হল এনভায়রনমেন্টাল (Environmental), সোশ্যাল (Social) এবং গভর্নেন্স (Governance)। এই তিনটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করা হয়। বিনিয়োগকারীরা এখন শুধুমাত্র আর্থিক লাভের দিকে না ঝুঁকে পরিবেশ, সমাজ এবং পরিচালন কাঠামো বিবেচনা করে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এই কারণে ESG রেটিংয়ের চাহিদা বাড়ছে।

ESG রেটিং কী?

ESG রেটিং হল কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব এবং পরিচালন কাঠামো সম্পর্কিত কর্মক্ষমতা মূল্যায়নের একটি পদ্ধতি। এই রেটিং বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করে থাকে, যাতে তারা পরিবেশ-বান্ধব এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারে। ESG রেটিং প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে, যারা বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোকে মূল্যায়ন করে।

ESG এর তিনটি স্তম্ভ

• এনভায়রনমেন্টাল (Environmental): এই অংশে একটি কোম্পানি কীভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে তা মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, কার্বন নিঃসরণ, দূষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
• সোশ্যাল (Social): এই অংশে দেখা হয় একটি কোম্পানি তার কর্মী, গ্রাহক, সরবরাহকারী এবং সমাজের প্রতি কতটা দায়বদ্ধ। কর্মীর অধিকার, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, পণ্যের সুরক্ষা, ডেটা সুরক্ষা, এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান ইত্যাদি বিষয়গুলি এখানে বিবেচনা করা হয়।
• গভর্নেন্স (Governance): এই অংশে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের গঠন, নীতি, এবং স্বচ্ছতা মূল্যায়ন করা হয়। এখানে দেখা হয় কোম্পানিটি আইন ও নিয়মকানুন মেনে চলে কিনা, পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে বৈচিত্র্য আছে কিনা, এবং শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার কতটা সুরক্ষিত।

ESG রেটিং প্রদানকারী সংস্থা

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ESG রেটিং প্রদান করে থাকে। এদের মধ্যে কয়েকটির নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:

• MSCI: এই সংস্থাটি পরিবেশ, সমাজ এবং গভর্নেন্সের উপর ভিত্তি করে কোম্পানিগুলোকে AAA থেকে CCC পর্যন্ত রেটিং প্রদান করে।
• Sustainalytics: এটি একটি জনপ্রিয় ESG রেটিং প্রদানকারী সংস্থা, যা কোম্পানিগুলোর ঝুঁকি এবং সুযোগগুলো মূল্যায়ন করে।
• Refinitiv: এই সংস্থাটি ESG স্কোর প্রদান করে, যা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক।
• Bloomberg: ব্লুমবার্গ ESG ডেটা এবং বিশ্লেষণ সরবরাহ করে।
• ISS ESG: Institutional Shareholder Services (ISS) ESG রেটিং প্রদান করে।

ESG রেটিংয়ের গুরুত্ব

• বিনিয়োগকারীদের জন্য: ESG রেটিং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ এড়াতে সাহায্য করে। যে কোম্পানিগুলোর ESG স্কোর ভালো, তাদের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা-এর ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
• কোম্পানির জন্য: ভালো ESG স্কোর একটি কোম্পানির সুনাম বৃদ্ধি করে এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে। এর ফলে কোম্পানির জন্য মূলধন সংগ্রহ করা সহজ হয়।
• সমাজের জন্য: ESG রেটিং কোম্পানিগুলোকে পরিবেশ এবং সমাজের প্রতি আরও বেশি দায়বদ্ধ হতে উৎসাহিত করে।

ESG রেটিংয়ের পদ্ধতি

ESG রেটিং প্রদানকারী সংস্থাগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে:

• ডেটা সংগ্রহ: কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইট, বার্ষিক প্রতিবেদন, এবং অন্যান্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
• স্কোরিং: সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন মানদণ্ডে স্কোর দেওয়া হয়।
• র‍্যাংকিং: স্কোরগুলোর ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোকে র‍্যাংক করা হয়।
• বিশ্লেষণ: র‍্যাংকিং এবং স্কোরগুলোর ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোর কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ করা হয়।

ESG এবং আর্থিক কর্মক্ষমতা

অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন যে ESG বিবেচনা করলে আর্থিক কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে, কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ভালো ESG স্কোর ધરાવતા কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদে ভালো আর্থিক কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করে। এর কারণ হলো:

• কম ঝুঁকি: ESG স্কোর ভালো হলে কোম্পানির সুনাম বাড়ে এবং আইনি জটিলতা কম হয়, যা ঝুঁকি কমায়।
• উদ্ভাবন: পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়ার উদ্ভাবনে কোম্পানিগুলো এগিয়ে থাকে।
• দক্ষতা বৃদ্ধি: ESG নীতি অনুসরণ করার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের পরিচালন দক্ষতা বাড়াতে পারে।
• বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ: ESG-বান্ধব কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি থাকে, যা শেয়ারের দাম বাড়াতে সাহায্য করে।

ESG বিনিয়োগের প্রকারভেদ

• নেগেটিভ স্ক্রিনিং: কিছু বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট কিছু শিল্প বা কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ বিরত থাকেন, যেমন - তামাক, অস্ত্র বা জুয়া শিল্প।
• পজিটিভ স্ক্রিনিং: এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র সেই কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করেন, যারা ভালো ESG স্কোর ધરાવે છે।
• ESG ইন্টিগ্রেশন: বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের সময় ESG বিষয়গুলো বিবেচনা করেন।
• ইমপ্যাক্ট বিনিয়োগ: এই ধরনের বিনিয়োগের লক্ষ্য হলো সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধান করা এবং একই সাথে আর্থিক লাভ অর্জন করা।

ESG রিপোর্টিং এবং স্ট্যান্ডার্ড

ESG রিপোর্টিংয়ের জন্য বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড রয়েছে, যা কোম্পানিগুলোকে তাদের ESG কর্মক্ষমতা প্রকাশ করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

• GRI (Global Reporting Initiative): এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ESG রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডগুলোর মধ্যে একটি।
• SASB (Sustainability Accounting Standards Board): এটি নির্দিষ্ট শিল্পের জন্য ESG মেট্রিক সরবরাহ করে।
• TCFD (Task Force on Climate-related Financial Disclosures): এটি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আর্থিক ঝুঁকি প্রকাশ করার জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে।

ESG রেটিংয়ের সীমাবদ্ধতা

ESG রেটিংয়ের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে:

• ডেটার অভাব: অনেক কোম্পানির ESG সম্পর্কিত পর্যাপ্ত ডেটা পাওয়া যায় না।
• ভিন্নতা: বিভিন্ন রেটিং প্রদানকারী সংস্থা বিভিন্ন মানদণ্ড ব্যবহার করে, তাই রেটিংগুলোতে ভিন্নতা দেখা যায়।
• বিষয়ভিত্তিকতা: ESG রেটিংয়ের কিছু অংশ বিষয়ভিত্তিক হতে পারে, যা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
• গ্রিনওয়াশিং: কিছু কোম্পানি তাদের ESG কর্মক্ষমতা সম্পর্কে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত তথ্য দিতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ESG বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বিনিয়োগকারীরা এখন ESG বিষয়গুলোকে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই, কোম্পানিগুলোকে তাদের ESG কর্মক্ষমতা উন্নত করতে এবং স্বচ্ছতার সাথে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। ESG রেটিং প্রদানকারী সংস্থাগুলো তাদের মানদণ্ড এবং পদ্ধতিগুলোকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে পারেন। টেকসই বিনিয়োগ (Sustainable Investing)-এর চাহিদা বাড়ছে, এবং ESG রেটিং এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ESG

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) সাধারণত শেয়ার বাজারের দাম এবং ভলিউমের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ প্রবণতা জানার চেষ্টা করে। ESG রেটিং এই বিশ্লেষণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আরও ভালো বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোম্পানির ESG স্কোর খারাপ হলে, সেটি শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা টেকনিক্যাল চার্টে ধরা পড়তে পারে।

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং ESG

ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) শেয়ারের লেনদেনের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করে। যদি কোনো কোম্পানির ESG স্কোর ভালো হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়, তাহলে শেয়ারের ভলিউম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।

কৌশলগত প্রয়োগ

• ESG স্কোরকে বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে অন্তর্ভুক্ত করা: বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিও তৈরি করার সময় ESG স্কোর ব্যবহার করতে পারেন।
• ESG থিমযুক্ত বিনিয়োগ: নির্দিষ্ট ESG থিমের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, যেমন - পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বা পরিষ্কার জল।
• সক্রিয় মালিকানা: বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সাথে যোগাযোগ করে ESG নীতিগুলো বাস্তবায়নে উৎসাহিত করতে পারেন।

উপসংহার

ESG রেটিং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি কোম্পানিগুলোর পরিবেশগত, সামাজিক এবং পরিচালন কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। ESG বিনিয়োগের চাহিদা বাড়ছে, এবং ভবিষ্যতে এর গুরুত্ব আরও বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের উচিত ESG বিষয়গুলো বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা।

ESG রেটিং প্রদানকারী সংস্থার তালিকা

সংস্থা	রেটিং পদ্ধতি	ওয়েবসাইট
MSCI	AAA থেকে CCC	[1]
Sustainalytics	ঝুঁকি এবং সুযোগ মূল্যায়ন	[2]
Refinitiv	ESG স্কোর	[3]
Bloomberg	ESG ডেটা ও বিশ্লেষণ	[4]
ISS ESG	ESG রেটিং	[5]

корпоративная социальная ответственность зеленые облигации устойчивое развитие инвестиции в ESG климатические риски управление рисками финансовый анализ инвестиционная стратегия корпоративное управление социальная ответственность бизнеса экологическая устойчивость зеленая экономика ESG-отчетность устойчивое финансирование альтернативные инвестиции долгосрочные инвестиции пассивные инвестиции активные инвестиции диверсификация портфеля индексные фонды

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ