Discrimination

বৈষম্য

বৈষম্য হলো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি তাদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে অন্যায় বা নেতিবাচক আচরণ করা। এই বৈশিষ্ট্যগুলো জন্মগত হতে পারে, যেমন - জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, অথবা অর্জিত হতে পারে, যেমন - রাজনৈতিক মতাদর্শ, যৌন অভিমুখিতা, শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা। বৈষম্য মানবাধিকারের একটি চরম লঙ্ঘন এবং এটি সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান অন্তরায়।

বৈষম্যের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

বৈষম্যকে সাধারণত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:

প্রত্যক্ষ বৈষম্য (Direct Discrimination): যখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তাদের কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে সরাসরি খারাপ আচরণ করা হয়, তখন তাকে প্রত্যক্ষ বৈষম্য বলে। উদাহরণস্বরূপ, শুধুমাত্র লিঙ্গের ভিত্তিতে কাউকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা।

পরোক্ষ বৈষম্য (Indirect Discrimination): যখন কোনো আপাতদৃষ্টিতে নিরপেক্ষ নিয়ম বা নীতি কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তখন তাকে পরোক্ষ বৈষম্য বলে। উদাহরণস্বরূপ, এমন একটি চাকরির শর্ত রাখা যা শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পূরণ করা কঠিন।

এছাড়াও, বৈষম্যের আরও কিছু প্রকারভেদ রয়েছে:

জাতিগত বৈষম্য (Racial Discrimination): জাতি বা বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্য করা। এটি বিশ্বের বহু স্থানে একটি গুরুতর সমস্যা। জাতিবাদ এর একটি প্রধান রূপ এটি।
লিঙ্গ বৈষম্য (Gender Discrimination): লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করা। নারীরা প্রায়শই এই বৈষম্যের শিকার হন, তবে পুরুষরাও এর শিকার হতে পারেন। নারীবাদ এই বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে।
ধর্মীয় বৈষম্য (Religious Discrimination): ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা। সংখ্যালঘুরা প্রায়শই এই বৈষম্যের শিকার হন। ধর্মীয় স্বাধীনতা এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বয়সের ভিত্তিতে বৈষম্য (Age Discrimination): বয়সের ভিত্তিতে বৈষম্য করা। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বয়স্ক বা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এটি দেখা যায়।
শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতার ভিত্তিতে বৈষম্য (Disability Discrimination): শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতার কারণে বৈষম্য করা। অক্ষমতা অধিকার এই বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে।
যৌন অভিমুখিতার ভিত্তিতে বৈষম্য (Sexual Orientation Discrimination): যৌন অভিমুখিতার কারণে বৈষম্য করা। এলজিবিটিকিউ+ অধিকার এই বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে।

বৈষম্যের কারণ

বৈষম্যের পেছনে বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান কারণ হলো:

কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধারণা (Prejudice and Stereotypes): সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার এবং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বৈষম্যের জন্ম দেয়।
ক্ষমতার অপব্যবহার (Abuse of Power): প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্যদের উপর বৈষম্য চাপিয়ে দেয়।
অর্থনৈতিক বৈষম্য (Economic Inequality): অর্থনৈতিক বৈষম্য সমাজে বিভেদ তৈরি করে এবং বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা (Social and Political Instability): সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বৈষম্যমূলক আচরণকে উৎসাহিত করে।
শিক্ষার অভাব (Lack of Education): শিক্ষার অভাব মানুষকে কুসংস্কার ও ভুল ধারণার শিকার করে তোলে, যা বৈষম্যকে বাড়িয়ে দেয়।

বৈষম্যের প্রভাব

বৈষম্যের শিকার ব্যক্তি ও সমাজের উপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। কিছু প্রধান প্রভাব নিচে উল্লেখ করা হলো:

মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা (Mental and Physical Health Problems): বৈষম্যের শিকার ব্যক্তিরা প্রায়শই মানসিক চাপ, উদ্বেগ, হতাশা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন।
অর্থনৈতিক ক্ষতি (Economic Loss): বৈষম্যের কারণে ব্যক্তি কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা (Social Isolation): বৈষম্যের শিকার ব্যক্তিরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে এবং তাদের সামাজিক সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
সহিংসতা ও সংঘাত (Violence and Conflict): বৈষম্য সমাজে সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দুর্বলতা (Weakening of Democratic Processes): বৈষম্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয় এবং সমাজের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করে।

বৈষম্য দূরীকরণের উপায়

বৈষম্য একটি জটিল সমস্যা, কিন্তু এটি দূর করা সম্ভব। কিছু কার্যকর উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:

আইন ও নীতি প্রণয়ন (Enactment of Laws and Policies): বৈষম্য বিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন এবং তার কঠোর প্রয়োগ করা। মানবাধিকার আইন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি (Education and Awareness Raising): শিক্ষা এবং সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধারণা দূর করা।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগের সমতা (Equality of Social and Economic Opportunities): সকলের জন্য সমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করা।
রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি (Increased Political Participation): প্রান্তিক ও বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার ব্যক্তিদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
গণমাধ্যমের ভূমিকা (Role of Media): গণমাধ্যমকে বৈষম্য বিরোধী বার্তা প্রচার এবং জনমত গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।
নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা (Activism of Civil Society): নাগরিক সমাজকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

বৈষম্য একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে (Universal Declaration of Human Rights) জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো মতাদর্শ, জাতীয় বা সামাজিক উৎস, সম্পত্তি, জন্ম বা অন্য কোনো মর্যাদার ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন - জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল (UN Human Rights Council) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (International Labour Organization), বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বৈষম্য

বাংলাদেশেও বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য বিদ্যমান। জাতিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আদিবাসী জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রায়শই বৈষম্যের শিকার হন। বাংলাদেশের সংবিধান সংবিধান সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে, কিন্তু বাস্তবে বৈষম্য এখনও একটি বড় সমস্যা।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং বৈষম্য

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও এক ধরনের বৈষম্য দেখা যেতে পারে। কিছু ব্রোকার বা প্ল্যাটফর্ম নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ সীমিত করতে পারে, অথবা তাদের জন্য আলাদা শর্ত আরোপ করতে পারে। এছাড়াও, উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য নিয়মকানুন আরও কঠিন হতে পারে। এই বৈষম্যমূলক আচরণ বিনিয়োগকারীদের সুযোগ কমিয়ে দিতে পারে এবং বাজারের স্বচ্ছতা হ্রাস করতে পারে। দক্ষ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে এই ধরনের বৈষম্য চিহ্নিত করা এবং সচেতনভাবে ট্রেডিং করা উচিত।

এখানে কিছু সম্পর্কিত কৌশল এবং বিশ্লেষণের লিঙ্ক দেওয়া হলো:

বৈষম্য একটি জটিল এবং সংবেদনশীল বিষয়। এটি মোকাবেলা করার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং বৈষম্য দূরীকরণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।

বৈষম্যের প্রকারভেদ
প্রকার	সংজ্ঞা	উদাহরণ
প্রত্যক্ষ বৈষম্য	নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সরাসরি খারাপ আচরণ	লিঙ্গের ভিত্তিতে চাকরি না দেওয়া
পরোক্ষ বৈষম্য	আপাতদৃষ্টিতে নিরপেক্ষ নিয়মের মাধ্যমে নেতিবাচক প্রভাব	শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কঠিন চাকরির শর্ত
জাতিগত বৈষম্য	জাতি বা বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্য	সংখ্যালঘুদের প্রতি খারাপ আচরণ
লিঙ্গ বৈষম্য	লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য	নারীদের কম বেতন দেওয়া
ধর্মীয় বৈষম্য	ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য	সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে বাধা দেওয়া

মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতিসংঘ, সংবিধান, আইন, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, বৈশ্বিক সমস্যা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুসংস্কার, সাম্য, মানবাধিকার আইন, এলজিবিটিকিউ+ অধিকার, অক্ষমতা অধিকার, নারীবাদ, জাতিবাদ, ধর্মীয় স্বাধীনতা

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ