CPM পদ্ধতি

সিপিএম পদ্ধতি

সিপিএম (CPM) হল "Cost Per Mille" এর সংক্ষিপ্ত রূপ। 'মille' একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ "হাজার"। তাই, সিপিএম মানে প্রতি হাজারে খরচ। এটি মূলত বিজ্ঞাপন এবং বিপণন জগতে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক। এই পদ্ধতিতে, বিজ্ঞাপনদাতা প্রতি ১০০০ বার বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন।

সিপিএম এর ধারণা

সিপিএম একটি বহুল ব্যবহৃত মূল্য নির্ধারণ মডেল। ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিজ্ঞাপনদাতাদের তাদের বিজ্ঞাপনের খরচ এবং সেই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা কতজন মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছেন, তা বুঝতে সাহায্য করে। সিপিএম শুধুমাত্র ডিসপ্লে বিজ্ঞাপন এর জন্য প্রযোজ্য নয়, এটি সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন, ভিডিও বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মেও ব্যবহৃত হয়।

সিপিএম কিভাবে কাজ করে?

সিপিএম মডেলটি বেশ সরল। একজন বিজ্ঞাপনদাতা একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে বা প্ল্যাটফর্মে তাদের বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য একটি চুক্তি করেন। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, প্রতি ১০০০ বার বিজ্ঞাপনটি প্রদর্শিত হলে বিজ্ঞাপনদাতাকে কত টাকা দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো বিজ্ঞাপনদাতার সিপিএম হয় ২০ টাকা, তাহলে প্রতি ১০০০ বার বিজ্ঞাপনটি দেখালে তাকে ২০ টাকা দিতে হবে।

যদি কোনো ওয়েবসাইটে আপনার বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য সিপিএম ২০ টাকা হয় এবং সেই ওয়েবসাইটে আপনার বিজ্ঞাপনটি ১,০০,০০০ বার প্রদর্শিত হয়, তাহলে আপনার মোট খরচ হবে:

(২০ টাকা / ১০০০) * ১,০০,০০০ = ২,০০০ টাকা

সিপিএম এর সুবিধা

• ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি: সিপিএম বিজ্ঞাপন মূলত ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। যেহেতু বিজ্ঞাপনটি বহু সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছায়, তাই এটি ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়াতে সাহায্য করে।
• বিস্তৃত reach: সিপিএম এর মাধ্যমে খুব সহজেই একটি বিশাল সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছানো যায়।
• খরচ নিয়ন্ত্রণ: বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বাজেট অনুযায়ী বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারেন।
• সহজ পরিমাপ: সিপিএম এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা সহজে পরিমাপ করা যায়।

সিপিএম এর অসুবিধা

• কম ROI: সিপিএম বিজ্ঞাপনের রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI) কম হতে পারে, বিশেষ করে যদি বিজ্ঞাপনটি কার্যকর না হয়।
• লক্ষ্যযুক্ত audience-এর অভাব: সিপিএম বিজ্ঞাপনে সবসময় নির্দিষ্ট audience-কে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দেখানো যায় না। ফলে, অনেক অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহারকারীর কাছেও বিজ্ঞাপনটি পৌঁছাতে পারে।
• ক্লিক-এর নিশ্চয়তা নেই: সিপিএম-এ শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য অর্থ প্রদান করা হয়, বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার জন্য নয়।

সিপিএম এবং অন্যান্য মূল্য নির্ধারণ মডেলের মধ্যে পার্থক্য

বিভিন্ন ধরনের অনলাইন বিজ্ঞাপন মূল্য নির্ধারণ মডেল রয়েছে। সিপিএম তাদের মধ্যে অন্যতম। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মডেল এবং সিপিএম-এর মধ্যেকার পার্থক্য আলোচনা করা হলো:

• সিপিসি (CPC): Cost Per Click - এই মডেলে, বিজ্ঞাপনদাতা প্রতি ক্লিকের জন্য অর্থ প্রদান করেন। যখন কোনো ব্যবহারকারী বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেন, তখনই কেবল খরচ হয়। সিপিসি সাধারণত সরাসরি বিক্রয়ের জন্য বেশি উপযোগী।
• সিপিএ (CPA): Cost Per Action - এই মডেলে, বিজ্ঞাপনদাতা কোনো নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য অর্থ প্রদান করেন, যেমন - কোনো ফর্ম পূরণ করা বা কোনো পণ্য কেনা। এটি সবচেয়ে কার্যকর মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে খরচও বেশি।
• সিপিভি (CPV): Cost Per View - এই মডেলে, ভিডিও বিজ্ঞাপনের জন্য প্রতি ভিউ-এর উপর ভিত্তি করে খরচ নির্ধারিত হয়। সিপিভি সাধারণত ভিডিও মার্কেটিং-এর জন্য ব্যবহৃত হয়।

সিপিএম, সিপিসি, সিপিএ এবং সিপিভি-এর মধ্যে তুলনা

মডেল	খরচের ভিত্তি	উপযুক্ততা
সিপিএম (CPM)	প্রতি ১০০০ ইম্প্রেশন	ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি
সিপিসি (CPC)	প্রতি ক্লিক	সরাসরি বিক্রি এবং লিড জেনারেশন
সিপিএ (CPA)	প্রতি অ্যাকশন	রূপান্তর (conversion) এবং ROI maximization
সিপিভি (CPV)	প্রতি ভিউ	ভিডিও মার্কেটিং

সিপিএম কিভাবে অপটিমাইজ করা যায়?

সিপিএম বিজ্ঞাপন প্রচারণার কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:

• টার্গেটিং (Targeting): সঠিক audience-কে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দেখালে, বিজ্ঞাপনের প্রাসঙ্গিকতা বাড়ে এবং ক্লিক থ্রু রেট (CTR) উন্নত হয়। টার্গেটিং কৌশল এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
• বিজ্ঞাপন ডিজাইন: আকর্ষণীয় এবং তথ্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন ডিজাইন ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে উৎসাহিত হন।
• A/B টেস্টিং: বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ডিজাইন এবং বার্তা পরীক্ষা করে দেখুন কোনটি বেশি কার্যকর।
• প্লেসমেন্ট (Placement): সঠিক ওয়েবসাইটে বা প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করলে, বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা বাড়ে।
• ফ্রড ডিটেকশন (Fraud Detection): বিজ্ঞাপনের জাল ইম্প্রেশন (impression) শনাক্ত করে তা প্রতিরোধ করুন।

সিপিএম এর ব্যবহার ক্ষেত্র

সিপিএম বিভিন্ন ধরনের অনলাইন বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি প্রধান ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:

• ডিসপ্লে বিজ্ঞাপন: ওয়েবসাইট এবং অ্যাপে প্রদর্শিত ব্যানার বিজ্ঞাপন।
• সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন।
• ভিডিও বিজ্ঞাপন: ইউটিউব এবং অন্যান্য ভিডিও প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন।
• মোবাইল বিজ্ঞাপন: স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন।
• ইমেল মার্কেটিং: যদিও সরাসরি সিপিএম নয়, তবে ইমেল লিস্ট কেনার ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে খরচ হিসাব করা হয়।

সিপিএম ক্যালকুলেশন

সিপিএম হিসাব করার জন্য নিম্নলিখিত সূত্রটি ব্যবহার করা হয়:

সিপিএম = (মোট বিজ্ঞাপনের খরচ / মোট ইম্প্রেশন) * ১০০০

উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি একটি বিজ্ঞাপন প্রচারণার জন্য ৫,০০০ টাকা খরচ করেন এবং আপনার বিজ্ঞাপনটি ১০,০০,০০০ বার প্রদর্শিত হয়, তাহলে আপনার সিপিএম হবে:

সিপিএম = (৫,০০০ / ১০,০০,০০০) * ১০০০ = ৫ টাকা

কার্যকরী সিপিএম (eCPM)

কার্যকরী সিপিএম (eCPM) হল একটি মেট্রিক যা বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন মূল্য নির্ধারণ মডেলের (যেমন CPC, CPA) কার্যকারিতা সিপিএম-এর সাথে তুলনা করতে ব্যবহৃত হয়। eCPM আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে যে, আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনের জন্য সিপিএম পদ্ধতিতে অর্থ প্রদান করতেন, তাহলে আপনার প্রতি ১০০০ ইম্প্রেশনের খরচ কত হতো।

eCPM = (মোট আয় / মোট ইম্প্রেশন) * ১০০০

সিপিএম এবং প্রোগ্রাম্যাটিক বিজ্ঞাপন

প্রোগ্রাম্যাটিক বিজ্ঞাপন হলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন কেনা এবং বিক্রির প্রক্রিয়া। সিপিএম প্রোগ্রাম্যাটিক বিজ্ঞাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রোগ্রাম্যাটিক প্ল্যাটফর্মগুলি রিয়েল-টাইম বিডিং (RTB) ব্যবহার করে সিপিএম-এর ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন স্পেস কেনে এবং বিক্রি করে।

সিপিএম এবং ভিউএবিলিটি (Viewability)

ভিউএবিলিটি হলো বিজ্ঞাপনের কত শতাংশ আসলে ব্যবহারকারীদের দ্বারা দেখা হয়েছে তার পরিমাপ। একটি বিজ্ঞাপন যদি ব্যবহারকারীর স্ক্রিনে দৃশ্যমান না হয়, তাহলে সেটি কার্যকর নাও হতে পারে। তাই, বিজ্ঞাপনদাতারা প্রায়শই ভিউএবিলিটি মেট্রিক ব্যবহার করে তাদের সিপিএম বিজ্ঞাপন প্রচারণার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করেন।

সিপিএম এবং ব্র্যান্ড সেফটি (Brand Safety)

ব্র্যান্ড সেফটি মানে হলো আপনার বিজ্ঞাপন যেন এমন কোনো ওয়েবসাইটে বা প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত না হয় যা আপনার ব্র্যান্ডের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে পারে। সিপিএম বিজ্ঞাপন প্রচারণার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড সেফটি নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সিপিএম এর ভবিষ্যৎ

ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে। প্রোগ্রাম্যাটিক বিজ্ঞাপন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এর উন্নতির সাথে সাথে সিপিএম মডেলটিও পরিবর্তিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে, সিপিএম আরও বেশি ডেটা-চালিত এবং স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।

উপসংহার

সিপিএম ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি বিজ্ঞাপনদাতাদের তাদের বিজ্ঞাপনের খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বৃহত্তর audience-এর কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে। সিপিএম-এর ধারণা, সুবিধা, অসুবিধা এবং অপটিমাইজেশন কৌশল সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে, বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারণার কার্যকারিতা বাড়াতে পারেন। বিজ্ঞাপন বাজেট তৈরি এবং মার্কেটিং পরিকল্পনা তৈরিতে সিপিএম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, কনটেন্ট মার্কেটিং এবং এসইও এর সাথে সমন্বিতভাবে সিপিএম ব্যবহার করে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, পেইড সার্চ, কনভার্সন রেট অপটিমাইজেশন, ওয়েব অ্যানালিটিক্স, ডাটা বিশ্লেষণ, কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট, ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি, মার্কেটিং অটোমেশন, মোবাইল মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এবং কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কিত বিষয়গুলো সিপিএম পদ্ধতিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। A/B টেস্টিং, ভিউএবিলিটি, ফ্রড ডিটেকশন এবং প্রোগ্রাম্যাটিক বিজ্ঞাপন এই বিষয়গুলো সিপিএম এর কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ