Behavioral Economics

আচরণ অর্থনীতি

ভূমিকা

আচরণ অর্থনীতি (Behavioral economics) অর্থনীতির একটি শাখা যা মনস্তত্ত্ব, নিউরোবিজ্ঞান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। এটি মানুষের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে প্রভাবিত হয়, তার একটি বিশদ বিশ্লেষণ। চিরায়ত অর্থনীতি মানুষের আচরণকে সম্পূর্ণরূপে যুক্তিবাদী (rational) ধরে নেয়, কিন্তু আচরণ অর্থনীতি প্রমাণ করে যে মানুষের সিদ্ধান্ত প্রায়শই আবেগ, মানসিক পক্ষপাত (cognitive bias) এবং সামাজিক প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়।

আচরণ অর্থনীতির মূল ধারণা

১. সীমাবদ্ধ যুক্তিবাদ (Bounded Rationality): হার্বার্ট সাইমনের মতে, মানুষের যুক্তিবোধ সীমিত। আমরা সবসময় সম্পূর্ণ তথ্য বিশ্লেষণ করে সেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমাদের মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় আমরা কিছু সহজ পথ অনুসরণ করি। সীমাবদ্ধ যুক্তিবাদ বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, একজন ট্রেডার সব দিক বিবেচনা না করে শুধুমাত্র কয়েকটি পছন্দের উপর ভিত্তি করে ট্রেড করতে পারে।

২. মানসিক পক্ষপাত (Cognitive Biases): মানুষের চিন্তাভাবনায় কিছু ভুল বা ত্রুটি থাকে যা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো:

  ক. নিশ্চিতকরণ পক্ষপাত (Confirmation Bias): নিজের বিশ্বাসকে সমর্থন করে এমন তথ্য খোঁজা এবং বিপরীত তথ্য উপেক্ষা করা।
  খ. উপলব্ধতারheuristic (Availability Heuristic): সহজেই মনে আসা তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
  গ. নোঙর প্রভাব (Anchoring Effect): প্রথম পাওয়া তথ্যের উপর অতিরিক্ত নির্ভর করা।
  ঘ. ক্ষতির অপversion (Loss Aversion): লাভের চেয়ে ক্ষতির অনুভূতি বেশি শক্তিশালী।
  ঙ. অতি আত্মবিশ্বাস (Overconfidence Bias): নিজের দক্ষতা এবং জ্ঞানের উপর অতিরিক্ত আস্থা রাখা।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে, এই পক্ষপাতগুলি ট্রেডারদের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করতে পারে। যেমন, ক্ষতির অপversion-এর কারণে ট্রেডাররা লোকসানি ট্রেড বন্ধ করতে দ্বিধা বোধ করতে পারে, এই আশায় যে পরিস্থিতি বদলাবে।

৩. ফ্রেম প্রভাব (Framing Effect): একই তথ্য বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে মানুষের সিদ্ধান্ত ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বিনিয়োগের ঝুঁকি এবং লাভের সম্ভাবনাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে মানুষ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে কিনা। ফ্রেম প্রভাব বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, ব্রোকাররা প্রায়শই তাদের প্ল্যাটফর্মের বৈশিষ্ট্য এবং ঝুঁকির মাত্রা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে।

৪. প্রত্যাশিত উপযোগিতা তত্ত্ব (Prospect Theory): ড্যানিয়েল কানeman এবং Amos Tversky-এর এই তত্ত্বটি দেখায় যে মানুষ কীভাবে ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়। এই তত্ত্ব অনুসারে, মানুষ সম্ভাব্য লাভের চেয়ে ক্ষতির প্রতি বেশি সংবেদনশীল। প্রত্যাশিত উপযোগিতা তত্ত্ব বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, ট্রেডাররা সাধারণত লাভের চেয়ে ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে বেশি আগ্রহী হয়।

৫. সামাজিক প্রভাব (Social Influence): মানুষের সিদ্ধান্ত অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

  ক. herd behavior (গোষ্ঠী আচরণ): অন্যদের অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
  খ. সামাজিক প্রমাণ (Social Proof): অন্যদের পছন্দের উপর ভিত্তি করে নিজের পছন্দ তৈরি করা।
  গ. কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য (Authority Bias): বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফোরামের মাধ্যমে ট্রেডাররা একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

আচরণ অর্থনীতি এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল ক্ষেত্র, যেখানে আবেগ এবং মানসিক পক্ষপাতগুলি ট্রেডারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। আচরণ অর্থনীতির জ্ঞান ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করতে এবং আরও যুক্তিবাদী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

১. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ক্ষতির অপversion-এর কারণে ট্রেডাররা প্রায়শই ঝুঁকি নিতে দ্বিধা বোধ করে। এই পক্ষপাত দূর করার জন্য, ট্রেডারদের একটি সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করা উচিত। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

২. আবেগ নিয়ন্ত্রণ: আবেগ, যেমন ভয় এবং লোভ, ট্রেডারদের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করতে পারে। ট্রেডারদের উচিত তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং ঠান্ডা মাথায় ট্রেড করা। আবেগ নিয়ন্ত্রণ

৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া: মানসিক পক্ষপাতগুলি এড়ানোর জন্য, ট্রেডারদের একটি সুসংগঠিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং বিকল্পগুলির মূল্যায়ন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া

৪. ফ্রেম প্রভাব মোকাবেলা: ট্রেডারদের উচিত ব্রোকারদের দ্বারা উপস্থাপিত তথ্যের প্রতি সতর্ক থাকা এবং নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করা। ফ্রেম প্রভাব মোকাবেলা

৫. অতি আত্মবিশ্বাস হ্রাস: ট্রেডারদের উচিত তাদের দক্ষতা এবং জ্ঞানের উপর অতিরিক্ত আস্থা রাখা থেকে বিরত থাকা এবং ক্রমাগত শিখতে থাকা। অতি আত্মবিশ্বাস হ্রাস

আচরণ অর্থনীতির প্রয়োগ

আচরণ অর্থনীতি শুধুমাত্র ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেই নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

• বিপণন (Marketing): গ্রাহকদের আচরণ বুঝতে এবং কার্যকর বিপণন কৌশল তৈরি করতে। বিপণন কৌশল
• অর্থনীতি (Economics): অর্থনৈতিক মডেলগুলিকে আরও বাস্তবসম্মত করতে। অর্থনৈতিক মডেল
• স্বাস্থ্য (Health): স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং রোগের প্রতিরোধে। স্বাস্থ্য অর্থনীতি
• নীতি নির্ধারণ (Policy Making): সরকারি নীতিগুলিকে আরও কার্যকর করতে। সরকারি নীতি

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু কৌশল

১. টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis): চার্ট এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য গতিবিধি অনুমান করা। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

২. ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis): অর্থনৈতিক ডেটা এবং অন্যান্য মৌলিক কারণগুলি বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজে বের করা। ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ

৩. ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা। ভলিউম বিশ্লেষণ

৪. ঝুঁকি-পুরস্কার অনুপাত (Risk-Reward Ratio): প্রতিটি ট্রেডের জন্য ঝুঁকি এবং লাভের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা। ঝুঁকি-পুরস্কার অনুপাত

৫. স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order): একটি নির্দিষ্ট মূল্যে পৌঁছালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড বন্ধ করার জন্য অর্ডার সেট করা। স্টপ-লস অর্ডার

৬. টেক প্রফিট অর্ডার (Take-Profit Order): একটি নির্দিষ্ট মূল্যে পৌঁছালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড বন্ধ করার জন্য অর্ডার সেট করা। টেক প্রফিট অর্ডার

৭. ডাইভারসিফিকেশন (Diversification): বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো। ডাইভারসিফিকেশন

৮. মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management): ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়ানো। মানি ম্যানেজমেন্ট

৯. সাইকোলজিক্যাল ট্রেডিং (Psychological Trading): নিজের আবেগ এবং মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেড করা। সাইকোলজিক্যাল ট্রেডিং

১০. নিউজ ট্রেডিং (News Trading): অর্থনৈতিক সংবাদ এবং ঘটনার উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা। নিউজ ট্রেডিং

১১. ট্রেন্ড ফলোয়িং (Trend Following): বাজারের প্রবণতা অনুসরণ করে ট্রেড করা। ট্রেন্ড ফলোয়িং

১২. রেঞ্জ ট্রেডিং (Range Trading): একটি নির্দিষ্ট মূল্যের মধ্যে বাজারের ওঠানামা থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করা। রেঞ্জ ট্রেডিং

১৩. ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): যখন মূল্য একটি নির্দিষ্ট বাধা অতিক্রম করে, তখন ট্রেড করা। ব্রেকআউট ট্রেডিং

১৪. রিভার্সাল ট্রেডিং (Reversal Trading): যখন বাজারের প্রবণতা বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন ট্রেড করা। রিভার্সাল ট্রেডিং

১৫. প্যাটার্ন ট্রেডিং (Pattern Trading): চার্টে বিভিন্ন প্যাটার্ন সনাক্ত করে ট্রেড করা। প্যাটার্ন ট্রেডিং

উপসংহার

আচরণ অর্থনীতি মানুষের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, এই জ্ঞান ট্রেডারদের মানসিক পক্ষপাতগুলি এড়াতে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আরও যুক্তিবাদী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। আচরণ অর্থনীতির নীতিগুলি ব্যবহার করে, ট্রেডাররা তাদের ট্রেডিং দক্ষতা উন্নত করতে এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

আচরণগত ফিনান্স সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান অর্থনৈতিক মনস্তত্ত্ব ঝুঁকি উপলব্ধি বিনিয়োগ মনোবিজ্ঞান আচরণগত খেলা তত্ত্ব নিউরোইকোনমিক্স সীমাবদ্ধ যুক্তিবাদ ফ্রেম প্রভাব ক্ষতির অপversion প্রত্যাশিত উপযোগিতা তত্ত্ব মানসিক হিসাব প্ররোচনা সময় অসামঞ্জস্যতা সামাজিক নিয়ম আচরণগত অর্থনীতি এবং পাবলিক নীতি আচরণগত অর্থনীতি এবং বিপণন আচরণগত অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য আচরণগত অর্থনীতি এবং পরিবেশ আচরণগত অর্থনীতি এবং রাজনীতি

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ