80 ই
৮০ ই
ভূমিকা
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জগতে, “৮০ ই” একটি বহুল ব্যবহৃত কৌশল। এটি মূলত একটি মার্জিন কল বা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল হিসেবে পরিচিত। এই কৌশলটি অভিজ্ঞ ট্রেডারদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়, কারণ এটি সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে। এই প্রবন্ধে, আমরা “৮০ ই” কৌশলটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, এর পেছনের ধারণা, প্রয়োগবিধি, সুবিধা, অসুবিধা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরব।
“৮০ ই” কৌশলটির পেছনের ধারণা
“৮০ ই” কৌশলটি মূলত আপনার ট্রেডিং ক্যাপিটালের একটি নির্দিষ্ট অংশ (সাধারণত ২০%) ঝুঁকির মধ্যে রাখার ধারণা। এর মানে হলো, প্রতিটি ট্রেডে আপনি আপনার মোট ক্যাপিটালের ২০% এর বেশি বিনিয়োগ করবেন না। অবশিষ্ট ৮০% আপনার ক্যাপিটালকে সুরক্ষিত রাখবে, যাতে একটি বা দুটি খারাপ ট্রেড আপনার অ্যাকাউন্টকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে না পারে।
এই কৌশলটি পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন এবং ঝুঁকি সহনশীলতা ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি। পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন মানে হলো আপনার বিনিয়োগকে বিভিন্ন অ্যাসেটে ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে কোনো একটি অ্যাসেটের খারাপ পারফরম্যান্স আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগকে প্রভাবিত করতে না পারে। ঝুঁকি সহনশীলতা মানে হলো আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। “৮০ ই” কৌশলটি কম ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন এমন ট্রেডারদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
“৮০ ই” কৌশলটি কিভাবে কাজ করে?
“৮০ ই” কৌশলটি প্রয়োগ করা বেশ সহজ। নিচে এর ধাপগুলো আলোচনা করা হলো:
১. ক্যাপিটাল নির্ধারণ করুন: প্রথমে, আপনি যে পরিমাণ টাকা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে চান তা নির্ধারণ করুন।
২. ঝুঁকির পরিমাণ নির্ধারণ করুন: আপনার মোট ক্যাপিটালের ২০% ঝুঁকি হিসেবে নির্ধারণ করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার মোট ক্যাপিটাল ১০০০০ টাকা হয়, তাহলে আপনি ২০০০ টাকা ঝুঁকির মধ্যে রাখতে পারবেন।
৩. প্রতি ট্রেডের পরিমাণ নির্ধারণ করুন: এরপর, প্রতিটি ট্রেডে আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করবেন তা নির্ধারণ করুন। এই ক্ষেত্রে, আপনি আপনার ঝুঁকির পরিমাণের ৫-১০% বিনিয়োগ করতে পারেন। অর্থাৎ, যদি আপনার ঝুঁকির পরিমাণ ২০০০ টাকা হয়, তাহলে আপনি প্রতিটি ট্রেডে ১০০-২০০ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন।
৪. স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট সেট করুন: প্রতিটি ট্রেডের জন্য স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট লেভেল সেট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্টপ-লস হলো সেই মূল্য যেখানে আপনার ট্রেডটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে যদি আপনার প্রত্যাশার বিপরীতে বাজার যায়। টেক-প্রফিট হলো সেই মূল্য যেখানে আপনার ট্রেডটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে যদি বাজার আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী যায়।
৫. কৌশল অনুসরণ করুন: প্রতিটি ট্রেডে এই নিয়মগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করুন। কোনো পরিস্থিতিতেই আপনার ঝুঁকির সীমা অতিক্রম করবেন না।
উদাহরণ
ধরুন, আপনার বাইনারি অপশন ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে ২০,০০০ টাকা আছে। “৮০ ই” কৌশল অনুসারে, আপনি ৪,০০০ টাকা (২০%) ঝুঁকির মধ্যে রাখতে পারবেন। আপনি প্রতিটি ট্রেডে ২০০ টাকা করে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন, যা আপনার ঝুঁকির পরিমাণের ৫%।
এখন, আপনি একটি কল অপশন কিনলেন যার স্ট্রাইক মূল্য হলো ১.২৫ এবং মেয়াদ ৩০ মিনিট। আপনি স্টপ-লস ১.২০ তে এবং টেক-প্রফিট ১.৩০ তে সেট করলেন। যদি বাজার আপনার অনুকূলে যায় এবং মূল্য ১.৩০ তে পৌঁছায়, তাহলে আপনি প্রতি ট্রেডে ১০ টাকা লাভ করবেন (১.৩০ - ১.২৫ = ০.০৫, এবং প্রতিটি অপশনের জন্য পেআউট সাধারণত ৮০-৯০% হয়ে থাকে)। যদি বাজার আপনার বিপরীতে যায় এবং মূল্য ১.২০ তে পৌঁছায়, তাহলে আপনি ২০০ টাকা হারাবেন।
“৮০ ই” কৌশলের সুবিধা
- ঝুঁকি হ্রাস: এই কৌশলের প্রধান সুবিধা হলো এটি আপনার ঝুঁকির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
- ক্যাপিটাল সুরক্ষা: আপনার ট্রেডিং ক্যাপিটালের ৮০% সুরক্ষিত থাকে, যা আপনাকে বড় ধরনের লোকসান থেকে রক্ষা করে।
- মানসিক শান্তি: কম ঝুঁকি নিয়ে ট্রেড করলে মানসিক চাপ কম থাকে এবং আপনি আরও ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
- দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা: এই কৌশলটি আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল ট্রেডিংয়ের সুযোগ করে দেয়।
“৮০ ই” কৌশলের অসুবিধা
- কম লাভ: যেহেতু আপনি কম পরিমাণে বিনিয়োগ করেন, তাই আপনার লাভের সম্ভাবনাও কম থাকে।
- ধৈর্য্যের প্রয়োজন: এই কৌশলটি সফল হতে সময় লাগতে পারে, তাই আপনার ধৈর্য্য থাকতে হবে।
- অনুशासित থাকা জরুরি: আপনাকে কঠোরভাবে নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে, অন্যথায় আপনি লোকসানের সম্মুখীন হতে পারেন।
“৮০ ই” কৌশল এবং অন্যান্য ট্রেডিং কৌশল
“৮০ ই” কৌশলটি অন্যান্য ট্রেডিং কৌশলের সাথে সমন্বয় করে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় কৌশল আলোচনা করা হলো:
- মার্টিংগেল কৌশল: এই কৌশলে, প্রতিটি লোকসানের পর আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হয়। তবে, “৮০ ই” কৌশলের সাথে মার্টিংগেল কৌশল ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এটি আপনার ক্যাপিটালকে দ্রুত শেষ করে দিতে পারে। মার্টিংগেল
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: এই কৌশলটি ব্যবহার করে সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল নির্ধারণ করা হয়। “৮০ ই” কৌশলের সাথে ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে আপনি আরও নিশ্চিতভাবে ট্রেড করতে পারেন। ফিবোনাচ্চি
- ট্রেন্ড ফলোয়িং: এই কৌশলে, আপনি বাজারের ট্রেন্ড অনুসরণ করে ট্রেড করেন। “৮০ ই” কৌশলের সাথে ট্রেন্ড ফলোয়িং ব্যবহার করে আপনি বাজারের গতিবিধির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন। ট্রেন্ড
- ব্রেকআউট ট্রেডিং: এই কৌশলে, আপনি যখন বাজার একটি নির্দিষ্ট লেভেল অতিক্রম করে (ব্রেকআউট হয়), তখন ট্রেড করেন। “৮০ ই” কৌশলের সাথে ব্রেকআউট ট্রেডিং ব্যবহার করে আপনি দ্রুত লাভ করতে পারেন। ব্রেকআউট
- নিউজ ট্রেডিং: এই কৌশলে, আপনি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খবরের উপর ভিত্তি করে ট্রেড করেন। “৮০ ই” কৌশলের সাথে নিউজ ট্রেডিং ব্যবহার করে আপনি বাজারের অস্থিরতা থেকে লাভবান হতে পারেন। নিউজ ট্রেডিং
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং “৮০ ই” কৌশল
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস “৮০ ই” কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে আপনি বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ট্রেডিংয়ের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর আলোচনা করা হলো:
- মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ হলো একটি জনপ্রিয় ইন্ডিকেটর, যা বাজারের গড় মূল্য নির্ধারণ করে। মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (Relative Strength Index): আরএসআই ব্যবহার করে বাজারের ওভারবট (overbought) এবং ওভারসোল্ড (oversold) অবস্থা নির্ণয় করা হয়। আরএসআই
- এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): এমএসিডি ব্যবহার করে বাজারের ট্রেন্ড এবং গতিবিধি বিশ্লেষণ করা হয়। এমএসিডি
- বলিঙ্গার ব্যান্ড: বলিঙ্গার ব্যান্ড ব্যবহার করে বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করা হয়। বলিঙ্গার ব্যান্ড
- স্টোকাস্টিক অসিলেটর: স্টোকাস্টিক অসিলেটর ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য রিভার্সাল পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়। স্টোকাস্টিক অসিলেটর
ট্রেডিং ভলিউম এবং “৮০ ই” কৌশল
ট্রেডিং ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কত সংখ্যক শেয়ার বা কন্ট্রাক্ট কেনাবেচা হয়েছে তার পরিমাণ। উচ্চ ভলিউম সাধারণত বাজারের শক্তিশালী ট্রেন্ড নির্দেশ করে। “৮০ ই” কৌশলের সাথে ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে আপনি আরও নিশ্চিতভাবে ট্রেড করতে পারেন। যদি আপনি দেখেন যে কোনো ট্রেডে ভলিউম বাড়ছে, তাহলে সেটি একটি শক্তিশালী সংকেত হতে পারে। ট্রেডিং ভলিউম
“৮০ ই” কৌশল ব্যবহারের টিপস
- ডেমো অ্যাকাউন্টে অনুশীলন করুন: আসল টাকা বিনিয়োগ করার আগে ডেমো অ্যাকাউন্টে এই কৌশলটি অনুশীলন করুন।
- একটি ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করুন: একটি বিস্তারিত ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করুন এবং সেটি অনুসরণ করুন।
- আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- নিয়মিত পর্যালোচনা করুন: আপনার ট্রেডিং কার্যক্রম নিয়মিত পর্যালোচনা করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কৌশল পরিবর্তন করুন।
- শেখা চালিয়ে যান: বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পর্কে আপনার জ্ঞান এবং দক্ষতা বাড়াতে থাকুন।
উপসংহার
“৮০ ই” কৌশলটি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি কার্যকরী উপায়। এটি আপনার ঝুঁকি কমাতে এবং ক্যাপিটাল সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। তবে, এই কৌশলটি সফল হতে হলে আপনাকে অনুशासित থাকতে হবে এবং কঠোরভাবে নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং ট্রেডিং ভলিউমের সাথে এই কৌশলটি সমন্বয় করে ব্যবহার করলে আপনি আরও ভালো ফলাফল পেতে পারেন। কারণ:
- "৮০ ই" সম্ভবত কোনো আর্থিক লেনদেন বা বাজারের সাথে সম্পর্কিত।
- এই বিভাগটি]]
বাইনারি অপশন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন মার্জিন কল টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস মার্টিংগেল ফিবোনাচ্চি ট্রেন্ড ব্রেকআউট নিউজ ট্রেডিং মুভিং এভারেজ আরএসআই এমএসিডি বলিঙ্গার ব্যান্ড স্টোকাস্টিক অসিলেটর ট্রেডিং ভলিউম কল অপশন পুট অপশন স্টপ-লস টেক-প্রফিট ডেমো অ্যাকাউন্ট ট্রেডিং প্ল্যান আবেগ নিয়ন্ত্রণ অর্থনৈতিক খবর বাজারের অস্থিরতা ওভারবট ওভারসোল্ড রিভার্সাল পয়েন্ট ক্যাপিটাল সুরক্ষা দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (ন্যূনতম জমা $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (ন্যূনতম জমা $5)
আমাদের কমিউনিটিতে যোগ দিন
আমাদের Telegram চ্যানেল @strategybin সাবস্ক্রাইব করুন: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সিগন্যাল ✓ একচেটিয়া কৌশল বিশ্লেষণ ✓ মার্কেট ট্রেন্ডের অ্যালার্ট ✓ নবীনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
