রকেট

রকেট হলো এক প্রকার প্রতিরোধক ইঞ্জিন যা নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র-এর উপর ভিত্তি করে কাজ করে। এই ইঞ্জিন সাধারণত মহাকাশযান উৎক্ষেপণ, ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি এবং উচ্চ গতির বিমান চালনার কাজে ব্যবহৃত হয়। রকেটের মূল ধারণা হলো, কোনো তরল বা গ্যাসকে উচ্চ গতিতে পেছনের দিকে নির্গত করে সামনের দিকে বল তৈরি করা। এই বল রকেটকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়।

রকেটের ইতিহাস

রকেটের ধারণা নতুন নয়। এর ইতিহাস প্রাচীন চীন দেশে শুরু হয়েছিল। প্রায় খ্রিস্টীয়াব্দ ১০০০ সালে চীনা সামরিক বাহিনী আগুন এবং বারুদ ব্যবহার করে রকেট তৈরি করে। এগুলো মূলত যুদ্ধ এবং উৎসবে ব্যবহৃত হতো। তবে, এই রকেটগুলো আধুনিক রকেটের মতো উন্নত ছিল না।

আধুনিক রকেটের বিকাশের সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীতে। কনস্ট্যান্টিন সিওলকভস্কি, রবার্ট এইচ. গডার্ড এবং হারমান ওবার্থ-এর মতো বিজ্ঞানীরা রকেট বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সিওলকভস্কি রকেট সমীকরণের মাধ্যমে রকেটের বেগ এবং জ্বালানির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেন। গডার্ড প্রথম তরল জ্বালানি রকেট তৈরি করেন এবং ওবার্থ রকেটের নকশা এবং নির্মাণে অবদান রাখেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ভি-২ রকেট তৈরি করে, যা ছিল প্রথম দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এরপর মহাকাশ প্রতিযোগিতা শুরু হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রকেট প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করে। স্পুটনিক ১ (Sputnik 1) ছিল প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ, যা ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন উৎক্ষেপণ করে। এরপর অ্যাপোলো প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিল আর্মস্ট্রং ১৯৬৯ সালে চাঁদে অবতরণ করেন।

রকেটের প্রকারভেদ

রকেট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এদের মধ্যে কিছু প্রধান প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:

তরল জ্বালানি রকেট (Liquid-propellant rocket): এই ধরনের রকেটে তরল জ্বালানি এবং অক্সিডাইজার ব্যবহার করা হয়। এগুলো সাধারণত জটিল এবং ব্যয়বহুল, তবে এদের কর্মক্ষমতা অনেক বেশি। উদাহরণ: স্যাটার্ন ভি রকেট।
কঠিন জ্বালানি রকেট (Solid-propellant rocket): এই রকেটে কঠিন জ্বালানি এবং অক্সিডাইজার মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এগুলো তৈরি করা সহজ এবং সংরক্ষণ করা সুবিধাজনক, তবে এদের কর্মক্ষমতা তরল জ্বালানি রকেটের তুলনায় কম। উদাহরণ: স্পেস শাটলের সহায়ক রকেট।
হাইব্রিড রকেট (Hybrid rocket): এই রকেটে কঠিন জ্বালানি এবং তরল অক্সিডাইজার অথবা তরল জ্বালানি এবং কঠিন অক্সিডাইজার ব্যবহার করা হয়। এটি তরল এবং কঠিন উভয় ধরনের রকেটের সুবিধাগুলোcombine করে।
বৈদ্যুতিক রকেট (Electric rocket): এই রকেটে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে জ্বালানিকে ত্বরান্বিত করা হয়। এগুলো খুব অল্প পরিমাণে জ্বালানি ব্যবহার করে, তবে এদের thrust অনেক কম থাকে। আয়ন থ্রাস্টার এর একটি উদাহরণ।

রকেটের প্রকারভেদ
রকেটের প্রকার	জ্বালানি	সুবিধা	অসুবিধা
তরল জ্বালানি রকেট	তরল জ্বালানি ও অক্সিডাইজার	উচ্চ কর্মক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণযোগ্য thrust	জটিল, ব্যয়বহুল
কঠিন জ্বালানি রকেট	কঠিন জ্বালানি ও অক্সিডাইজার	সহজ নির্মাণ, সংরক্ষণ সুবিধাজনক	কম কর্মক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ কঠিন
হাইব্রিড রকেট	কঠিন ও তরল জ্বালানি	উভয় ধরনের সুবিধা	জটিলতা মাঝারি
বৈদ্যুতিক রকেট	বিদ্যুৎ	অল্প জ্বালানি ব্যবহার	কম thrust

রকেটের মূল অংশ

একটি রকেটের প্রধান অংশগুলো হলো:

স্ট্রাকচার (Structure): এটি রকেটের মূল কাঠামো, যা অন্যান্য অংশগুলোকে ধরে রাখে।
জ্বালানি ট্যাংক (Fuel tank): এখানে জ্বালানি এবং অক্সিডাইজার সংরক্ষণ করা হয়।
ইঞ্জিন (Engine): এটি জ্বালানিকে পুড়িয়ে গ্যাস তৈরি করে এবং রকেটকে thrust প্রদান করে।
নজেল (Nozzle): এটি গ্যাসের গতি বাড়িয়ে thrust-কে আরও শক্তিশালী করে।
Guidance system (নির্দেশনা ব্যবস্থা): এটি রকেটকে সঠিক পথে চালিত করে।
Payload (পेलोড): এটি রকেটের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়, যেমন স্যাটেলাইট, মহাকাশযান অথবা ক্ষেপণাস্ত্র।

রকেটের কার্যপদ্ধতি

রকেটের কার্যপদ্ধতি নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই সূত্র অনুযায়ী, প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। রকেট যখন জ্বালানি পোড়ায়, তখন উচ্চ তাপমাত্রার গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাস নজেল দিয়ে পেছনের দিকে নির্গত হয়। গ্যাসের এই নির্গমনের ফলে রকেট সামনের দিকে একটি সমান এবং বিপরীত বল অনুভব করে, যা রকেটকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়।

রকেটের বেগ বাড়ানোর জন্য, জ্বালানি নির্গমনের হার এবং গ্যাসের বেগ বাড়ানো প্রয়োজন। রকেটের নকশা এমনভাবে করা হয় যাতে গ্যাস সর্বোচ্চ গতিতে নির্গত হতে পারে এবং thrust-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

রকেটের ব্যবহার

রকেটের ব্যবহার বহুমুখী। এর কয়েকটি প্রধান ব্যবহার নিচে উল্লেখ করা হলো:

মহাকাশ অভিযান (Space exploration): রকেট ব্যবহার করে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়, যা যোগাযোগ, ওয়েদার ফোরকাস্টিং, এবং ভূ-পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
সামরিক অ্যাপ্লিকেশন (Military applications): রকেট ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা (Scientific research): রকেট ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডল এবং মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করা হয়।
বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণ (Commercial launches): বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো রকেট ব্যবহার করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে এবং মহাকাশ পর্যটন সেবা প্রদান করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে রকেটের সম্পর্ক

যদিও রকেট এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং সরাসরি সম্পর্কিত নয়, তবে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই ঝুঁকি এবং পুরস্কার জড়িত। রকেট উৎক্ষেপণের আগে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্যারামিটার বিশ্লেষণ করেন, যেমন জ্বালানির পরিমাণ, আবহাওয়ার অবস্থা, এবং রকেটের নকশা। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এও, একজন ট্রেডার বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করেন।

উভয় ক্ষেত্রেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রকেট উৎক্ষেপণে ভুল হলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে, তেমনি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

রকেট প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। বর্তমানে, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট (Reusable rockets) তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা উৎক্ষেপণের খরচ কমিয়ে দেবে। স্পেসএক্স (SpaceX) এর ফ্যালকন ৯ (Falcon 9) রকেট এই ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি।

এছাড়াও, নতুন জ্বালানি এবং প্রপালশন সিস্টেম নিয়ে গবেষণা চলছে, যা রকেটের কর্মক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবে। মহাকাশ পর্যটন এবং আন্তঃগ্রহীয় ভ্রমণের জন্য উন্নত রকেট প্রযুক্তি তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে, রকেট ব্যবহার করে চাঁদ এবং মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থাপন করা সম্ভব হতে পারে।

আরও জানতে

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ