রং করা চুল

রং করা চুল একটি বহুল প্রচলিত সৌন্দর্য চর্চা এবং ফ্যাশন। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের চুলের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন করে নতুন লুক তৈরি করে আসছে। এই নিবন্ধে, রং করা চুলের বিভিন্ন দিক, পদ্ধতি, সতর্কতা এবং আধুনিক প্রবণতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ইতিহাস

প্রাচীনকালে, মানুষ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে চুল রং করত। মিশরীয়রা হেঁনা এবং অন্যান্য উদ্ভিদ ব্যবহার করে চুলে লালচে-বাদামী রং দিত। রোমানরা বিভিন্ন ধাতু এবং উদ্ভিদের মিশ্রণ ব্যবহার করত, যদিও সেই পদ্ধতিগুলো প্রায়শই বিপজ্জনক ছিল। সময়ের সাথে সাথে, চুলের রং করার পদ্ধতি উন্নত হয়েছে। ১৯ শতকে, প্রথম কৃত্রিম চুলের রং তৈরি হয়, যা চুলের রং করার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও জনপ্রিয় করে তোলে। বিংশ শতাব্দীতে, বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান আবিষ্কারের ফলে চুলের রঙের বৈচিত্র্য আরও বৃদ্ধি পায়।

চুল রং করার প্রকারভেদ

চুল রং করার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যা চুলের ধরন, রঙের স্থায়িত্ব এবং কাঙ্ক্ষিত লুকের উপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার আলোচনা করা হলো:

স্থায়ী রং (Permanent Dye): এই ধরনের রং চুলের গভীরে প্রবেশ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। এটি চুলের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন করে দেয় এবং নতুন রং যতক্ষণ না চুল বাড়তে থাকে ততক্ষণ স্থায়ী থাকে। স্থায়ী রং ব্যবহার করার সময় চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অর্ধ-স্থায়ী রং (Semi-Permanent Dye): এই রং চুলের বাইরের স্তরে লেগে থাকে এবং কয়েকবার শ্যাম্পু করার পরেই ধীরে ধীরে উঠে যায়। এটি চুলের তেমন ক্ষতি করে না এবং হালকা রং করার জন্য উপযুক্ত।
ডেমী-স্থায়ী রং (Demi-Permanent Dye): এটি স্থায়ী রংয়ের চেয়ে কম ক্ষতিকর, কিন্তু অর্ধ-স্থায়ী রংয়ের চেয়ে বেশি স্থায়ী হয়। এটি চুলের প্রাকৃতিক রংয়ের সাথে মিশে গিয়ে একটি ভিন্ন ভাব আনে।
টেম্পোরারি রং (Temporary Dye): এই রং শুধুমাত্র চুলের উপরে একটি আবরণ তৈরি করে এবং প্রথমবার শ্যাম্পু করার পরেই ধুয়ে যায়। এটি পার্টি বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ব্লীচ (Bleach): ব্লীচ চুলের প্রাকৃতিক রং হালকা করে দেয়, যা পরবর্তীতে অন্য কোনো রং করার জন্য উপযুক্ত করে তোলে। এটি চুলের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর রং করার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
হাইলাইট (Highlight): হাইলাইট হলো চুলের কিছু অংশে হালকা রং করা, যা পুরো চুলে একটি আকর্ষণীয় লুক দেয়।

চুল রং করার পদ্ধতি

চুল রং করার পদ্ধতি চুলের দৈর্ঘ্য, ধরন এবং রঙের উপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো হলো:

1. প্রস্তুতি: প্রথমে, রং করার আগে চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত নয়। পুরনো চুলে রং থাকলে, প্রথমে তা হালকা করে নিতে হবে। 2. রং মেশানো: প্রস্তুতকারকের নির্দেশ অনুযায়ী রং এবং ডেভেলপার মেশাতে হবে। 3. প্রয়োগ: একটি ব্রাশ ব্যবহার করে চুলের গোড়া থেকে শুরু করে আগ পর্যন্ত রং লাগাতে হবে। 4. সময়: প্যাকেজের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রং চুলে রাখতে হবে। 5. ধোয়া: এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।

রং করার পূর্বে সতর্কতা

চুল রং করার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এগুলো হলো:

অ্যালার্জি পরীক্ষা: রং করার আগে ত্বকের সামান্য অংশে রং লাগিয়ে অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নিন।
চুলের স্বাস্থ্য: ক্ষতিগ্রস্ত চুল রং করলে আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে। তাই রং করার আগে চুলের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করা জরুরি।
পোশাকের সুরক্ষা: রং করার সময় পুরনো কাপড় পরুন, যাতে রং লেগে গেলেও ক্ষতি না হয়।
ত্বকের সুরক্ষা: কপাল, কান এবং ঘাড়ের আশেপাশে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন, যাতে রং ত্বককে বিবর্ণ করতে না পারে।
সঠিক রং নির্বাচন: নিজের চুলের ধরন এবং ত্বকের রঙের সাথে মানানসই রং নির্বাচন করুন।

চুলের রঙের প্রকার ও স্থায়িত্ব
রংয়ের প্রকার	স্থায়িত্ব	চুলের ক্ষতি	উপযুক্ততা
স্থায়ী রং	দীর্ঘস্থায়ী	বেশি	যাদের চুলের রং পরিবর্তন করতে চান
অর্ধ-স্থায়ী রং	কয়েকবার শ্যাম্পু পর্যন্ত	কম	হালকা রংয়ের জন্য
ডেমী-স্থায়ী রং	৬-৮ সপ্তাহ	মাঝারি	প্রাকৃতিক রঙের সাথে ভিন্নতা আনতে
অস্থায়ী রং	এক বার শ্যাম্পু পর্যন্ত	নেই	পার্টি বা অনুষ্ঠানের জন্য
ব্লিচ	স্থায়ী (রং হালকা করে)	অনেক বেশি	যারা চুলকে খুব হালকা করতে চান

রং করার পরবর্তী যত্ন

চুল রং করার পর বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো:

সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু: সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, যা চুলের রং ধরে রাখতে সাহায্য করে।
কন্ডিশনার ব্যবহার: প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন, যা চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং রংকে উজ্জ্বল রাখে।
তাপ থেকে সুরক্ষা: হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার বা কার্লিং আয়রন ব্যবহার করার সময় হিট প্রোটেক্টর স্প্রে ব্যবহার করুন।
সূর্যালোক থেকে রক্ষা: অতিরিক্ত সূর্যালোকে চুলের রং বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে, তাই রোদ থেকে চুলকে বাঁচাতে টুপি বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন।
ডিপ কন্ডিশনিং: সপ্তাহে একবার ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট করুন, যা চুলের গভীরে পুষ্টি যোগায়।

আধুনিক প্রবণতা

চুলের রং করার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রবণতাগুলো হলো:

বালায়াজ (Balayage): এটি একটি ফ্রেঞ্চ টেকনিক, যেখানে চুলের গোড়া থেকে আগ পর্যন্ত ধীরে ধীরে রং হালকা করা হয়।
ওমব্রে (Ombre): এই পদ্ধতিতে চুলের গোড়া গাঢ় এবং আগা হালকা রং করা হয়।
সOMBRE (Sombre): এটি ওমব্রে-র একটি হালকা সংস্করণ, যেখানে রঙের পার্থক্য কম থাকে।
প্যাস্টেল রং (Pastel Colors): হালকা গোলাপি, নীল, ল্যাভেন্ডার ইত্যাদি প্যাস্টেল রংগুলো এখন খুব জনপ্রিয়।
রেইনবো হেয়ার (Rainbow Hair): চুলে বিভিন্ন রং ব্যবহার করে радуга-র মতো লুক তৈরি করা হয়।
গ্লিটার রুটস (Glitter Roots): চুলের গোড়ায় গ্লিটার ব্যবহার করে একটি আকর্ষণীয় লুক তৈরি করা হয়।

চুলের রঙের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার

চুল রং করার ফলে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে, যেমন:

চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া: রাসায়নিক রং চুলের প্রাকৃতিক তেল কমিয়ে দেয়, ফলে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
চুল পড়া: অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে চুল পড়তে পারে।
স্ক্যাল্পের সমস্যা: রং করার ফলে স্ক্যাল্পে অ্যালার্জি বা র‍্যাশ হতে পারে।
চুলের মসৃণতা হারানো: রং করার পর চুলের মসৃণতা কমে যেতে পারে।

এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু প্রতিকার নিচে দেওয়া হলো:

প্রোটিন ট্রিটমেন্ট: নিয়মিত প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করুন, যা চুলের গঠন পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল ম্যাসাজ: সপ্তাহে একবার অলিভ অয়েল দিয়ে চুলের ম্যাসাজ করুন, যা চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে।
ডিমের মাস্ক: ডিমের মাস্ক ব্যবহার করুন, যা চুলে প্রোটিন সরবরাহ করে এবং চুলকে শক্তিশালী করে।
অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন, যা স্ক্যাল্পকে শান্ত করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

আরও জানতে

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ