যোগাযোগের মডেল
যোগাযোগ মডেল
ভূমিকা
যোগাযোগ একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি কেবল তথ্য আদান প্রদানে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর মধ্যে আবেগ, ধারণা এবং উদ্দেশ্যও জড়িত। যোগাযোগের প্রক্রিয়া কে ভালোভাবে বোঝার জন্য বিভিন্ন যোগাযোগ মডেল তৈরি করা হয়েছে। এই মডেলগুলো আমাদের যোগাযোগ কিভাবে কাজ করে, কোথায় সমস্যা হতে পারে এবং কিভাবে যোগাযোগকে আরও কার্যকর করা যায় তা বুঝতে সাহায্য করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও সফল যোগাযোগের গুরুত্ব অনেক। এখানে ট্রেডারদের মধ্যে সঠিক তথ্য আদান প্রদান, বাজারের বিশ্লেষণ এবং কৌশলগত আলোচনা অত্যন্ত জরুরি।
যোগাযোগ মডেলের প্রকারভেদ
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষক যোগাযোগ মডেল নিয়ে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন মডেল তৈরি করেছেন। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মডেল আলোচনা করা হলো:
১. লিনিয়ার মডেল (Linear Model)
এটি যোগাযোগের সবচেয়ে সরল মডেল। এই মডেলে একজন প্রেরক (Sender) একটি বার্তা (Message) একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমে (Channel) প্রেরণ করেন এবং একজন প্রাপক (Receiver) সেটি গ্রহণ করেন। এই মডেলে যোগাযোগের প্রক্রিয়াকে একমুখী হিসেবে দেখানো হয়। যোগাযোগের একমুখী প্রক্রিয়া
| প্রেরক (Sender) | বার্তা (Message) | মাধ্যম (Channel) | প্রাপক (Receiver) |
|---|---|---|---|
| এনকোড করে | প্রেরণ মাধ্যম | ডিকোড করে | |
সমস্যা: এই মডেলে ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়ার সুযোগ নেই, যা বাস্তব পরিস্থিতিতে সবসময় সম্ভব নয়। এছাড়া, এখানে নয়েজের (Noise) প্রভাব দেখানো হয়নি।
২. ইন্টার্যাকশনাল মডেল (Interactional Model)
এই মডেলটি লিনিয়ার মডেলের চেয়ে উন্নত। এখানে প্রেরক এবং প্রাপক উভয়েই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। এই মডেলে ফিডব্যাকের সুযোগ রয়েছে, যা যোগাযোগকে দ্বিমুখী করে তোলে। দ্বিমুখী যোগাযোগ
এই মডেলে প্রেরক একটি বার্তা পাঠান এবং প্রাপক সেটি গ্রহণ করে প্রতিক্রিয়া জানান। এই প্রতিক্রিয়া প্রেরকের কাছে ফিরে যায় এবং প্রেরক সেই অনুযায়ী তার বার্তা পরিবর্তন করতে পারেন।
সমস্যা: এই মডেলে প্রেরক এবং প্রাপকের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা হয় না।
৩. ট্রান্স্যাকশনাল মডেল (Transactional Model)
যোগাযোগের সবচেয়ে আধুনিক এবং বহুল ব্যবহৃত মডেল এটি। এই মডেলে যোগাযোগকে একটি চলমান এবং পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া হিসেবে দেখানো হয়। এখানে প্রেরক এবং প্রাপক উভয়েই একই সাথে বার্তা প্রেরণ এবং গ্রহণ করেন। যোগাযোগের চলমান প্রক্রিয়া
এই মডেলে পরিবেশ, সংস্কৃতি, এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মতো বিষয়গুলো যোগাযোগের উপর প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, এখানে নয়েজের (Noise) প্রভাব বিবেচনা করা হয়।
বৈশিষ্ট্য:
- যোগাযোগ একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া।
- প্রেরক এবং প্রাপক উভয়েই একে অপরের উপর প্রভাব ফেলে।
- পরিবেশ এবং সংস্কৃতি যোগাযোগের উপর প্রভাব ফেলে।
- নয়েজের কারণে যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
৪. শ্যাননের মডেল (Shannon-Weaver Model)
এটি ১৯৪৮ সালে ক্লড শ্যানন এবং ওয়ারেন উইভার তৈরি করেন। মূলত এটি প্রকৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে যোগাযোগের নির্ভরযোগ্যতা এবং দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই মডেলে একটি তথ্য উৎস (Information Source), একটি ট্রান্সমিটার (Transmitter), একটি চ্যানেল (Channel), একটি রিসিভার (Receiver) এবং একটি গন্তব্য (Destination) রয়েছে। এছাড়াও, নয়েজ (Noise) যোগাযোগের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। শ্যাননের যোগাযোগ মডেল
| উপাদান | বর্ণনা | বার্তার উৎস | বার্তাকে সংকেতে রূপান্তরিত করে | সংকেত প্রেরণ করে | সংকেতকে বার্তায় রূপান্তরিত করে | বার্তা গ্রহণকারী | অবাঞ্ছিত সংকেত যা যোগাযোগে বাধা দেয় |
|---|
৫. বারলো'র মডেল (Berlo's SMCR Model)
ডেভিড বারলো ১৯৬0 সালে এই মডেলটি প্রস্তাব করেন। SMCR মডেলের পূর্ণরূপ হলো Sender (প্রেরক), Message (বার্তা), Channel (মাধ্যম) এবং Receiver (প্রাপক)। এই মডেলে প্রেরকের দক্ষতা, বার্তা তৈরির প্রক্রিয়া, মাধ্যম নির্বাচন এবং প্রাপকের বোধগম্যতা – এই চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বারলোর এসএমসিআর মডেল
৬. হেলিকাল মডেল (Helical Model)
ফ্র্যাঙ্ক ড্যান্স এই মডেলটি প্রস্তাব করেন। এই মডেলে যোগাযোগকে একটি হেলিক্সের মতো দেখানো হয়েছে, যা সময়ের সাথে সাথে বিস্তৃত হতে থাকে। যোগাযোগের প্রতিটি পর্যায়ে নতুন অভিজ্ঞতা যুক্ত হয়, যা পূর্বের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে। হেলিকাল যোগাযোগ মডেল
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে যোগাযোগের গুরুত্ব
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে সফল হওয়ার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পাওয়া এবং তা বিশ্লেষণ করা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে যোগাযোগ মডেলগুলো কিভাবে সাহায্য করতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মার্কেট বিশ্লেষণ: ট্রেডারদের মধ্যে বাজারের গতিবিধি, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দ্রুত আদান প্রদানে যোগাযোগ মডেলগুলো সাহায্য করে।
- ট্রেডিং কৌশল: সফল ট্রেডিং কৌশল তৈরি এবং তা বাস্তবায়নের জন্য ট্রেডারদের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। এখানে ট্রান্স্যাকশনাল মডেল খুব উপযোগী হতে পারে, যেখানে সবাই নিজেদের মতামত এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ঝুঁকির পূর্বাভাস এবং তা মোকাবিলার জন্য দ্রুত এবং নির্ভুল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- গ্রাহক পরিষেবা: ব্রোকার এবং ট্রেডারদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ গ্রাহক পরিষেবার মান উন্নত করে।
যোগাযোগে বাধা এবং তার সমাধান
যোগাযোগের পথে বিভিন্ন ধরনের বাধা আসতে পারে। নিচে কয়েকটি সাধারণ বাধা এবং তার সমাধান আলোচনা করা হলো:
- ভাষাগত বাধা: বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা। এর সমাধানের জন্য দোভাষী বা অনুবাদকের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
- মানসিক বাধা: মানুষের ব্যক্তিগত ধারণা, বিশ্বাস এবং মনোভাব যোগাযোগের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই বাধা দূর করার জন্য উভয় পক্ষের মানসিক প্রস্তুতি এবং সহানুভূতির প্রয়োজন।
- শারীরিক বাধা: শব্দ দূষণ, দুর্বল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো শারীরিক কারণে যোগাযোগে সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের বাধা দূর করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।
- সাংস্কৃতিক বাধা: বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক পার্থক্য একটি বড় বাধা হতে পারে। এই বাধা দূর করার জন্য বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং সম্মান জানানো উচিত।
যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করার উপায়
যোগাযোগ একটি দক্ষতা, যা অনুশীলন এবং শেখার মাধ্যমে উন্নত করা যায়। নিচে কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলো:
- সক্রিয়ভাবে শোনা: অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং বোঝার চেষ্টা করা।
- স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা: সহজ এবং বোধগম্য ভাষায় নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করা।
- সঠিক মাধ্যম নির্বাচন: বার্তার গুরুত্ব এবং প্রাপকের সুবিধা অনুযায়ী সঠিক মাধ্যম নির্বাচন করা।
- ফিডব্যাক গ্রহণ: অন্যের কাছ থেকে নিজের যোগাযোগের দুর্বলতা সম্পর্কে জানা এবং তা सुधार করা।
- অ-মৌখিক যোগাযোগ: অঙ্গভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি এবং চোখের যোগাযোগের মাধ্যমে নিজের বক্তব্যকে আরও শক্তিশালী করা।
যোগাযোগ মডেল এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং কৌশল
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন যোগাযোগ মডেল ব্যবহার করে ট্রেডিং কৌশল উন্নত করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- লিনিয়ার মডেল ব্যবহার করে: ব্রোকার কর্তৃক প্রেরিত মার্কেট নিউজ এবং অ্যানালাইসিস গ্রহণ করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া।
- ইন্টার্যাকশনাল মডেল ব্যবহার করে: অন্যান্য ট্রেডারদের সাথে আলোচনা করে এবং তাদের মতামত জেনে ট্রেডিং কৌশল তৈরি করা।
- ট্রান্স্যাকশনাল মডেল ব্যবহার করে: বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের ট্রেডিং কৌশল পরিবর্তন করা এবং অন্যদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা।
উপসংহার
যোগাযোগ একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা আমাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ মডেলগুলো আমাদের এই প্রক্রিয়াকে বুঝতে এবং উন্নত করতে সাহায্য করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও সঠিক যোগাযোগের মাধ্যমে সফল ট্রেডার হওয়া সম্ভব। তাই, যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য लगातार অনুশীলন করা উচিত।
আরও জানতে:
- যোগাযোগের প্রকারভেদ
- যোগাযোগের মনোবিজ্ঞান
- যোগাযোগের নৈতিকতা
- কার্যকর যোগাযোগ
- যোগাযোগ প্রযুক্তি
- মার্কেটিং যোগাযোগ
- সাংগঠনিক যোগাযোগ
- গণযোগাযোগ
- আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ
- অ-মৌখিক যোগাযোগ
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- অর্থনৈতিক সূচক
- বাইনারি অপশন প্ল্যাটফর্ম
- ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি
- মানি ম্যানেজমেন্ট
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- চার্ট প্যাটার্ন
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
