মার্টিংগেল পদ্ধতি

মার্টিংগেল পদ্ধতি: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি বিতর্কিত কৌশল

মার্টিংগেল পদ্ধতি কি?

মার্টিংগেল পদ্ধতি একটি ট্রেডিং কৌশল যা মূলত বাজি ধরার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে, প্রত্যেকবার হারার পরে বাজির পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়। এর মূল ধারণা হলো, যখন আপনি জিতবেন, তখন আপনার আগের সমস্ত ক্ষতি পুনরুদ্ধার হবে এবং একটি নির্দিষ্ট লাভ নিশ্চিত হবে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, মার্টিংগেল পদ্ধতি একই যুক্তিতে কাজ করে। এই পদ্ধতিতে, প্রত্যেকটি ভুল ট্রেডের পরে ট্রেডের পরিমাণ বাড়ানো হয়, যতক্ষণ না একটি সফল ট্রেড হয়।

মার্টিংগেল পদ্ধতির নামকরণের উৎস হলো ফরাসি গণিতবিদ পল পিয়ের মার্টিংগেল। যদিও এই পদ্ধতির ধারণাটি মার্টিংগেলের সময়ের আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, তিনি এটিকে জনপ্রিয় করেন। এটি একটি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি কৌশল (negative progression system) হিসাবে পরিচিত, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে বাজির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

বাইনারি অপশনে মার্টিংগেল পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে?

বাইনারি অপশনে মার্টিংগেল পদ্ধতি প্রয়োগ করা বেশ সহজ। নিচে একটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

১. আপনি ১$ দিয়ে একটি ট্রেড শুরু করলেন এবং হেরে গেলেন। ২. পরবর্তী ট্রেডে আপনি ২$ বাজি ধরলেন এবং আবার হেরে গেলেন। ৩. এরপর ৪$ বাজি ধরলেন এবং আবারও হারলেন। ৪. এখন আপনি ৮$ বাজি ধরবেন। যদি এই ট্রেডে আপনি জেতেন, তাহলে আপনার মোট লাভ হবে (৮$ - ১$ - ২$ - ৪$) = ১$।

এই উদাহরণে দেখা যাচ্ছে, জেতার পরে আপনি আপনার প্রাথমিক বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করতে পারছেন। তবে, মনে রাখতে হবে যে এই পদ্ধতি ক্রমাগত হারের ক্ষেত্রে দ্রুত আপনার মূলধন নিঃশেষ করে দিতে পারে।

মার্টিংগেল পদ্ধতির উদাহরণ
বাজির পরিমাণ \| ফলাফল \| মোট ক্ষতি \|
১$ \| হার \| ১$ \|
২$ \| হার \| ৩$ \|
৪$ \| হার \| ৭$ \|
৮$ \| জয় \| ১$ লাভ \|

মার্টিংগেল পদ্ধতির সুবিধা

সহজবোধ্যতা: এই পদ্ধতিটি বোঝা এবং প্রয়োগ করা অত্যন্ত সহজ। নতুন ট্রেডাররাও খুব সহজে এটি ব্যবহার করতে পারে।
তাত্ত্বিকভাবে লাভজনক: যদি আপনার কাছে সীমাহীন মূলধন থাকে এবং ব্রোকার ট্রেডের আকারের উপর কোনো বিধিনিষেধ না রাখে, তবে তাত্ত্বিকভাবে এই পদ্ধতি লাভজনক হতে পারে।
দ্রুত ক্ষতি পুনরুদ্ধার: একটিমাত্র সফল ট্রেডেই পূর্বের সমস্ত ক্ষতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

মার্টিংগেল পদ্ধতির অসুবিধা

অসীম মূলধনের প্রয়োজন: মার্টিংগেল পদ্ধতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো এর জন্য অসীম মূলধনের প্রয়োজন। ক্রমাগত হারতে থাকলে, বাজির পরিমাণ দ্রুত বাড়তে থাকে এবং একসময় আপনার মূলধন শেষ হয়ে যেতে পারে।
ব্রোকারের সীমাবদ্ধতা: অধিকাংশ ব্রোকার ট্রেডের আকারের উপর একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দেয়। ফলে, আপনি আপনার বাজি দ্বিগুণ করতে করতে সেই সীমা অতিক্রম করতে পারেন এবং তখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।
মানসিক চাপ: ক্রমাগত হারতে থাকলে এবং বাজির পরিমাণ বাড়তে থাকলে, ট্রেডারের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: মার্টিংগেল পদ্ধতি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মৌলিক নীতিগুলির পরিপন্থী। এটি আপনার সম্পূর্ণ মূলধন হারানোর ঝুঁকি বাড়ায়।
সময়সাপেক্ষ: লাভের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে, বিশেষ করে যখন পরপর কয়েকটি ট্রেড হেরে যায়।

মার্টিংগেল পদ্ধতির বিকল্প

মার্টিংগেল পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে আরও কিছু কৌশল রয়েছে যা আপনি বিবেচনা করতে পারেন:

ফিবোনাচ্চি পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে, ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী ফিবোনাচ্চি সংখ্যা ব্যবহার করে বাজির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।
ড'আলেম্বার্ট পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে, প্রত্যেকবার হারলে বাজির পরিমাণ ১ ইউনিট করে বাড়ানো হয় এবং জিতলে ১ ইউনিট করে কমানো হয়।
স্থায়ী ভগ্নাংশ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে, আপনার মূলধনের একটি নির্দিষ্ট অংশ প্রতিটি ট্রেডে বাজি ধরা হয়।
গ্যালার্ড পদ্ধতি: এটি মার্টিংগেলের একটি ভিন্ন রূপ, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ বাড়লে বাজির পরিমাণ আরও দ্রুত বৃদ্ধি করা হয়।

মার্টিংগেল পদ্ধতি এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

মার্টিংগেল পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে একটি গাণিতিক ধারণা। এটি টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ বা ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এর উপর নির্ভরশীল নয়। তবে, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য ট্রেড সনাক্ত করতে পারেন এবং মার্টিংগেল পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি দেখেন যে কোনো শেয়ারের সমর্থন স্তর (support level) থেকে বাউন্স ব্যাক করছে, তাহলে আপনি সেখানে মার্টিংগেল পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

মার্টিংগেল পদ্ধতি এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

ভলিউম বিশ্লেষণ আপনাকে বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। যদি আপনি দেখেন যে কোনো অপশনের ভলিউম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাহলে এটি একটি শক্তিশালী প্রবণতার ইঙ্গিত হতে পারে। আপনি এই তথ্যটি মার্টিংগেল পদ্ধতি প্রয়োগের সময় বিবেচনা করতে পারেন। তবে, শুধুমাত্র ভলিউমের উপর নির্ভর করে ট্রেড করা উচিত নয়, অন্যান্য সূচকগুলির সাথে মিলিয়ে ট্রেড করা উচিত।

মার্টিংগেল পদ্ধতির ঝুঁকি হ্রাস করার উপায়

যদিও মার্টিংগেল পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ, কিছু কৌশল অবলম্বন করে আপনি এর ঝুঁকি কিছুটা কমাতে পারেন:

ছোট বাজি দিয়ে শুরু করুন: আপনার মূলধনের খুব সামান্য অংশ দিয়ে ট্রেড শুরু করুন, যাতে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।
স্টপ-লস ব্যবহার করুন: একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতি হলে ট্রেড বন্ধ করে দিন।
ব্রোকারের নিয়মাবলী জানুন: ব্রোকারের ট্রেডের আকারের উপর বিধিনিষেধ সম্পর্কে অবগত থাকুন।
মানসিক শৃঙ্খলা বজায় রাখুন: আবেগপ্রবণ হয়ে অতিরিক্ত বাজি ধরা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করুন: মার্টিংগেল পদ্ধতির সাথে অন্যান্য ট্রেডিং কৌশল যেমন ট্রেন্ড ফলোয়িং বা ব্রেকআউট ট্রেডিং ব্যবহার করুন।

মার্টিংগেল পদ্ধতির মনস্তত্ত্ব

মার্টিংগেল পদ্ধতি ব্যবহারের সময় ট্রেডারদের মানসিক অবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমাগত ক্ষতির সম্মুখীন হলে হতাশ হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে শান্ত থেকে যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারাটা জরুরি। লোভের বশে অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া বা ভয়ের কারণে দ্রুত ট্রেড বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়।

উপসংহার

মার্টিংগেল পদ্ধতি একটি বিতর্কিত ট্রেডিং কৌশল। এটি তাত্ত্বিকভাবে লাভজনক হলেও, বাস্তবে এর অনেক ঝুঁকি রয়েছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ মার্টিংগেল পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে, এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলি ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। এছাড়াও, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং সঠিক কৌশল অবলম্বন করে ট্রেড করা উচিত। মনে রাখবেন, কোনো ট্রেডিং কৌশলই ১০০% সফলতার নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে এবং কোনো বিনিয়োগের পরামর্শ নয়।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ