মারঠি

মারঠি ভাষা

মারঠি ভাষা হলো ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের প্রধান ভাষা। এটি ইন্দো-আর্য ভাষা পরিবারের একটি সদস্য এবং ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ভাষা শুধু মহারাষ্ট্রেই নয়, বরং গোয়া, দাদরা ও নগরহাভেলী এবং দামাণ ও দিউ-এর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতেও উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহৃত হয়।

ইতিহাস

মারঠির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। মনে করা হয়, এই ভাষার উদ্ভব প্রাকৃত ভাষা থেকে হয়েছে, যা খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে ৩০০ সালের মধ্যে প্রচলিত ছিল। সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃত ভাষার বিভিন্ন উপভাষা তৈরি হয়, যার মধ্যে একটি মহারাষ্ট্রে বিকশিত হয়ে মারঠিতে রূপ নেয়।

আদিমারঠি (আনুমানিক ৭০০-১০০০ খ্রিস্টাব্দ): এটি মারঠির প্রাচীনতম রূপ, যা শিলালিপি এবং পুরাতন সাহিত্যকর্মে পাওয়া যায়।
মধ্যমারঠি (আনুমানিক ১০০০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ): এই সময়কালে মারঠি ভাষা আরও বিকশিত হয় এবং সাহিত্যিক চর্চা বৃদ্ধি পায়। সেন্ট Tukaram এবং সেন্ট Dnyaneshwar এর মতো সাধু ও কবিগণ এই ভাষায় রচিত সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন।
আধুনিক মারঠি (১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান): ব্রিটিশ শাসনের সময় এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মারঠি ভাষা আধুনিকীকরণ ও মান্যতার দিকে অগ্রসর হয়।

ভূগোলিক বিস্তার

মারঠি ভাষা মূলত মহারাষ্ট্র রাজ্যে ব্যবহৃত হয়। মহারাষ্ট্রের প্রায় ৮০% মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। এছাড়াও, এটি ভারতের অন্যান্য রাজ্য এবং বিদেশে বসবাসকারী মহারাষ্ট্রীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত। মারঠি ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ।

মারঠি ভাষাভাষীর সংখ্যা (আনুমানিক)
অঞ্চল	ভাষাভাষীর সংখ্যা	শতকরা হার
মহারাষ্ট্র	৬ কোটি ২০ লক্ষ	প্রায় ৮০%	গোয়া	প্রায় ৫ লক্ষ		দাদরা ও নগরহাভেলী	প্রায় ১ লক্ষ		দামাণ ও দিউ	প্রায় ৫০ হাজার		ভারতের অন্যান্য রাজ্য	প্রায় ২০ লক্ষ		প্রবাসী মারঠি জনগোষ্ঠী	প্রায় ৫০ লক্ষ

ধ্বনিবিজ্ঞান

মারঠি ভাষার ধ্বনিবিজ্ঞান বেশ সমৃদ্ধ। এই ভাষায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের বিভিন্ন উচ্চারণ রয়েছে।

স্বরবর্ণ: মারঠিতে ১৪টি স্বরবর্ণ রয়েছে – অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ, अं, अः, এবং ॲ।
ব্যঞ্জনবর্ণ: মারঠিতে ৩৫টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে, যা বিভিন্ন রূপে উচ্চারিত হয়।

মারঠি ভাষায় দীর্ঘ ও হ্রস্ব স্বরবর্ণের পার্থক্য রয়েছে, যা শব্দের অর্থ পরিবর্তন করতে পারে।

ব্যাকরণ

মারঠি ভাষার ব্যাকরণ সংস্কৃত এবং প্রাকৃত ভাষার দ্বারা প্রভাবিত। এটি একটি লিঙ্গ-ভিত্তিক ভাষা, যেখানে বিশেষ্য পদগুলি পুরুষবাচক, স্ত্রীবাচক ও ক্লীবলিঙ্গ অনুসারে পরিবর্তিত হয়।

বিশেষ্য: মারঠিতে বিশেষ্য পদগুলি লিঙ্গ, বচন ও কারকের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়।
সর্বনাম: সর্বনামগুলিও লিঙ্গ ও বচন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
বিশেষণ: বিশেষণগুলি বিশেষ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তিত হয়।
ক্রিয়া: মারঠিতে ক্রিয়ার কাল ও বাচ্য অনুসারে রূপ পরিবর্তন হয়।

শব্দভাণ্ডার

মারঠি ভাষার শব্দভাণ্ডার সংস্কৃত, প্রাকৃত, ফার্সি, আরবি এবং ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষা থেকে প্রভাবিত।

তদ্ভব শব্দ: সংস্কৃত থেকে আসা শব্দগুলি, যেমন - "জ্ঞান", "ধর্ম"।
অর্ধ-তদ্ভব শব্দ: প্রাকৃত থেকে আসা শব্দগুলি, যেমন - "ভাত", "পানি"।
দেশী শব্দ: স্থানীয়ভাবে তৈরি শব্দগুলি, যেমন - "মাটি", "নদী"।
বিদেশি শব্দ: অন্যান্য ভাষা থেকে আসা শব্দগুলি, যেমন - "টেবিল", "চেয়ার"।

লিখন পদ্ধতি

মারঠি ভাষা দেবনাগরী লিপিতে লেখা হয়। এই লিপিটি বাম থেকে ডানে লেখা হয় এবং এতে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সংমিশ্রণে অক্ষর গঠিত হয়। মারঠি লিপিতে কিছু অতিরিক্ত বর্ণ রয়েছে, যা অন্যান্য দেবনাগরী-ভিত্তিক লিপিতে পাওয়া যায় না।

সাহিত্য

মারঠি সাহিত্যের ইতিহাস সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময়।

আদি সাহিত্য: সেন্ট Tukaram এবং সেন্ট Dnyaneshwar এর ভক্তিমূলক কবিতা মারঠি সাহিত্যের প্রাচীন উদাহরণ।
মধ্যযুগীয় সাহিত্য: এই সময়ে Jnaneshwar এর 'ভবার্থ দীপিকা' এবং Eknath এর 'ভাবার্থ রামায়ণ' এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রচিত হয়।
আধুনিক সাহিত্য: V.V. Shirwadkar, P.L. Deshpande, এবং V.S. Khandekar এর মতো লেখকরা আধুনিক মারঠি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।

চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত

মারঠি চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

চলচ্চিত্র: মারঠি চলচ্চিত্র শিল্প "মহারাষ্ট্রিয়ান সিনেমা" নামে পরিচিত। Ramesh Sippy, Ashutosh Gowariker এবং Nagraj Manjule এর মতো পরিচালকরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
সঙ্গীত: মারঠি সঙ্গীতের মধ্যে लावणी, अभंग, এবং भजन উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা

মহারাষ্ট্রের বিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে মারঠি ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। मुंबई বিশ্ববিদ্যালয় এবং पुणे विश्वविद्यालय এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মারঠি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে।