মাও সেতুং

পরিচিতি

মাও সেতুং (১৮৯৩-১৯৭৬) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (চীনা কমিউনিস্ট পার্টি) প্রধান এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (People's Republic of China) প্রতিষ্ঠাতা। মাও-এর নেতৃত্বে চীন গণতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তি লাভ করে এবং একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে তার शासनकाल বিতর্কিত, যেখানে ইতিবাচক উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ও রাজনৈতিক দমন-পীড়ন দেখা যায়।

প্রাথমিক জীবন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

মাও সেতুং ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর হু নান প্রদেশের শাওশান নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাও ইয়ুনচ্যাং এবং মায়ের নাম ওয়েন কুইমিং। শৈশবে তিনি কৃষিকাজে সহায়তা করতেন এবং স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯১১ সালে সিনহাই বিপ্লব-এর মাধ্যমে ছিং রাজবংশ-এর পতন হলে মাও রাজনীতিতে আগ্রহী হন।

১৯১২ সালে তিনি হু নান প্রদেশের সামরিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন, কিন্তু কিছুদিন পর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার জন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি বেইজিং-এ যান এবং বিভিন্ন বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯২১ সালে সাংহাই-তে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন ও ক্ষমতার আগমন

মাও সেতুং খুব দ্রুত কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। তিনি কৃষকদের সংগঠিত করার ওপর জোর দেন এবং ভূমি সংস্কারের দাবি জানান। ১৯২৭ সালে তিনি নানচাং বিদ্রোহ-এর নেতৃত্ব দেন, যা চীনা গৃহযুদ্ধের সূচনা করে।

এরপর মাও জিয়াংসি প্রদেশে একটি কমিউনিস্ট ঘাঁটি স্থাপন করেন এবং গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে কুওমিনতাং-এর (Kuomintang) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৩৪ সালে কুওমিনতাং-এরattacks-এর কারণে মাও এবং তার অনুসারীরা দীর্ঘ যাত্রা (Long March) শুরু করেন। এই দীর্ঘ যাত্রায় প্রায় ৯,০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তারা শাআনসি প্রদেশে পৌঁছান এবং নতুন ঘাঁটি স্থাপন করেন।

দ্বিতীয় sino-japanese যুদ্ধ (১৯৩৭-১৯৪৫) চলাকালীন মাও সেতুং জাপানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালী করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর চীনা গৃহযুদ্ধ পুনরায় শুরু হয় এবং ১৯৪৯ সালে মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টরা বিজয় লাভ করে।

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা ও মাও-এর শাসন

১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও সেতুং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা করেন এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী হন। তার নেতৃত্বে চীন একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। মাও সেতুং-এর शासनকালে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়:

ভূমি সংস্কার: জমিদারদের কাছ থেকে জমি নিয়ে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
শিল্প জাতীয়করণ: শিল্প ও বাণিজ্য জাতীয়করণ করা হয়।
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা: অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
সাংস্কৃতিক বিপ্লব: ১৯৬৬ সালে মাও সেতুং সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাদী ও ঐতিহ্যবাহী ধ্যানধারণা থেকে সমাজকে মুক্ত করা।

বিতর্ক ও সমালোচনা

মাও সেতুং-এর शासनकाल বিতর্কিত ছিল। তার নেওয়া কিছু পদক্ষেপের কারণে ব্যাপক সমালোচনাও হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

মহতী লিপ ফরোয়ার্ড (Great Leap Forward): ১৯৫৮-১৯৬২ সালে মাও সেতুং মহতী লিপ ফরোয়ার্ড কর্মসূচি গ্রহণ করেন, যার ফলে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং প্রায় ৩ কোটি মানুষ মারা যায়।
সাংস্কৃতিক বিপ্লব: সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালানো হয় এবং বহু বুদ্ধিজীবী ও গণ্যমান্য ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তবে, মাও সেতুং-এর সমর্থকরা যুক্তি দেন যে তিনি চীনকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছেন।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

মাও সেতুং-এর অর্থনৈতিক নীতি চীনের অর্থনীতিতে মিশ্র প্রভাব ফেলেছিল। একদিকে, ভূমি সংস্কার ও শিল্প জাতীয়করণের ফলে দরিদ্র কৃষকদের অবস্থার উন্নতি হয় এবং শিল্পের বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে, মহতী লিপ ফরোয়ার্ডের মতো ভুল নীতির কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে।

সামাজিকভাবে, মাও সেতুং-এর शासनকালে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে উন্নতি হয়। শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায় এবং চিকিৎসা পরিষেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের কারণে মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

বৈদেশিক সম্পর্ক

মাও সেতুং-এর সময়ে চীনের বৈদেশিক সম্পর্ক জটিল ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণ থাকলেও পরে তা খারাপ হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দীর্ঘকাল ধরে বৈরী ছিল, কিন্তু ১৯৭২ সালে রিচার্ড নিক্সন-এর চীন সফরের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

মাও সেতুং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন এবং জাতিসংঘে চীনের আসন লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালান।

উত্তরাধিকার ও মূল্যায়ন

১৯৭৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মাও সেতুং মারা যান। তার মৃত্যুর পর হোয়া গুওফেং চীনের নেতা হন, কিন্তু শীঘ্রই দeng জিয়াওপিং ক্ষমতা দখল করেন এবং চীনের অর্থনীতিতে বাজার অর্থনীতির প্রবর্তন করেন।

মাও সেতুং-এর উত্তরাধিকার নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ তাকে চীনের মুক্তিদাতা হিসেবে দেখেন, আবার কেউ তাকে স্বৈরাচারী ও নিষ্ঠুর শাসক হিসেবে গণ্য করেন। তবে, এটা অনস্বীকার্য যে মাও সেতুং বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন এবং চীনের ইতিহাসে তার গভীর প্রভাব রয়েছে।

মাও সেতুং-এর জীবন ও কর্মের সময়রেখা
বছর	ঘটনা
১৮৯৩	চীনের হু নান প্রদেশে জন্মগ্রহণ
১৯২১	চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান
১৯২৭	নানচাং বিদ্রোহের নেতৃত্ব
১৯৩৪-১৯৩৬	দীর্ঘ যাত্রা (Long March)
১৯৪৯	গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা
১৯৫৮-১৯৬২	মহতী লিপ ফরোয়ার্ড কর্মসূচি
১৯৬৬-১৯৭৬	সাংস্কৃতিক বিপ্লব
১৯৭৬	মৃত্যু

আরও দেখুন

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা

বাইনারি অপশন ট্রেডিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে সাফল্যের জন্য প্রয়োজন গভীর টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ, এবং বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে সঠিক ধারণা। কোনো বিনিয়োগ করার আগে নিজের ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা বিবেচনা করা উচিত।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন : এই প্যাটার্নগুলো বাজারের সম্ভাব্য মুভমেন্ট সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।
মুভিং এভারেজ : এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা ট্রেন্ড নির্ধারণে সাহায্য করে।
আরএসআই (RSI) : এই ইন্ডিকেটরটি ওভারবট এবং ওভারসোল্ড পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
MACD : এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে এবং ট্রেডিং সিগন্যাল প্রদান করে।
ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট : এই টুলটি সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
বোলিঙ্গার ব্যান্ড : এটি বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে।
স্টোকাস্টিক অসিলেটর : এটি একটি মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর, যা বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দেয়।
Elliott Wave Theory: এই তত্ত্বটি বাজারের দীর্ঘমেয়াদী মুভমেন্ট প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে।
ডাউন ট্রেন্ড : যখন বাজারের দাম ক্রমাগত কমতে থাকে।
আপ ট্রেন্ড : যখন বাজারের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
সাইডওয়েজ ট্রেন্ড : যখন বাজারের দাম একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে ওঠানামা করে।
সাপোর্ট লেভেল : যে দামে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম পড়া বন্ধ হয়।
রেজিস্ট্যান্স লেভেল : যে দামে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম ওঠা বন্ধ হয়।
ব্রেকআউট : যখন দাম সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভেদ করে যায়।
ভলিউম : একটি নির্দিষ্ট সময়ে হওয়া ট্রেডের সংখ্যা।
লিকুইডিটি : কত সহজে কোনো সম্পদ কেনা বা বেচা যায় তার পরিমাপ।

মনে রাখবেন, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ সাফল্যের কোনো নিশ্চিত উপায় নেই।

অন্যান্য সম্ভাব্য বিষয়শ্রেণী: , , ,

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ