ব্রোকেন সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স
ব্রোকেন সাপোর্ট রেজিস্ট্যান্স
ভূমিকা
ফরেক্স, স্টক, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লেভেলগুলি বাজারের সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং ট্রেডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যখন এই সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলি ভেঙে যায়, তখন তাকে ব্রোকেন সাপোর্ট বা ব্রোকেন রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। এই ঘটনা বাজারের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারে এবং নতুন ট্রেডিং সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই নিবন্ধে, ব্রোকেন সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্সের ধারণা, কারণ, ট্রেডিং কৌশল এবং ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স কী?
সাপোর্ট হলো সেই মূল্যস্তর যেখানে কোনো শেয়ার বা কারেন্সির দাম কমার প্রবণতা থমকে গিয়ে পুনরায় বাড়তে শুরু করে। এটিকে Buyers দের শক্তি হিসেবে ধরা হয়। এই স্তরে Buyers রা বেশি করে কিনতে আগ্রহী হয়, ফলে দাম নিচে নামতে বাধা পায়। অন্যদিকে, রেজিস্ট্যান্স হলো সেই মূল্যস্তর যেখানে দাম বাড়ার প্রবণতা থেমে যায় এবং কমতে শুরু করে। এখানে Sellers রা বেশি সক্রিয় থাকে এবং দাম উপরে উঠতে বাধা দেয়।
ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স কী?
ব্রোকেন সাপোর্ট (Broken Support) মানে হলো, দাম সাপোর্ট লেভেলটিকে নিচে ভেঙে দিয়েছে এবং সেখানে আর কোনো বাধা নেই। এর অর্থ হলো, Sellers রা Buyers দের থেকে বেশি শক্তিশালী এবং দাম আরও কমতে পারে।
অন্যদিকে, ব্রোকেন রেজিস্ট্যান্স (Broken Resistance) মানে হলো, দাম রেজিস্ট্যান্স লেভেলটিকে উপরে ভেঙে দিয়েছে এবং সেখানে আর কোনো বাধা নেই। এর অর্থ হলো, Buyers রা Sellers দের থেকে বেশি শক্তিশালী এবং দাম আরও বাড়তে পারে।
ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স কেন হয়?
ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে:
- শক্তিশালী ট্রেন্ড: যদি বাজারে একটি শক্তিশালী আপট্রেন্ড বা ডাউনট্রেন্ড থাকে, তবে সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলি ভেঙে যেতে পারে।
- অর্থনৈতিক খবর: গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক বা রাজনৈতিক ঘটনা বাজারেরSentiment পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ভেঙে যেতে পারে।
- উচ্চ ভলিউম: যদি কোনো সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভাঙার সময় ভলিউম বেশি থাকে, তবে এটি একটি শক্তিশালী সংকেত দেয় যে দাম সেই লেভেল ভেদ করে আরও এগিয়ে যাবে।
- নিউজ এবং ইভেন্ট: কোনো কোম্পানির বা দেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর বা ঘটনা দামের উপর প্রভাব ফেলে এবং সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স ভেঙে দিতে পারে।
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট: সামগ্রিক বাজারের মনোভাব (Sentiment) সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলকে প্রভাবিত করে।
ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ট্রেড করার কৌশল
ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ট্রেড করার জন্য কিছু জনপ্রিয় কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading):
এটি সবচেয়ে সাধারণ কৌশল। যখন দাম সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভেঙে যায়, তখন ট্রেডাররা দ্রুত সেই দিকে ট্রেড করে।
- ব্রোকেন রেজিস্ট্যান্স: যদি দাম রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভেঙে উপরে যায়, তাহলে Buy অপশন নেওয়া যেতে পারে।
- ব্রোকেন সাপোর্ট: যদি দাম সাপোর্ট লেভেল ভেঙে নিচে নামে, তাহলে Sell অপশন নেওয়া যেতে পারে।
২. পুলব্যাক ট্রেডিং (Pullback Trading):
এই কৌশলটিতে, দাম সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স ভাঙার পরে সামান্য পুলব্যাক (Pullback) হওয়ার সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা হয়। পুলব্যাক হলো দামের ক্ষণস্থায়ী বিপরীতমুখী মুভমেন্ট।
- ব্রোকেন রেজিস্ট্যান্সের পর পুলব্যাক: দাম রেজিস্ট্যান্স ভাঙার পর সামান্য নিচে নেমে এলে Buy অপশন নেওয়া যেতে পারে।
- ব্রোকেন সাপোর্টের পর পুলব্যাক: দাম সাপোর্ট ভাঙার পর সামান্য উপরে উঠে গেলে Sell অপশন নেওয়া যেতে পারে।
৩. রিটেস্ট ট্রেডিং (Retest Trading):
এই কৌশলটিতে, ভাঙা সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স লেভেলটিকে দাম পুনরায় পরীক্ষা করার জন্য ফিরে আসে।
- ব্রোকেন রেজিস্ট্যান্স রিটেস্ট: দাম রেজিস্ট্যান্স ভাঙার পর নিচে নেমে এসে আবার উপরে গেলে Buy অপশন নেওয়া যেতে পারে।
- ব্রোকেন সাপোর্ট রিটেস্ট: দাম সাপোর্ট ভাঙার পর উপরে উঠে এসে আবার নিচে নেমে গেলে Sell অপশন নেওয়া যেতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ট্রেডিংয়ের সময় কিছু ঝুঁকি থাকে, যা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি:
- ফলস ব্রেকআউট (False Breakout): অনেক সময় দাম সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভাঙার মতো দেখায়, কিন্তু পরে আবার আগের রেঞ্জে ফিরে আসে। একে ফলস ব্রেকআউট বলা হয়। এই ঝুঁকি কমাতে, ভলিউম নিশ্চিতকরণ এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা উচিত।
- স্টপ লস (Stop Loss): ট্রেড করার সময় স্টপ লস ব্যবহার করা উচিত, যাতে ফলস ব্রেকআউটের ক্ষেত্রে আপনার পুঁজি সুরক্ষিত থাকে।
- পজিশন সাইজিং (Position Sizing): আপনার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পজিশন সাইজ নির্ধারণ করুন।
- উচ্চ[-\] অস্থিরতা (High Volatility): বাজারে অস্থিরতা বেশি থাকলে সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলি সহজেই ভেঙে যেতে পারে।
টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এর ব্যবহার
ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ট্রেডিংয়ের সময় কিছু টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া যায়:
১. মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স হিসেবে কাজ করতে পারে এবং ব্রেকআউট নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। মুভিং এভারেজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
২. আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): আরএসআই ব্যবহার করে ওভারবট (Overbought) এবং ওভারসোল্ড (Oversold) অবস্থা নির্ণয় করা যায়, যা ব্রেকআউটের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেয়। আরএসআই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৩. এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence): এমএসিডি ট্রেন্ডের দিক এবং শক্তি নির্ণয় করতে সাহায্য করে। এমএসিডি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৪. ভলিউম (Volume): ব্রেকআউটের সময় ভলিউম বৃদ্ধি পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চিতকরণ সংকেত। ভলিউম বিশ্লেষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৫. ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
৬. বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বোলিঙ্গার ব্যান্ড ব্যবহার করে অস্থিরতা পরিমাপ করা যায় এবং ব্রেকআউটের সংকেত পাওয়া যায়।
বাইনারি অপশনে ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স কৌশলগুলি বিশেষভাবে উপযোগী হতে পারে। এখানে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
- সময়সীমা (Expiry Time): বাইনারি অপশনের সময়সীমা সঠিকভাবে নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। খুব কম সময়সীমা হলে ফলস ব্রেকআউটের ঝুঁকি থাকে, আবার খুব বেশি সময়সীমা হলে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
- পayout: ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্সের ট্রেডে সাধারণত ভালো payout পাওয়া যায়, তবে ঝুঁকিও বেশি থাকে।
- ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম: একটি নির্ভরযোগ্য বাইনারি অপশন প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করা জরুরি, যা সঠিক সময়ে ট্রেড করার সুযোগ দেয়।
উদাহরণ
ধরুন, একটি শেয়ারের দাম ৫০ টাকার রেজিস্ট্যান্স লেভেলে আটকে আছে। যদি দাম ৫৫ টাকায় উঠে যায়, তবে এটি একটি ব্রোকেন রেজিস্ট্যান্স। এই ক্ষেত্রে, আপনি Buy অপশন নিতে পারেন, কারণ দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবার, যদি একটি শেয়ারের দাম ৩০ টাকার সাপোর্ট লেভেলে ট্রেড করছে এবং কোনো কারণে দাম ২৫ টাকায় নেমে যায়, তবে এটি ব্রোকেন সাপোর্ট। এই ক্ষেত্রে, আপনি Sell অপশন নিতে পারেন, কারণ দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপসংহার
ব্রোকেন সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স একটি শক্তিশালী ট্রেডিং কৌশল হতে পারে, যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। এই কৌশলটি বাজারের গতিবিধি বুঝতে এবং লাভজনক ট্রেড করতে সাহায্য করে। তবে, ঝুঁকিগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করা অপরিহার্য। এছাড়াও, বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ব্রেকআউটগুলি নিশ্চিত করা এবং অভিজ্ঞ ট্রেডারদের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
আরও জানতে:
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- বাইনারি অপশন কৌশল
- ফরেক্স ট্রেডিং
- স্টক ট্রেডিং
- ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং
- অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার
- ট্রেডিং টার্মিনোলজি
- পিপ (Pip)
- স্প্রেড (Spread)
- লিভারেজ (Leverage)
- মার্জিন (Margin)
- স্লিপেজ (Slippage)
- ভলিউম স্প্রেড এনালাইসিস
- ওয়েভ থিওরি
- ডাবল টপ এবং ডাবল বটম
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
