ব্রণের চিকিৎসা

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

ব্রণের চিকিৎসা

ভূমিকা

ব্রণ একটি সাধারণ ত্বকের রোগ যা যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে, তবে এটি সাধারণত কৈশোর বয়সে বেশি দেখা যায়। ব্রণ শুধু একটি শারীরিক সমস্যা নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্রণের কারণে আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে এবং সামাজিক জীবনে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই ব্রণের সঠিক চিকিৎসা জানা এবং সময় মতো নেওয়া খুবই জরুরি। এই নিবন্ধে ব্রণের কারণ, প্রকারভেদ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ব্রণের কারণসমূহ

ব্রণ হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:

  • অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন: ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত সেবাম (Sebum) উৎপন্ন হলে এটি লোমকূপ বন্ধ করে দেয়, যা ব্রণের অন্যতম কারণ।
  • ত্বকের মৃত কোষ: ত্বকের মৃত কোষগুলো লোমকূপের মুখ বন্ধ করে দিতে পারে, ফলে ব্রণ সৃষ্টি হয়।
  • ব্যাকটেরিয়া: Cutibacterium acnes নামক ব্যাকটেরিয়া লোমকূপে সংক্রমিত হলে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং ব্রণ হয়।
  • হরমোনের পরিবর্তন: বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের পরিবর্তন, পিরিয়ড, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজ-এর সময় হরমোনের ওঠানামা ব্রণের কারণ হতে পারে।
  • জিনগত কারণ: পরিবারের কারো ব্রণ থাকলে আপনারও ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • কিছু ঔষধ: কিছু ঔষধ, যেমন - কর্টিকোস্টেরয়েড, অ্যানাবলিক স্টেরয়েড, এবং লিথিয়াম ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।
  • খাদ্যাভ্যাস: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত চিনিফ্যাট যুক্ত খাবার এবং দুগ্ধজাত পণ্য ব্রণ বাড়াতে পারে।
  • মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।

ব্রণের প্রকারভেদ

ব্রণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:

  • হোয়াইটহেডস (Whiteheads): এগুলো বন্ধ লোমকূপের কারণে হয় এবং ত্বকের নিচে সাদা দেখা যায়।
  • ব্ল্যাকহেডস (Blackheads): এগুলো খোলা লোমকূপের কারণে হয় এবং ত্বকের উপরে কালো দেখা যায়।
  • পাপুলস (Papules): এগুলো ছোট, লাল এবং ফোলা হয়।
  • পাসতুলস (Pustules): এগুলো পুঁজযুক্ত ব্রণ, যা লাল এবং ফোলা থাকে।
  • নোডিউলস (Nodules): এগুলো ত্বকের গভীরে শক্ত এবং বেদনাদায়ক হয়।
  • সিস্টস (Cysts): এগুলো পুঁজপূর্ণ এবং বেদনাদায়ক হয় এবং ত্বকের গভীরে অবস্থিত থাকে। সিস্ট গুরুতর ধরনের ব্রণ এবং এর চিকিৎসায় ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ব্রণের প্রকারভেদ
প্রকার বৈশিষ্ট্য
হোয়াইটহেডস বন্ধ লোমকূপ, ত্বকের নিচে সাদা ত্বকের ছিদ্র
ব্ল্যাকহেডস খোলা লোমকূপ, ত্বকের উপরে কালো ত্বকের তেল
পাপুলস ছোট, লাল, ফোলা ত্বকের প্রদাহ
পাসতুলস পুঁজযুক্ত, লাল, ফোলা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ
নোডিউলস ত্বকের গভীরে শক্ত, বেদনাদায়ক গভীর প্রদাহ
সিস্টস পুঁজপূর্ণ, বেদনাদায়ক, ত্বকের গভীরে মারাত্মক সংক্রমণ

ব্রণ প্রতিরোধের উপায়

ব্রণ প্রতিরোধ করার জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে:

  • ত্বক পরিষ্কার রাখা: দিনে দুবার হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। অতিরিক্ত ঘষাঘষি করবেন না।
  • অয়েল-ফ্রি পণ্য ব্যবহার: তেল-মুক্ত এবং নন- comedogenic (যা লোমকূপ বন্ধ করে না) স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার করুন।
  • মেকআপ পরিহার: ব্রণ হলে অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহার করা উচিত না।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রচুর জল পান করুন এবং ফল, সবজিশস্য জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।
  • মানসিক চাপ কমানো: যোগা, মেডিটেশন বা পছন্দের অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত চলাচল বাড়ে এবং ত্বক সুস্থ থাকে।
  • বালিশের কভার পরিবর্তন: নিয়মিত বালিশের কভার পরিবর্তন করুন, যাতে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া না ছড়ায়।

ব্রণের চিকিৎসা

ব্রণের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ব্রণের তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়। নিচে কয়েকটি প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

  • টপিক্যাল চিকিৎসা: এই পদ্ধতিতে ত্বকের উপরে লাগানোর ঔষধ ব্যবহার করা হয়। যেমন -
   *   বেনজোইল পারক্সাইড (Benzoyl peroxide): এটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং প্রদাহ কমায়।
   *   স্যালিসাইলিক অ্যাসিড (Salicylic acid): এটি লোমকূপের মুখ খুলে দেয় এবং মৃত কোষ দূর করে।
   *   রেটিনয়েডস (Retinoids): এটি ত্বকের কোষের বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক করে এবং লোমকূপ বন্ধ হওয়া প্রতিরোধ করে। যেমন - ট্রেটিনোইন, অ্যাডাপালিন।
   *   অ্যান্টিবায়োটিকস (Antibiotics): এটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমায়।
  • ওরাল চিকিৎসা: এই পদ্ধতিতে খাবার ঔষধ ব্যবহার করা হয়। যেমন -
   *   অ্যান্টিবায়োটিকস (Antibiotics): গুরুতর ব্রণের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা ওরাল অ্যান্টিবায়োটিকস দিতে পারেন।
   *   আইসোট্রেটিনোইন (Isotretinoin): এটি একটি শক্তিশালী ঔষধ, যা গুরুতর ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।
   *   ওরাল কন্ট্রাসেপটিভস (Oral contraceptives): মহিলাদের ক্ষেত্রে হরমোনজনিত ব্রণের জন্য এই ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • অন্যান্য চিকিৎসা:
   *   কেমিক্যাল পিল (Chemical peel): এই পদ্ধতিতে ত্বকের উপরে রাসায়নিক দ্রবণ লাগানো হয়, যা মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে মসৃণ করে।
   *   মাইক্রোডার্মাব্রেশন (Microdermabrasion): এই পদ্ধতিতে ত্বকের উপরের স্তরটি ঘষে তুলে ফেলা হয়, যা ব্রণ এবং দাগ কমাতে সাহায্য করে।
   *   লেজার থেরাপি (Laser therapy): এই পদ্ধতিতে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে ব্রণের প্রদাহ কমানো হয় এবং ত্বকের দাগ দূর করা হয়।
   *   ব্রণ নিষ্কাশন (Extraction): ডার্মাটোলজিস্ট বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে ব্রণ থেকে পুঁজ বের করে দেন।
ব্রণের চিকিৎসা পদ্ধতি
চিকিৎসা পদ্ধতি উপকারিতা
টপিক্যাল বেনজোইল পারক্সাইড ত্বকে লাগানো ক্রিম বা জেল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, প্রদাহ কমায়
টপিক্যাল স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ত্বকে লাগানো তরল বা ক্রিম লোমকূপ খোলে, মৃত কোষ দূর করে
টপিক্যাল রেটিনয়েডস ত্বকে লাগানো ক্রিম বা জেল কোষের বৃদ্ধি স্বাভাবিক করে
ওরাল অ্যান্টিবায়োটিকস খাবার ঔষধ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমায়
ওরাল আইসোট্রেটিনোইন খাবার ঔষধ গুরুতর ব্রণের জন্য, হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে
কেমিক্যাল পিল ত্বকে রাসায়নিক দ্রবণ মৃত কোষ দূর করে, ত্বক মসৃণ করে
মাইক্রোডার্মাব্রেশন ত্বকের উপরের স্তর ঘষে তোলা ব্রণ ও দাগ কমায়
লেজার থেরাপি লেজার রশ্মি ব্যবহার প্রদাহ কমায়, দাগ দূর করে

ব্রণের দাগ দূর করার উপায়

ব্রণ সেরে যাওয়ার পর ত্বকে দাগ থেকে যেতে পারে। এই দাগ দূর করার জন্য কিছু উপায় নিচে দেওয়া হলো:

  • সানস্ক্রিন ব্যবহার: রোদের কারণে দাগ আরও স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • ভিটামিন সি সিরাম (Vitamin C serum): এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং দাগ কমাতে সাহায্য করে।
  • অ্যালফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (Alpha hydroxy acids): এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং দাগ হালকা করে।
  • ডার্মাল ফিলার্স (Dermal fillers): এই পদ্ধতিতে ত্বকের নিচে ফিলার ইনজেক্ট করা হয়, যা দাগ পূরণ করে ত্বককে মসৃণ করে।
  • মাইক্রোনিডলিং (Microneedling): এই পদ্ধতিতে ছোট ছোট সুঁচ দিয়ে ত্বকে ছিদ্র করা হয়, যা কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং দাগ কমায়।

সতর্কতা

  • ব্রণ নিজে থেকে খুঁটাখুঁটি করবেন না, এতে সংক্রমণ হতে পারে এবং দাগ permanent হয়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত কসমেটিকস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • ব্রণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ ব্যবহার করবেন না।
  • ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার করুন।

আরও জানতে

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер