বেসিক অ্যাকাউন্টিং জ্ঞান

বেসিক অ্যাকাউন্টিং জ্ঞান

ভূমিকা

অ্যাকাউন্টিং বা হিসাববিজ্ঞান হলো কোনো ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনগুলোর সুসংগঠিত লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণীবিন্যাস, সংক্ষিপ্তকরণ, বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন করার প্রক্রিয়া। এটি একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। হিসাববিজ্ঞান শুধু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে, আমরা অ্যাকাউন্টিং-এর মৌলিক ধারণাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

হিসাববিজ্ঞানের মূল ধারণা

• হিসাব সমীকরণ (Accounting Equation): হিসাববিজ্ঞানের ভিত্তি হলো হিসাব সমীকরণ। এটি সম্পদ (Assets), দায় (Liabilities) এবং মালিকানা স্বত্ব (Equity)-এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। সমীকরণটি হলো:

 সম্পদ = দায় + মালিকানা স্বত্ব
 (Assets = Liabilities + Owner’s Equity)

 এখানে, সম্পদ হলো প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন সবকিছু, দায় হলো প্রতিষ্ঠানের ওপর অন্যের দাবি এবং মালিকানা স্বত্ব হলো মালিকের বিনিয়োগ এবং প্রতিষ্ঠানের অর্জিত মুনাফা।

• লেনদেন (Transactions): অ্যাকাউন্টিং-এর মূল ভিত্তি হলো লেনদেন। যেকোনো আর্থিক ঘটনা যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়, তাকে লেনদেন বলে। যেমন - পণ্য ক্রয়, বিক্রয়, বেতন প্রদান ইত্যাদি। লেনদেন লিপিবদ্ধ করার জন্য ডাবল-এন্ট্রি হিসাববিজ্ঞান পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

• ডেবিট ও ক্রেডিট (Debit and Credit): প্রতিটি লেনদেনকে ডেবিট ও ক্রেডিট হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। ডেবিট এবং ক্রেডিট হিসাবের দুটি দিক।

 * সম্পদ এবং খরচ (Expenses) সাধারণত ডেবিট করা হয়।
 * দায়, মালিকানা স্বত্ব এবং আয় (Revenue) সাধারণত ক্রেডিট করা হয়।

• হিসাবের প্রকারভেদ (Types of Accounts): হিসাবগুলোকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়:

 ১. সম্পদ হিসাব (Asset Account): প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন সম্পদ যেমন - নগদ, ব্যাংক জমা, প্রাপ্য হিসাব, জমি, দালানকোঠা ইত্যাদি।
 ২. দায় হিসাব (Liability Account): প্রতিষ্ঠানের ওপর অন্যের দাবি যেমন - প্রদেয় হিসাব, ঋণ ইত্যাদি।
 ৩. মালিকানা স্বত্ব হিসাব (Owner’s Equity Account): মালিকের বিনিয়োগ ও প্রতিষ্ঠানের সংরক্ষিত আয়।
 ৪. আয় হিসাব (Revenue Account): পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত আয়।
 ৫. খরচ হিসাব (Expense Account): ব্যবসা পরিচালনার জন্য incurred খরচ যেমন - বেতন, ভাড়া, ইত্যাদি।

হিসাববিজ্ঞানের শাখা

হিসাববিজ্ঞান প্রধানত চারটি শাখায় বিভক্ত:

১. আর্থিক হিসাববিজ্ঞান (Financial Accounting): এই শাখাটি বাহ্যিক ব্যবহারকারীদের জন্য আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে। যেমন - বিনিয়োগকারী, ঋণদাতা, এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আর্থিক বিবরণী এর মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এবং কর্মক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করা।

২. управленческий হিসাববিজ্ঞান (Management Accounting): এই শাখাটি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার জন্য তথ্য সরবরাহ করে। এটি বাজেট তৈরি, কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। খরচ হিসাববিজ্ঞান এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৩. কর হিসাববিজ্ঞান (Tax Accounting): এই শাখাটি কর আইন মেনে কর পরিকল্পনা এবং কর রিটার্ন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। আয়কর এবং ভ্যাট এর হিসাব এই শাখার অন্তর্ভুক্ত।

৪. নিরীক্ষা (Auditing): এই শাখাটি আর্থিক বিবরণীর যথার্থতা যাচাই করে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন ব্যবহারকারীদের আর্থিক তথ্যের উপর আস্থা তৈরি করে।

আর্থিক বিবরণী (Financial Statements)

আর্থিক বিবরণী হলো একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মক্ষমতা এবং আর্থিক অবস্থার সংক্ষিপ্তসার। প্রধান আর্থিক বিবরণীগুলো হলো:

১. আয় বিবরণী (Income Statement): একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আয় এবং ব্যয় দেখায়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মোট লাভ বা ক্ষতি নির্ণয় করা হয়।

২. উদ্বৃত্ত পত্র (Balance Sheet): একটি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, দায় এবং মালিকানা স্বত্ব দেখায়। এটি হিসাব সমীকরণের একটি চিত্র।

৩. নগদ প্রবাহ বিবরণী (Cash Flow Statement): একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের নগদ আন্তঃপ্রবাহ (Cash Inflow) এবং বহিঃপ্রবাহ (Cash Outflow) দেখায়। নগদ বাজেট তৈরির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

৪. মালিকানা স্বত্বের পরিবর্তন বিবরণী (Statement of Changes in Equity): একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালিকানা স্বত্তের পরিবর্তনগুলো দেখায়।

হিসাববিজ্ঞান প্রক্রিয়া

হিসাববিজ্ঞান প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

১. লেনদেন সনাক্তকরণ (Identifying Transactions): প্রথমে আর্থিক লেনদেনগুলো সনাক্ত করতে হয়। ২. লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Journalizing): সনাক্ত করা লেনদেনগুলোকে জার্নাল নামক বইতে তারিখ অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করতে হয়। ৩. খতিয়ান প্রস্তুতকরণ (Posting to Ledger): জার্নাল থেকে লেনদেনগুলোকে খতিয়ান নামক বইতে স্থানান্তর করতে হয়। ৪. রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ (Trial Balance): খতিয়ানের জেরগুলো ব্যবহার করে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়। ৫. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ (Preparing Financial Statements): রেওয়ামিলের তথ্যের ভিত্তিতে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টিং কৌশল

• অবচয় (Depreciation): সময়ের সাথে সাথে স্থায়ী সম্পদের মূল্য হ্রাসকে অবচয় বলে। অবচয় পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন সরলরৈখিক পদ্ধতি (Straight-Line Method) এবং ক্রমহ্রাসমান জের পদ্ধতি (Declining Balance Method)।

• মজুদ পণ্য মূল্যায়ন (Inventory Valuation): মজুদ পণ্যের মূল্য নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন FIFO (First-In, First-Out), LIFO (Last-In, First-Out) এবং weighted average method। জড় inventory ব্যবস্থাপনা ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

• হিসাব মেলানো (Reconciliation): ব্যাংক বিবরণী এবং প্রতিষ্ঠানের হিসাবের মধ্যে গরমিল থাকলে তা মেলানোর প্রক্রিয়াকে হিসাব মেলানো বলে। ব্যাংক রিকনসিলিয়েশন স্টেটমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দলিল।

• বাজেট (Budgeting): ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য বাজেট তৈরি করা হয়। বাজেট প্রণয়ন আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং অ্যাকাউন্টিং এর মধ্যে সম্পর্ক

যদিও বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি বিনিয়োগ কার্যক্রম, এর সাথে অ্যাকাউন্টিং-এর কিছু সম্পর্ক রয়েছে। একজন বাইনারি অপশন ট্রেডারকে তার ট্রেডিং কার্যক্রমের লাভ-ক্ষতি হিসাব রাখতে হয়। এই হিসাব রাখার জন্য তাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানতে হবে:

১. ট্রেডিংয়ের ফলাফল লিপিবদ্ধকরণ: প্রতিটি ট্রেডের ফলাফল (লাভ বা ক্ষতি) সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। ২. আয়কর গণনা: বাইনারি অপশন ট্রেডিং থেকে অর্জিত আয়ের উপর কর গণনা করতে হবে। ৩. মূলধন লাভ/ক্ষতি হিসাব: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে মূলধন লাভ বা ক্ষতি হলে তা হিসাব করতে হবে। ৪. আর্থিক পরিকল্পনা: ট্রেডিংয়ের জন্য একটি বাজেট তৈরি করা এবং আর্থিক ঝুঁকি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

এই ক্ষেত্রে, একজন ট্রেডারকে আয় বিবরণী এবং উদ্বৃত্ত পত্র এর মৌলিক ধারণাগুলো কাজে লাগাতে পারেন।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) এবং ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

• টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: ঐতিহাসিক মূল্য এবং চার্ট প্যাটার্ন ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য প্রবণতাPredict করার পদ্ধতি। চার্ট প্যাটার্ন এবং সূচক (Indicators) যেমন মুভিং এভারেজ (Moving Average), আরএসআই (RSI), এবং এমএসিডি (MACD) ব্যবহার করা হয়।
• ভলিউম বিশ্লেষণ: ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়। ভলিউম নির্দেশক যেমন অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এবং অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন (A/D Line) ব্যবহার করা হয়।
• বুলিশ এবং বিয়ারিশ প্রবণতা: বাজারের বুলিশ (Uptrend) এবং বিয়ারিশ (Downtrend) প্রবণতা চিহ্নিত করতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেন্ড লাইন এবং সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স স্তরগুলো এক্ষেত্রে সহায়ক।
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: ক্যান্ডেলস্টিক চার্টগুলো বাজারের sentiment বুঝতে সাহায্য করে। ডজি, হ্যামার, এবং এনগালফিং প্যাটার্ন এর মতো ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে পারে।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

বাইনারি অপশন ট্রেডিং ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।

• স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order): একটি নির্দিষ্ট মূল্যে পৌঁছালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড বন্ধ করার জন্য স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা হয়।
• পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন (Portfolio Diversification): বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো যায়।
• লিভারেজ (Leverage): লিভারেজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এটি লাভ এবং ক্ষতি উভয়ই বাড়িয়ে দিতে পারে।
• রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও (Risk-Reward Ratio): প্রতিটি ট্রেডের জন্য রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও মূল্যায়ন করা উচিত।

উপসংহার

অ্যাকাউন্টিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য অপরিহার্য। এই নিবন্ধে, আমরা অ্যাকাউন্টিং-এর মৌলিক ধারণা, শাখা, আর্থিক বিবরণী, হিসাববিজ্ঞান প্রক্রিয়া এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল আলোচনা করেছি। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও অ্যাকাউন্টিং জ্ঞান ট্রেডারদের জন্য সহায়ক হতে পারে। সঠিক অ্যাকাউন্টিং জ্ঞান এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যে কেউ আর্থিক সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

হিসাববিজ্ঞান সফটওয়্যার এবং অনলাইন অ্যাকাউন্টিং কোর্স সম্পর্কে আরও জানতে, অনুগ্রহ করে অন্যান্য উৎস দেখুন।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ