বেঁচে যাওয়া যাত্রী

বেঁচে যাওয়া যাত্রী

ভূমিকা

বেঁচে যাওয়া যাত্রী (Survivor bias) একটি সাধারণ γνωσιακή προκατάληψη (cognitive bias)। এটি এমন একটি ত্রুটিপূর্ণ ধারণা যা কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে টিকে থাকা বা সফল ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর বেশি মনোযোগ দেয়, এবং যারা টিকে থাকতে পারেনি বা সফল হয়নি তাদের কথা উপেক্ষা করে। এর ফলে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ভুল বিশ্লেষণের সম্ভাবনা থাকে। এই ধারণাটি পরিসংখ্যান (Statistics), অর্থনীতি (Economics), ইতিহাস (History) এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management) সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও এই মানসিকতা মারাত্মক ভুলত্রুটি ঘটাতে পারে।

বেঁচে যাওয়া যাত্রীর ধারণা

বেঁচে যাওয়া যাত্রী Bias হলো এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে আমরা কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টিকে থাকা সত্তা বা ঘটনার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে আসি, কিন্তু যারা এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে গেছে তাদের বিবেচনা করি না। এর ফলে সামগ্রিক চিত্রটি ভুলভাবে উপস্থাপিত হতে পারে।

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, মিত্রশক্তির বিমানগুলো জার্মানির বিরুদ্ধে বোমা হামলা চালাতো। বিজ্ঞানীরা বিমানের ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পান যে বিমানের কিছু নির্দিষ্ট অংশে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে যে এই অংশগুলো দুর্বল এবং এগুলোকে শক্তিশালী করা উচিত। কিন্তু বেঁচে যাওয়া যাত্রী Bias-এর কারণে এই সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। কারণ, বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র সেই বিমানগুলোর ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলোই পরীক্ষা করেছিলেন যেগুলো ফিরে আসতে পেরেছিল। যে বিমানগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর তথ্য তাদের কাছে ছিল না। ধ্বংস হওয়া বিমানগুলোর ক্ষতিগ্রস্থ অংশের তথ্য পাওয়া গেলে হয়তো অন্য চিত্রই বেরিয়ে আসতো।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে বেঁচে যাওয়া যাত্রীর প্রভাব

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে এই Bias মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এখানে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:

১. সফল ট্রেডারদের গল্প: প্রায়শই আমরা সফল বাইনারি অপশন ট্রেডারদের গল্প শুনি এবং তাদের কৌশলগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা সেইসব ট্রেডারদের কথা জানতে পারি না যারা লোকসান করে ট্রেডিং থেকে বেরিয়ে গেছেন। ফলে, মনে হতে পারে যে এই পেশায় সফল হওয়াটা খুব সহজ, যা আসলে সত্যি নয়।

২. ট্রেডিং কৌশল: কিছু ট্রেডিং কৌশল আছে যেগুলো প্রাথমিকভাবে সফল হতে দেখা যায়। কিন্তু যারা এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের অভিজ্ঞতা সাধারণত আলোচনা করা হয় না। এর ফলে, কৌশলটির কার্যকারিতা সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে।

৩. ঝুঁকি মূল্যায়ন: বেঁচে যাওয়া যাত্রী Bias-এর কারণে ট্রেডাররা ঝুঁকির সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হতে পারে। তারা শুধুমাত্র সাফল্যের উদাহরণগুলো দেখে উৎসাহিত হয় এবং ঝুঁকির মাত্রা কম মনে করে।

৪. পোর্টফোলিও তৈরি: বিনিয়োগকারীরা প্রায়শই সেইসব সম্পদে বিনিয়োগ করে যেগুলো সম্প্রতি ভালো ফল করেছে। তারা সেইসব সম্পদ উপেক্ষা করে যেগুলো খারাপ ফল করেছে, কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো করার সম্ভাবনা আছে।

বেঁচে যাওয়া যাত্রীর Bias চিহ্নিত করার উপায়

• ডেটার সম্পূর্ণতা যাচাই করুন: কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনার কাছে সম্পূর্ণ ডেটা আছে। শুধুমাত্র সাফল্যের উদাহরণগুলো বিবেচনা না করে ব্যর্থতার কারণগুলোও বিশ্লেষণ করুন।
• নমুনা আকার: আপনার নমুনার আকার যথেষ্ট বড় কিনা তা নিশ্চিত করুন। ছোট আকারের নমুনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে।
• পর্যালোচনা করুন: নিয়মিতভাবে আপনার ট্রেডিং কৌশল এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করুন। ভুলগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলো থেকে শিক্ষা নিন।
• অন্যান্য দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করুন: অন্যদের মতামত শুনুন এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো বিবেচনা করুন।
• সমালোচনা গ্রহণ করুন: নিজের কাজের সমালোচনা গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকুন।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকি হ্রাস করার কৌশল

১. স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন: স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে আপনি আপনার সম্ভাব্য লোকসান সীমিত করতে পারেন। যখন দাম একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছায়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ট্রেডটি বন্ধ হয়ে যাবে। স্টপ লস

২. পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য করুন: আপনার বিনিয়োগ বিভিন্ন ধরনের সম্পদে ছড়িয়ে দিন। এতে কোনো একটি সম্পদের দাম কমে গেলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। বৈচিত্র্যকরণ

৩. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ট্রেডিং শুরু করার আগে আপনার ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করুন এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করুন। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

৪. সঠিক বিশ্লেষণ: ট্রেড করার আগে ভালোভাবে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) এবং মৌলিক বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis) করুন।

৫. আবেগ নিয়ন্ত্রণ: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। লোভ এবং ভয়ের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। আবেগ নিয়ন্ত্রণ

৬. ট্রেডিং পরিকল্পনা: একটি সুস্পষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সেটি অনুসরণ করুন। ট্রেডিং পরিকল্পনা

৭. ডেমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন: প্রথমে ডেমো অ্যাকাউন্টে অনুশীলন করুন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। ডেমো অ্যাকাউন্ট

৮. সঠিক ব্রোকার নির্বাচন করুন: একটি নির্ভরযোগ্য এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্রোকার নির্বাচন করুন। ব্রোকার নির্বাচন

৯. মার্কেট সম্পর্কে জ্ঞান: মার্কেট সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করুন। মার্কেট বিশ্লেষণ

১০. নিউজ এবং ইভেন্ট অনুসরণ করুন: অর্থনৈতিক নিউজ এবং ইভেন্টগুলি অনুসরণ করুন যা মার্কেটের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার

১১. ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) করে মার্কেটের গতিবিধি বোঝা যায়।

১২. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল: সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল (Support and Resistance Levels) সনাক্ত করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।

১৩. ট্রেন্ড অনুসরণ: ট্রেন্ড অনুসরণ (Trend Following) করে ট্রেড করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে।

১৪. মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ (Moving Averages) ব্যবহার করে মার্কেটের দিকনির্দেশনা বোঝা যায়।

১৫. ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement) ব্যবহার করে সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করা যায়।

১৬. বলিঙ্গার ব্যান্ড: বোলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands) ব্যবহার করে মার্কেটের ভোলাটিলিটি (Volatility) পরিমাপ করা যায়।

১৭. আরএসআই (RSI): রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (Relative Strength Index) ব্যবহার করে মার্কেটের ওভারবট (Overbought) এবং ওভারসোল্ড (Oversold) অবস্থা নির্ণয় করা যায়।

১৮. এমএসিডি (MACD): মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স (Moving Average Convergence Divergence) ব্যবহার করে মার্কেটের মোমেন্টাম (Momentum) বোঝা যায়।

১৯. প্যারাবলিক সার (Parabolic SAR): প্যারাবলিক সার (Parabolic SAR) ব্যবহার করে সম্ভাব্য ট্রেডিং সংকেত পাওয়া যায়।

২০. ইসিএইচ (Elliot Wave Theory): এলিয়ট ওয়েভ থিওরি (Elliot Wave Theory) ব্যবহার করে মার্কেটের প্যাটার্ন (Pattern) বোঝা যায়।

উপসংহার

বেঁচে যাওয়া যাত্রী Bias একটি শক্তিশালী মানসিক প্রবণতা যা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে এই Bias-এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। তাই, ট্রেডারদের উচিত এই Bias সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য সঠিক কৌশল অবলম্বন করা। ডেটার সম্পূর্ণতা যাচাই করা, ঝুঁকির সঠিক মূল্যায়ন করা, এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা – এই বিষয়গুলো সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ