বিষয়শ্রেণী:ওপেন সোর্স সফটওয়্যার

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার

ভূমিকা

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার (OSS) হলো এমন কম্পিউটার সফটওয়্যার যার সোর্স কোড সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এর মানে হলো যে কেউ এই কোড দেখতে, পরিবর্তন করতে এবং বিতরণ করতে পারে। এই উন্মুক্ততা ব্যবহারকারীদের সফটওয়্যারটিকে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি করে নেওয়ার স্বাধীনতা দেয়। ওপেন সোর্স সফটওয়্যার প্রায়শই বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তবে এর অর্থ এই নয় যে এটি ব্যবহারের জন্য কোনো খরচ নেই। কিছু ক্ষেত্রে, সমর্থন বা কাস্টমাইজেশনের জন্য খরচ লাগতে পারে।

ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের ইতিহাস

ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের ধারণাটি নতুন নয়। এটি মূলত ১৯৭০-এর দশকে রিচার্ড স্টলম্যান এবং ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন (FSF) দ্বারা প্রচারিত হয়েছিল। স্টলম্যানের মতে, সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতা থাকা উচিত এবং সফটওয়্যারকে মালিকানাধীন মনে করা উচিত নয়। ১৯৮০-এর দশকে গনু (GNU) প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল একটি সম্পূর্ণ ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা। ১৯৯০-এর দশকে লিনাক্স কার্নেল তৈরি হওয়ার পর ওপেন সোর্স সফটওয়্যার আরও জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীতে, ১৯৯৮ সালে "ওপেন সোর্স" শব্দটি প্রচলিত হয়, যা সফটওয়্যারের উন্নয়নে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে।

ওপেন সোর্স লাইসেন্স

ওপেন সোর্স লাইসেন্স হলো সেই চুক্তি যা ব্যবহারকারীদের সফটওয়্যারটি ব্যবহার, পরিবর্তন এবং বিতরণের অধিকার দেয়। বিভিন্ন ধরনের ওপেন সোর্স লাইসেন্স রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় লাইসেন্স হলো:

জিএনইউ জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স (GPL): এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ওপেন সোর্স লাইসেন্সগুলির মধ্যে একটি। এই লাইসেন্সের অধীনে, যদি আপনি কোনো সফটওয়্যার পরিবর্তন করে বিতরণ করেন, তবে আপনাকে অবশ্যই আপনার পরিবর্তনগুলিও জিএনইউ জিPL লাইসেন্সের অধীনে প্রকাশ করতে হবে।
এমআইটি লাইসেন্স: এটি একটি খুবই সরল এবং উদার লাইসেন্স। এই লাইসেন্সের অধীনে, আপনি সফটওয়্যারটি যেকোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার, পরিবর্তন এবং বিতরণ করতে পারেন, যতক্ষণ না আপনি লাইসেন্স এবং কপিরাইট নোটিশ অন্তর্ভুক্ত করেন।
অ্যাপাচি লাইসেন্স: এটিও একটি উদার লাইসেন্স, যা পেটেন্ট সুরক্ষার মতো অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে।
বিএসডি লাইসেন্স: এটি এমআইটি লাইসেন্সের মতোই উদার, তবে এর কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে।

ওপেন সোর্স লাইসেন্সের তুলনা
লাইসেন্স	শর্তাবলী	ব্যবহার ক্ষেত্র
জিএনইউ জিPL	পরিবর্তনগুলিও জিPL-এর অধীনে প্রকাশ করতে হবে	শক্তিশালী কপিলেফট সুরক্ষা প্রয়োজন এমন প্রকল্প
এমআইটি	লাইসেন্স ও কপিরাইট নোটিশ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে	বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত
অ্যাপাচি	পেটেন্ট সুরক্ষা সহ	বৃহৎ আকারের প্রকল্প এবং কর্পোরেট ব্যবহার
বিএসডি	নির্দিষ্ট শর্তাবলী প্রযোজ্য	সিস্টেম সফটওয়্যার এবং ইউটিলিটি

ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের সুবিধা

ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের অনেক সুবিধা রয়েছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা আলোচনা করা হলো:

খরচ সাশ্রয়: ওপেন সোর্স সফটওয়্যার প্রায়শই বিনামূল্যে পাওয়া যায়, যা ব্যবহারকারীদের লাইসেন্স ফি সাশ্রয় করে।
উচ্চ নিরাপত্তা: যেহেতু সোর্স কোড উন্মুক্ত থাকে, তাই অনেক ডেভেলপার এটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন এবং নিরাপত্তা ত্রুটিগুলি দ্রুত খুঁজে বের করতে পারেন।
নির্ভরযোগ্যতা: ওপেন সোর্স সফটওয়্যার সাধারণত খুব নির্ভরযোগ্য হয়, কারণ এটি অনেক ব্যবহারকারী এবং ডেভেলপার দ্বারা পরীক্ষা করা হয়।
নমনীয়তা: ব্যবহারকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সফটওয়্যারটিকে পরিবর্তন করতে পারেন।
সম্প্রদায় সমর্থন: ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের একটি শক্তিশালী সম্প্রদায় থাকে, যারা ব্যবহারকারীদের সহায়তা করে এবং সফটওয়্যারটির উন্নতিতে অবদান রাখে।
vendor lock-in থেকে মুক্তি: ওপেন সোর্স সলিউশন ব্যবহার করে কোনো নির্দিষ্ট বিক্রেতার উপর নির্ভরতা কমানো যায়।

ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের অসুবিধা

কিছু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও, ওপেন সোর্স সফটওয়্যার দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে। নিচে কয়েকটি অসুবিধা উল্লেখ করা হলো:

সমর্থনের অভাব: কিছু ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের জন্য পেশাদার সমর্থন পাওয়া কঠিন হতে পারে।
জটিলতা: কিছু ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা বা কনফিগার করা কঠিন হতে পারে।
লাইসেন্সিং সংক্রান্ত জটিলতা: বিভিন্ন ধরনের ওপেন সোর্স লাইসেন্স থাকার কারণে, কোনটি আপনার প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত তা নির্বাচন করা কঠিন হতে পারে।
সুরক্ষার ঝুঁকি: যদিও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার সাধারণত নিরাপদ, তবে সোর্স কোড উন্মুক্ত থাকার কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিও থাকতে পারে।

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এবং ব্যবসা

অনেক ব্যবসা এখন ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এর কারণ হলো ওপেন সোর্স সফটওয়্যার খরচ সাশ্রয় করে, নিরাপত্তা বাড়ায় এবং নমনীয়তা প্রদান করে। কিছু কোম্পানি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার তৈরি করে এবং সেটি বিক্রি করে বা সমর্থন পরিষেবা প্রদান করে আয় করে। রেড হ্যাট এবং ক্যানোনিকাল এর মতো কোম্পানিগুলি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ভিত্তিক পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে সফল হয়েছে।

ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের ভবিষ্যৎ

ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। দিন দিন আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এবং ব্যবসা ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। ক্লাউড কম্পিউটিং, বিগ ডেটা, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর মতো নতুন প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের গুরুত্ব আরও বাড়ছে।

কৌশল এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহারের পূর্বে কিছু কৌশল এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ করা উচিত। যেমন:

লাইসেন্সিং: ব্যবহারের পূর্বে লাইসেন্স ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।
সুরক্ষা: নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেটগুলি পরীক্ষা করতে হবে।
সম্প্রদায়: সক্রিয় সম্প্রদায় আছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে।
ডকুমেন্টেশন: পর্যাপ্ত ডকুমেন্টেশন আছে কিনা, তা দেখে নিতে হবে।
স্কেলেবিলিটি: সফটওয়্যারটি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত কিনা, তা বিবেচনা করতে হবে।

ভলিউম বিশ্লেষণ

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভলিউম বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডাউনলোডের সংখ্যা, ব্যবহারকারীর সংখ্যা, এবং কোড কমিটগুলির সংখ্যা - এইগুলি সফটওয়্যারটির জনপ্রিয়তা এবং সক্রিয়তা নির্দেশ করে।

উপসংহার

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার একটি শক্তিশালী এবং নমনীয় সমাধান, যা ব্যক্তি এবং ব্যবসার জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে আসে। এর উন্মুক্ততা, নিরাপত্তা, এবং নির্ভরযোগ্যতা এটিকে একটি আকর্ষণীয় বিকল্প করে তুলেছে। তবে, ব্যবহারের পূর্বে লাইসেন্সিং, নিরাপত্তা এবং সমর্থন সম্পর্কিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত।

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ফ্রি সফটওয়্যার লিনাক্স কার্নেল গনু প্রকল্প ওপেন সোর্স ইনিশিয়েটিভ সোর্স কোড ডাটাবেস সিস্টেম অপারেটিং সিস্টেম ওয়েব সার্ভার ক্লাউড কম্পিউটিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিগ ডেটা ওয়ার্ডপ্রেস থিম ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন পাইথন প্রোগ্রামিং মাইএসকিউএল ডাটাবেস লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন অপাচে লাইসেন্স জিএনইউ জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স এমআইটি লাইসেন্স

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ