বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন পরিষদ

বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন পরিষদ

ভূমিকা বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন পরিষদ (World Travel & Tourism Council - WTTC) একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম যা পর্যটন এবং ভ্রমণ শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি সরকারি ও বেসরকারি খাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত। এই পরিষদ বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, নীতি নির্ধারণে সহায়তা এবং শিল্পের টেকসই উন্নয়নে কাজ করে। WTTC শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক সংস্থা নয়, এটি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও, যা নিয়মিতভাবে এই শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

প্রতিষ্ঠা ও পটভূমি WTTC ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং এই শিল্পকে একটি সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে, WTTC বিশ্ব অর্থনীতির উপর এই শিল্পের অবদান তুলে ধরে আসছে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ও ফোরামে এর পক্ষে advocacy করে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য WTTC-এর প্রধান লক্ষ্যগুলো হলো:

• ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক অবদান বৃদ্ধি করা।
• নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা।
• শিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
• ভ্রমণকারীদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করা।
• ভিসা এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ সহজ করা।
• পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করা এবং পরিবেশ বান্ধব পর্যটন উৎসাহিত করা।
• স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা।

সদস্যপদ WTTC-এর সদস্যপদ বিভিন্ন স্তরের হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে:

• গ্লোবাল সদস্য: এই স্তরে বিশ্বের বৃহত্তম এয়ারলাইনস, হোটেল, ট্যুর অপারেটর, এবং অন্যান্য ভ্রমণ ও পর্যটন সংস্থাগুলি অন্তর্ভুক্ত।
• আঞ্চলিক সদস্য: বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই স্তরে সদস্য হন।
• ডেস্টিনেশন সদস্য: বিভিন্ন দেশ এবং শহরের সরকার ও পর্যটন সংস্থা এই স্তরে যুক্ত হয়।
• অংশীদার সংস্থা: অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান WTTC-এর সাথে অংশীদার হিসেবে কাজ করে।

WTTC-এর সদস্যপদের স্তর

স্তর	সদস্যের ধরণ	উদাহরণ
গ্লোবাল সদস্য	আন্তর্জাতিক সংস্থা	মারriott International, Lufthansa, Expedia Group	আঞ্চলিক সদস্য	স্থানীয় ব্যবসা	বিভিন্ন দেশের ট্যুর অপারেটর ও হোটেল	ডেস্টিনেশন সদস্য	সরকার ও পর্যটন সংস্থা	Tourism Australia, VisitBritain	অংশীদার সংস্থা	আন্তর্জাতিক সংস্থা	জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (UNWTO)

কার্যক্রম ও উদ্যোগ WTTC বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ও উদ্যোগের মাধ্যমে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম নিচে উল্লেখ করা হলো:

• গবেষণা ও বিশ্লেষণ: WTTC প্রতি বছর এই শিল্পের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করে এবং বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনগুলো নীতি নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন এই ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
• অ্যাডভোকেসি: WTTC বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের পক্ষে কথা বলে এবং সরকারের নীতি পরিবর্তনে উৎসাহিত করে।
• টেকসই পর্যটন: WTTC টেকসই পর্যটনের প্রসারে কাজ করে, যার মাধ্যমে পরিবেশের উপর শিল্পের নেতিবাচক প্রভাব কমানো যায় এবং স্থানীয় communities-এর উপকৃত হওয়ার সুযোগ বাড়ে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs)-এর সাথে সঙ্গতি রেখে WTTC বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে।
• নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: WTTC ভ্রমণকারীদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল উন্নয়নে সহায়তা করে।
• ভিসা تسهيلات: WTTC ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের সাথে কাজ করে, যাতে পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ করা সহজ হয়।
• পেশাগত প্রশিক্ষণ: WTTC পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত কর্মীদের জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, যাতে তারা উন্নত পরিষেবা প্রদান করতে পারে।

WTTC-এর প্রতিবেদন ও পরিসংখ্যান WTTC নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

• ইকোনমিক ইম্প্যাক্ট রিপোর্ট: এই রিপোর্টে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের অবদান বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। এখানে জিডিপি (GDP), কর্মসংস্থান, এবং বিনিয়োগের পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্য থাকে।
• সিটি ইম্প্যাক্ট রিপোর্ট: এই রিপোর্টে বিভিন্ন শহরের অর্থনীতিতে পর্যটনের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়।
• ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স: এই ইনডেক্স বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের উন্নয়নের মাত্রা মূল্যায়ন করে।
• গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট: এই রিপোর্টে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের নতুন প্রবণতা এবং চ্যালেঞ্জগুলো আলোচনা করা হয়।

এই পরিসংখ্যানগুলি পর্যটন অর্থনীতি এবং ভ্রমণ বাজারের বিশ্লেষণ-এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

• ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা: বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সংঘাতের কারণে পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
• জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তন-এর কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে, যা পর্যটন কেন্দ্রগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
• মহামারী: কোভিড-১৯ এর মতো মহামারী এই শিল্পকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
• টেকসইতার অভাব: অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে অনেক স্থানে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তবে, এই শিল্পের রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। যেমন:

• প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: নতুন প্রযুক্তি, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR), পর্যটন অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
• নতুন বাজারের সৃষ্টি: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বাড়ছে, যা নতুন পর্যটন বাজারের সৃষ্টি করছে।
• টেকসই পর্যটনের চাহিদা বৃদ্ধি: পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে ইকো-ট্যুরিজম-এর চাহিদা বাড়ছে।
• স্বাস্থ্য ও সুস্থতা পর্যটন: স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বিষয়ক পর্যটন (Wellness Tourism) দ্রুত বাড়ছে, যেখানে মানুষ বিশ্রাম ও স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ভ্রমণ করে।

WTTC এবং অন্যান্য সংস্থা WTTC অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

• জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (UNWTO): WTTC এবং UNWTO একসাথে কাজ করে পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়ন এবং নীতি নির্ধারণে সহায়তা করে।
• আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (IATA): WTTC এবং IATA বিমান পরিবহন এবং পর্যটন শিল্পের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে।
• বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (WEF): WTTC WEF-এর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা WTTC ভবিষ্যতে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোতে আরও বেশি মনোযোগ দেবে বলে আশা করা যায়:

• ডিজিটাল রূপান্তর: পর্যটন শিল্পে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর উন্নয়ন করা।
• কার্বন নিঃসরণ হ্রাস: পর্যটন খাতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করা এবং পরিবেশ বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা উৎসাহিত করা।
• স্থানীয় communities-এর উন্নয়ন: পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয় communities-এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
• স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা: ভ্রমণকারীদের জন্য স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রোটোকল আরও উন্নত করা এবং মহামারী মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
• দক্ষতা উন্নয়ন: পর্যটন শিল্পের কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা।

উপসংহার বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন পরিষদ (WTTC) ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে এই শিল্পের অবদানকে স্বীকৃতি দেয় এবং শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করে। WTTC-এর গবেষণা, অ্যাডভোকেসি, এবং বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এই শিল্প ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। বৈশ্বিক অর্থনীতি-র প্রেক্ষাপটে WTTC-এর অবদান অনস্বীকার্য।

পর্যটন ব্যবস্থাপনা ভ্রমণ প্রযুক্তি হোটেল ব্যবস্থাপনা এয়ারলাইনস শিল্প পর্যটন গন্তব্য সাংস্কৃতিক পর্যটন প্রাকৃতিক পর্যটন গ্রামীণ পর্যটন চিকিৎসা পর্যটন ক্রীড়া পর্যটন ব্যবসা পর্যটন শিক্ষা পর্যটন ঐতিহাসিক পর্যটন ধর্মীয় পর্যটন ইকো-ট্যুরিজম পর্যটন বিপণন পর্যটন নীতি ভিসা বিধি-নিষেধ পর্যটন নিরাপত্তা পর্যটন পরিবহন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ