বিশ্ব ব্যাংক (World Bank)

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

বিশ্ব ব্যাংক

thumb|300px|বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তর, ওয়াশিংটন, ডি.সি.

বিশ্ব ব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মূল কাজ হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা। দরিদ্রতা হ্রাস এবং shared prosperity (সমৃদ্ধি বৃদ্ধি) – এই দুটি প্রধান লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব ব্যাংক কাজ করে। ১৯৪৪ সালে Bretton Woods সম্মেলনে ৪০টি দেশের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে অবস্থিত।

ইতিহাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্গঠন এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে বিশ্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত, এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের পুনর্গঠনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে প্রথম ঋণ প্রদান করা হয় ফ্রান্সকে, যার মাধ্যমে Reconstruction and Development Loan-এর যাত্রা শুরু হয়। সময়ের সাথে সাথে বিশ্ব ব্যাংকের কার্যক্রম এবং পরিধি বৃদ্ধি পায় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে।

গঠন ও পরিচালনা

বিশ্ব ব্যাংক মূলত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত:

  • আন্তর্জাতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক (IBRD): এটি বিশ্ব ব্যাংকের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম অংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে।
  • আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (IDA): এটি দরিদ্র দেশগুলোকে অনুদান এবং স্বল্প সুদের ঋণ দেয়।
  • আন্তর্জাতিক বেসরকারি বিনিয়োগ সংস্থা (IFC): এটি উন্নয়নশীল দেশের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করে।
  • বহুমুখী বিনিয়োগ গ্যারান্টি সংস্থা (MIGA): এটি বিনিয়োগকারীদের রাজনৈতিক ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
  • আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্র (ICSID): এটি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করে।

বিশ্ব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা থাকেন। এই পর্ষদ ব্যাংকের নীতি নির্ধারণ এবং ঋণ অনুমোদন করে। ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন। বর্তমানে অজয় ​​বঙ্গা বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কার্যাবলী

বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করে:

  • ঋণ প্রদান: অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে ঋণ প্রদান করে।
  • অনুদান প্রদান: দরিদ্র এবং ঋণগ্রস্ত দেশগুলোকে অনুদান প্রদান করে।
  • প্রযুক্তিগত সহায়তা: উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, নীতি সংস্কার, এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
  • গবেষণা ও বিশ্লেষণ: উন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করে এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ প্রদান করে।
  • নীতি পরামর্শ: সদস্য দেশগুলোকে অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে পরামর্শ দেয়।

সদস্যপদ

বিশ্ব ব্যাংকের সদস্যপদ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর সদস্যপদের সাথে সম্পর্কিত। বর্তমানে ১৮৯টি দেশ বিশ্ব ব্যাংকের সদস্য। সদস্য দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকের মূলধন এবং ভোটাধিকারের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ প্রক্রিয়া

বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

১. আবেদন: সদস্য দেশ বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ঋণ চেয়ে আবেদন করে। ২. মূল্যায়ন: বিশ্ব ব্যাংক দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা, প্রকল্পের কার্যকারিতা এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা মূল্যায়ন করে। ৩. প্রস্তাবনা: মূল্যায়ন শেষে বিশ্ব ব্যাংক ঋণ প্রদানের প্রস্তাবনা তৈরি করে। ৪. অনুমোদন: পরিচালনা পর্ষদ প্রস্তাবনা অনুমোদন করলে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৫. বিতরণ: ঋণচুক্তি অনুযায়ী কিস্তিতে ঋণ বিতরণ করা হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনা

বিশ্ব ব্যাংক তার কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়েছে:

  • শর্তযুক্ত ঋণ: প্রায়শই বিশ্ব ব্যাংক ঋণ দেওয়ার সময় কিছু শর্ত আরোপ করে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই শর্তগুলো Structural Adjustment Programs (SAP) নামে পরিচিত।
  • পরিবেশগত প্রভাব: বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত কিছু প্রকল্প পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • সুশাসনের অভাব: বিশ্ব ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাবের অভিযোগ রয়েছে।
  • ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব: অনেক সমালোচক মনে করেন বিশ্ব ব্যাংক উন্নত দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর তাদের প্রভাব বিস্তার করে।

উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রভাব

বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ এবং সহায়তা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো প্রভাবই ফেলতে পারে।

ইতিবাচক প্রভাব:

  • অবকাঠামো উন্নয়ন: বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বন্দর এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মিত হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায়।
  • দারিদ্র্য হ্রাস: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করা সম্ভব হয়।
  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
  • মানব উন্নয়ন: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির মাধ্যমে মানব উন্নয়ন সূচক বৃদ্ধি পায়।

নেতিবাচক প্রভাব:

  • ঋণ সংকট: অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের ফলে অনেক দেশ ঋণ সংকটে পতিত হয়।
  • বৈষম্য বৃদ্ধি: বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্পগুলো প্রায়শই ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুবিধা করে, ফলে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
  • পরিবেশ দূষণ: কিছু প্রকল্পের কারণে পরিবেশ দূষিত হয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস পায়।
  • স্থানীয় শিল্পের ক্ষতি: বিদেশি বিনিয়োগের কারণে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংক এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং

যদিও বিশ্ব ব্যাংক এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং সরাসরি সম্পর্কিত নয়, তবে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আর্থিক বিনিয়োগ কৌশল, যেখানে বিনিয়োগকারীরা কোনো সম্পদের দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে, ট্রেডাররা উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে এবং সেই অনুযায়ী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি বিশ্ব ব্যাংক কোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়, তাহলে সেই দেশের মুদ্রা বা স্টক মার্কেটের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে, ট্রেডাররা সেই দেশের সম্পদের দাম বাড়ার ওপর বাইনারি অপশন কিনতে পারে।

অন্যদিকে, যদি বিশ্ব ব্যাংক কোনো দেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে, তাহলে সেই দেশের সম্পদের দাম কমতে পারে। এক্ষেত্রে, ট্রেডাররা দাম কমার ওপর বাইনারি অপশন কিনতে পারে।

ঝুঁকি সতর্কতা: বাইনারি অপশন ট্রেডিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস সবসময় সঠিক নাও হতে পারে, এবং বাজারের অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বিশ্ব ব্যাংক বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে:

  • জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করা।
  • বৈশ্বিক মহামারী: কোভিড-১৯ এর মতো বৈশ্বিক মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা করা।
  • ঋণ সংকট: উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ঋণ সংকট সমাধান করা।
  • ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা: যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়া।
  • টেকসই উন্নয়ন: পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা।

উপসংহার

বিশ্ব ব্যাংক উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, এর কার্যক্রমের কিছু সীমাবদ্ধতা এবং সমালোচনা রয়েছে। ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্ব ব্যাংককে আরও কার্যকর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে, যাতে দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো উপকৃত হতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য ঋণ গ্রহণকারী দেশসমূহ (২০২৩)
দেশ ঋণের পরিমাণ (বিলিয়ন মার্কিন ডলার)
ভারত ২০.৮
ইন্দোনেশিয়া ১৯.৫
ভিয়েতনাম ১৪.২
বাংলাদেশ ১২.৭
নাইজেরিয়া ১১.১
মিশর ৯.৫
পাকিস্তান ৮.২

আরও জানতে:

এই তালিকাটি শুধুমাত্র কয়েকটি উদাহরণ। আরও অনেক বিষয় রয়েছে যা বিশ্ব ব্যাংক এবং উন্নয়ন অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер