বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (World Economic Forum - WEF) একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা। এটি মূলত বিশ্বের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের একত্রিত করে বিভিন্ন বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও শিল্পখাতের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করে। এর লক্ষ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। ফোরামটি সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অবস্থিত।

ইতিহাস

১৯৭০ সালে ক্লাউস শোয়াব (Klaus Schwab) এই ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিকভাবে এর নাম ছিল ইউরোপীয় ব্যবস্থাপনা ফোরাম (European Management Forum)। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের ব্যবসায়িক নেতাদের মধ্যে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। ১৯৮৭ সালে ফোরামের পরিধি ইউরোপের বাইরেও বিস্তৃত হয় এবং এর নাম পরিবর্তন করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম রাখা হয়।

কার্যক্রম

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

• বার্ষিক সভা (Annual Meeting): প্রতি বছর জানুয়ারী মাসে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে (Davos) এই ফোরামের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী নেতা, শিক্ষাবিদ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এই সভায় বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ এবং পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয় এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক অর্থনীতি
• আঞ্চলিক সভা (Regional Meetings): ফোরামটি বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক সভা আয়োজন করে। এর মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা হয়। যেমন - চীন, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ইত্যাদি।
• শিল্পখাত বিষয়ক উদ্যোগ (Industry Initiatives): ফোরাম বিভিন্ন শিল্পখাতের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, খাদ্য ইত্যাদি। প্রযুক্তি
• গবেষণা ও প্রতিবেদন (Research and Reports): ফোরাম বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনগুলো নীতি নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। অর্থনৈতিক গবেষণা
• তরুণ নেতৃত্ব প্রকল্প (Young Global Leaders): ফোরাম তরুণ নেতাদের চিহ্নিত করে এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বগুণাবলী বিকাশের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সুযোগ প্রদান করে।

সদস্যপদ

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সদস্যপদ বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

• অংশীদার (Partners): এই শ্রেণিতে বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত।
• শিল্পখাত বিশেষজ্ঞ (Industry Experts): এই শ্রেণিতে বিভিন্ন শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞরা থাকেন।
• শিক্ষাবিদ (Academics): এই শ্রেণিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকরা থাকেন।
• তরুণ গ্লোবাল লিডার (Young Global Leaders): এই শ্রেণিতে ৪০ বছরের কম বয়সী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা থাকেন।
• গণমাধ্যম (Media): বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও ফোরামের সদস্য হন।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সদস্যপদ কাঠামো

সদস্যের শ্রেণী

যোগ্যতা

সুযোগ-সুবিধা

অংশীদার

বৃহৎ আন্তর্জাতিক কোম্পানি

ফোরামের নীতি নির্ধারণে সরাসরি প্রভাব ফেলার সুযোগ, নেটওয়ার্কিং

শিল্পখাত বিশেষজ্ঞ

নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতি

ফোরামের আলোচনা ও গবেষণায় অংশগ্রহণ, বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান

শিক্ষাবিদ

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও গবেষক

গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, ফোরামের প্রকাশনায় অবদান রাখা

তরুণ গ্লোবাল লিডার

৪০ বছরের কম বয়সী প্রভাবশালী ব্যক্তি

নেতৃত্ব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে পরিচিতি

গণমাধ্যম

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধি

ফোরামের কার্যক্রম সম্পর্কে সংবাদ প্রচার, তথ্য সংগ্রহ

প্রভাব এবং সমালোচনা

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। ফোরামের বার্ষিক সভাগুলোতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় বিভিন্ন দেশের নীতি নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। তবে, ফোরামের কিছু সমালোচনাও রয়েছে।

• এলিটিজম (Elitism): ফোরামের সদস্যরা মূলত ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় এটি একটি অভিজাত ক্লাব হিসেবে সমালোচিত হয়। মনে করা হয়, ফোরামের সিদ্ধান্তগুলো সাধারণ মানুষের স্বার্থের চেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বার্থের দিকে বেশি নজর দেয়। সামাজিক বৈষম্য
• স্বচ্ছতার অভাব (Lack of Transparency): ফোরামের কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
• গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অভাব (Lack of Democratic Accountability): ফোরাম কোনো নির্বাচিত সংস্থা নয়, তাই এর উপর জনগণের কোনো সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই। সুশাসন
• বৈশ্বিক শাসনের সমালোচনা (Criticism of Global Governance): কেউ কেউ মনে করেন, ফোরাম বৈশ্বিক শাসনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করে, যা জাতীয় সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ

• চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (The Fourth Industrial Revolution): ফোরামটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণাটি জনপ্রিয় করেছে। এই বিপ্লব হলো প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে অর্থনীতি ও সমাজের রূপান্তর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
• স্টেক্ষোল্ডার ক্যাপিটালিজম (Stakeholder Capitalism): ফোরাম শেয়ারহোল্ডারদের পাশাপাশি অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের (যেমন - কর্মচারী, গ্রাহক, পরিবেশ) স্বার্থের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কথা বলে। কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা
• দ্য গ্রেট রিসেট (The Great Reset): কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী বিশ্বে অর্থনীতি ও সমাজকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য ফোরাম একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা 'দ্য গ্রেট রিসেট' নামে পরিচিত। টেকসই উন্নয়ন
• গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট (Global Risks Report): ফোরাম প্রতি বছর একটি গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট প্রকাশ করে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন ঝুঁকি (যেমন - অর্থনীতি, পরিবেশ, প্রযুক্তি) নিয়ে আলোচনা করা হয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক

সরাসরিভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বাইনারি অপশন ট্রেডিং নিয়ে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করে না। তবে, ফোরামের অর্থনৈতিক বিষয়ক আলোচনা এবং নীতি নির্ধারণী প্রস্তাবনাগুলো আর্থিক বাজার এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ফোরাম যদি কোনো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, তাহলে সেই দেশের মুদ্রা এবং শেয়ার বাজারের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য ফোরামের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন এবং অর্থনৈতিক পূর্বাভাসগুলো বিশ্লেষণ করা জরুরি। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে ট্রেডাররা বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

• টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস (Technical Analysis): টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা বোঝা যায়।
• ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস (Fundamental Analysis): ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস অর্থনৈতিক সূচক এবং খাতের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে।
• ভলিউম অ্যানালাইসিস (Volume Analysis): ভলিউম অ্যানালাইসিস ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি নির্ণয় করে।
• চार्ट প্যাটার্ন (Chart Patterns): চार्ट প্যাটার্ন ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ মূল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
• মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ বাজারের গড় মূল্য নির্ধারণ করে।
• আরএসআই (RSI): RSI ব্যবহার করে ওভারবট এবং ওভারসোল্ড পরিস্থিতি চিহ্নিত করা যায়।
• MACD (MACD): MACD দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে।
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করে।
• বোলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বোলিঙ্গার ব্যান্ড বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে।
• প্যারাবোলিক এসএআর (Parabolic SAR): প্যারাবোলিক এসএআর সম্ভাব্য ট্রেন্ড পরিবর্তনের সংকেত দেয়।
• ইচি মোকো ক্লাউড (Ichimoku Cloud): ইচি মোকো ক্লাউড বাজারের সাপোর্ট, রেজিস্ট্যান্স এবং ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারণা দেয়।
• এলিয়ট ওয়েভ থিওরি (Elliott Wave Theory): এলিয়ট ওয়েভ থিওরি বাজারের ছন্দ এবং প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে।
• ব্যাকটেস্টিং (Backtesting): ব্যাকটেস্টিং ঐতিহাসিক ডেটা ব্যবহার করে ট্রেডিং কৌশল পরীক্ষা করা হয়।
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি কমানোর উপায় নির্ধারণ করে।
• মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management): মানি ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের মূলধন রক্ষার কৌশল শেখায়।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত বিপ্লব এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় ফোরামের অবদান উল্লেখযোগ্য হতে পারে। ফোরামের নতুন উদ্যোগগুলো বিশ্ব অর্থনীতি ও সমাজকে আরও স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সাহায্য করতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই অর্থনীতি, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা - এই বিষয়গুলোতে ফোরামের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ