বিভিন্ন ধরনের বাইনারি অপশন

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জনপ্রিয় আর্থিক বিনিয়োগ পদ্ধতি। এখানে, বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম বাড়বে নাকি কমবে সে বিষয়ে অনুমান করে। এই ট্রেডিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের অপশন রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ প্রদান করে। এই নিবন্ধে, আমরা বিভিন্ন প্রকার বাইনারি অপশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বাইনারি অপশনের প্রকারভেদ

বাইনারি অপশন মূলত কয়েকটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:

১. হাই/লো অপশন (High/Low Option)

এটি সবচেয়ে সরল এবং বহুল ব্যবহৃত বাইনারি অপশন। এই অপশনে, বিনিয়োগকারীকে অনুমান করতে হয় যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের দাম বর্তমান দামের উপরে (High) নাকি নিচে (Low) থাকবে। যদি অনুমান সঠিক হয়, তবে বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ পান। আর ভুল হলে, বিনিয়োগের সম্পূর্ণ পরিমাণ হারাতে হয়।

উদাহরণ:* ধরা যাক, আপনি সোনার দামের উপর একটি হাই/লো অপশন কিনলেন। যদি আপনি মনে করেন আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে সোনার দাম বাড়বে, তবে আপনি 'কল' অপশন (Call Option) নির্বাচন করবেন। যদি দাম বাড়ে, আপনি লাভ পাবেন। অন্যথায়, 'পুট' অপশন (Put Option) নির্বাচন করলে এবং দাম কমলে আপনি লাভ পাবেন।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. টাচ/নো-টাচ অপশন (Touch/No-Touch Option)

এই অপশনটি একটু ভিন্ন। এখানে, বিনিয়োগকারীকে অনুমান করতে হয় যে সম্পদের দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মূল্যস্তর স্পর্শ করবে (Touch) নাকি স্পর্শ করবে না (No-Touch)। দাম যদি একবারও সেই স্তর স্পর্শ করে, তাহলে 'টাচ' অপশনটি লাভজনক হবে। আর যদি স্পর্শ না করে, তাহলে 'নো-টাচ' অপশনটি লাভজনক হবে।

উদাহরণ:* আপনি যদি মনে করেন অপরিশোধিত তেলের দাম আজ $80-এর উপরে যাবে, তাহলে আপনি 'টাচ' অপশন কিনতে পারেন। যদি দাম $80 অতিক্রম করে, আপনি লাভ পাবেন।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এই অপশনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

৩. ইন/আউট অপশন (In/Out Option)

এই অপশনটি 'বাউন্ডারি অপশন' নামেও পরিচিত। এখানে দুটি মূল্যস্তর নির্ধারণ করা হয় - একটি উপরের এবং অন্যটি নিচের। বিনিয়োগকারীকে অনুমান করতে হয় যে সম্পদের দাম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই দুটি স্তরের মধ্যে থাকবে (In) নাকি বাইরে চলে যাবে (Out)।

উদাহরণ:* রুপির দাম যদি 82.50 এবং 83.00-এর মধ্যে থাকে, তাহলে 'ইন' অপশনটি লাভজনক হবে।

ভলিউম বিশ্লেষণ এই ধরনের অপশনে সাহায্য করতে পারে।

৪. रेंज অপশন (Range Option)

রেঞ্জ অপশন অনেকটা ইন/আউট অপশনের মতোই, তবে এখানে বিনিয়োগকারীকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে দাম থাকার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে হয়। যদি দাম সেই সীমার মধ্যে থাকে, তবে বিনিয়োগকারী লাভ পান।

উদাহরণ:* ডলারের দাম যদি 140-145 টাকার মধ্যে থাকে, তাহলে আপনি 'রেঞ্জ' অপশনটি বেছে নিতে পারেন।

অর্থনৈতিক সূচকগুলি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

৫. ল্যাডার অপশন (Ladder Option)

ল্যাডার অপশন একটি বিশেষ ধরনের অপশন, যেখানে একাধিক মূল্যস্তর থাকে। প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদা আলাদা পেআউট (Payout) নির্ধারিত থাকে। বিনিয়োগকারীকে অনুমান করতে হয় যে দাম কোন স্তরে পৌঁছাবে। যত উপরের স্তরে দাম পৌঁছাবে, পেআউট তত বেশি হবে।

উদাহরণ:* আপনি যদি মনে করেন নিফটি ৫০ সূচক 18,000, 18,200 এবং 18,500 - এই তিনটি স্তরে পৌঁছাতে পারে, তাহলে আপনি ল্যাডার অপশন ব্যবহার করতে পারেন।

ট্রেডিং কৌশল এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬. পেয়ার অপশন (Pair Option)

পেয়ার অপশনে, দুটি সম্পদের দামের মধ্যে সম্পর্ক বিবেচনা করা হয়। বিনিয়োগকারীকে অনুমান করতে হয় যে একটি সম্পদের দাম অন্যটির তুলনায় বাড়বে নাকি কমবে।

উদাহরণ:* আপনি যদি মনে করেন ইউরো/ডলারের তুলনায় পাউন্ড/ডলারের দাম বাড়বে, তাহলে আপনি পেয়ার অপশনটি নির্বাচন করতে পারেন।

মুদ্রা জোড়া সম্পর্কে জ্ঞান এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।

৭. ওয়ান-টাচ অপশন (One-Touch Option)

ওয়ান-টাচ অপশন অনেকটা টাচ অপশনের মতোই, তবে এখানে দামকে শুধুমাত্র একবার একটি নির্দিষ্ট মূল্যস্তর স্পর্শ করতে হয়। একবার স্পর্শ করলেই বিনিয়োগকারী লাভ পান।

উদাহরণ:* আপনি যদি মনে করেন বিটকয়েনের দাম আজকের ট্রেডিং সেশনে $30,000 স্পর্শ করবে, তাহলে আপনি ওয়ান-টাচ অপশন কিনতে পারেন।

মার্কেট সেন্টিমেন্ট এই অপশনে গুরুত্বপূর্ণ।

৮.Reverse Call/Put Option

এই অপশনগুলোতে, সাধারণ কল এবং পুট অপশনের বিপরীত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এখানে, বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাম বাড়বে নাকি কমবে তার উপর ভিত্তি করে অপশন নির্বাচন করেন, কিন্তু পেআউট কাঠামো ভিন্ন হয়।

উদাহরণ:* Reverse Call অপশনে, দাম নির্দিষ্ট স্তরের নিচে থাকলে লাভ হয়, যা সাধারণ Call অপশনের বিপরীত।

ডেরিভেটিভস সম্পর্কে ধারণা থাকলে এই অপশন বোঝা সহজ হয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর গুরুত্বপূর্ণ দিক

ঝুঁকি মূল্যায়ন: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই, বিনিয়োগ করার আগে ভালোভাবে ঝুঁকি মূল্যায়ন করা উচিত।
বাজার বিশ্লেষণ: ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা জরুরি।
ট্রেডিং পরিকল্পনা: একটি সুস্পষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত, যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ, লাভের লক্ষ্য এবং ক্ষতির সীমা নির্ধারণ করা থাকবে।
মানসিক শৃঙ্খলা: আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেডিং করা উচিত।
ডেমো অ্যাকাউন্ট: প্রথমে ডেমো অ্যাকাউন্ট-এ অনুশীলন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত।

উপসংহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ধরনের অপশন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে এবং ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে বিনিয়োগ করা উচিত। সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা এবং ট্রেডিং কৌশল অবলম্বন করে সফল বাইনারি অপশন ট্রেডার হওয়া সম্ভব।

অপশনের নাম	বিবরণ	ঝুঁকি	দাম বাড়বে নাকি কমবে তার উপর অনুমান \| মাঝারি	দাম একটি নির্দিষ্ট স্তর স্পর্শ করবে কিনা তার উপর অনুমান \| উচ্চ	দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকবে কিনা তার উপর অনুমান \| মাঝারি	দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকার সম্ভাবনা \| মাঝারি	একাধিক স্তরে দাম পৌঁছানোর সম্ভাবনা \| উচ্চ	দুটি সম্পদের দামের মধ্যে সম্পর্ক \| মাঝারি	দাম একবার একটি নির্দিষ্ট স্তর স্পর্শ করবে কিনা \| উচ্চ	সাধারণ অপশনের বিপরীত পেআউট কাঠামো \| উচ্চ

আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ