বিক্রম সংবৎ

ভূমিকা

বিক্রম সংবৎ একটি প্রাচীন ভারতীয় পঞ্জিকা যা ভারতীয় উপমহাদেশে বহুল ব্যবহৃত। এটি শকাব্দ নামেও পরিচিত। এই সংবৎটি খ্রিস্টীয়াব্দ ৬ষ্ঠ শতকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের শেষ দিকে গণনা শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তবে এর উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কাল গণনা ও সময়reckoning এর ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।

উৎপত্তি ও ইতিহাস

বিক্রম সংবৎ নামকরণের সাথে জড়িত কিংবদন্তি অনুসারে, বিক্রমাদিত্য নামক একজন রাজার নামানুসারে এই সংবৎ চালু হয়েছিল। তবে ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। সাধারণভাবে মনে করা হয়, শাaka নামক এক ক্ষত্রিয় বংশের প্রতিষ্ঠাতা শাaka এঁর নামানুসারে এটি শকাব্দ নামে পরিচিত হয় এবং পরবর্তীতে বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে এর সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।

বিভিন্ন গ্রন্থে এই সংবৎ এর শুরুর বছর নিয়ে ভিন্নতা দেখা যায়। কোনো কোনো গ্রন্থে ৫৬ BCE-কে শুরুর বছর ধরা হয়েছে, আবার কোনোটিতে ৫৭ BCE-কে। এই কারণে, বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রম সংবৎ সামান্য ভিন্নভাবে পালিত হয়।

বৈশিষ্ট্য

এটি একটি সৌর পঞ্জিকা। এর গণনা সূর্যের গতিবিধির উপর ভিত্তি করে তৈরি।
এই পঞ্জিকায় ১২টি মাস থাকে এবং প্রতিটি মাসের দিন সংখ্যা নির্দিষ্ট।
বিক্রম সংবৎ এর মাসগুলি হল: चैत्र (Chaitra), वैशाख (Vaishakha), ज्येष्ठ (Jyeshtha), आषाढ (Ashadha), श्रावण (Shravana), भाद्रपद (Bhadrapada), आश्विन (Ashvina), कार्तिक (Kartika), मार्गशीर्ष (Margashirsha), पौष (Pousha), माघ (Magha), और फाल्गुन (Phalguna)।
এই সংবৎ এ তিথি ও নক্ষত্রের হিসাব রাখা হয়, যা জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে সম্পর্কিত।
এটি হিন্দু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহার

বিক্রম সংবৎ প্রধানত ভারত, নেপাল এবং ইন্দোনেশিয়ার বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত। এটি পঞ্জিকা হিসেবে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, কৃষি এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।

শুভকার্য ও বিবাহ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারিখ নির্ধারণের জন্য এই সংবৎ ব্যবহৃত হয়।
কৃষি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা পেতে এটি সহায়ক।
জ্যোতিষশাস্ত্র এবং বেদ সম্পর্কিত বিভিন্ন গণনা ও ভবিষ্যৎবাণীতে এই সংবৎ ব্যবহৃত হয়।
সরকারি নথিপত্র ও ঐতিহাসিক গবেষণা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার দেখা যায়।

বিক্রম সংবৎ ও অন্যান্য সংবৎ

বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন সংবৎ প্রচলিত আছে। বিক্রম সংবৎ এর সাথে অন্যান্য সংবৎ এর কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংবৎ এবং তাদের সাথে বিক্রম সংবৎ এর তুলনামূলক আলোচনা করা হলো:

বিভিন্ন সংবৎ এর তালিকা
সংবৎ	শুরুর বছর	ভিত্তি	ব্যবহার	শকাব্দ	৭৮ CE	সূর্য ও চন্দ্র	ভারত, ইন্দোনেশিয়া	বিক্রম সংবৎ	৫৬ BCE (মতান্তরে ৫৭ BCE)	সূর্য	ভারত, নেপাল	বঙ্গাব্দ	৫৯৪ CE	চন্দ্র	বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ	হিজরি	৬২২ CE	চন্দ্র	ইসলামিক বিশ্ব	গ্রেগরীয়	১৫৮২ CE	সূর্য	বিশ্বব্যাপী

গণনা পদ্ধতি

বিক্রম সংবৎ এর গণনা পদ্ধতি বেশ জটিল। এটি জ্যোতিষশাস্ত্রের বিভিন্ন নিয়ম ও সূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এখানে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়া হলো:

১. এই সংবৎ এর প্রথম মাস হলো चैत्र (Chaitra), যা সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে শুরু হয়। ২. প্রতিটি মাসের দিন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা আছে, তবে অধিমাসের কারণে বছরভেদে এর পরিবর্তন হতে পারে। ৩. তিথি ও নক্ষত্রের গণনা করে শুভ ও অশুভ দিন নির্ধারণ করা হয়। ৪. পঞ্চাঙ্গ নামক একটি বিশেষ বইয়ের সাহায্যে এই গণনা করা হয়, যেখানে গ্রহের অবস্থান ও অন্যান্য জ্যোতিষীয় তথ্য উল্লেখ থাকে।

আধুনিক জীবনে বিক্রম সংবৎ

আধুনিক জীবনে গ্রেগরীয় পঞ্জিকা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও, বিক্রম সংবৎ এর গুরুত্ব এখনো কমেনি।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার অব্যাহত আছে।
জ্যোতিষশাস্ত্র এবং বৈদিক গণনার ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য।
গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেকে দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য এই পঞ্জিকা ব্যবহার করেন।
ঐতিহাসিক গবেষণা ও পুরাতত্ত্বের ক্ষেত্রে এই সংবৎ গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সরবরাহ করে।

সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ

বিক্রম সংবৎ এর কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

বিভিন্ন অঞ্চলে শুরুর বছর নিয়ে ভিন্নতা।
অধিমাসের কারণে জটিলতা।
গ্রেগরীয় পঞ্জিকার সাথে সমন্বয় করা কঠিন।
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে এর ব্যবহার কমে যাওয়া।

এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পঞ্জিকা সংস্কারের প্রয়োজন।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিক্রম সংবৎ একটি ঐতিহ্যপূর্ণ পঞ্জিকা। এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে, এটিকে আধুনিক যুগের সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করা উচিত।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই পঞ্জিকার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা।
সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এর ব্যবহার সহজ করা।
শিক্ষাব্যবস্থায় এই সংবৎ সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা।
পর্যটন শিল্পে এর ব্যবহার বৃদ্ধি করা।

এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বিক্রম সংবৎকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

[1](https://en.wikipedia.org/wiki/Vikrama_Samvat)
[2](https://www.britannica.com/topic/Vikrama-Samvat)
বিভিন্ন জ্যোতিষশাস্ত্র বিষয়ক ওয়েবসাইট ও বই।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ