বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল
thumb|200px|বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের লোগো
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীনে একটি সরকারি সংস্থা। এটি দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে কাজ করে। বিসিসি মূলত সরকারের আইসিটি বিষয়ক নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, এবং তা বাস্তবায়নে সহায়তা করে। এছাড়াও, এই সংস্থাটি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতিষ্ঠা ও পটভূমি
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল দেশে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করা এবং এ বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। সময়ের সাথে সাথে বিসিসি তার কর্মপরিধি বিস্তার করে এবং আইসিটি খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিসিসি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বিসিসির কার্যাবলী
বিসিসি’র প্রধান কার্যাবলীগুলো নিম্নরূপ:
- নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন: সরকারের আইসিটি বিষয়ক নীতি নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
- প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন: দেশের জনগণের জন্য বিভিন্ন আইসিটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা, যাতে তারা আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে পারে এবং দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হয়।
- প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান: বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে আইসিটি সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা।
- গবেষণা ও উন্নয়ন: আইসিটি খাতের গবেষণা ও উন্নয়নে সহায়তা করা এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উৎসাহিত করা।
- সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: দেশের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সাইবার নিরাপত্তা বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
- ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়ন: সরকারি সেবাগুলোকে অনলাইনে নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা এবং তা বাস্তবায়ন করা। ই-গভর্নেন্স এর মাধ্যমে নাগরিক সেবা উন্নত করা যায়।
- সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার মান নিয়ন্ত্রণ: দেশে ব্যবহৃত সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের মান নিয়ন্ত্রণ করা এবং ভেজাল প্রতিরোধ করা।
- আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়ন: দেশের আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ করা, যেমন - ডেটা সেন্টার স্থাপন এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এর বিস্তার ঘটানো।
- স্টার্টআপ এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা: নতুন স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করা এবং উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলোকে উৎসাহিত করা।
বিসিসির বিভিন্ন প্রকল্প
বিসিসি বর্তমানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট: এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের যুবকদের বিনামূল্যে আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যাতে তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
- ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি: সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই এজেন্সি কাজ করছে।
- জাতীয় ডেটা সেন্টার: সরকারের বিভিন্ন ডেটা সংরক্ষণের জন্য এই ডেটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
- ই-গভর্নেন্স কার্যক্রম: বিভিন্ন সরকারি সেবা অনলাইনে প্রদানের জন্য এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
- আইটি ইনকিউবেটর এবং সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক: নতুন আইটি কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করার জন্য এই পার্কগুলো স্থাপন করা হয়েছে। সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কগুলো আইসিটি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য এই নভোথিয়েটারটি স্থাপন করা হয়েছে।
- ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার: সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এই সেন্টারগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
| প্রকল্প | উদ্দেশ্য | বর্তমান অবস্থা |
| লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট | যুবকদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করা | চলমান |
| ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি | সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা | চলমান |
| জাতীয় ডেটা সেন্টার | সরকারি ডেটা সংরক্ষণ করা | সম্পূর্ণরূপে চালু |
| ই-গভর্নেন্স কার্যক্রম | সরকারি সেবা অনলাইনে প্রদান করা | বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়ন চলছে |
| আইটি ইনকিউবেটর এবং সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক | নতুন আইটি কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করা | সফলভাবে চলছে |
বিসিসির সাংগঠনিক কাঠামো
বিসিসি একটি পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হয়, যার সভাপতি হন আইসিটি বিভাগের সচিব। এছাড়া, একজন নির্বাহী পরিচালক বিসিসির দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বিসিসি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে, যেমন - প্রশিক্ষণ বিভাগ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ, গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ, এবং সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ।
আইসিটি খাতে বিসিসির অবদান
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে বহুবিধ অবদান রেখেছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অবদান হলো:
- আইসিটি অবকাঠামোর উন্নয়ন: বিসিসি দেশের আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ডিজিটাল সেবাগুলো সহজলভ্য হয়েছে।
- দক্ষ জনশক্তি তৈরি: বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিসিসি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করেছে, যা আইসিটি শিল্পে কাজ করছে এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
- ই-গভর্নেন্সের প্রসার: বিসিসি ই-গভর্নেন্স কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারি সেবাগুলোকে অনলাইনে নিয়ে এসেছে, যার ফলে নাগরিকরা সহজে এবং দ্রুত সেবাগুলো গ্রহণ করতে পারছে।
- সাইবার নিরাপত্তা জোরদারকরণ: বিসিসি সাইবার নিরাপত্তা জোরদারকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দেশের ডিজিটাল সম্পদকে রক্ষা করছে।
- উদ্ভাবনকে উৎসাহিতকরণ: বিসিসি স্টার্টআপ এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং ব্যবসার সুযোগ তৈরি করেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিসিসি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো:
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এবং ডেটা সায়েন্সের উপর জোর দেওয়া: এই দুটি ক্ষেত্র বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং বিসিসি এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটা সায়েন্স ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
- ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার: বিসিসি ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছে, যাতে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ করা যায়। ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক।
- ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) এর প্রসার: বিসিসি আইওটি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য কাজ করছে, যা স্মার্ট সিটি এবং স্মার্ট হোম তৈরিতে সাহায্য করবে। ইন্টারনেট অফ থিংস জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করে তুলবে।
- 5G প্রযুক্তির বাস্তবায়ন: বিসিসি 5G প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে, যা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করবে। 5G প্রযুক্তি ডিজিটাল অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।
- ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ: বিসিসি ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন নীতি এবং প্রকল্প গ্রহণ করবে।
গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক
- [বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ওয়েবসাইট](http://bcc.gov.bd/)
- [তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ](http://ictd.gov.bd/)
- [ডিজিটাল বাংলাদেশ](https://www.digitalbangladesh.gov.bd/)
- [লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট](http://learningandearning.gov.bd/)
- [সাইবার নিরাপত্তা](https://www.ncc.gov.bd/)
- [ই-গভর্নেন্স](https://www.aspire.gov.bd/)
- [সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক](https://www.stpi.gov.bd/)
- [ফ্রিল্যান্সিং](https://www.freelancing.gov.bd/)
- [কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা](https://en.wikipedia.org/wiki/Artificial_intelligence)
- [ডেটা সায়েন্স](https://en.wikipedia.org/wiki/Data_science)
- [ব্লকচেইন প্রযুক্তি](https://en.wikipedia.org/wiki/Blockchain)
- [ইন্টারনেট অফ থিংস](https://en.wikipedia.org/wiki/Internet_of_things)
- [5G প্রযুক্তি](https://en.wikipedia.org/wiki/5G)
- [কম্পিউটার প্রশিক্ষণ](https://en.wikipedia.org/wiki/Computer_literacy)
- [সাইবার নিরাপত্তা](https://en.wikipedia.org/wiki/Cybersecurity)
- [ই-গভর্নেন্স](https://en.wikipedia.org/wiki/E-governance)
- [ডেটা সেন্টার](https://en.wikipedia.org/wiki/Data_center)
- [ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট](https://en.wikipedia.org/wiki/Broadband)
- [ডিজিটাল লিটারেসি](https://en.wikipedia.org/wiki/Digital_literacy)
- [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার](https://www.planetarium.gov.bd/)
আরও দেখুন
- ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬
- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন
- হাই-টেক পার্ক
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
